Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

রুশ সম্রাট পিটার দ্য গ্রেটের ভূমিকায় আসতে চান পুতিন (২০২৩)

Share on Facebook

লেখক:হাসান ফেরদৌস নিউইয়র্ক থেকে

যাকে আমরা রাশিয়া বলে চিনি, সে দেশটিও নানা ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়বে। রাশিয়া শুধু রুশ ভাষাভাষী মানুষের দেশ নয়। এটি আসলে নানা জাতি, নানা ভাষা ও ধর্মভুক্ত মানুষের সমন্বয়ে এক সুবিশাল সাম্রাজ্য। সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের মাধ্যমেই রুশ জারদের হাতে এই সাম্রাজ্য নির্মিত হয়েছিল, যেখানে অধিকাংশ ক্ষুদ্র জাতিগুলোর কোনো রাজনৈতিক অধিকারই ছিল না। যেমন ১৯১৭ সালের বিপ্লবের আগে রুশ সাম্রাজ্যের মুসলিমদের ভোটাধিকার পর্যন্ত ছিল না। বলা হতো, রুশ সাম্রাজ্য আসলে ‘ক্ষুদ্র জাতিসমূহের জেলখানা’।

সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল সেই রুশ সাম্রাজ্যের উত্তরসূরি। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন বিলুপ্ত হয়ে দেশটি ১৫ ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ইউক্রেন সেই ১৫টির একটি। চলতি যুদ্ধে রাশিয়ার পরাজয় তাকে আরও কয়েক ভাগে বিভক্ত করবে, এ কথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। সেই অর্থে ইউক্রেন যুদ্ধ যে পুতিনের জন্য অস্তিত্বের লড়াই, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই রুশ বিপ্লবের জনক লেনিন বুঝতে পেরেছিলেন, এই সাম্রাজ্য ধরে রাখতে হলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর স্বাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ১৯২২ সালে ‘সংখ্যালঘু জাতিসমূহের স্বাধিকার প্রশ্নে’ যে আইন তিনি প্রস্তাব করেন, তাতে এসব নিপীড়িত জাতির স্বাধীনতা অর্জনের পূর্ণ অধিকারের বিষয়টি সমর্থন করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, রুশদের মতো (যেসব সাম্রাজ্যবাদী শক্তি) আমরা ‘মহান’ হিসেবে চিহ্নিত করি, তারা আসলে শুধু ক্ষুদ্র জাতিসমূহের বিরুদ্ধে নৃশংসতার জন্যই মহান। লেনিন রাশিয়ার জাতিগত প্রশ্নের সমাধান করে যেতে পারেননি, তার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়।

ভ্লাদিমির পুতিন শুধু যে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন মেনে নিতে পারেননি, তা–ই নয়, তিনি রুশ সাম্রাজ্যভুক্ত দেশসমূহের বিযুক্তি ও তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারও মেনে নিতে প্রস্তুত নন। ইউক্রেন তাঁর চোখে ‘লিটল রাশিয়া’ বা খুদে রাশিয়া, তাকে রাশিয়ার পদানত হয়েই থাকতে হবে। ২০২১ সালের জুলাই মাসে যে সাড়ে পাঁচ হাজার শব্দের প্রবন্ধ পুতিনের নামে ক্রেমলিন থেকে প্রকাশিত হয়, তার মোদ্দাকথাই ছিল, শুধু রাশিয়ার সঙ্গে, অর্থাৎ তার নিয়ন্ত্রণে থাকলেই ইউক্রেনের পক্ষে স্বাধীন থাকা সম্ভব।

পুতিন যে সোভিয়েত ইউনিয়নকে ইতিহাসের ভাগাড় থেকে তুলে আনতে মরিয়া, সে কথার প্রমাণ অবশ্য আরও আগে, ২০০৭ সালে মিউনিখের নিরাপত্তা সম্মেলনে তাঁর এক দীর্ঘ ভাষণে রয়েছে। সেখানে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনকে শতাব্দীর সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন, যার জন্য দায়ী করেছিলেন পশ্চিমা শক্তিসমূহকে। এরপরের বছরই তিনি জর্জিয়া আক্রমণ করে তার অংশবিশেষ দখল করে নেন। এরপরে হাত বাড়ান আরেকটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্র মলদোভার দিকে, সেখানেও সৈন্য পাঠিয়ে নিজের দখলদারত্ব কায়েম করেন। এরপরের কথা তো সবার জানা, ২০১৪ সালে প্রথমে ক্রিমিয়া এবং পরে দনবাসের অংশবিশেষ নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে রাশিয়া।
সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ

