বাংলাদেশের পোশাক কারখানার নিরাপত্তাব্যবস্থা কতটা দুর্বল, সেটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল সাভারের রানা প্লাজার ধস। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঘটে যাওয়া দেশের সবচেয়ে বড় এই শিল্প দুর্ঘটনার আট বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ শনিবার। তবে সংস্কারকাজ না করায় পোশাকশিল্পের নিরাপত্তার গলার কাঁটা হয়ে আছে সাড়ে ছয় শ কারখানা। তার বাইরে আট বছরেও ৬৫৪ কারখানাকে পরিদর্শন কার্যক্রমের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। কারণ, তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্য না হওয়ায় কারখানাগুলোর দায়িত্ব কেউ নেয়নি। ধসে যাওয়া রানা প্লাজায় পাঁচটি ক্ষুদ্র ও মাঝারি পোশাক কারখানা ছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তৈরি পোশাকশিল্পের একজন মালিক বলেন, ‘ব্যবসা হারানোর চাপে পড়ে মাঝারি ও বড় কারখানার মালিকেরা কোটি কোটি টাকা খরচ করে সংস্কারকাজ করেছে। ছোটরা সেই কাজ করেনি। এতে করে যেটি হয়েছে, আমরা কেউ ঝুঁকিমুক্ত হতে পারিনি। নতুন করে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে পুরো পোশাকশিল্প আবারও ভয়াবহ বিপদে পড়বে। সংস্কারকাজের যেটুকু অর্জন সেটুকু বিফলে যাবে।’
রানা প্লাজা ধসের পর পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে পাঁচ বছরের জন্য ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স গঠিত হয়। তারা দুই হাজারের বেশি পোশাক কারখানা পরিদর্শন করে বিভিন্ন ধরনের ত্রুটি চিহ্নিত করে। আর অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের বাইরে থাকা কারখানাকে সংস্কারকাজের আওতায় আনতে এনটিএপির অধীনে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই) পরিদর্শন কাজ করে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নেতৃত্বে ও ডিআইএফইর তত্ত্বাবধানে গঠিত সংশোধন সমন্বয় সেল (আরসিসি) কারখানাগুলোর দেখভাল করছে।
কাজ কেন এগোচ্ছে না
এনটিএপির অধীনে ১ হাজার ৫৪৯ পোশাক কারখানার পরিদর্শন ২০১৫ সালের নভেম্বরে শেষ হয়। ওই সময় ডিআইএফই বলেছিল, কারখানাগুলোর কোনোটিই শতভাগ ত্রুটিমুক্ত নয়। কিন্তু বারবার চাপ দিয়েও এসব কারখানার সংস্কারকাজে গতি আনতে ব্যর্থ হয় অধিদপ্তর। পরে সংস্কারকাজ তদারকিতে আরসিসি গঠিত হয়, কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি। এ অবস্থায় আগামী ৩০ জুন শেষ হতে যাচ্ছে আরসিসির মেয়াদ।
ডিআইএফইর কর্মকর্তারা জানান, কারখানা মালিকেরা নানা অজুহাত দেখিয়ে কারখানার সংস্কারকাজে আগ্রহী না। এসব কারখানা যেসব ক্রেতার কাজ করে তাদের কারখানার নিরাপত্তা নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। ফলে কারখানার সংস্কারকাজ করা না করায় ব্যবসা হারানো ভয় নেই।
জানা যায়, বর্তমানে আরএসসির অধীনে ৬৫২টি কারখানা রয়েছে। এখন পর্যন্ত কারখানাগুলোর ত্রুটি সংস্কারের অগ্রগতি ৪৫ শতাংশ। কোনো কাজ না করায় শতাধিক কারখানা বন্ধ করে দিতে চলতি বছরের গোড়ার দিকে অধিদপ্তরকে চিঠি দেয় আরসিসি। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এখনো। অবশ্য এসব কারখানার ইউডি সেবা বন্ধ করে দিতে ২০১৮ সালে পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএকে চিঠি দিয়েছিল ডিআইএফই। তখন ব্যবস্থা না নিয়ে আরও সময় চেয়েছিলেন সংগঠন দুটির নেতারা।
জানতে চাইলে আরসিসির প্রকল্প পরিচালক এ কে এম সালেহ উদ্দিন গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, কারখানা মালিকেরা গত এক বছরে কিছু সংস্কারকাজ করেছে, তবে সেটি না করার মতোই। কিছু কারখানায় অবশ্যই নিরাপত্তাঝুঁকি রয়েছে।
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: এপিল ২৪, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,