বর্তমান প্রযুক্তির বদৌলতে আমরা অনেকেই হাতের খুব লাগালে পাওয়া বাংলা ব্লগ আমাদেরকে লেখক ও পাঠক হিসাবে তৈরী করে দিয়েছে, আমরা লেখক হয়ে লিখছি আবার পাঠক হয়ে অন্য লেখকের লেখা পড়ছি, সেই সাথে ব্লগ রীতিতে মন্তব্য কলামে মন্তব্য করে নিজের লেখাটি অন্য পাঠককে দিয়ে পড়িয়ে নিচ্ছি কৌশলে !
প্রথমত বাংলা লেখায় আমাদের একটি উন্নয়ন ঘটেছে ব্লগে লেখাকে কেন্দ্র করে – বাংলা ব্লগগুলি একটু গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে নূতন প্রজন্মের একটি লক্ষণীয় উপস্থিতি বিদ্যামান আছে এখানে, তারা লিখছেন, নিজের ধারণাকে শেয়ার করতে সক্ষম হচ্ছেন সারা বিশ্ব ব্যাপি যেখানে আছেন আমাদের বাংলা ভাষাভাষীগন।
এমন একটি সময় ছিল নিজের একটি আত্ম প্রত্যয়ি লেখা প্রকাশ করা আর শত মন ওজনের একটি পাথরকে ঢেলে নেওয়ার মত বিষয়। আমরা সেই লেখা প্রকাশের কঠিন বলয় থেকে বেড়িয়ে এসেছি বর্তমান প্রযুক্তির বদৌলতে। তবে সকলে আমরা লেখক বা অ-লেখক যাই হই না কেন একটু সচেতন হলেই কিছুটা হলেও নিজেকে জানা হয়।
প্রসিদ্ধ ইরানী কবি, গণিতজ্ঞ বৈজ্ঞনিক, জ্যোতির্বিদ ওমর খৈয়াম লিখেছিলেন ফার্সী ভাষায় তাঁর বিখ্যাত রোবাইয়াৎ- এ।
” ইয়েক্ চান্দ্ বেহ্ কুদকি্ বেহ্ উস্তাম শুদিম
ইয়েক্ চান্দ্ যে উস্তাদি খুদ্ শাদ শুদিম
পায়ান সুখন শোন হেদ মারা চেহ রসিদ।
আয্ খাক দর্ আমাদিম ও চুন্ বাদ শুদিম। “
ফিটজেরাল্ডের ইংরেজী অনুবাদেঃ
With them the seed of Wisdom did I sow,
And with my own hand wrought to make it grow,
And this was all the Harvest that I reap’d–
” I Came like water, and like wind I go”
( Rubai XXVII)
নূরুন নাহার বেগমের অনুবাদে –
” শৈশবে আমি (ওমর খৈয়াম) পন্ডিতদের সাথে সময় কাটাতাম।
সে সময় নিজেকে পন্ডিত ভেবে আনন্দ বোধ করতাম।
শুনে যাও, অবশেষে কি হল আমার পরিনিতি !!
এসেছিলাম মৃত্তিকা রসে শিক্ত হয়ে এবং বাতাসের সাথে উড়ে গেলাম! ” ।
হাতে গোনা কতকগুলি বই পড়ার পর হঠাৎ এক সময় মনে হলো নিজে একজন ছোট্ট ধরনের পন্ডিত ব্যক্তি। মনে হতে থাকলো আমি যা জেনেছি অন্যরা তা জানে না, এমন ধারণা হয়তো অনেকেরই হয়। নিজেকে এক ধরণের পন্ডিত ভেবে আশে পাশের মানুষকে শির্ষ্য ভেবে নিজের গড়া মতবাদ বা অর্জিত জ্ঞানগুলি ক্রমাগত ভাবে বলেতে থাকা, এমন প্রবনাতা যে অনেকেরই মধ্যে নেই তা জোড় করে বলা যাবে না।
ঠিক একই ভাবে দুই একটা প্রবন্ধ, কবিতা, ছড়া, গল্প লিখার পর হঠাৎ এক সময় মনে হলো নিজে একজন ছোট্ট ধরনের পন্ডিত ব্যক্তি, লেখকও বটে ও লেখার মান অনেক উন্নত এ ধরণের ধারণাও হয়তো অনেকেরই হয়।
ওমর খৈয়ামেরও হয় তো হয়েছিল এবং তিনি একজন মহা ও উঁচু মানের পন্ডিত ব্যক্তি বলে তিনি নিজেকে বর্ণনায় দিলেন যে, শুনে যাও, অবশেষে কি হল আমার পরিনিতি !!
