লেখক:লু জিয়াং।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান গত রোববার চীনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, রাশিয়ার ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তা এড়াতে মস্কোকে সহায়তা করলে বেইজিংকে ‘অনিবার্য পরিণতি’ ভোগ করতে হবে। সুলিভানের কথায়, যুক্তরাষ্ট্র এই অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা থেকে রাশিয়াকে বাঁচানোয় কোনো দেশকে ‘লাইফলাইন’ হতে দেবে না।
এর ঠিক পরের দিনই রয়টার্স দুই ভারতীয় কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, রাশিয়া রুপি-রুবল লেনদেনের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধের ভিত্তিতে ভারতের কাছে বাজারদরের চেয়ে কম দামে অপরিশোধিত তেল ও অন্যান্য পণ্য বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও দিল্লি মস্কোর এই প্রস্তাব গ্রহণ করার কথা বিবেচনা করছে।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞাগুলোকে মহান চেহারায় তুলে ধরা হচ্ছে এবং বিশ্বব্যাপী এর অনেক সমর্থকও রয়েছে। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো, যুক্তরাষ্ট্রের এই সমর্থকদের অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম দ্বারা প্রভাবিত। যুক্তরাষ্ট্র গত সপ্তাহে সব ধরনের রাশিয়ান জ্বালানি আমদানি বন্ধ করেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইইউ রাশিয়ান জীবাশ্ম জ্বালানি আনা বন্ধ করা কঠিন বলে মনে করেছে।
গত বৃহস্পতিবার, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন দের লেইন রাশিয়ান জ্বালানিনির্ভরতা কমাতে তাঁরা ২০২৭ সালকে শেষ ‘তারিখ’ হিসাবে প্রস্তাব করেছেন। এর অর্থ হলো জ্বালানিশিল্পকে সমন্বয় করতে আরও সময় প্রয়োজন এবং তারা রাশিয়ান জ্বালানি নিষেধাজ্ঞা অন্ধভাবে অনুসরণ করতে মোটেও ইচ্ছুক নয়। ভন দের লেইন ইউরোপের একজন মার্কিনপন্থী রাজনীতিবিদ। কিন্তু তিনি জানেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যে জ্বালানি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, সেই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে জার্মানির ভেতরে প্রবল বিরোধিতা আছে। কিন্তু এখন এমন একটি রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি হয়েছে যে এ বিষয়ে বিরোধিতার কথা বলার সুযোগ নেই। যুক্তরাষ্ট্র একটি ‘রাজনৈতিক শুদ্ধাচার’ প্রচারের ভান ধরে যে বিভ্রম তৈরি করেছে, তা প্রত্যেককে অনিচ্ছায় হলেও অনুসরণ করতে হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র এতটাই হতাশার মধ্যে আছে, দেশটিকে এখন সহায়তার জন্য ইরানের দ্বারস্থ হতে হয়েছে। ওয়াশিংটন তেহরানকে বলেছে, রাশিয়াকে যদি ইরান সহায়তা না করে, তাহলে পরমাণু সমঝোতায় পৌঁছানোর পর ইরান থেকে যুক্তরাষ্ট্র তেল আমদানি করবে। শুধু তা–ই নয়, ইতিমধ্যে ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের চিরশত্রু দেশ ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোর সঙ্গে দেখা করেছেন।
ভন দের লেইন প্রস্তাবটি দেওয়ার আগে, বিশ্ববাজারে তেলের দামের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে হোয়াইট হাউস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতাদের মধ্যে বৈঠক আয়োজনের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের সেই উদ্যোগে আরব দেশগুলো সাড়া দেয়নি। উল্টো সৌদি আরব চলতি মাসের শুরুতে রাশিয়ার সঙ্গে একটি ওপেক প্লাস চুক্তিতে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে যাওয়ার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেছে। প্রকৃত সত্য হলো, ওপেক দেশগুলো জ্বালানি ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে বা তেল উৎপাদনের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করতে এবং সংকটের মধ্যে রাশিয়ার পিঠে ছুরি চালাতে একেবারেই রাজি নয়।
যুক্তরাষ্ট্র এতটাই হতাশার মধ্যে আছে, দেশটিকে এখন সহায়তার জন্য ইরানের দ্বারস্থ হতে হয়েছে। ওয়াশিংটন তেহরানকে বলেছে, রাশিয়াকে যদি ইরান সহায়তা না করে, তাহলে পরমাণু সমঝোতায় পৌঁছানোর পর ইরান থেকে যুক্তরাষ্ট্র তেল আমদানি করবে। শুধু তা–ই নয়, ইতিমধ্যে ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের চিরশত্রু দেশ ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোর সঙ্গে দেখা করেছেন। কারাকাসে মাদুরোর সঙ্গে বৈঠক করে কর্মকর্তারা বলেছেন, মার্কিন কোম্পানিগুলো যাতে ভেনেজুয়েলার তেল খাতে আবার বিনিয়োগ করতে পারে এবং ভেনেজুয়েলার তেল উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করার জন্য মার্কিন নিষেধাজ্ঞাগুলো কীভাবে শিথিল করা যায়, তা তাঁরা খতিয়ে দেখছেন।
১৯৯৯ সালে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হিসেবে হুগো শাভেজ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এটিই ভেনেজুয়েলায় হোয়াইট হাউসের কোনো কর্মকর্তার প্রথম সফর। রাশিয়ার সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে বেকায়দায় পড়ে এই সফর আয়োজন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্য দিয়ে ভেনেজুয়েলার প্রতি মার্কিন নীতির যে বাঁক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, তা যুক্তরাষ্ট্রের সুবিধাবাদী মনোভাবকে স্পষ্ট করেছে। একই সঙ্গে এটি যুক্তরাষ্ট্রের বড় অপরিপক্বতার লক্ষণ।
বাইডেনের রাজনৈতিক জীবনের ৫২ বছর পূরণ হলো এ বছর। কিন্তু কূটাভাস হলো এই, তাঁর মতো একজন অভিজ্ঞ প্রশাসক ও ঝানু রাজনীতিক আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার এবং রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের মতো ঘটনাগুলোতে একেবারেই নির্বুদ্ধিতা ও আনাড়িপনা দেখিয়েছেন। তুঁতপোকা যেভাবে নিজের বোনা খোলের মধ্যে আটকা পড়ে, বাইডেন তেমন করে অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং জ্যাক সুলিভানসহ ঘনিষ্ঠ পারিষদবর্গের বিভ্রান্তিকর তথ্যের সুতোয় বোনা খোলের মধ্যে আটকা পড়ে আছেন; বড় ছবির দিকে তিনি দৃষ্টি দিতে পারছেন না।
গ্লোবাল টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
**** লু জিয়াং লেখক চায়নিজ একাডেমি অব সোশ্যাল সায়েন্সেসের একজন রিসার্চ ফেলো
সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ মার্চ ১৬, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,