গত রবিবার বিকেলে চিন সফর নিয়ে করা সাংবাদিক বৈঠকে শেখ হাসিনার ‘রাজাকার’ মন্তব্যের পরেই কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের তিনি রাজাকার বলেননি বলে জানালেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার দুষ্কৃতীদের ভাঙচুর ও আগুনে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাংলাদেশ টেলিভিশনের দফতর ঘুরে দেখার পরে সাংবাদিকদের কাছে হাসিনা বলেন, “আমার কথা বিকৃত করা হয়েছে। আমি বলতে চেয়েছিলাম— মেধা বনাম কোটা-র কথা বলা হচ্ছে। সবাই তো একই পরীক্ষা দিয়ে, ইন্টারভিউ দিয়ে চাকরির জন্য নির্বাচিত হচ্ছে। তার পরে কোটা ব্যবস্থা প্রয়োগ হয়। আমি বলেছিলাম, মেধা কি মুক্তিযুদ্ধের নাতি-পুতিদের নেই? মেধা শুধু রাজাকারের নাতিপুতিদেরই আছে?”
গত রবিবার বিকেলে চিন সফর নিয়ে করা সাংবাদিক বৈঠকে তাঁর ‘রাজাকার’ মন্তব্যের পরেই কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। মধ্যরাতে পড়ুয়ারা ‘তুমি কে, আমি কে? রাজাকার রাজাকার’, ‘তোমার বাবা, আমার বাবা, রাজাকার রাজাকার’ স্লোগান তুলে বিক্ষোভ শুরু করেন। অভিযোগ, পরের দিন শাসক দলের অনুগত ছাত্র লীগের কর্মীরা আন্দোলনকারীদের উপরে চড়াও হওয়ার পরেই পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমার কথাকে বিকৃত করে কোমলমতি ছাত্রদের উস্কানি যারা দিল, ছাত্রদের সামনে রেখে ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও করে দেশকে পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা যে অপশক্তি করল, তাদের খুঁজে বার করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।” ঢাকার রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশনের দফতরটি সম্পূর্ণ পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে।
শুক্রবারই ঢাকায় একটি সমাবেশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক, মানবাধিকার কর্মী এবং সাংস্কৃতিক কর্মী প্রশ্ন তুলেছেন— গত কয়েক দিন পুলিশ বনাম বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে কত জন মানুষ নিহত হয়েছেন, সরকার কেন তার নির্দিষ্ট সংখ্যা জানাচ্ছে না? জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশটিতে বাধা দেয় পুলিশ। মাইক খুলে নিয়ে চলে যায় বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। খালি গলাতেই বক্তৃতা দেন বিশিষ্ট জনেরা। তাঁরা বলেন, সরকার কেবল বাড়িঘর ধ্বংসের কথা বলছে, প্রাণহানির কথা ভুলেও বলছে না। সংবাদমাধ্যমগুলি বেসরকারি ভাবে তথ্য সংগ্রহ করে ২০০-র উপরে একটা সংখ্যা বললেও সরকারের তরফে তা নাকচ করা হচ্ছে। বক্তারা বলেন, বিভিন্ন সূত্রে খবর আসছে নিহতের প্রকৃত সংখ্যা এর দ্বিগুণ পর্যন্ত হতে পারে। এই অবস্থায় সরকার কেন নিহতের সংখ্যা গোপন করে দেশবাসীকে তথ্যের অধিকার, মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত করছেন? ‘প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থা’-র নামে সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা বলেন, “সরকারের কথায় মনে হচ্ছে হামলার শিকার হয়েছে কেবল বাড়িঘর, মানুষের প্রাণের কি কোনও দাম নেই? এই আন্দোলনের পরে যাঁদের পুলিশ গ্রেফতার করছে, তাদের বিষয়েও কেন কিছু জানানো হচ্ছে না?” পরিবেশ কর্মী রিজ়ওয়ানা হাসান বলেন, “সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হোক। একটি গুলিও যেন আর না চলে।” প্রাণহানির সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানানো হয় সমাবেশ থেকে।
এ দিন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগে গিয়ে সংঘর্ষে আহতদের সঙ্গে দেখা করে খোঁজখবর নেন প্রধানমন্ত্রী। বেরিয়ে তিনি বলেন, স্বজন হারানোর বেদনা তাঁর চেয়ে আর কে বেশি জানে? গোটা পরিবারকে হারিয়েছেন তিনি। হাসিনা বলেন, “জামাত-শিবির, বিএনপি, ছাত্র দল, তারাই এই কোটা আন্দোলনের সুযোগটা নিয়ে দেশব্যাপী ধ্বংসাত্মক কাজ করে যাচ্ছে। এদের মনুষ্যত্ব বোধ নেই, দেশের প্রতি কোনও মায়া-মমতা নেই, কোনও দায়িত্ববোধও নেই।” এ দিন রাতে কোটা আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, তাসিফ মাহমুদ এবং আবু বাকের মজুমদারকে গোয়েন্দা পুলিশ হাসপাতাল থেকে আটক করে নিয়ে গিয়েছে বলে পরিবার জানিয়েছে। বিএনপির দাবি, চার-পাঁচ দিন ধরে তাদের বেশ কিছু নেতা-কর্মীকে পুলিশ আটক করলেও আদালতে তোলেনি। এঁদের উপরে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।
তারিখ: জুলাই ২৭, ২০২৪
রেটিং করুনঃ ,