রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত
নেপাল, লাওসের পেছনে বাংলাদেশ
বাংলাদেশ, নেপাল ও লাওস ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে বের হবে। রাজস্ব জিডিপি অনুপাত দেশের চেয়ে নেপালের দ্বিগুণ ও লাওসের দেড় গুণ।
নেপাল ও লাওস—দেশ দুটি ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বেরিয়ে যাবে। ওই বছর বাংলাদেশও এলডিসি থেকে বের হবে। এলডিসি তকমাহীন উন্নয়নশীল দেশের বড় শক্তি হলো, দেশের অভ্যন্তর থেকে বিপুল রাজস্ব আহরণ। কিন্তু বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে বেশ পিছিয়ে আছে। বাংলাদেশের সঙ্গে নেপাল ও লাওসের এলডিসি উত্তরণ হবে। কিন্তু রাজস্ব-জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) অনুপাত বাংলাদেশ থেকে নেপালের দ্বিগুণ এবং লাওসের দেড় গুণ বেশি। নেপালের রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত ২২ দশমিক ৩৬ শতাংশ আর লাওসের প্রায় ১৫ শতাংশ। অন্যদিকে বাংলাদেশে এই অনুপাত মাত্র ১০ শতাংশ।
এলডিসি থেকে উত্তরণ হলে স্বল্প সুদে বিদেশি ঋণের সুযোগ কমে যাবে। তাই বিশেষজ্ঞরা দেশের অভ্যন্তরে রাজস্ব আদায়ে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছেন। কিন্তু বাংলাদেশের রাজস্ব আদায় পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। এক ভ্যাট আইন চালু করা ছাড়া গত এক দশকে এনবিআরের বড় কোনো সংস্কার হয়নি।
গড় রাজস্ব জিডিপি আদায়ের অবস্থান।
বাংলাদশ ১০.০১
শ্রীলঙ্কা, ১১.৬২
ইন্দোনেশিয়া, ১১.৮৩
লাওস: ১৪.৮৪
মিয়ানমার,১৬.৪১
ভিয়েতনাম, ১৮.৬৫
ভারত, ১৯.৫৮
ফিলিপাইন, ১৯.৮০
মালয়েশিয়া, ২০.০৬
থাইল্যান্ড ও ২০.৯৮
নেপাল- ২২.৩৬
কম্বোডিয়া ২৩.৯৯
আহসান এইচ মনসুর, নির্বাহী পরিচালক, পিআরআই
শুধু ওই দুটি দেশ নয়, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, ভারত, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার চেয়েও বাংলাদেশের রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত কম। উল্লিখিত দেশগুলোর রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত সাড়ে ১১ শতাংশ থেকে প্রায় ২৪ শতাংশ পর্যন্ত। অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতেই দেশের রাজস্ব-জিডিপি পরিস্থিতির এই দৈন্যদশার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
দেশের রাজস্ব আদায়ের প্রায় ৮৪ শতাংশ আদায় করে থাকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআরের কর-জিডিপির অনুপাতে ৮ শতাংশের কিছুটা বেশি আছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনায় আগামী তিন বছরে এই হার ৮ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশে উন্নীত করা লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের গড় রাজস্ব-জিডিপি হারের তুলনায়ও বাংলাদেশের অনুপাত অনেক কম। ২০২১ সালে ইউরো অঞ্চলে মোট রাজস্ব-জিডিপির অনুপাত ছিল ৪৭ শতাংশের বেশি। এ ছাড়া লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে তা প্রায় ২৭ শতাংশ, মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়া অঞ্চলে ২২ দশমিক ২৩ শতাংশ; এমনকি আফ্রিকার সাব সাহারা অঞ্চলে প্রায় ১৭ শতাংশ গড় রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত। খোদ অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অন্যান্য সমজাতীয় স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ থেকে অনেক পিছিয়ে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল নিজেই মনে করেন, এনবিআরের আরও দেড় থেকে দুই লাখ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব সংগ্রহের সুযোগ আছে। অর্থমন্ত্রী গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁর কার্যালয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এনবিআরের রাজস্ব সংগ্রহ এবার ভালো হয়েছে। তবে আমি মনে করি, আরও দেড় থেকে দুই লাখ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব সংগ্রহের বাস্তবতা আছে দেশে।’ বর্তমানে এক অঙ্কের থাকলেও কর-জিডিপি হার ১৪ থেকে ১৫ শতাংশে উন্নীত করার পদক্ষেপ নিচ্ছেন বলে জানান মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ‘কর-জিডিপি হার বাড়াতে যা যা করা দরকার, সবই করব।’
২৯,৮২১ কোটি টাকা ঘাটতি
প্রথমবারের মতো এনবিআরের রাজস্ব আদায় তিন লাখ কোটি টাকা ছাড়াল। এ আদায় অবশ্য লক্ষ্যমাত্রা থেকে ২৯ হাজার ৮২১ কোটি টাকা কম। বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে কর ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) মিলিয়ে এনবিআর আদায় করেছে ৩ লাখ ১৭৯ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের আদায় ছিল ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৮১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে ৪০ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা বেশি আদায় হয়েছে। রাজস্ব সংগ্রহের সাময়িক হিসাব এনবিআর সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগে পাঠিয়েছে।
বিদায়ী অর্থবছরে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার। কিন্তু বছর শেষে সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি রাজস্ব বোর্ড। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে এনবিআরকে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, এ লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হবে না।
সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: জুলাই ২৯, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,