বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শুধু চুরি করার জন্য, দুর্নীতি করার জন্য সরকার দেশের গ্যাস উত্তোলনের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। নিজস্ব ব্যবসায়ীদের সুবিধা করে দেওয়ার জন্য তারা এলএনজি আমদানি করেছে। এর ফলে আজকে বিদ্যুতের দাম অনেক বেড়ে গেছে। ইতিমধ্যে কুইক রেন্টাল থেকে ৭৮ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুতের লোডশেডিং, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিসহ ভোলায় পুলিশের গুলিতে ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের দুই নেতা নিহত হওয়ার প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর বিএনপির উত্তর ও দক্ষিণ শাখা এই সমাবেশ করে। এতে মির্জা ফখরুল ইসলাম প্রধান অতিথি ছিলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাধারণ মানুষ। এতে পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেছে। কৃষকের সেচ ব্যাহত হচ্ছে। চাল, ডাল, তেল, লবণসহ সবকিছুর দাম বেড়ে যাচ্ছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বর্তমান অবস্থার জন্য দুর্নীতিকে দায়ী করেন বিএনপির মহাসচিব। এ প্রসঙ্গে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর একটি পরিসংখ্যানের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর পরিসংখ্যান বলছে, গত সাত বছরে বাংলাদেশ থেকে ২৭০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকে হিসাব আছে ২৪০ বিলিয়ন ডলারের। আমাদের প্রশ্ন, সেদিনও বলেছিলাম কোনো উত্তর দেননি। এই ৩০ বিলিয়ন ডলার কোথায় গেল? কারা নিয়ে গেল?’
আওয়ামী লীগ অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে এই দেশকে এটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, একটা গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ১৯৭১ সালে আমরা স্বাধীনতাযুদ্ধ করেছিলাম। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর বলতে হয়, আওয়ামী লীগ অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধ্বংস করে দিয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অনেকে বলেন, আওয়ামী লীগ একটা ফোর টোয়েন্টি পার্টি। আমি তাদের সঙ্গে একমত। আমি তাদের সঙ্গে শুধু এটুকু যোগ করতে চাই যে আওয়ামী লীগ আসলে একটা প্রতারক দল এবং এই সরকার পুরোপুরিভাবে প্রতারণা করে দেশের মানুষের অধিকারগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছিলেন ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবেন, ঘরে ঘরে চাকরি দেবেন, বিনা পয়সায় সার দেবেন। যে সার ১০ টাকা ছিল, এখন সে ইউরিয়া সারের কেজি ২২ টাকা। আজকে ঘরে ঘরে চাকরি তো দূরে থাক, আজকে শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের কোনো কর্মসংস্থান নেই। বিএনপির অনেক ছেলে আছে যাঁরা এখন মোটরবাইক চালান, অনেকে এখন হকারির কাজ করেন। এলাকায় থাকতে পারেন না পুলিশের অত্যাচারে, আওয়ামী লীগের অত্যাচারে। তিনি বলেন, এই সরকার চাকরি দেয়। কাকে চাকরি দেয় জানেন? আওয়ামী লীগের সার্টিফিকেট লাগবে, সঙ্গে আবার ১৫-২০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হবে। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগের অবস্থা।
সমাবেশে উপস্থিত ছাত্র-যুবকদের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা যখন তরুণ ছিলাম, যুবক ছিলাম, তখন আমরা লড়াই করেছি, দেশকে স্বাধীন করেছি। আজকে আমাদের নেতা তারেক রহমানকে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে। তাঁর নেতৃত্বে তরুণ-যুবসমাজকে জেগে উঠতে হবে। তাদের নতুন করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে হবে। এই স্বাধীনতা হবে আমাদের ভবিষ্যতে নিরাপদ থাকার স্বাধীনতা, সমৃদ্ধির স্বাধীনতা।’
লড়াই শুরু হয়েছে, যুদ্ধ শুরু হয়েছে—দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই লড়াই আমাদের প্রাণের লড়াই, আমাদের বেঁচে থাকার লড়াই, বাংলাদেশকে রক্ষার করার লড়াই। বাংলাদেশকে বাঁচানোর লড়াই। এ লড়াইয়ে অবশ্যই আমাদের সবাইকে শরিক হতে হবে, আমাদের ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। রাজপথ দখল করতে হবে। রাজপথে লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারকে সরিয়ে আমরা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব।’
দলীয় কর্মসূচি উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আগামীকাল শুক্রবার সারা দেশে জেলা পর্যায়ে (ঢাকাসহ ৮ জেলা বাদে) সমাবেশ হবে। এর পর ২২ আগস্ট থেকে উপজেলা থেকে গ্রাম পর্যায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি ছড়িয়ে দেওয়া হবে। শান্তিপূর্ণভাবে জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, পৃথিবীর কোথাও এক লাফে এত দাম বৃদ্ধির নজির নেই। কেন করেছে? এ প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, সরকার লুটপাট করে এখন জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করে তা জনগণের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে।
কুইক রেন্টাল দিয়ে ডাকাতি করবে, এটা সরকার আগে থেকে জানত—এমন অভিযোগ করে মোশাররফ বলেন, সে জন্য আওয়ামী লীগ সরকার সংসদে ইনডেমনিটি করে, বিদ্যুতের ব্যাপারে কেউ কিছু বলতে পারবে না, কোর্টে যেতে পারবে না, দাম সম্পর্কে প্রশ্ন তুলতে পারবে না বলে ইনডেমনিটি দিয়েছে। কোনো বাণিজ্যিক বিষয়ে পৃথিবীর কোনো দেশে এমন দায়মুক্তি দেওয়া হয় না। আওয়ামী লীগ তা দিয়েছে, এর একটিই উদ্দেশ্য, লুটপাট করে বিদেশে পাচারের জন্য।
বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার চেয়ে খারাপ বলে মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কায় যেভাবে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল, আজকে কিন্তু বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কার থেকেও খারাপ অবস্থা। কিন্তু একটা দফা বাকি, শ্রীলঙ্কার জনগণ এ অবস্থায় রাস্তায় নেমে এসেছে। তারা যেভাবে টেনেহিঁচড়ে সমুদ্রে পাচার করে দিয়েছে, সেই অবস্থা এখনো হয়নি বাংলাদেশে। তিনি বলেন, ‘আমাদের রাস্তায় নামতে হবে। এই স্বৈরাচার, ভোট ডাকাতদের হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করতে হলে ফয়সালা করতে হবে রাজপথে।’
বেলা দুইটায় সমাবেশ শুরু হলেও দুপুর ১২টা থেকেই হাজার হাজার নেতা-কর্মী খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে জমায়েত হয়। দুপুরের পরই নেতা-কর্মীরা রাস্তায় বসে পড়েন। এ কারণে দিনভর ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। দুইটার দিকে নয়াপল্টন ছাড়িয়ে ফকিরের পুল, বিজয়নগর, কাকরাইল, শান্তিনগর এলাকায় নেতা-কর্মীদের অবস্থান দেখা যায়।
সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: আগষ্ট ১১, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,