এসেছিলাম মৃত্তিকা রসে শিক্ত হয়ে এবং বাতাসের সাথে উড়ে গেলাম!
একটি বালুকণা ঠিক কতদিন ধরে এ পৃথিবীতে আছে কবে তার আগমন ঘটেছিল আর অবশেষে বালুকণাটি ঠিক কবে মহাজগৎ থেকে উধাও হয়ে যাবে এমন শুধু মাত্র একটি চিন্তা মাথায় আসার পর আমার সমস্ত চিন্তা, চিন্তা করার ক্ষমতা এলোমেলো হতে থাকলো আর তখন এক সময় নিজেই অনুমান করতে থাকলাম যে আমার জ্ঞানের গভীরতা কতটুকু !!
গুটি কতক মানুষের মধ্যে মেলা মেশার পর নিজের কথাগুলি গুটি কয়েক জন মানুষের মধ্যে প্রচারিত হওয়ার পর যদি কখনো আমাদের মধ্যে কিছু তত্বের উদ্ভব হয়, পান্ডিত্ব বোধের জন্ম হয়, অনেক সময় এগুলি আমাদের জন্য একটি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।।
যদি কখনো অধিক জ্ঞান লাভের সুযোগ ঘটে, নিজের অর্জিত জ্ঞানের সীমা বড় হতে থাকে ঠিক তখন নিজের গড়া তত্বগুলি ভেংগে যেতে থাকে আর নিজের মধ্যে আবিষ্কার হতে থাকে যে এত দিনের গড়া তত্বগুলি ভুল ধারনা উপর দাড়িয়ে ছিল। সংসয়ের বিষয় এই যে অনেকেই ভুল তত্বের মধ্যে জীবনের শেষ দিনটা পর্যন্ত কাটিয়ে দিয়ে থাকেন আর এর বড় কারণ হলো যে নিজের জ্ঞান ভান্ডারকে প্রসারিত না করা।
নিজের ধ্যান ধারণার মধ্যে নিজে গুটিয়ে থাকা, নিজের মধ্যে বাইরের আলো বাতাস প্রবেশ করতে না দেওয়া।
অনেক বই পড়ে, অনেক জ্ঞান অর্জনের পরে অনেক লেখা লেখার পরে আমাদেরও মধ্যেও জেগে উঠুক ওমর খৈয়ামের চেতনা তখন নিজের মধ্যে স্বস্থি বোধ হতে থাকুক, স্থিরতা বোধ হতে থাকুক। জন্ম নিতে থাকুক পরিশুদ্ধ চিন্তা, সঠিক তত্ব, সঠিক লেখনীর ধারা।
সঠিক জ্ঞান অর্জনের মধ্যে দিয়ে আমরাও যেন সান্ত্বনা ও শান্তি খুঁজে পাই যখন মনে হয় ওমর খৈয়ামের জ্ঞানের পরিধির তুলনায় আমরা নিজে কত ক্ষদ্রতম একজন !!!
