আজ কিছু একটা লেখার কথা ছিল কিন্তু লেখা হলো না। আমার কলমে কোন লোখা বের হল না। যে কোন পরিস্থিতিতে কোন লেখকের লেখা কি থেমে থাকে !! আমার হিসাবে থেমে থাকে না। বেশি দূরে যাব না, আমাদের কিংবদন্তি ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদ কিছুদিন আগেও যখন তিনি জীবন মরণের সন্ধিক্ষণে দাড়িয়ে নিউওয়ার্ক শহরে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তখন কি এই কিংবদন্তি লেখকের লেখা থেমে ছিল !! না, তাঁর লেখা থেমে ছিল না।
লেখক বা কবিদের লেখা থেমে থাকে না।
আমরা অনেকেই মাঝে মাঝে লিখি, আবার মাঝে মাঝে লিখি না, বিশেষ করে আমি নিজে।
আমার মত এই ধরণের মানুষকে খন্ডকালীন লেখকও বলা যায় না। লেখা বা লেখক বড় কঠিন এটা সকলের জানা তবুও অনেকেই আমরা লিখি, একটি লেখাটি লেখা না অ-লেখা সেটির বিচারক পাঠক, পাঠক হওয়াটা হয়তো সহজ, তবে আমার মনে হয় পাঠক হওয়াটা আরো কঠিন।
আমি কোন সঠিক পাঠক নই। আমি বই পাঠ করেছি ক্লাসে নম্বর পাওয়ার জন্যে, পরিক্পাষায় পাশের জন্যে, একটা রেজাল্টের জন্য, আয় করার জন্যে, বেঁচে থাকার জন্য।
টাকা আয় করার জন্য ভালো পাঠক হওয়া যায় না, নিজে পাঠক হতে পারি নি। বরং যারা ভালো আয় করেন তারাই সৃষ্টিকারক, ভালো লেখকও বটে। সেই অর্থে আমি কোন লেখকও নই, কোন পাঠকও নই।
রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের কিছু লেখা, গান ও কবিতা পড়েছি, সামান্য কিছু পড়েই আমার মনে একটা ভয় জন্মেছে, রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর যা লিখেছেন সঠিক অর্থে আমার বাকি জীবনে তাঁর সমগ্র লেখা পড়া আমার দ্বারা সম্ভব হবে না। দীর্ঘকাল আমার জন্য আর বরাদ্ধ নেই যে সঠিক অর্থে তাঁর সমগ্র লেখা পড়া, আমার দ্বারা সম্ভব হবে ।
রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর হয়তো কখনো দুটি লাইন লিখেছেন এক মিনিটে আর আমি তাঁর ঐ দুই লাইন পড়ে শেষ করে ফেললাম এক মিনিটে !! তবে আমি কি সঠিক পাঠক হলাম !! রবি ঠাকুরের পরের লাইনটি পড়তে যদি আমার এক মিনিট সময় লাগে
” কিন্তু এমন মহাদেব সংসারে আছেন, যিনি দেবতা বটেন কিন্তু যাঁহার ভাগ্যে অমৃত জুটে নাই, সংসারের সমস্ত বিষ তাঁহাকে পান করিতে হইয়াছে— আবার এমন রাহুও আছে যে অমৃত খাইয়া থাকে।”
সত্যই যদি আমি রবি ঠাকুরের লেখাটি এক মিনিট সময়ে পড়ে শেষ করে ফেলেছি, তবে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি আমি কোন পাঠক নই আর আমার পক্ষে লেখকের ভূমিকায় অভিনয় করার কি বা যুক্তি থাকতে পারে !!
ব্লগে যারা এখন ভালো লিখেন আমি কি লেখা গুলি একজন বঠিক পাঠক হিসাবে পাঠ করি !! তবে কী আমার উত্তর ! ব্লগের একটি বড় অধ্যায় হলো লেখা পড়ে মতামত দেওয়া। আমার কবি বা লেখক বন্ধুবর কিছুটা মনক্ষণ হবেন এই ধারণা থেকে পরিত্রান পাওয়া আসার নৈতিকতা তাবি দুই এক কলম লিখে দিতে হচ্ছে ” খু্ব ভালো হয়েছে বা ভালো হয় নি।” এ সবই ফরমেট কর মতামত লিখতে গিয়ে লেখক বা পাঠক কোনটাই হওয়া গেল না।
লেখা খু্ব ভালো হয়েছে বা ভালো হয় নি এ সব ভাবতে ভাবতে এক বছর পার হয়ে গেল, নিজেকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে নিজের মূল্যবান নষ্টের কষ্ট থেকে পরিত্রান পাওয়ার জন্য হয় তো বলে ফেলব যে ‘ একটি কবিতা, একটি গল্প, একটি প্রবন্ধের চেয়ে আমার কাছে একটি দশ টাকার নোট, একটি ইট, একটি ব্যাটারির মূল্য অনেক বেশি বা একটি চশমার মূল্য অনেক বেশি্।
আমার কলমে “জল পড়ে পাতা নড়ে” বা ” ভোর হল দোল খোল ” এমন লেখা আসে না বা আসে নাই। আমার জন্য থাকুক ভালো লেখা বা বই পাঠ বরাদ্ধ, সঠিক পাঠক হওয়ার লক্ষ্য স্থির থাক। একজন সঠিক পাঠক হয়ে যদি যদি কখনো কলমে লেখা আসে তখন থেকে শুরু হোক লেখালেখি আর ততদিন, আর এখন যা লিখে যাচ্ছি পড়ে থাকুক অলেখার তালিকায়।
তারিখ: সেপ্টম্বরর ১০, ২০১৩
রেটিং করুনঃ ,