Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে নিজের পায়ে কুড়াল মারছে ইউরোপ (২০২২)

Share on Facebook

লেখক:ব্রহ্ম চেলানি।

এটা সুস্পষ্ট যে পশ্চিমা বিদেশনীতির গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে নিষেধাজ্ঞার ব্যবহার বাড়ছেই। সাধারণত দেখা যায়, আরোপকারী দেশগুলো নিজেদের বড় ধরনের ক্ষতি ছাড়াই নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করে। কিন্তু ইউক্রেনে রাশিয়ার নিষ্ঠুর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়ন মস্কোর ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তা এই সূত্র মানছে না।

মস্কোকে শায়েস্তা করার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে পরিকল্পনা নিয়েছে, তার কেন্দ্রে রয়েছে রাশিয়ার সস্তা জ্বালানির ওপর নির্ভরতা পুরোপুরি কাটিয়ে ফেলা। দীর্ঘ সময় ধরে রাশিয়ার সস্তা জ্বালানি দিয়ে ইউরোপের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বিকল্প হিসেবে এখন তারা যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য জায়গা থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি শুরু করেছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর অনেক আগে থেকেই পাইপলাইন গ্যাসের তুলনায় এলএনজির খরচ ছিল অনেক বেশি। আর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এলএনজির দাম আগের চেয়ে দ্বিগুণ বেড়েছে।

ক্রেমলিনকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য রাশিয়ার জ্বালানির ওপর নির্ভরতা পুরোপুরি কেটে ফেলার জন্য সময়সূচি নির্ধারণ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এ কারণে এলএনজি আমদানি বাড়ানো ছাড়া ইউরোপের দেশগুলোর সামনে খুব কম বিকল্পই রয়েছে। জ্বালানির এই অনিশ্চয়তা ইউরোপের উৎপাদনমুখী শিল্পকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। এ বাস্তবতায় ইউরোপের অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে উৎপাদন করবে কি না, সেই বিবেচনা করছে। যুক্তরাষ্ট্র এখন শুধু সস্তায় জ্বালানি দেওয়ার প্রস্তাব করছে না, তাদের মূল্যস্ফীতি কমানো আইনের (আইআরএ) মাধ্যমে বড় ধরনের ভর্তুকি ও কর ছাড়েরও সুবিধা দিচ্ছে।

রাশিয়ার গ্যাস থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তে ইউরোপে গ্যাসের দাম এতটাই বেড়েছে যে সেখানে গভীর মন্দার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। রকেটের গতিতে বাড়ছেই গ্যাসের দাম, দুই বছর আগের তুলনায় এখন গ্যাসের দাম ১৪ গুণ বেশি। এটি যেমন মূল্যস্ফীতিতে জ্বালানি জোগাচ্ছে এবং একই সঙ্গে ইউরোপের আর্থিক বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। সুতরাং, ইউরোপের অর্থনীতি সংকোচনের একেবারে প্রান্তে চলে এসেছে, জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েই চলেছে এবং নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ হুমকির মুখে পড়েছে।

দীর্ঘদিন ধরেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিশ্বাস করে, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে পররাষ্ট্রনীতি ও নিরাপত্তার প্রশ্নগুলো বড় বিবেচনার বিষয় নয়। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সেই পথ থেকে সরিয়ে এনেছে। রাশিয়ার কাছ থেকে আচমকা জ্বালানি নেওয়া বন্ধ করে দেওয়ার আগে তাদের আগে বিবেচনা করা দরকার ছিল, এর পরিণাম কী হতে চলেছে। তড়িঘড়ি করে নেওয়া সিদ্ধান্তটি ইউরোপের আর্থসামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সরাসরি শঙ্কা তৈরি করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন জ্বালানির ক্ষেত্রে বড় কৌশলগত ভুল করে ফেলেছে।

এ পরিস্থিতিতে ইউরোপের নীতিনির্ধারকেরা জ্বালানি তেলের দাম বেঁধে দেওয়া বা প্রাইস ক্যাপ বসানোর মতো নীতি গ্রহণ করছে। এ ধরনের নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তুলতে পারে। গ্যাস সাশ্রয় করতে গিয়ে এখন ইউরোপের অনেক দেশ আবার কয়লায় ফিরে যাচ্ছে। এ ছাড়া এমানুয়েল মাখোঁর মতো ইউরোপীয় নেতারা তাঁদের দেশের অর্থনৈতিক চাপ থেকে মুক্তির জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে আইআরএর কয়েকটি বিতর্কিত বিধি সংশোধনের অনুরোধ জানিয়েছেন। ন্যাটোকে শক্তিশালী ও সম্প্রসারণ করতে সম্মত হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যই আন্ত–আটলান্টিক দেশগুলোর সম্পর্কে বিবাদ শুরু হয়েছে।

একটা বিষয় হলো, ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিষেধাজ্ঞা আরোপের ধারা থেকে সরে আসতে ইচ্ছুক নয়। এ মাসেই তারা রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি আমদানির ওপর বিধিনিষেধ দিয়েছে। জি-৭–এর সঙ্গে মিলে রাশিয়ার তেল ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারের নিচে না কেনার ক্ষেত্রে প্রাইস ক্যাপ বেঁধে দিয়েছে।

