বাবা-মা কেন আজকের ২৭ বছরের যুবক ছেলের নাম শাহ-জাহান রেখেছে, তা শাহ-জাহানের জানা নেই। ইতিহাসে মোঘল, আকবর, শাহ-জাহান, মমতাজ মহল, তাজ মহল, দিল্লি, আগ্রা এসব শব্দ পড়েছে বার বার। দিল্লি, দিল্লি কা লাড্ডু এ সব শব্দ বা কথা শাহ-জাহানের জানা আছে।
বাজারে নিজের একটা দোকান আর ভাড়া দিয়েছে তিনটি, আয় রোজগার বেশ ভালোই, হোন্ডায় করে বন্ধুদের সাথে রই রই করে ঘুড়ে বেড়ানো বাদ গেলে যাক তবুও ” দিল্লি কা লাড্ডু” কথাটির প্রতি একটি চ্যালেন্জ ছুড়ে দিল শাহ-জাহান । দিল্লির লাড্ডু না খেলে যদি পস্তাতে হয় আবার বিয়ে না করলেও যদি পস্তাতে হয় তবে সে অতি দ্রুত বিবাহ বন্ধনে আবন্ধ হবে । ফরমানও জারি করে দিল পাত্রী চাই।
ফরমান মত অতি দ্রুত মমতাজ নামে এক পাত্রীর সাথে বিবাহের দিন তারিখ ধার্যও হয়ে গেল। নিত্য নানান রঙের, কল্পনার নানান রঙের ছবি শাহ-জাহানের মনের কোনে বার বার উঁকি দিতে থাকলো। ইতিহাস থেকে জেনেছে মোঘল সম্রাজ্ঞী মমতাজ মহল ছিল সম্রাট শাহ-জাহান পেয়ারের বেগম। মোঘল সম্রাজ্ঞীর নামের সাথে পাত্রীর নামের মিল থাকায় কল্পনার বাগানে দ্বি-গুণ, শতগুন রঙ যুক্ত হল।
শুক্রবার দুপুরের পরে শুভ কাজ ভালো ভাবে সম্পূর্ন হল। পরিবারের রীতি অনুযায়ী শাহ-জাহান গরুর গাড়িতে করে নব-বধুকে সাথে নিয়ে বাড়ীর উদ্দ্যেশে রওয়ানা দিল। কনের পাশে বর শাহ-জাহান বসা। বেশ পাশ ঘেষে বসা, গরুর গাড়ির দুলনীতে এক রোমান্চকর অবস্থা, অস্থির বর শাহ-জাহান আর কয়েকটা ঘন্টা পার করে দেওয়ার জন্য হন্ত তন্ত হয়ে আছে।
নিজের টাকায়, নিজের পরিকল্পনা মত তাজা ফুল দিয়ে বাসর ঘর সাজিয়ে রেখেছে, লাল গোলাপে গোলাপে বাসর শয্যা চোখের সামনে ভেসে আসতেই হঠাৎ বলা নেই, আগাম কোন পূর্বাভাষ নেই মুষুল ধারে বৃষ্টি শুরু হল।
বর শাহ-জাহান বরং খুশি হয়েই গুন গুন করে গাইতে থাকলো রবি ঠাকুরের গান –
” এমন দিনে তারে বলা যায়
এমন ঘন ঘোর বরষায়। ”
ঘন ঘোর বরষার এ সময়ে বার বার শাহ জাহান নিজেকে প্রশ্ন করছে ‘ এমন দিনে তারে কি বলা যায় !!’ নিজেই বিরক্ত হয়ে বলছে ‘যা বলার তা তো আজ রাতে বাসর ঘরেই বলা হবে ‘ এতো উতালা হওয়ার কি আছে !! এখনো তো বিয়ের অনেক আনুষ্টানিকতা বাকি !! বিয়ে শুরুর তো কিছুই হয় নাই।
গরুর গাড়ির ছঁইটি মনে হয় বহু দিন ব্যবহার হয় নি, উপর থেকে বড় বড় ফোঁটা করে পানি পড়ছে, নুতন কনে শক্ত হয়ে বরের পাশে বসে আছে, পাশে বর-পুরুষ বসা, এখনো তো বরে সাথে কোন কথা হয় নি। কি করে বলে অসুবিধার কথা !! বড় বড় ফোঁটা করে পানি কনের মুখে, হাতে পড়ছে,
হঠাৎ বর শাহ জাহান, হঠাৎ করেই মমতাজের দিকে তাকাতেই বরের চোখ ছানা বড়া !! এ্যা কি !! বউ এর মুখে হাতে এবারে শিল্পীর আঁকা জল রঙ ছবি !! মুখে, হাতে যে মে-আপ করা হয়েছিল বৃষ্টির পানিতে সব গলতে শুরু করেছে !! ভ্যাবা চ্যাকা খেয়ে বর শাহ জাহান এবার বলেই ফেলল – ” বিয়ে শুরু হতে না হতে বউ এর রঙ চঙ উঠে সারা !! উঠে সারা !! ”
রেটিং করুনঃ ,