প্রসিদ্ধ ইরানী কবি, গণিতজ্ঞ বৈজ্ঞনিক, জ্যোতির্বিদ ওমর খৈয়াম লিখেছিলেন ফার্সী ভাষায় তাঁর বিখ্যাত রোবাইয়াৎ- এ।
বর লুহে নিশান বুদনিহা্ আস্ত্
পেইওয়াসাতে কলম য্ নিক ও বদ্ ফরসুদেহ্ আস্ত্
ধর রোজে আয্ ল্ হর আন্ চে বায়িস্ত্ বেদার
মগ খোরদান ও কশিদানে মা বিহুদেহ আস্ত্
ফিটজেরাল্ডের ইংরেজী অনুবাদেঃ
The Moving Finger writes; and, having write,
Moves on; nor all your piety not Wit
Shall lure it back to cancel half a Line,
Nor all your Tears wash out a Word of it,
( Rubai LXX)
নূরুন নাহার বেগমের অনুবাদে –
“অদৃষ্ট যা লেখার তা আগেই লিখে রেখেছেন। ভালো মন্দের লিখনের কলম প্রতি নিয়ত লিখে যাচ্ছে। প্রথম দিনেই নিয়তি প্রত্যকের ভাগ্য লিখে দিয়েছেন। লিখনের একটি লাইনের অর্ধেক লাইনও বাতিল করা অসাধ্য। এর জন্য দঃখ পাওয়ার কিছু নেই চোখের পানি ফেলাও বৃথা।”
ওমর খৈয়ামের মতে জন্ম- মৃত্যু, আমাদের ভাগ্য বা অদৃষ্টের উপর আমাদের কোন নিয়ন্ত্রন নেই, প্রায় পূর্ব নির্ধারিত, নিয়তিতে যা লেখা হয়েছে তা আর খন্ডনের কোন উপায় মানুষের আওতার মধ্যে নেই, তবে প্রতি নিয়ত ভাগ্যের কলম লিখে যাচ্ছে আর সে লিখন থেকে লিখনের একটি লাইনের অর্ধেক লাইনও বাতিল করা অসাধ্য। সব কিছুই মেনে নেওয়ার বিষয়, মেনে নিয়ে সামনের দিকে সুখ লাভের জন্য আনান্দ লাভের জন্য পথ চলা, এর মধ্যে সুখ আনান্দকে গ্রহন করতে হবে অযথা বড় অভাবকে বা বড় আঘাতকে মেনে নিয়ে দুঃখ পাওয়ার মধ্যে কিছু নেই, চোখের পানি ফেলাও বৃথা।
আমরা অনেকেই ধন্যঢ়্য পরিবারে, শিক্ষিত পরিবারে জন্মাতে পারি নি, হয়তো খুব গরীব ঘরে তাই বলে কি অনেকেই গরীব ঘরের সন্তান বলে কি শুধু গরীবই থেকে গেছি !! ওমর খৈয়াম গরীব ঘরে জন্মানো কে মেনে নিয়ে সারা জীবন গরীব হয়ে থাকাকে বুঝায় নি বরং এ জন্য চোখের পানি না ফেলে কী ভাবে ধন্যঢ়্য হওয়া যায়, কী ভাবে শিক্ষিত হওয়া যায় সে দিকেই এগিয়ে যেতে বলেছেন। একই ভাবে কেউ যদি জন্মগত ভাবে পংগু হয়ে অন্ধ হয়ে জন্মায়, সেখানে বড় লক্ষ্য যেন হয় পংগুত্বকে অন্ধত্বকে জয় করে স্বাভাবিক ভাবে চলা, জীবনের অর্থকে খুঁজে নিয়ে চলাম জীবনকে অর্থবহ করা।
ওমর খৈয়ামের মতে জন্ম- মৃত্যু, আমাদের ভাগ্য বা অদৃষ্টের উপর আমাদের কোন নিয়ন্ত্রন নেই, প্রায় পূর্ব নির্ধারিত হয়তো দেখা গেল তিলে তিলে একটি সন্তানকে বড় করে হঠাৎ আলো ঝলমল করা বারো বছরের সন্তানটি চির দিনের জন্য চলে গেল, শোকে পাথর হওয়া সেই পরিবারটি কার সাধ্য আছে তাদেরেক বুঝানো যে এ সব নিয়তির লিখন ! আমারা জানি কেউ আমরা শোকের সাগরে হাবুডুবু খাওয়া ঐ পরিবারটিকে কিছু্ই বুঝাতে পারবনা।
ওমর খৈয়াম বুঝাতে চেয়েছেন যেহেতু প্রায় সব্ই পূর্ব নির্ধারিত তাই এই ভয়াবহ শোককে স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিয়ে জগৎ সংসারের সাথে মিলে মিশে এক হয়ে আবারও নানান স্বপ্নে মাথায় নিয়ে সুখ ও আনান্দের ছোঁয়া নিয়ে জীবনকে অর্থবহ করা।
