লেখার সন্ধানে -৫
লেখার সন্ধানে হেঁটে হেঁটে হয় তো অনেক লেখা হলো, অনেক লেখা জমা হলো একটি বইও হয়তো ছাপানো হলো। এই ভাবেই হয় তো লেখার পথে যাত্রা শুরু হলো।
পাথরের যুগ থেকে – পাথর খুঁদে খুঁদে লেখা হত আর আজ লেখা হচ্ছে ছাপার বই-এ, ই-বুকে এ সব কাহিনী সবারই জানা, এ সব নুতন কিছু নয়।
লেখার যে প্রাণ আছে তা বেশ ষ্পষ্ট হচ্ছে। আর প্রাণ অনেকটাই অ-মরণের মত, সহজ ভাষায় যা অমর।
লেখার যে প্রাণ আছে তা সহজ ভাবে বললে বলা যায় কবি হোমার যা লিখে গেছেন কয়েক হাজার বছর আগে তা বই এর পাতায় তাঁর লেখা গুলি আজো জ্বল জ্বল করেছে আর তাঁর লেখা গুলির, কাহিনীগুলির ছাপার কাজ বা তাঁর পাঠকদের পড়াও থেমে নেই। এশিয়া অন্চলের ছাপায় খানায় হোমারের বা সেক্সপিয়রের বা আর্নেষ্ট হেমিংওয়ের যখন কোন বই ছাপা হচ্ছে তখন হয় তো আমেরিকা মহাদেশে রাতে ছাপায় খানা বন্দ, আবার আমেরিকা মহাদেশের পাঠকরা যখন হোমারের বা সেক্সপিয়রের বা আর্নেষ্ট হেমিংওয়ের যখন কোন বই হাতে নিয়ে পাঠকরা মগ্ন তখন হয় তো এশিয়া অন্চলের পাঠকরা কেবল লেখা পাঠ সমাপ্ত করে ক্লান্ত হয়ে নিদ্রায়।
বিশ্বের কোথাও না কোথায় ছাপা খানায় কবি লেখকদের বই ছাপার কাজ চলছে, কোন সেকেন্ডেরও জন্য বিরতী নেই। পাঠকরাও কোন সেকেন্ডের জন্যে বিরতীতেও যাচ্ছেন না প্রিয় লেখক কবিদের পাঠ থেকে।
লেখা যে একটি প্রাণ, চলমান বিষয়, থেমে থাকে না কখনো এ সব ভেবে লেখার প্রতি আগ্রহ যেমন বেড়ে চলেছে তেমন মনে হচ্ছে আর একটি প্রাণের সাথে আর একটি জীবনের সাথে যুক্ত হয়ে ছুটে চলেছি যেন বিজয়ের পথে।
নিজের স্বীকৃতিও দেওয়া হচ্ছে – জন্মের স্বীকৃতি, বেঁচে থাকার স্বীকৃতি। লিখে যাওয়া, এটাই হয়তো জীবনের বড় একটি সার্থকতা।
====================================
লেখার সন্ধানে – ৩
লেখার সন্ধানে বের হয়ে একটি প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে যে ঠিক কী ধরনের ভালো কথা লেখায় ফুটিয়ে তোলা যায় !!
ধরা যাক, আমি একটি পদ্ধতি রপ্ত করে ফেলেছি, যে পদ্ধতিটার করণে আমার পেশায় দ্রুত উন্নতি করে তরতর করে উপরে উঠে যাচ্ছি, অর্থ প্রাপ্তি, সুনামে একাকার হয়ে যাচ্ছি । আবার যেমন একজনের বিরানী রান্নাতে খুব নাম ডাক। বিরানীর বাবুর্চী তার মশল্লার মিশ্রন, রান্নার প্রনালী যদি অন্যরা জেনে যায়, কিম্বা কোন যাদুকরের যাদুর কৌশলগুলি অন্য কেউ জেনে গেলে যাদুকরের যেমন যাদুর শক্তি লোপ পায়, বাবুর্চীর, যাদুকরের বেলায়ও তাই আর আমার তরতর করে উপরে উঠে যাওয়ারও গুরুত্ব হয়তো লোপ পায়।
শিশুরা কৌশরে উপনিত হওয়ার সময়ে বা শিশুকালে কোন একটা বিষয় রপ্ত করার পর অন্য কাউকে রপ্ত করা বিষয়গুলি শেয়ার করতে বা শিখাতে চায় না। শিশু কিশোরদের উপর দোষ চাপানো কেন এ ক্ষেত্রে বড় কি পিছিয়ে আছে !! মনে হয় না।
সব কিছুকে গানিতিক সূত্রে বাধা যায় না তবে অনুমান করা যায় যে মানুষের একটি বড় অংশ যা সে নিজে বা কোন ভাবে অর্জন করেছে বা নানান ঝড় ঝাপটা সহ্য করে আয়ত্ব করেছে তা আর অন্যকে শিখাতে চায় না নিজের গুরুত্ব কমে যাবে এই ধারণায়। ধরা যাক আমার মধ্যে যা ভালো অর্জন তার দশ ভাগ আমি অন্য শিখিয়ে দিলাম।
এ কথাটির ব্যপক প্রচলন আছে যে যিনি উপদেশ দেয় তিনি নিজেই উপদেশ মানেন না। পাশাপাশি এ কথাটিরও প্রচলন আছে যে ইতিহাস থেকে, মহা মানবদের কাছ থেকে বা ভালো মানুষদের কাছ থেকে প্রচারিত কথা বা বাণী মানুষ শ্রবন করার পর তা মানেন না। যুক্তিতে না এনে সাধারণ ভাবে বলা যায় ভালোর প্রচলন সমাজে খুব কম। ভালো কথা, বাণী ভালো পদ্ধতি আরো বেশি করে আসতে পারতো কিন্তু নানান কারণে তা আসছে না আর যা আসছে তা মানুষ গ্রহন করছে কম সংখ্যক মানুষ।
অনেক পাঠক এ লেখাটি পড়ে হয়তো এক ফাঁকে বলেই ফেলবেন যে লেখক আমাদেরকে জ্ঞান দিতে শুরু করেছে, লেখক কী আমার বা আমাদের থেকে বেশি জ্ঞানী নিজেকে মনে করেন !!
