এক সময় মনে হলো মাথায় অনেক অভিজ্ঞতা জমা হয়ে আছে, আছে কিছু অনুভূতিও কিন্তু কর্ম ব্যস্ততার কারণে তা লেখা হয় নি বা কখনও লিখব এমন ধারণাও মাথায় আসে নি। লেখা বিষয়টি গান শুনার মত সহজ নয়, আরও অনেক উপমা টানা যেত। অনেক কঠিন জানতাম, লিখতে গেলে প্রচুর পড়া, প্রচুর সময়, একাকিত্ব বরণ, একটি সৎ জীবন ও আদর্শের জীবনকে বেঁছে নিতে হয়। লেখার উপকরণগুলি ঠিক করে ফেললাম, লেখার চেষ্টাও করতে থাকলাম মাঝে মাঝে হোচট খেতে বসলাম যে প্রচুর সময়ে অর্থ সম্পত্তি অর্জন হয় সেই সময় ব্যয় করে লিখে কী এমন পেতে পারি। লিখে গেলাম কিন্তু কিছু পেলাম না এক অসহায় জীবন ছাড়া।
বুঝতে পারলাম মাথায় অনেক কিছু কিলবিল করছে না লিখলে শান্তি মিলছে না, সাহস করে লিখতে শুরু করলাম ঠিক তখনই বুঝতে থাকলাম অল্প অল্প করে লেখার বিষয়টি মনের মধ্যে খোলা আলো হয়ে প্রবেশ করছে। লেখার পিছনে সময় বরাদ্দ বেড়ে যাচ্ছে সেই সাথে অর্থ সম্পত্তি অর্জন নিয়ে চিন্তা মাথা থেকে নেমে যাচ্ছে নিজেকে একাধিকবার প্রশ্ন করতে থাকলাম যে যদি নিঃশ্ব হয়ে পড়ি এমন কি মাথা গুজাবার ঠাঁই যদি না মিলে বিনা চিকিৎসায় যদি বাকি জীবনটা কাটাতে হয় অবশেষে পরিবারকে শূণ্য করে দিয়ে বিদায় নেওয়া, পরিবারকে নিরাপত্তা না দিয়ে, জীবন যাপনের ব্যবস্থা না করে দিয়ে যদি চলে যেতে হয়!
মনে হলো একটি লেখার ঘোরে প্রবেশ করেছি অর্থ সম্পত্তি অর্জনটাকে তুচ্ছ মনে হতে থাকলো, জীবনের আয়ুকাল কে বড় ছোট মনে হতে থাকলো, কিছু হলেও পৃথিবীর পরে কিছু রেখে যেতে হবে, একটি দায়িত্ব বোধও মনে হতে থাকলো। নানান ফাঁদ, ভন্ডামী প্রতরণার ধরণ যা জীবন অভিজ্ঞতা দিয়ে অর্জন করেছি তা লিখে লিখে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করে দিয়ে তাদের নিরাপদে চলার জন্য কিছু লিখে নিজের দায় থেকে মুক্ত হতে চাইলাম। অর্থ সম্পত্তি অর্জনের চেয়ে লেখা লিখে যেখান থেকে মানুষের জন্য কিছু করে যাওয়াটাকে বড় সম্পদ অর্জন বলে মনে হলো।
প্রতিদিন লেখার সময় অসংখ্য অসহায় মানুষের চেহারা মনে ভাসতে থাকে মনে প্রশ্ন জাগে ওদের দেক-ভালের কোন অংশের সামান্য তম অংশের কি অংশিদার হতে পারব না ! এমন শঙ্কা থেকে দিনে দিনে লেখার আগ্রহ বেড়ে গেল।
যদি আমার একটি অভিজ্ঞতার কথা লিখে, একটু সহানুভূতি প্রকাশের মধ্য দিয়ে যদি অন্তত একজন মানুষেরও উপকার হয় তবে আমি লিখব না কেন !
ভাবনার এই অধ্যায়টা কিছু লেখার আরও আগ্রহ জাগালো মাঝে মাঝে একা একা লেখার সময় যেন দেখতে পেতাম মাদার তেরেজাকে, এ.পি.জে কালামকে তাঁরা বলছে আমরা পাওয়ার জন্য কাজ করি নি, কিছু দেওয়ার চেষ্টা করেছি মাত্র, তখন অনেক রাত বার বার মনে হতো মাদার তেরেজা, এ.পি.জে কালাম বার বার আমাকে বলতে চাইছেন কিছু পাওয়ার প্রয়োজন নেই, যে ভাবে লিখছো শুধু লিখে যাও।
একা একা রাত জেগে লেখার একটি নিয়মিত অভ্যাস হয়ে দাঁড়ালো, নিজের কাছে নিশ্চিত হলাম আমি এখন লেখকের দেলে পিছনে ফিরে দেখার আর সময় নেই আগামীকাল সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠাটাই বড় জরুরী আর জেগে উঠতে পারলেই হবে স্বপ্ন পূরণের ধাপে পা দেওয়া আর এই ভাবনাটি প্রতি রাতে আমাকে চিন্তিত করে রাখত যে আগামী কাল আমাকে জেগে উঠতে হবে।
এক সময় বুঝতে পারলাম আমার জীবনে অনেক পরিবর্তন এসেছে, খুব স্বাভাবিক ভাবে দীঘিতে শ্যেওলা জমার মত, আকাশে মেঘের চলাচলের মত। লেখালেখি খুব স্বাভাবিক ভাবে মিশে গেল আমার জীবনে থামিয়ে দিতে চাইলেও আর তা পারা যাবে না, লেখার উপর আর আমার কোন নিয়ন্ত্রণ থাকলো না, ক্রমাগত লিখে যাওয়াটাই যেন আমাকে নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে যেমন আকাশে মেঘের চলাচলকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না, আমার বেলাও তাই হলো।
অনেক কিছু বুঝার পরে এটাও বুঝতে থাকলাম যে লিখে যেতে পার অবিরাম যদি হঠাৎ জীবনে বড় বিপর্যয় না নেমে আসে কঠিন অসুস্থ্যতা, পঙ্গুত্ব বরণ কিম্বা মৃত্যু তারপরও একটি বিশ্বাস ছিল মৃত্যু না আসা পর্যন্ত আগামী কাল সকালে জেগে উঠতে পারব, আর এই চিন্তাটাই আমাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে প্রতি ক্ষণই লেখার পথে।
তারিখ: জুন ২১, ২০১৮
রেটিং করুনঃ ,