রুবলের দাম ব্যাপক হারে কমতে শুরু করায় পতন ঠেকাতে মস্কো স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেন সাময়িকভাবে বন্ধ করা দিয়েছে রাশিয়া। গতকাল সোমবার থেকে স্টক এক্সচেঞ্জটির লেনদেন সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। এর আগে ওই দিন সকালে স্টক এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন শুরু করতে বিলম্ব করা হয়। পরে তিনটার পর জানানো হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্টক এক্সচেঞ্জটির লেনদেন সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে।
রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধের এ সিদ্ধান্তের কথা জানায়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ করা ছাড়াও রুবলের পতন ঠেকাতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারই অংশ হিসেবে নীতি সুদহার এক লাফে সাড়ে ৯ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে উন্নীত করেছে রাশিয়া। অর্থাৎ মুদ্রার মান ধরে রাখতে নানা ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া।
এদিকে ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে চলেছে বিশ্বের বড় বড় অর্থনীতির সব দেশ ও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা। তাতে অর্থনৈতিকভাবে সংকটে পড়েছে বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর এই দেশ। নিষেধাজ্ঞার জেরে গত সপ্তাহ থেকে ডলারের বিপরীতে কমতে থাকে রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের দাম। এ ছাড়া দেশটির সাধারণ নাগরিকেরা আতঙ্কে ব্যাংক থেকে নগদ অর্থ তুলে নিচ্ছেন। তাই মুদ্রার দরপতন ঠেকাতে নীতি সুদহার বাড়ানোর পাশাপাশি শেয়ারবাজারের লেনদেনও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বিশ্লেষকদের বরাতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার ধাক্কা কাটাতে না পারলে ১৯৯৮ সালের পর প্রথমবারের মতো ঋণখেলাপি হতে পারে রাশিয়া। গত সপ্তাহে ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর রাশিয়ার বেশ কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সম্পদ জব্দের ঘোষণা দেয় যুক্তরাজ্য। তার পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে থাকা পশ্চিমা বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ৬৪০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল জব্দের হুঁশিয়ারি দেয় রাশিয়া। তবে সংঘাত এড়াতে এখনো সেই পদক্ষেপ নেয়নি দেশটি।
এদিকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও কঠোর অবস্থানে যেতে পারে বলে জানিয়েছে পশ্চিমা জোট। যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক গার্ডিয়ানকে বলেন, তাঁরা রাশিয়ার ওপর সর্বোচ্চ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবেন। যত দিন সংঘাত অব্যাহত থাকবে, তত দিন রাশিয়াকে আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার ব্যাপারে তাঁরা দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।
নিষেধাজ্ঞায় বিপর্যস্ত রাশিয়ার মুদ্রা রুবল।
ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর জেরে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নজিরবিহীন সব নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও তাদের মিত্রদেশগুলো। ফলে আজ সোমবার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের দরপতনের শঙ্কার কথা জানিয়েছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা জানান, রাশিয়াসহ বিশ্বের সব বড় বাজারে রুবলের দাম কমপক্ষে ২৫ শতাংশ কমে যেতে পারে। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্যবস্তু ছিল রাশিয়ান আর্থিকব্যবস্থা, বিশেষ করে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যক্রম সংকুচিত করা। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর ছিল আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রথমবারের মতো রাশিয়ান ব্যাংকগুলোকে সুইফট ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া। এর ফলে ব্যাংকগুলোর আর্ন্তজাতিক অর্থ লেনদেন কার্যক্রম অনেকটাই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
গার্ডিয়ান জানিয়েছে, গতকাল রোববার সকালে একটি এটিএম বুথের সামনে বেশ কিছু রাশিয়ানের দীর্ঘ লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে আজ বাজার খোলার সঙ্গে সঙ্গে মুদ্রার জন্য ভিড় আরও বাড়বে।
রুবলের মান যে কমেছে, তার লক্ষণও ইতিমধ্যে দেখা যাচ্ছে। গতকাল সন্ধ্যায় রাশিয়ার টিংকফ ব্যাংক প্রতি ডলার কিনেছে ৮৯ রুবলের বিনিময়ে এবং বিক্রি করেছে ১৫৪ রুবলে। তার মানে ডলারের বিপরীতে মান হারাচ্ছে রুবল।
গার্ডিয়ান জানিয়েছে, রাশিয়ার অভ্যন্তরেও নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য সংস্থাগুলো নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকির কারণে রাশিয়ায় তাদের অফিস কমাতে বা রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে শুরু করেছে। যেসব কোম্পানি জনপ্রিয় পণ্য বিক্রি করে, তারাও রাশিয়ার বাজারে তাদের কার্যক্রম সীমিত করছে। যেমন মার্সিডিজ বেঞ্জ, অডি, জেনারেল মোটরস এবং জাগুয়ার ল্যান্ড রোভারসহ গাড়ি নির্মাতারা রাশিয়ায় পণ্যের চালান বন্ধ করেছে। এ ছাড়া আইফোন ও অন্যান্য পণ্য বিক্রির দোকানগুলোও বলেছে যে তারা নতুন কোনো চালান পাচ্ছে না।
এদিকে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব থাকলেও রাশিয়ার এসবার, ভিটিবি ব্যাংকসহ বড় ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের আশ্বস্ত করেছে। তারা জানিয়েছে, ব্যাংকগুলোতে থাকা রুবলের আমানত তারা ব্যবহার করতে এবং ডলার ও ইউরোর মতো বৈদেশিক মুদ্রায় বিনিময়ও করতে পারছে।
তবে এর সঙ্গে ভিন্নমত জানিয়েছে ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংক (ইসিবি)। আজ সকালের এক বিবৃতিতে ইসিবি বলেছে, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার ফলে এসবার ব্যাংকের ইউরোপীয় শাখা এবং এর সহযোগী সংস্থাগুলো উল্লেখযোগ্য আমানত বহিঃপ্রবাহের (ডিপোজিট আউট ফ্লো) মুখে পড়েছে। এর ফলে ব্যাংকটির তারল্য অবস্থান কমে যাবে। আর এই অবস্থান পুনরুদ্ধারের বাস্তবসম্মত কোনো সুযোগ এই মুহুর্তে তাদের সামনে নেই।
সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ মার্চ ০১, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,