রেটিং করুনঃ ,
খুব ভালো একটি বিষয় অবতারনা করেছেন।
যখন জ্ঞানের পরিধি ছোট থাকে তখন এই ছোট জ্ঞান একধরনের অহমিকা তৈরি করে। আর যখন কুপে আবদ্ধতা ছেড়ে নদী, সমুদ্রে বিশালতায় নিজেকে উপস্থাপনা করি তখন দেখতে পাই কতই না গন্ডিবদ্ধ ছিলাম।
যখন জ্ঞানের পরিধি ছোট থাকে তখন এই ছোট জ্ঞান একধরনের অহমিকা তৈরি করে। আর যখন কুপে আবদ্ধতা ছেড়ে নদী, সমুদ্রে বিশালতায় নিজেকে উপস্থাপনা করি তখন দেখতে পাই কতই না গন্ডিবদ্ধ ছিলাম।
এই উপলদ্ধি বোধটি সকলের মধ্যে থাকা উচিত, তখন আমরা ভালো লেখক ও অধিক সংখ্যক পাঠক পেতে পারি। মূল্যবান মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
অনেক বই পড়ে, অনেক জ্ঞান অর্জনের পরে অনেক লেখা লেখার পরে আমাদেরও মধ্যেও জেগে উঠুক ওমর খৈয়ামের চেতনা তখন নিজের মধ্যে স্বস্থি বোধ হতে থাকুক, স্থিরতা বোধ হতে থাকুক। জন্ম নিতে থাকুক পরিশুদ্ধ চিন্তা, সঠিক তত্ব, সঠিক লেখনীর ধারা।
সঠিক জ্ঞান অর্জনের মধ্যে দিয়ে আমরাও যেন সান্ত্বনা ও শান্তি খুঁজে পাই যখন মনে হয় ওমর খৈয়ামের জ্ঞানের পরিধির তুলনায় আমরা নিজে কত ক্ষদ্রতম একজন!!!
বই পড়া অবশ্যই ভাল অভ্যেস।
লিখতে হলে প্রচুর পড়তে হয় এটাও ঠিক!!
তবে, জাত লেখক যারা, তাদের সৃষ্টকর্তা প্রদত্ত লেখনী শক্তি আছে।
আমি প্রচুর পড়লে হয়তো সেই লেখাটার গভীরে প্রবেশ করবো।
কিন্তু লেখা আমার হাত থেকে বেরোবে না,
ধীশক্তির অভাব আমার!!!
চমৎকার একটি বিষয় নিয়ে লিখেছেন আপনি!!
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই!!!
লিখতে হলে প্রচুর পড়তে হয় এটাও ঠিক!!
তবে, জাত লেখক যারা, তাদের সৃষ্টকর্তা প্রদত্ত লেখনী শক্তি আছে।
কথাগুলির সাথে একমত, লেখক হওয়া বড় কথা নয় আমরা যারা ক্ষুদ্র পরিসরে লিখি, বড় কথা হলো প্রচুর বই পড়ে, ভ্রমণ করে নানান বাস্তব কর্ম-কান্ডের সাথে জড়িত থেকে প্রচুর জ্ঞানার্জন, এতে কোরে কোন না কোন ভাবে সমাজ যেমন উপকৃত হয় নিজের মধ্যে সফলতার প্রকাশ ঘটে।
আমি প্রচুর পড়লে হয়তো সেই লেখাটার গভীরে প্রবেশ করবো।
কিন্তু লেখা আমার হাত থেকে বেরোবে না,
এ কথাটির সাথেও একমত, প্রচুর বই পড়া ও বই পড়ার অভ্যাসটা ধরে রাখাই বড় কথা, লেখা বের হোক বা না কোন জ্ঞার্জন তো হবে আর আমরা যারা দুই চার লাইন লিখতে শিখেছি তাদের নিয়মিত মত লেখার চর্চাটি থাকলে আর ছয় সাত লাইন লেখা বের হবে।
যদি কখনো অধিক জ্ঞান লাভের সুযোগ ঘটে, নিজের অর্জিত জ্ঞানের সীমা বড় হতে থাকে ঠিক তখন নিজের গড়া তত্বগুলি ভেংগে যেতে থাকে আর নিজের মধ্যে আবিষ্কার হতে থাকে যে এত দিনের গড়া তত্বগুলি ভুল ধারনা উপর দাড়িয়ে ছিল। সংসয়ের বিষয় এই যে অনেকেই ভুল তত্বের মধ্যে জীবনের শেষ দিনটা পর্যন্ত কাটিয়ে দিয়ে থাকেন আর এর বড় কারণ হলো যে নিজের জ্ঞান ভান্ডারকে প্রসারিত না করা।
অনেক জ্ঞানের কথা, হু….
একটি লেখা পড়ার পরে সঠিক মন্তব্যে লেখার আরও ইচ্ছা জাগে। অনেক ধন্যবাদ।
উপরের মন্তব্যগুলি পড়ে বুঝতে পারলাম বেশ গভীরের লেখা, চিহ্ন দিয়ে গেলাম সময় করে আবারও পড়ে নিব।