আমি লিখি, প্রতিটি সময়ে লেখার চেষ্টায় থাকি, কি কারণে লিখি ! কেন লিখি ! – এর কারণটা সঠিক নাও হতে পারে তবে আমার কাছে মনে হয় প্রতি নিয়ত আমার কাছে কিছু অভিজ্ঞতা জমা হয় যা পথ চলে পেয়ে থাকি, কিছু তাড়না, আবেগ, কারো উৎসাহ কোন প্রণোদনা কিম্বা আমার কোন প্রতিদ্বন্দ্বি যাকে পরাজিত করার একটি বাসনা সেখান থেকে লেখার সূচনা বা উৎস স্থল, যেটাকে থামিয়ে রাখতে পারি না বা চাই না। চাইলেও তা পারি না বিষয়টা হয়ে দাঁড়ায় বাগানে ফুল ফোটাতে বাঁধা দেওয়া, পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝর্ণা ধারাকে বাঁধা দেওয়া বা মুক্ত পাখিকে উড়তে না দেওয়ার মত।
লিখতে গিয়ে প্রথমে বুঝতে শুরু করি লেখার মধ্যে সুর আছে, যে সুর ধরা দেয় তাকে চেপে রাখাটা সঠিক হবে না, লেখার সেই সুরকে অমান্য বা অসন্মানও করতে পারি না, তাই লেখার কাছে ধরা দেই, লেখা আমার কাছে ধরা দেয় এই ধারাবাহিকতায় এতো দিন ধরে লিখে যাওয়া।
লেখার অর্জন নিয়ে কখনও আমার ভাবা হয় নি, কিছু একটি অর্জন থাকবে এই প্রত্যাশায় আমি লেখাও শুরু করি নি, লিখতে পারি এটাই বড় অর্জন। লেখার জন্য প্রয়োজন পাঠকের কিন্তু যে সময়টায় আমি লিখতে শুরু করি তখন প্রযুক্তির নানা কল্যানে সারা বিশ্ব যখন সুন্দর উন্নয়েনের দিকে ধাবিত তখন লেখার পাঠক সংকট দেখা দেয় সেই সাথে প্রযুক্তির কারণে নানা জনে লেখার সহজ সযোগ পেয়ে যায় সেই সাথে লেখা প্রকাশেরও।
অনেক লেখক পাঠক শূণ্য হয়ে পড়লেও আমি ভীত হয়ে পড়ি নি, সংকট মোকাবেলার জন্য নিজেকে গড়ে তুলি একজন ভালো পাঠক হিসাবে। অনেকে যেখানে অন্য লেখকের লেখা পাঠের সময় পান না তখন আমি নানান ধরণের লেখক, কবির লেখা পড়তে শুরু করি সাথে লেখার চর্চাও। নিজেকে নিরপেক্ষ পাঠক হিসাবে তৈরীর চেষ্টাটি ছিল বড়, নানান ধরণের লেখক, কবির লেখা পড়ার সাথে সাথে নিজের লেখারও পাঠক হয়ে একটি নিরপেক্ষ ফলাফল বের করে আনার চেষ্টা করতাম।
প্রযুক্তিগত সুবিধা নিয়ে আমিও আমার লেখা প্রকাশ করতাম কিন্তু হিসাব করতাম না কে আমার লেখা পড়ল! আর পড়ল না বা আমার লেখার প্রকৃত পাঠক কত ! আর কিবা তাদের মতামত ! আমার মধ্যে একটি ধারণা জন্মে ছিল যে পাঠকরা যে মতামত দিবে তা হবে আমার জন্য বিভ্রান্তি মূলক; হয় তারা এমন সব কথা লিখে দিবে যাতে আমি লেখার আগ্রহ হারাই অথবা এমন সব কথা লিখবে যেন আমি একজন সেরা কবি বা সেরা লেখকের মত আমিও !
আমার এই ধারণাটির আমি সত্য প্রমাণও পাই। বিভ্রান্ত সেদিন হতে পারতাম যদি তাদের মতমতকে বিভ্রান্তি মনে না হতো, সেখান থেকে রক্ষা পেয়েছি বলে লেখক হিসাবে নিজেকে দাঁড় করাতে অসুবিধা হয় নি। নিজের লেখগুলিকে কত শত বার পড়ে পড়ে সেদিন নিজেকে সঠিক পাঠক হিসাবে স্বীকৃতি দিতে পারলাম সেই ক্ষণটি নিজের কাছে নিজেকে লেখক হিসাবে দাবি করেছি।
লেখালেখি বিষয়টিকে যতই পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝর্ণা ধারার সাথে তুলনা করি না কেন! কিন্তু আড়ালে আছে ভিন্ন পেক্ষাপট। একটি পেক্ষাপট সকল লেখকের বেলায় থাকে। একটি অবজ্ঞা, বিশ্বাস ভঙ্গ, স্বার্থপরতা এগুলিই ছিল মূলত আমার লেখার পেক্ষাপট, সেই পেক্ষাপটটিকে মনে হয়েছে পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝর্ণা ধারা যা সত্য কথন, একটি আলোক ধারা। বাগানে ফুল ফোটার মত মানবিক সু-কুমার বৃত্তির বিকাশ। লেখার মধ্যে যে সুর পাই তা যেন জগৎকে সুন্দর ও সত্য করে গড়ে তুলার প্রার্থনা।
একটি অবজ্ঞা, বিশ্বাস ভঙ্গ, স্বার্থপরতা এগুলিই মূলত যখন আমার লেখার পেক্ষাপট হিসাবে কাজ করতে থাকে তখন অনেক প্রিয়জনকে বিদায় দিতে হয় ! একাকীত্ব প্রকৃত ও বিপদের দিনে বন্ধু হিসাবে পাশে দাঁড়ায়, কঠিন দুঃখবোধ মানসিক শক্তি যুগিয়ে যায়, সাথে আসে আত্মবিশ্বাস লেখক বানানোর প্রত্যয় নিয়ে।
কিছু মানুষের বিদায় বেদনা, একাকীত্বের যাতনা, দুঃখের কঠিন ভার, দৃঢ় আত্মবিশ্বাস একান্ত আপনজন বিশ্বাস ভাজন হয়ে আমাকে প্রথমতঃ পাঠক বানায় দ্বিতীয়ত আমাকে লেখক বানায়।
তারিখঃ জুন ২১, ২০১৮
রেটিং করুনঃ ,