লেখা: এএফপি ও রয়টার্স মস্কো ও কিয়েভ।
নতুন বছরে যুদ্ধে জয়ী হওয়ার প্রত্যয়ের কথা জানিয়েছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। খ্রিষ্টীয় নববর্ষ উপলক্ষে দুই দেশের প্রেসিডেন্টের জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বিষয়টি উঠে আসে। ইউক্রেন বলছে, এই যুদ্ধে জয়ী হওয়া ছাড়া তাদের কোনো বিকল্প নেই। আর রাশিয়া বলছে, তাদের পিতৃভূমির অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই এই যুদ্ধ। এদিকে নববর্ষের প্রাক্কালে রাতভর ইউক্রেনজুড়ে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া।
বরাবরের মতো খাকি পোশাক পরে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। যুদ্ধে সবচেয়ে নাটকীয় মুহূর্ত ও জয়ের স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, ‘আমাদের বলা হয়েছিল যে আত্মসমর্পণ ছাড়া তোমাদের কোনো পথ নেই। আমরা বলছি, জয় ছাড়া আমাদের হাতেও কোনো বিকল্প নেই। পুরো দেশ এক হয়ে আমরা লড়াই করছি।’ জেলেনস্কির দেওয়া ১৭ মিনিটের ভিডিও বার্তায় ইউক্রেনজুড়ে রুশ বাহিনীর বিভিন্ন হামলার ভিডিও চিত্রও দেখানো হয়।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি অবকাঠামোগুলোয় রুশ বাহিনীর একের পর এক হামলার কারণে অন্ধকার ও ঠান্ডায় দিনের পর দিন কাটিয়েও যুদ্ধ করার জন্য ইউক্রেনীয়দের প্রশংসা করেন জেলেনস্কি। এ জন্য দেশবাসীকে ধন্যবাদও জানান তিনি। জেলেনস্কি বলেন, ‘এই বছরটি (২০২২) আমাদের হৃদয়ে ক্ষত হয়ে থেকে যাবে। কাঁদতে কাঁদতে আমাদের চোখের পানি ফুরিয়ে গেছে। আমরা চিৎকার করে সব রকম প্রার্থনা করেছি। এটা ভুলে যাওয়া অসম্ভব। ক্ষমা করে দেওয়াও অসম্ভব। তবে আমরা লড়াই করেছি এবং এ লড়াই চালিয়ে যাব। আমাদের এই লড়াই একটি শব্দের জন্য। সেটি হলো বিজয়।’
সাধারণত ক্রেমলিনে কোনো কক্ষে বসে নতুন বছর শুরুর আগে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তবে এবার দেখা গেল ব্যতিক্রম। নিজের দুই পাশে সেনাদের নিয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন তিনি। পুতিন বলেন, ২০২২ ছিল সাহস ও নায়কোচিত ভূমিকার সঙ্গে ধোঁকা ও ভীরুতার পার্থক্যের বছর। যুদ্ধের ময়দানে রুশ বাহিনীর পিছু হটা নিয়ে সমালোচনা থাকলেও সেনাদের ধন্যবাদ জানান পুতিন। একই সঙ্গে সেনাদের বলেন, আরও বেশি কিছু করতে হবে।
ধূসর স্যুট–টাই পরা পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গে বলেন, ‘(এই যুদ্ধের) প্রধান বিষয়টি হলো রাশিয়ার ভাগ্য। পিতৃভূমি রক্ষা করা পূর্বসূরি ও উত্তরসূরিদের কাছে আমাদের পবিত্র দায়িত্ব। নৈতিক ও ঐতিহাসিক অবস্থান থেকে ন্যায়ের যে কথা বলা হয়, সেটিও আমাদের পক্ষে।’
রাশিয়াকে ধ্বংসের অপচেষ্টায় পশ্চিমা দেশগুলো কিয়েভকে ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করছে বলে মন্তব্য করেন পুতিন। তিনি বলেন, ‘রাশিয়া এটা কখনোই হতে দেবে না।’ যুদ্ধ সম্পর্কে আগের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে পুতিন বলেন, ‘আমাদের এই যুদ্ধ চলবে। আমরা সব সময় এটা জেনে এসেছি এবং আজও এ বিষয় আমরা একমত যে স্বাধীন, সার্বভৌম ও নিরাপদ রাশিয়া নির্ভর করছে আমাদের ইচ্ছা ও শক্তির ওপর।’
রাতভর হামলা
এদিকে নতুন বছরেও রুশ বাহিনী ইউক্রেনের বিভিন্ন স্থানে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। গত কয়েক দিনের মতো নতুন বছরের প্রাক্কালে কিয়েভসহ ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রুশ বাহিনী। বিশ্ব যখন বর্ষবরণের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন ইউক্রেনে সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে সতর্ক করে সাইরেন বাজছিল। কিয়েভসহ ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দারা টানা চার ঘণ্টা ধরে সাইরেনের শব্দ শুনে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেন।
তবে রুশ বাহিনীর প্রায় অর্ধশত ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছে ইউক্রেন। দেশটির বিমানবাহিনী জানিয়েছে, রুশ বাহিনী ইরানের তৈরি শাহেদ ড্রোন দিয়ে শনিবার রাতভর ইউক্রেনজুড়ে হামলা চালায়। ৪৫টি শাহেদ ড্রোন ভূপাতিত করেছে তারা। এর মধ্যে ৩২টি ড্রোন রোববার মধ্যরাতের পর ও ১৩টি শনিবার দিবাগত রাতে ভূপাতিত করা হয়।
সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ:জানুয়ারী ০২, ২০২৩
রেটিং করুনঃ ,