সাক্ষাতকার
সাংবাদিক : আপনি আগে ব্লগে খুব লিখতেন, অন্যের লেখা পড়তেন মানে মন্তব্য করতেন. বলা যায় ব্লগ পাহাড়া দিতেন ! কিন্তু আপনি আজ ব্লগে নেই কেন !
লেখক– অত্যান্ত সন্মানের সাথে বলি একটি দেশের মান নিয়ন্ত্রন হয় সে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপর ! আপনাকে প্রশ্ন করি পাতি লেখকের লেখা ও কবির কবিতা দিয়ে কি অর্থের সন্ধান মেলে ! হ্যা টাকা মেলে যদি আপনি লেখায় অনেক বড় বিনিয়োগ করতে পারেন !
সাংবাদিক : অর্থাৎ আপনি বলতে চাচ্ছেন যে পাতি লেখকরা ও কবিরা দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নিয়জিত থেকে কোন অবদান রাখতে পারছেন না !
লেখক– অসাধারণ তো আপনি ! আমার মনের কথাটি অল্প কথায় কী ভাবে ব্যাখ্য করে দিলেন আপনি তো মহা লেখক, দুঃখের কথা কি বলব ভাই আজ আমার আয় প্রতি সেকেন্ডে ২৫ পয়সা অর্থাৎ প্রতি দিনে আমার আয় ২১ হাজার ৬ শত টাকা, আর মাস হিসাবে ৬ লক্ষ্য আটচল্লিচ হাজার টাকা।
ভাই কিসের মোহে যে আমি ব্লগের পাহাড়াদার ছিলাম সেই অর্থে ১৯ লক্ষ টাকা সাক্ষাৎ লোকসান ! আর কিছু টাকা ব্যাংক লোন নিয়ে আজ আমি সাক্ষাৎ ফ্লাটের মালিক হয়ে যেতে পারতাম।
সাংবাদিক : তবে আপনি কি লেখালেখিকে টাকার সাথে তুলনা করলেন !
লেখক : কি যে বলেন ভাই, দেশ ভাসছে টাকার উপর, আমার পিয়ন, ক্লিনিয়ার বাসার মেইড সার্ভেন্ট আমার চেয়ে ভালো বাজেট তৈরী করতে পারে ! এ খবর কি রাখেছেন ! এক সময় আশা ছিল ব্লগে লিখে সারা বিশ্ব আমাকে চিনবে। ভিসা ফ্রী বিশ্ব পাব, সারা বিশ্বে ভ্রমণ যেতে পারব, দেশে দেশে আমন্ত্রিত হবো। এখন নিশ্চয় অধিক ব্যাখার প্রয়োজন নেই যে কেন আমি লেখা-লেখি থেকে দূরে !
সাংবাদিক : তা হলে দেশ কি আর লেখক পাবে না ! প্রকাশনা শিল্প কি হারিয়ে যাবে, দেশ হারাবে পাঠক !
লেখক : ভাই আপনার পেশা মানে আপনার সাংবাদিকতা নিয়ে আমার সংশয় আছে। দেশ হারাবে পাঠক ! মানে কি ! দেশে কি পাঠক আছে ! শরৎ চন্দ্রের বই কি কেউ পড়ে ! বঙ্কিম বাবুকে কেউ কি তেমন করে চিনে যদি তাদের লেখা পাঠ্য সিলেবাসে না থাকতো ! কেউ কি চিনত ! আপনি কি চিনতেন ।
ভাগ্যিস বুদ্ধি করে রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর লিখেছিলেন ” কে বসি পড়িছ মোর কবিতা খানি কৌ্তলহল ভরে ! তিনি বুঝেছিলেন তাঁর যেহেতু জমিদারী আছে আর কুষ্টিয়া, শাহাজাদপুরে কুঠি বাড়ি থাকবে তাই তার প্রতি কৌতহলও থাকবে তাই এখনও রবীন্দ্র পাঠক পাবেন। আর ভাগ্যিস কিছু প্রেম নিবেদনের গান লিখেছিলেন যা তরুণদের আকৃষ্ট করে যেমন আমি হৃদয়ে কথা বলিতে ব্যকুল কিম্বা আমার পরাণও যাহা চায়,
অথবা সখি ভালোবাসা কারে কয়।
সাংবাদিক : তার মানে বলতে চাচ্ছেন এ দেশ লেখক ও পাঠক শূণ্য হয়ে যাবে !
লেখক : ভাই আপনাদের মাথায় অনেক বুদ্ধি তাই আপনারা সাংবাদিকতা করে যাচ্ছেন, বুঝের মানুষ অবুঝের মত কথা বলছেন আমি কি কখনও বেলেছি যে এ দেশ লেখক ও পাঠক শূণ্য হয়ে যাবে ! যত সব আগাম কথা বলেন আপনারা অর্থাৎ সব কিছুর ভবিষৎ বক্তা। কলম থাকলে মান সন্মত কথা লেখা যায় না, আর এটাই কারণ লেখক ও পাঠক হ্রাসের। প্রযুক্তির কল্যানে সবাই এখন লিখতে পারে লেখা প্রকাশও করতে পারে, আজকার যারাই ফেস-বুকে লিখে কিছু লাইক সংগ্রহ করে তারাই কিছু দিন পরে নিজেকে একজন কবি ও লেখক হিসাবে পরিচয় দিতে থাকে।
সাংবাদিক : নিজেকে একজন কবি ও লেখক হিসাবে প্রচার করার কারণে কি দিনে দিনে লেখক ও পাঠক হ্রাস পাচ্ছে !
লেখক : ভাই আপনাদের কাজই হচ্ছে আমাদের মুখ থেকে একটি বেফাস কথা বের করে সেটি পত্রিকায় লিখে আপনাদের দাম বাড়ানো।
হ্যা এটা সত্য যে, নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাই চায় নিজের দাম বাড়াতে, সময় সংক্ষিপ্ত করে বলতে চাই, কোন লেখক যদি লিখে কাঁচা টাকার গন্ধ পায় সে লিখবে এবং অর্জিত কাঁচা টাকা দিয়ে সে পাঠকও তৈরী করে নিবে, হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আমি আর কথা বাড়াব না।
সাংবাদিক : আমাকে আপনার সময় দেওয়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
তারিখ: জুলাই ০৫, ২০১৫
রেটিং করুনঃ ,