ইউরোপের এই নিষেধাজ্ঞা ১৯৩০ সালের আমেরিকার স্মুট-হাউলি শুল্ক আইনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ২০ হাজার পণ্যের ওপর সে সময় উল্লেখযোগ্যহারে শুল্ক বাড়ানো হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প খাতকে সুরক্ষা দেওয়ার চেয়ে এই শুল্ক অন্য দেশের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বসানো হয়েছে। এ পদক্ষেপ মহামন্দাকেই আরও গভীর করে তুলেছিল। আর বিশেষ করে ইউরোপে রাজনৈতিক চরমপন্থার উত্থানে অবদান রেখেছিল।

বর্তমানেও ইউরোপের অনেক দেশের রাজনীতি ডানপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়েছে। ইতালির শাসক দলের শিকড়ের সঙ্গে বেনিতো মুসোলিনির ফ্যাসিবাদী আন্দোলনের যোগসূত্র রয়েছে। একইভাবে সুইডেনের ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে নব্য নাৎসিদের নাড়ির যোগ রয়েছে। পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরির ডানপন্থী সরকারে কর্তৃত্ববাদী শাসনের প্রবণতা বাড়ছে। জ্বালানির মূল্য যদি এভাবে বাড়তেই থাকে এবং লাগামছাড়া মূল্যস্ফীতির কারণে যদি অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হতেই থাকে, তাহলে পুরো মহাদেশে অতি ডানপন্থী রাজনীতির উত্থান হতে খুব বেশি দিন আর দরকার হবে না।

মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে নিজেদের কাঁধে বিশাল এই ক্ষতির বোঝা বহন করা ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য তখনই যৌক্তিক হতে পারত, যদি এতে রাশিয়ার যুদ্ধ করার সামর্থ্য অনেকখানি কমে আসত। যদিও এই যুদ্ধে রাশিয়া সুস্পষ্টভাবে বেকায়দায় পড়েছে, ইউক্রেন কয়েকটি বড় যুদ্ধে জিতেছে, কিন্তু ইউক্রেনের পাঁচ ভাগের এক ভাগ ভূখণ্ড এখন পর্যন্ত রাশিয়ার দখলে রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন যদি স্থায়ীভাবে এতটা যন্ত্রণা সহ্য করে নিতে চায়, তাহলে তাদের জন্য নিষেধাজ্ঞার চেয়ে বড় আত্মপীড়নের উপায় আর কী হতে পারে। এ কারণে নৈতিক পীড়ন যৌক্তিক হলেও সেটা নীতি পরিচালনার ক্ষেত্রে কখনো প্রয়োগ করা উচিত নয়।

এটা সত্য যে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন—এসব বিষয়ের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৈশ্বিক ভাবমূর্তি দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিষ্ঠিত। এ কারণে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিজেদের ক্ষতি হবে জেনেও সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। কিন্তু ঠান্ডা মাথার সিদ্ধান্তই শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়। এটা অনিবার্য যে রাশিয়া থেকে জ্বালানি নেওয়া বন্ধ করে দেওয়ার এই তাড়াহুড়া সিদ্ধান্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কয়লাভিত্তিক জ্বালানিতে আবার ফিরে গেছে। আবার তাদের কারণে বিশ্বে জ্বালানি–সংকট দেখা দিয়েছে। গরিব দেশগুলোতে যার মারাত্মক অভিঘাত লেগেছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো বিশ্বের মোট জ্বালানির ১১ শতাংশের ক্রেতা। ফলে নতুন জ্বালানির উৎস নিশ্চিত করার জন্য তাদের প্রচেষ্টা বিশ্বের পুরো জ্বালানি বাজারকে অস্থিতিশীল করে দিতে বাধ্য। এরপর আবার বিকল্প জ্বালানির জন্য যে উৎস তারা বেছে নিয়েছে সেটাও আদর্শ কোনো সিদ্ধান্ত নয়। জ্বালানি তেল ও এলএনজির আন্তর্জাতিক সরবরাহ আগে থেকেই একেবারে আঁটসাঁট অবস্থায় ছিল। রাশিয়ার জ্বালানি বন্ধ করে দেওয়ায় যে ঘাটতিটা তৈরি হয়েছে, তা পূরণে যথেষ্ট পরিমাণ উৎপাদন করা সম্ভব নয়।

এ কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন যখন রাশিয়া থেকে জ্বালানি নেওয়া বন্ধের সিদ্ধান্ত নিল, তখন হঠাৎ করেই এশিয়া, লাতিন আমেরিকা ও বিশ্বের অন্য প্রান্তের দেশগুলোতে আগের উৎস থেকে জ্বালানি পেতে সমস্যায় পড়ে।

দীর্ঘদিন ধরেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিশ্বাস করে, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে পররাষ্ট্রনীতি ও নিরাপত্তার প্রশ্নগুলো বড় বিবেচনার বিষয় নয়। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সেই পথ থেকে সরিয়ে এনেছে। রাশিয়ার কাছ থেকে আচমকা জ্বালানি নেওয়া বন্ধ করে দেওয়ার আগে তাদের আগে বিবেচনা করা দরকার ছিল, এর পরিণাম কী হতে চলেছে। তড়িঘড়ি করে নেওয়া সিদ্ধান্তটি ইউরোপের আর্থসামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সরাসরি শঙ্কা তৈরি করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন জ্বালানির ক্ষেত্রে বড় কৌশলগত ভুল করে ফেলেছে।

*****ইংরেজি থেকে অনুবাদ মনোজ দে, স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
ব্রহ্ম চেলানি নয়াদিল্লিভিত্তিক সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ বিষয়ের অধ্যাপক এবং বার্লিনের রবার্ট বাসচ একাডেমির ফেলো।

সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ:ডিসেম্বর ২১, ২০২২

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