কবি, লেখক, বিজ্ঞানী, শিল্পী, নেতা সব সময়ই চেয়েছে তাঁদের মধ্যে সব ভালো, উন্নত মন ও মননের বিকাশ সবার জন্য বিলিয়ে দেওয়া।
==============================================
লেখার সন্ধানে বের হয়ে পথিক হওয়াটা বড় একটি বিষয়, আর যদি কেউ হতে চাই লেখার পথিক। নানান পথ চলে পথিক হতে হয়। ঘরে হাঁটা হাঁটি করে পথিক হওয়া চলে না বরং ওটাকে শরীর চর্চা বলা যেতে পারে। লেখার সন্ধান করার করার ইচ্ছা থাকলে ঘর থেকে বের হতে হয়, পথে চলতে হয়, নানান পথে চলে হয় যে চলাটি পায়ে হেঁটে, মনের মধ্যে হেঁটে, মাথায় হেঁটে হতে পারে।
কুৎসিত বিষয় বস্তু লেখার তেমন একটা ভালো বিষয় নয়, তবে কুৎসিত বিষয়টিকে সৌন্দর্য দিয়ে ঢেকে দিলে বা কুৎসিত বিষয়টি থেকে সৌন্দর্য বের করে আনলে কলম যে বিরতি হীন ভাবে লিখতে থাকবে তা প্রায় নিশ্চিত। লেখার জন্য চাই সৌন্দর্য, আমাদের লেখার একটি অংশের লেখালেখি সৌন্দর্যকে ভর করে চলে এটি বেশ বুঝা যায় কবিতায়, সাহিত্যের পাতায়।
সৌন্দর্যের বড় একটি রূপ হলো সরলতা যেটাকে আমরা বলি প্রাকৃতিক আর সেখান থেকে লেখা বের হয়ে বা চলে আসে খুব সহজে। নদীর স্রোতে, ঝর্ণার ধারায়, আকাশে মেঘের চলাচলে, বনের মধ্যে পাখির কিচির মিচির ডাকে এগুলিকে সরলতা মনে হয় এখানে সৌন্দর্য হাতছানি দেয় লেখা চলে আসে স্বাভাবিক গতিতে।
এখন মনে হচ্ছে লেখার একটি গতি হয় তো পেয়ে যাচ্ছি, লেখার কলম হয় তো আর থামবে না, কলমে লেখা চলে আসবে ঝর্ণা ধারার মত আকাশে চিলের চলচলের মত, আকাশে মেঘের চলাচলের মত।
লেখার সন্ধানে বেড়িয়ে কলমে যদি লেখার ধারা আসতেই থাকে তবে শুধুই কী লিখতেই হবে !!
অধিক ভোজন শরীরের ক্ষতি করে থাকে, যতটুকু লেখা ভালো হবে ততটুকুই লেখার ধারা হয় আর সেই ধারা নিয়ে আমাদের লেখাই প্রকৃত লেখা।
চর্বি জাতিয়, বেশি মশল্লা যুক্ত, তৈলাক্ত খাবার, মজাদার খাবার গুলি থেকে বিরত থাকতে বলেন ডাক্তাররা লেখার বিষয়ে একই কথা খাটে, যত খানি সঠিক লেখা আসে ততখানি লেখাই উত্তম। শরীরে যতটা খাবার ভালো হজম হবে ততটা যেমন আহার, তাতে যেমন শরীরে লাবন্য থাকে মন তরতাজা থাকে, লেখাও তেমন লাবন্য নিয়ে, তরতাজা হয়ে আসুক লেখার কলমে।
রেটিং করুনঃ ,