পুতিনের অভিযোগ, পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সম্প্রসারণের ফলে রাশিয়ার নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন। তা ঠেকাতেই তাঁকে আত্মরক্ষার উপায় হিসেবে আক্রমণের পথ বেছে নিতে হয়েছে। তাঁর ভাষায়, এটি যুদ্ধ নয়, বিশেষ সামরিক অভিযান। রাশিয়ার দুষ্টগ্রহ এড়াতে ইউক্রেন পশ্চিমা জোটে অন্তর্ভুক্ত হতে চায়, এটা কোনো গোপন খবর নয়। কিন্তু শুধু এই ‘উসকানি’র ভিত্তিতে রাশিয়ার মতো একটি পরাশক্তি প্রতিবেশী একটি ক্ষুদ্র দেশের ওপর সব লাট-বহর নিয়ে আক্রমণ করে বসবে, সেটা কেমন কথা?

ঠিক এ কথাটাই গত জুলাইয়ে সমরখন্দে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে পুতিনকে জিজ্ঞেস করেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর কথায়, এটা তো একবিংশ শতাব্দী। এখন যুদ্ধ করে বিবাদ মেটানোর চেষ্টা তো গ্রহণযোগ্য নয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর যে আইনভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠে, রাশিয়া যার অন্যতম রূপকর, সেখানে আগ্রাসী যুদ্ধের কোনো স্থান নেই। আলাপ-আলোচনা করেই সংকটের সমাধান করতে হবে। মোদি প্রকারান্তরে সে কথাই বলতে চেয়েছিলেন।

রাশিয়ার উদ্দেশে এই কথাটা আরও কঠোরভাবে বলেছিলেন জাতিসংঘে কেনিয়ার রাষ্ট্রদূত মার্টিন কিমানি। ইউক্রেন আক্রমণের ঠিক আগেভাগে রাশিয়া এককভাবে তার অধিকৃত দনবাসের দুটি অঞ্চলকে স্বাধীন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর জাতিসংঘে এক নিন্দা প্রস্তাবে বিতর্কের সময় রাষ্ট্রদূত কিমানি স্মরণ করিয়ে দেন, ঔপনিবেশিক আমলে শক্তিধর দেশসমূহ যেমন ইচ্ছা নিজেদের দখলকৃত অঞ্চলের সীমান্ত বেঁধে দিত। কিন্তু এখন তো আর ঔপনিবেশিক কাল নয়। এখন সীমান্ত বিরোধ মেটাতে আন্তর্জাতিক আইন রয়েছে, জাতিসংঘ রয়েছে।

তবে এ কথাও অস্বীকার করা যাবে না, এই যুদ্ধকে ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশসমূহ রাশিয়াকে একহাত দেখে নিচ্ছে। সে সুযোগ অবশ্য রাশিয়া নিজেই পশ্চিমের হাতে তুলে দিয়েছে। পাঠকের মনে থাকতে পারে, যুদ্ধের আগে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক শক্তি ব্যবহারের বিরুদ্ধে বারবার হুঁশিয়ার করে দিয়েছিল। জবাবে রাশিয়া এসব কথা পশ্চিমা প্রচার-প্রচারণা হিসেবে উড়িয়ে দিয়েছিল। পরে যুদ্ধ শুরু হলে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধমন্ত্রী পোল্যান্ড সীমান্তে এসে বলেছিলেন, রাশিয়ার যুদ্ধ করার ক্ষমতা নিঃশেষ না হওয়া পর্যন্ত ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হবে না।

অন্য কথায়, এক সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের জবাবে আরেক সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ। মাঝখানে বেচারা ইউক্রেন দুই হাতির পায়ের নিচে চিড়েচ্যাপটা হচ্ছে।
অমীমাংসিত যুদ্ধ

এই যুদ্ধের এক বছর পর এখন একটা বিষয় স্পষ্ট। রাশিয়া এই যুদ্ধে জিতবে না। যুদ্ধে জেতার ক্ষমতা তার নেই, ভাগনার কোম্পানির ভাড়াটে সৈন্য, যার অধিকাংশ রাশিয়ার বিভিন্ন জেলখানা থেকে সংগ্রহ করা, তাদের দিয়ে যুদ্ধে জেতা অসম্ভব। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র তাকে জিততে দেবেও না। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, পুরো পশ্চিমা জোট রুশ হামলাকে তাদের নিরাপত্তার বিরুদ্ধে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছে।

