বৈশ্বিক লিঙ্গবৈষম্য প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের এগিয়ে থাকা নিঃসন্দেহে সুখবর। একই সঙ্গে দুঃসংবাদ হচ্ছে, সামগ্রিক সূচকে বাংলাদেশ আগের তুলনায় পিছিয়েছে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) প্রণীত বৈশ্বিক প্রতিবেদনে ১৫৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৬৫তম। গত বছর ছিল ৫০তম। তবে এই অবনতির কারণ আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে কোনো বিপর্যয় নয়, করোনার অভিঘাত। যেসব ক্ষেত্রে নারীর কাজের সুযোগ বেশি লকডাউনের কারণে, সেসব ক্ষেত্রে তাঁরা কাজ হারিয়েছেন। এ ছাড়া ডিজিটালাইজেশনের কারণেও অনেক নারী বেকার হয়ে পড়েছেন।
দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের পরের অবস্থান যথাক্রমে নেপাল ও ভুটান। সার্বিক সূচকে বাংলাদেশের চেয়ে নেপাল পিছিয়ে থাকলেও শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ সবচেয়ে বেশি, ৮৫ শতাংশ। বাংলাদেশে ৩৮ দশমিক ৪ শতাংশ। অন্যদিকে ভারত সার্বিক সূচকে বাংলাদেশ থেকে পিছিয়ে থাকলেও সেখানে উঁচু পদে নারীর অংশগ্রহণ ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ, বাংলাদেশের ১০ দশমিক ৭ শতাংশ। লিঙ্গসমতায় দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে পিছিয়ে আছে আফগানিস্তান, এরপর পাকিস্তান।
লিঙ্গসমতায় দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের এগিয়ে থাকার অন্যতম কারণ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় নারী-পুরুষের বৈষম্য না থাকা। এ ছাড়া প্রায় তিন দশক ধরে নারী সরকারপ্রধান হওয়ার কারণে আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
লিঙ্গসমতায় স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলো বরাবর এগিয়ে থাকে, অর্থনৈতিকভাবেও তারা উন্নত। কিন্তু সাম্প্রতিক কালের ব্যতিক্রমী প্রবণতা হলো রুয়ান্ডা ও লিথুয়ানিয়ার মতো দেশ, যারা অর্থনৈতিকভাবে তেমন ঋদ্ধ নয়, তারাও লিঙ্গসমতায় এগিয়ে প্রথম দশের তালিকায় আছে। বাংলাদেশে কারিগরি দক্ষতামূলক পেশায় নারীর অংশগ্রহণ খুবই কম। প্রশাসনের পাশাপাশি ইদানীং সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ বাহিনীর মতো চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীর অধিকতর অংশগ্রহণ নিশ্চয়ই উৎসাহব্যঞ্জক।
বাংলাদেশে লিঙ্গসমতা না আসার পেছনে আমাদের আর্থসামাজিক কারণ যেমন আছে, তেমনি আছে মনস্তাত্ত্বিক। সমাজে নারী-পুরুষের বৈষম্য কমানোর পক্ষে কথা বলার যেমন লোক আছে, তেমনি অভাব নেই বিদ্যমান অবস্থা টিকিয়ে রাখার পক্ষের মানুষেরও। এখনো অনেকে মনে করেন, পরিবারে আর্থিক সংগতি থাকলে নারীর ঘরের বাইরে গিয়ে চাকরি করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু একই কথা তাঁরা পরিবারের পুরুষ সদস্যের ক্ষেত্রে বলেন না।
বর্তমানে অনেক চ্যালেঞ্জিং পেশা নারীরা গ্রহণ করছেন। কিন্তু এসব চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীর টিকে থাকার জন্য যে সামাজিক, পারিবারিক ও পরিবেশগত সুরক্ষা প্রয়োজন, তা তাঁরা পান না। ফলে একটা সময় তাঁরা উচ্চশিক্ষা নিয়েও গৃহবন্দী থাকতে বাধ্য হন। লিঙ্গসমতার ক্ষেত্রে আমরা অনেক পথ এগিয়েছি। কিন্তু এখানেই থেমে থাকলে চলবে না। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সব ক্ষেত্রে তাদের সমানাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: এপ্রিল ০২, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,