রিয়াদুল করিম,আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ ও মো: শফিকুল ইসলাম রাজশাহী থেকে
ঢাকার আগে বিএনপির সর্বশেষ বিভাগীয় গণসমাবেশ ছিল রাজশাহীতে। এ সমাবেশকে ঘিরে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে উত্তেজনা চলছিল এ অঞ্চলে। কারণ, আগের আটটি বিভাগীয় গণসমাবেশে পরিবহন ধর্মঘট, পুলিশি অভিযানসহ যেসব বাধা-প্রতিবন্ধকতা ছিল, তার সবই ছাড়িয়ে যায় রাজশাহীতে। এর সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছিল ‘গায়েবি’ মামলা, গ্রেপ্তার, সমাবেশের জন্য শর্তারোপ, অনুমতি দেওয়ার পরও সকাল পর্যন্ত নেতা-কর্মীদের মাঠে ঢুকতে না দেওয়া। এত বাধাবিপত্তির মধ্যেও শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবেই রাজশাহীতে সমাবেশ করেছে বিএনপি।
গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহীর হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে (মাদ্রাসা মাঠ) এ সমাবেশ শুরু হয়ে বিকেল পাঁচটার আগে শেষ হয়। ঢাকার সমাবেশস্থল নিয়ে উত্তাপ চলছে, তার যেন রেশ পাওয়া গেল রাজশাহীর সমাবেশে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশ নিয়ে সরকার ভয় পেয়েছে। তাদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। তারা নিজেরাই বলাবলি করছে, সেদিন নাকি সরকারের তখতে তাউস উল্টে যাবে। তাদের নিজেদের ওপরই আস্থা নেই।
একই সময় শহরে প্রতিবাদ সমাবেশ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও। তবে কোনো বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়নি। সমাবেশের দিন রাজশাহী শহরে মুঠোফোনে ইন্টারনেটের গতি কম ছিল। মোবাইল নেটওয়ার্কও ছিল দুর্বল।
জ্বালানি তেলসহ দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, দলের পাঁচ নেতা-কর্মী হত্যার প্রতিবাদ, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের দাবিতে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে ধারাবাহিক এ গণসমাবেশ করছে বিএনপি। গত ১২ অক্টোবরের চট্টগ্রামে সমাবেশের মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচি শুরু হয়েছিল। ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশের মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচি শেষ হবে।
ঢাকায় এ কর্মসূচির স্থান নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ তৈরি হয়েছে। রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় সমাবেশ করতে চায় বিএনপি। কিন্তু তাদের সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।
গতকাল রাজশাহীর সমাবেশে এ বিষয়ে কথা বলেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ১০ ডিসেম্বর বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে চায়। সেখানে বিএনপি বিভাগীয়, জাতীয় সমাবেশসহ অনেক সমাবেশ করে আসছে। লাখ লাখ মানুষ হয়েছে। কোনো দিন কোনো সমস্যা হয়নি।
এখন কেন সমস্যার কথা আসছে—এমন প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, কারণ, সরকার জানে তারা অনেক খারাপ কাজ করেছে। এখন আবার জঙ্গি আক্রমণের ধুয়া তুলেছে। যখন সরকারের দরকার হয়—এবার বিএনপিকে ধরতে হবে, তখন তারা জঙ্গি তৈরি করে। নিজেরা বাস পুড়িয়ে, ককটেল মেরে বলে বিএনপি অগ্নিসন্ত্রাস করছে। বিএনপি অগ্নিসন্ত্রাস করে না। সরকার এসব সন্ত্রাস করে বিএনপির ঘাড়ে চাপিয়েছে।
রাজশাহীর এ সমাবেশের দুই দিন আগে ১ ডিসেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছিল পরিবহন মালিক সমিতি। বিএনপির অভিযোগ, সমাবেশে যাতে নেতা-কর্মীরা আসতে না পারেন, সে জন্য এটি করা হয়েছে। গতকাল বিএনপির সমাবেশ শেষ হওয়ার ঘণ্টাখানেক আগে পরিবহন ধর্মঘট তুলে নেওয়া হয়। এ ধর্মঘটের কারণে বুধবার রাত থেকেই বিভিন্ন জেলা থেকে দলের নেতা-কর্মীরা রাজশাহী চলে আসেন। তাঁরা তাঁবু টানিয়ে সমাবেশস্থলের পাশে ঈদগাহ মাঠে ছিলেন তিন রাত।
নেতা-কর্মীদের কষ্টের কথা তুলে ধরে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘কিসের ভালোবাসায়, কিসের দাবিতে আপনারা তিন দিন ধরে এখানে থাকছেন? একটি মাত্র কারণ, আপনারা মুক্তি চান।’
নিজেদের চলমান আন্দোলন কেন, তার ব্যাখ্যা দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া বা তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী করার জন্য বিএনপির আন্দোলন নয়। ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য এ আন্দোলন।
সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ:নভেম্বর ০৪, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,