অন্যদিকে কার্যত একা ও একঘরে অবস্থায় এই যুদ্ধে লড়ছে রাশিয়া। গোলাবারুদ শেষ হয়ে আসছে, তাই বাধ্য হয়ে তাকে হাত পাততে হচ্ছে ইরান ও উত্তর কোরিয়ার মতো অর্থনৈতিকভাবে হাঁটুভাঙা দেশের কাছে। বিস্তর তেল-গ্যাস থাকায় আপাতত পুতিনের টাঁকশালে টান ধরেনি, কিন্তু এ কেবল সময়ের ব্যাপার। একজন রুশ ধনকুবের স্বীকার করেছেন, ‘আমাদের জমানো টাকা শেষ হয়ে আসছে। বিদেশি প্রযুক্তি আমদানি করতে না পারায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।’ শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কন্সতানতিন সোনিন লিখেছেন, এই যুদ্ধের ফলে দীর্ঘমেয়াদি হিসেবে মহাবিপর্যয়ের মুখে পড়বে রাশিয়া।

অন্যদিকে ইউক্রেনেরও এমন ক্ষমতা নেই যে সে রাশিয়াকে কাবু করবে। পশ্চিমা দেশগুলো সরাসরি জড়িয়ে পড়লে অবস্থা ভিন্ন দাঁড়াত, কিন্তু অভ্যন্তরীণ নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার ভয়ে তারা সরাসরি সৈন্য নামাবে না বা লড়াইটা রাশিয়ার ভেতরে নিয়ে যাবে না।
তাহলে এর শেষ কোথায়

মস্কো থেকে বারবার বলা হচ্ছে, তারা এই যুদ্ধের শেষ চায়, তবে নিজের শর্তে। ইউরোপীয় গোয়েন্দা কর্তাদের ধারণা, মস্কো এই মুহূর্তে যা চায় তা হলো দনবাস এলাকায় নিজের অবস্থান সংহত করা। তা সম্ভব হলেই সে এককভাবে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে আলাপ-আলোচনার ডাক দেবে। এর আগে জর্জিয়া বা মলদোভায় সৈন্য ঢুকিয়ে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করে সে সরাসরি যুদ্ধ থামিয়েছে। ফলে সেখানে অবস্থা দাঁড়িয়েছে ‘না যুদ্ধ, না শান্তি’। ১৪ বছর ধরেই এই অবস্থা, সে কারণে এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘ফ্রোজেন কনফ্লিক্ট’ বা হিমায়িত বিবাদ।

খ্যাতনামা রুশ ইতিহাসবিদ সের্গেই রদচেঙ্কো এই রকম একটি ‘অমীমাংসিত’ হিমাবস্থার কথা লিখেছেন নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় এক নিবন্ধে।

তাঁর বিবেচনায়, উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে এই রকম একটি অমীমাংসিত অবস্থা বিরাজ করছে। প্রায় ৭০ বছর কেটে গেছে, এই দুই দেশের মধ্যে এখনো শান্তিচুক্তি হয়নি, যদিও নতুন কোনো যুদ্ধও বাধেনি।

ইউক্রেন যুদ্ধ সে রকম একটি হিমায়িত বা অমীমাংসিত যুদ্ধে দাঁড়াতে পারে। রদচেঙ্কোর যুক্তি, যদি এই দুই দেশের কেউই চূড়ান্ত জয়লাভে সক্ষম না হয়, তাহলে একধরনের অঘোষিত যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা রয়েছে। নিজের যুদ্ধলক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হলেও দনবাস দখলকে তাদের কৌশলগত বিজয় ঘোষণা করে অস্ত্র ও সৈন্য গুটিয়ে নিতে পারে মস্কো। ইউক্রেনও বলতে পারবে তারা রাশিয়ার থাবা থেকে নিজেদের রাজধানী ও দেশের অধিকাংশ অঞ্চল রক্ষা করতে পেরেছে। জয় তাদেরই হয়েছে। ফলে যুদ্ধটা হয়তো ‘হিমায়িত বিবাদে’ পর্যবসিত হবে, কিন্তু দিনের পর দিন লাশ গোনার চেয়ে সেটি তো অনেক ভালো হবে।

রদচেঙ্কোর চিত্রিত নাট্যচিত্রটি ফালতু বলে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। তবে অবস্থা অনেকটা নির্ভর করবে চলতি বসন্ত ও গ্রীষ্মে পরবর্তী আক্রমণ ও পাল্টা–আক্রমণের ফলাফল থেকে। দুই পক্ষই এখন তেমন আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। আরও এক বছর বা তার চেয়েও অধিক সময় সেই লড়াই স্থায়ী হতে পারে। আরও অনেক রক্তক্ষয় ও বিপর্যয়ের ভেতর না যাওয়া পর্যন্ত এই যুদ্ধ থামবে—সে কথা ভাবার কোনো কারণ নেই।

সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ:মার্চ ১২, ২০২৩

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