ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে পশ্চিমারা। সেই সঙ্গে অনেক দেশ তাদের আকাশপথ রাশিয়ার জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। এ তালিকায় ইউরোপের বেশির ভাগ দেশ যোগ দিতে যাচ্ছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) এক কর্মকর্তা। খবর বিবিসির।
ইউরোপের আকাশপথে বাধা পাওয়ার পর রাশিয়ার উড়োজাহাজগুলোর পশ্চিমে যাত্রার জন্য খুব কমপথই খোলা রয়েছে। ইউক্রেনে হামলার পর থেকে রাশিয়ার মালিকানায় থাকা উড়োজাহাজকে যুক্তরাজ্য, পোল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্র, বুলগেরিয়া, রোমানিয়া, স্লোভেনিয়া ও বাল্টিক দেশগুলোর আকাশসীমায় প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছিল না।
এরই মধ্যে আজ রোববার থেকে রাশিয়ার জন্য জার্মানির আকাশপথ তিন মাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এদিনই রাশিয়ার বিরুদ্ধে আকাশপথে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বেলজিয়াম, ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডসও। বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডি ক্রু বলেন, ‘যারা মানুষের সঙ্গে যুক্ত থাকে ইউরোপের আকাশ তাদের জন্য উন্মুক্ত; যারা নির্মম আগ্রাসন চালায় তাদের জন্য নয়।’
এদিকে রাশিয়ার উড়োজাহাজগুলোর জন্য ইতালির আকাশপথ বন্ধ করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। আকাশপথ বন্ধের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে টুইটারে এক পোস্টে জানিয়েছেন ফিনল্যান্ডের পরিবহনমন্ত্রী টিমো হারাক্কা। দেশটির সঙ্গে রাশিয়ার ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটারের আকাশসীমান্ত রয়েছে। এ তালিকায় যোগ দিতে যাচ্ছে ডেনমার্ক, সুইডেন, আইসল্যান্ড ও অস্ট্রিয়াও।
পশ্চিমাদের আকাশপথ বন্ধের পাল্টা জবাবে নানা গন্তব্যে ফ্লাইট স্থগিত করেছে রুশ এয়ারলাইনসগুলো। আজ রাশিয়ার দোমোদেভোদো ও শেরেমেতিয়েভো বিমানবন্দরে প্যারিস, ভিয়েনা কালিনিনগ্রাদসহ নানা গন্তব্যে ফ্লাইট স্থগিত করতে দেখা গেছে। আগামী ১৩ মার্চ পর্যন্ত ইউরোপের বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রা স্থগিতের ঘোষণা এসেছে রুশ এস-৭ এয়ারলাইনসের পক্ষ থেকে।
একই পথে হেঁটেছে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় এয়ারলাইনস অ্যারোফ্লট। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, কম করে হলেও আগামী ২৬ মার্চ পর্যন্ত লাটভিয়া ও রোমানিয়া এবং ২৮ মার্চ পর্যন্ত প্রাগ ও ওয়ারশগামী ফ্লাইটের চলাচল বন্ধ রাখবে তারা।
এদিকে ফিনল্যান্ড উপসাগরের প্রায় ১২০ কিলোমিটার আকাশসীমা নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখতে পারে ফিনল্যান্ড। এমনটি হলে ইউরোপের যেসব দেশের আকাশপথ রাশিয়ার জন্য এখনো নিষিদ্ধ হয়নি, সেসব দেশে যেতে এ পথটিই শুধু খোলা থাকবে মস্কোর সামনে।
নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ার পর পশ্চিমের দেশগুলোতে পৌঁছাতে রুশ উড়োজাহাজগুলোকে আরও বেশি পথ ঘুরতে হবে। একই সঙ্গে বাড়বে যাত্রার সময়। একই সমস্যায় পড়েছে পশ্চিমা কয়েকটি এয়ারলাইনসও।
যুক্তরাজ্যের ভার্জিন আটলান্টিক এয়ারলাইনস জানিয়েছে, দেশটি থেকে ভারত ও পাকিস্তানগামী ফ্লাইটগুলোর ১৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়তি সময় লাগতে পারে। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার ডারউইন থেকে লন্ডনগামী উড়োজাহাজগুলো আরও বেশি পথ ঘুরে যাবে বলে জানিয়েছে কান্তাস এয়ারলাইনস।
ব্যাংক থেকে অর্থ তোলার হিড়িক
ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আসছে আরও নিষেধাজ্ঞা। ব্যাংকগুলোতে অর্থসংকট সৃষ্টির আশঙ্কায় আগাম অর্থকড়ি তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছেন বহু গ্রাহক। এমন পরিস্থিতিতে লোকজনকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বিবিসির খবরে বলা হয়, রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক বিবৃতিতে বলেছে, রাশিয়ার অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও আর্থিক খাত সচল রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে ব্যাংক অব রাশিয়ার হাতে যথেষ্ট সম্পদ ও উপকরণ রয়েছে।
২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। এরপর গতকাল শনিবার ইউরোপের বিভিন্ন দেশে থাকা রুশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদ জব্দের ঘোষণা দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডা। এ মুহূর্তে ব্যাংকটির প্রায় ৬৩০ বিলিয়ন (৬৩ হাজার কোটি) মার্কিন ডলার রিজার্ভ রয়েছে।
পশ্চিমা দেশগুলোর এ নিষেধাজ্ঞার কারণে নিজ দেশের ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা করতে বিদেশে সম্পদ বিক্রয় করতে পারবে না ব্যাংক অব রাশিয়া। এ ছাড়া আর্থিক লেনদেনের বার্তা আদান-প্রদানের আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা ‘সুইফট’ থেকেও রাশিয়ার ব্যাংকগুলোকে সরিয়ে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশ।
বিশ্লেষকদের ধারণা, আজ রোববার সাপ্তাহিক ছুটি শেষ হলে আগামীকাল সোমবার থেকে বাজারগুলো খুলে যাবে। তখন বাজারে রুশ মুদ্রা রুবলের দাম পড়বে। এর প্রভাবে দেশটির নাগরিকেরা ব্যাংকগুলো থেকে অর্থ তুলে নিতে আরও ভিড় করবেন।
ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্সের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্লে লোয়েরি বলেন, নতুন এই নিষেধাজ্ঞাগুলো রাশিয়ার অর্থনীতি ও ব্যাংকব্যবস্থার জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে। নিষেধাজ্ঞা দেশটির ব্যাংকগুলোতে অর্থের সংকট আরও বাড়িয়ে তুলবে।
সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ ফেব্রুয়ারী ২৭, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,