ধরা যাক একটি ভয়াবহ অসুখ শরীরে বেঁধে বসলো যেখানে আর বেশি দিন আর বেঁচে থাকার তেমন কোন সম্ভবনা নেই, এটা জানার পর জীবনকে থামিয়ে দো্য়ার অর্থ সবচেয়ে বোকামী, এই পূর্ব নির্ধারিত লিখনকে মেনে নিয়ে জীবনের প্রতিটি দিন অর্থবহ করার কথাই বলেছেন ওমর খৈয়াম। আমারা যদি আমাদের দৃষ্টি শক্তিকে প্রসারিত করি তবে দেয়া যাবে আমাদের থেকেও অনেকেই অনেক বেশি অসহায়াত্ব নিয়ে এগিয়ে চলেছে আমরা যারা সচল তাদের চেয়েও অধিক বেগে, কিম্বা আমারা যারা অনেকেই জন্মগত বা নিজ কর্মের গুণে অনেক উপরে উঠে এসেছি – এ নিয়ে সব সময় গর্ব করে চলারও তেমন কোন অর্থ নেই। আমাদের জীবনের শেষ ভাগে কি প্রায় পূর্ব নির্ধারিত তা আমাদের আজানা।
ছবি নেট থেকে সংগ্রহিত।
রেটিং করুনঃ ,
অনেক দার্শনিক কথায় লেখা অনেক ভাবনার লেখা, এই প্রথম ওমর খৈয়ামের কোর বড় লেখা লেখা পড়লাম।
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
ওমর খৈয়াম বিষয়ে লেখাটি পড়ার জন্য ও মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু।
ভাই জান, এখানেই ভাবনার বিষয়;
উপরআলা বলছেন, আমি তোমার ভাগ্য পট একে দিয়েছি, সেই আকা পথেই চলবে তোমরা;
তা হলে নিত্য কেন এত হিসাব নিকাশ?
আবার এটাও বলছেন, ছড়িয়ে পড় খাবারের জন্য। তিনই রিজিক দাতা।
ধন্যবাদ মান্নান ভাই,
তবে আমার মনে হয় এই বিষয়টিতে সব কথাই ঠিক, অর্থাত বিতর্ক এড়ানো।
আমারও একই প্রশ্ন আমার কপালে যদি লিখা থাকে আমি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত খারাপ মানুষ হয়ে থাকবো, তবে কি আমার ভালো হওয়ার আর কোন দরকার নেই !!
অনেক অনেক ধন্যবাদ
মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
“লিখনের একটি লাইনের অর্ধেক লাইনও বাতিল করা অসাধ্য”
আসলে ওমর খৈয়াম কে খুব সহজে জানা সম্ভব নয় তবে আপনার লেখা থেকে তার দর্শণ নিয়ে কিঞ্চিত জানার সুজোগ করে দেবার জন্য ধন্যবাদ প্রিয় রব্বানী ভাই।
মাঝে মাঝে ওমর খৈয়ামের লেখার উপর কিছু কিছু লিখে যাবো, আর প্রিয় পাঠকদের কাছে পাবো আশা রাখি।
অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানবেন আলভী ভাই।
ওমর খৈয়ামের মতে জন্ম- মৃত্যু, আমাদের ভাগ্য বা অদৃষ্টের উপর আমাদের কোন নিয়ন্ত্রন নেই, প্রায় পূর্ব নির্ধারিত, নিয়তিতে যা লেখা হয়েছে তা আর খন্ডনের কোন উপায় মানুষের আওতার মধ্যে নেই, তবে প্রতি নিয়ত ভাগ্যের কলম লিখে যাচ্ছে আর সে লিখন থেকে লিখনের একটি লাইনের অর্ধেক লাইনও বাতিল করা অসাধ্য।
গুণীজজনের কথা বা লেখা শিরোধার্য।
তবে, কর্মফলে ভাগ্যের লিখনও বদলায়!!
তবে, কর্মফলে ভাগ্যের লিখনও বদলায়!!
ওমর খৈয়াম কিন্তু সেই কথাটিও খুব ষ্পষ্ট করে বলেছেন
“” তবে প্রতি নিয়ত ভাগ্যের কলম লিখে যাচ্ছে “”
প্রতি নিয়ত কলম লিখে যাচ্ছে বলেই কর্মফলে ভাগ্যের লিখনও বদলাচ্ছে।
সু চিন্তিত মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ওয়াও! আবার সেই ওমর খৈয়ামের মূল্যবান দার্শনিক অনুবাদ! অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে রব্বানী ভাই, অনুবাদটির জন্য। :-)
“ওমর খৈয়ামের মতে জন্ম- মৃত্যু, আমাদের ভাগ্য বা অদৃষ্টের উপর আমাদের কোন নিয়ন্ত্রন নেই,” অবশ্যই আমি তাতে বিশ্বাসী। :-)