মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এখন চলছে রেকর্ড মূল্যস্ফীতির কাল। এক মাসে তা কিছুটা কমছে তো, আরেক মাসে আবার বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে খুব স্বাভাবিকভাবেই দেশটির মানুষ খরচ কমিয়ে দিচ্ছে। এ কারণে কমে যাচ্ছে খুচরা বিক্রি। এখন কথা হচ্ছে, যে দেশে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দুই-তৃতীয়াংশ আসে ভোক্তা ব্যয় থেকে, সে দেশে ভোক্তা ব্যয় কমে যাওয়া নিঃসন্দেহে অশনিসংকেত। বিশ্লেষকেরা যে প্রতিদিনই মন্দার শঙ্কা প্রকাশ করছেন, ভোক্তা ব্যয় কমে যাওয়া তার অন্যতম লক্ষণ।
ভোক্তা ব্যয়ের চালচিত্র থেকে মন্দার আশঙ্কা বুঝতে সামগ্রিক বিক্রয় পরিসংখ্যান দেখার প্রয়োজন নেই, বরং দু-একটি পণ্যের বিক্রয় পরিসংখ্যান দেখে মন্দার পূর্বাভাস দেন মার্কিন অর্থনীতিবিদেরা।
লিপস্টিক
আপাতদৃষ্টে পণ্য হিসেবে লিপস্টিককে নিরীহ মনে হলেও ২০০১ সালের মন্দায় যুক্তরাষ্ট্রে ‘লিপস্টিক তত্ত্ব’ জনপ্রিয়তা পায়। তবে লিপস্টিক বিক্রির সঙ্গে মন্দার সম্পর্ক ঠিক উল্টো। মন্দা শুরু হলেও লিপস্টিকের বিক্রি কমেনি। ১৯২৯ ও ১৯৩৩ সালের মহামন্দার সময় এ প্রবণতা দেখা গেছে।
২০০০ সালে আমেরিকার অর্থনৈতিক মন্দার সময় প্রসাধন সংস্থা এস্টি লওডার প্রথম ‘দ্য লিপস্টিক এফেক্ট’ শব্দটি ব্যবহার করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আর্থিক সংকটের মুখে পড়ে সে দেশের নারীদের মধ্যে লিপস্টিক কেনার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছিল।
চলতি বছর অর্থনীতিতে মন্দাভাব দেখা দিলেও আগের মন্দার সময়ের মতো লিপস্টিক বিক্রি কমেনি, বিশেষজ্ঞরা একে বলছেন ‘লিপস্টিক সূচক’। মার্কিন অর্থনৈতিক বিশ্লেষক নাতালিয়া বামবিজারের মতে, ২০২২ সালের প্রথম প্রান্তিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে লিপস্টিক বিক্রি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৮ শতাংশ বেড়েছে।
কেন মন্দায় লিপস্টিকের বিক্রি বাড়ে
লিপস্টিক এফেক্ট নামের যে তত্ত্বটি মন্দার কারণে জনপ্রিয়তা পেয়েছে, তার কারণ হিসেবে বেশ কিছু মতামত বা ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। এর মধ্যে জনপ্রিয় ব্যাখ্যা হচ্ছে, মানুষের আয় কমে গেলে তারা বিলাস পণ্য কেনা বন্ধ করে দেয়। তার পরিবর্তে কম বিলাসী পণ্য কেনার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে। যখন অর্থনীতি স্বাভাবিক থাকে, মানুষের আয়রোজগার ভালো থাকে, তখন সাধারণত বিলাসী পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। আর আয়রোজগার কমে গেলে তখন কম বিলাসী পণ্যের চাহিদা বাড়ে। তখন এসব পণ্যের বিক্রি বেড়ে যায়।
এ ছাড়া মন্দার সময় লিপস্টিক বিক্রি বেড়ে যাওয়ার আরও একটি কারণের কথা জানা যায়। সেটি হচ্ছে মানুষ তার আর্থিক কষ্ট বা আর্থিক সমস্যার কথা ভুলে থাকতে নিজের প্রতি অধিক যত্নশীল হন। সাজগোজের মাধ্যমে নিজের পরিপাটি রাখার মধ্য দিয়ে কষ্ট ভুলে থাকার চেষ্টা করেন। এ কারণেও মন্দার সময় লিপস্টিকের চাহিদা বেড়ে যায় বলে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক খাতের বিশ্লেষকদের ধারণা। এ জন্য মন্দার দেখা দিলেও লিপস্টিকের বিক্রির ওপর নজর রাখেন বিশ্লেষকেরা।
সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ:অক্টোবর ৩১, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,