‘মোদি’ পদবি নিয়ে মন্তব্যের জেরে মানহানি মামলায় ভারতের কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী নিষ্কৃতি পেলেন না। গুজরাটের সুরাটের ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের রায় বহাল রাখলেন সুরাট দায়রা আদালতের বিচারক আর পি মোগেরা। ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের সাজা স্থগিত রাখার যে আবেদন রাহুল করেছিলেন, আজ বৃহস্পতিবার বিচারক মোগেরা তা খারিজ করে দেন। এর ফলে লোকসভার সদস্যপদ রাহুল এখনই ফেরত পাচ্ছেন না।
রায়ে বিচারক মোগেরা বলেন, সাজা স্থগিত না রাখলে ও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ না দেওয়া হলে সেটা যে তাঁর জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হবে, সেই যুক্তি রাহুল প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। বিচারক মোগেরা সুপ্রিম কোর্টের রায়েরও উল্লেখ করেছেন, যাতে বলা হয়েছে সাজা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত অনেক ভেবেচিন্তে নেওয়া দরকার। দেখা উচিত যেন বিচার বিভাগের ওপর জনগণের আস্থা টলে না যায়।
এ রায়কে ‘সন্দেহজনক ও দুর্ভাগ্যজনক’ বলেছে কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ জানিয়েছেন, এর বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলের আইনজীবী নেতা অভিষেক মনু সিংভি কংগ্রেস দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘একটা ভুল রায় বহাল রাখা হলো। দল শিগগিরই উচ্চতর আদালতে আবেদন জানাবে।’ রাহুল মানহানিকর কিছুই বলেননি—এমন দাবি করে তিনি বলেন, ‘বিজেপি ভাবছে এভাবে তাঁর কণ্ঠরোধ করা যাবে। তাদের ভাবনা ভুল। রাহুল অন্যায়ের প্রতিবাদ করেই যাবেন। জনতার পক্ষে কথা বলবেন।’
চার বছর আগে ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে কর্ণাটকের কোলার জেলায় এক জনসভায় রাহুল জানতে চেয়েছিলেন, চোরেদের পদবি কেন ‘মোদি’ হয়? পলাতক নীরব মোদি, ললিত মোদির নাম করে ওই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণ করেছিলেন।
এমন মন্তব্যের জেরে গুজরাটের বিজেপি নেতা পূর্ণেশ মোদি সুরাটে মামলা করেন। চার বছর পর সেই মামলার রায়ে রাহুলকে দোষী সাব্যস্ত করে দুই বছরের জেল দেওয়া হয়। গত ২৩ মার্চ সেই রায় আসার পরদিন সংবিধান ও জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী তাঁর লোকসভা সদস্যপদ খারিজ হয়ে যায়। রাহুলকে সরকারি বাড়িও ছাড়তে হচ্ছে। ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের রায় দায়রা আদালত বহাল রাখায় রাহুলকে এবার হাইকোর্টের শরণাপন্ন হতে হবে। রাহুলের আর্জি মেনে দায়রা আদালত ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সাজা স্থগিত রাখলে রাহুল লোকসভার সদস্যপদ ফেরত পেতেন।
সুরাটের রায়ের পর বিজেপি শিবির উৎফুল্ল। দলের মুখপাত্র শেহজাদ পুনাওয়ালা এই রায়কে ‘সত্যমেব জয়তে’ আখ্যা দিয়ে জানতে চান, গান্ধী পরিবার এবার দেশের অনগ্রসরদের কাছে ক্ষমা চাইবে কি না। ‘মোদি’ পদবিধারীরা কোনো কোনো রাজ্যে অনগ্রসর শ্রেণিভুক্ত। বিজেপি ওই মন্তব্যকে রাজনৈতিক স্বার্থে হাতিয়ার করতে চাইছে।
বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ‘দায়রা আদালতের রায়ে দেশবাসী খুশি। এই রায় গান্ধী পরিবারের ঔদ্ধত্যে এক চপেটাঘাত। রায়ে প্রমাণ হলো আইনের চোখে সবাই সমান।’
‘মোদি’ পদবি নিয়ে রাহুলের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন বিহারের বিজেপি নেতা ও রাজ্যসভা সদস্য সুশীল মোদিও। পাটনায় করা ওই মামলায় ২৫ এপ্রিল রাহুলকে হাজিরা দিতে হবে। কংগ্রেসের আশঙ্কা, ওই মামলার রায়ও রাহুলের বিরুদ্ধে যেতে পারে। এই পরিস্থিতিকে কীভাবে রাজনৈতিক দিক থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে চালিত করা যায়, দলের শীর্ষ নেতারা এখন সেই চিন্তাভাবনা চালাচ্ছেন।
জম্মু–কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি এই রায়ের পর রাহুলের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। বিচারব্যবস্থার কড়া সমালোচনাও করেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার একাধিক টুইটে মেহবুবা বলেন, ‘আমাদের শেষ আশা বিচার বিভাগ। অথচ দুঃখজনকভাবে দেখছি কীভাবে বিচার ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে, কীভাবে বেছে বেছে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। ৩৭০ অনুচ্ছেদ, বিলকিস বানু এবং সিএএ–সংক্রান্ত মামলা বিলম্বিত করা হচ্ছে অথচ তুচ্ছ মানহানির মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করা হচ্ছে।’
৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের উল্লেখ করে মেহবুবা টুইটে লেখেন, ‘বিজেপির প্রথম একতরফা বিপর্যয়কর সিদ্ধান্তের ফল জম্মু–কাশ্মীরকে ভোগ করতে হচ্ছে। আজ সেই আগুন সারা দেশে জ্বলছে। সবকিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাক করে দেওয়ার ভয় দেখাচ্ছে। আশা করি দেশবাসী পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করবে ও বুঝবে; এই প্রবণতা রোখার শক্তি একমাত্র তাদের হাতেই রয়েছে।’
সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ:এপ্রিল ২০, ২০২৩
রেটিং করুনঃ ,