সরকার আবার জঙ্গিবাদ ও অগ্নিসন্ত্রাসের নামে নতুন রাজনৈতিক খেলা শুরু করতে চাইছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে এই কৌশলে আর কাজ হবে না মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, এবার আওয়ামী লীগ সরকারকে বিদায় নিতে হবে। ভোটের অধিকারের দাবিতে মানুষ জেগে উঠেছে।
আজ শনিবার দুপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা বলেন। লক্ষ্য এক, দাবি এক, এই সরকারের পদত্যাগ—উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, যত অর্জন ছিল, বিগত ১৫ বছরে এই সরকার সব নষ্ট করে দিয়েছে। এই সরকারের একমাত্র কাজ চুরি, চুরি এবং চুরি। চুরি করতে করতে তারা সর্বভূক হয়ে পড়েছে।
রংপুর শহরের কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে গণসমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার আবার জঙ্গিবাদ ও অগ্নিসন্ত্রাসের নামে নতুন রাজনৈতিক খেলা শুরু করতে চাচ্ছে। কিন্তু ওই অস্ত্র ভোঁতা হয়ে গেছে। ওই অস্ত্র দিয়ে আর চলবে না।’ সরকার পতনের আন্দোলনে সবাইকে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, রংপুরের মাটি ঐতিহ্যবাহী। ফকির বিদ্রোহ, তেভাগা আন্দোলনসহ কৃষক নূরল দীনসহ অসংখ্য মানুষ সংগ্রাম করেছেন। আজকে এই সমাবেশ থেকে সেই জেগে ওঠার সময় এসেছে। বিএনপির তিন সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ, রুমিন ফারহানা ও জাহেদুর রহমানের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, দলের নির্দেশে তাঁরা সংসদ থেকে পদত্যাগ করবেন। বর্তমান সংসদকে বিলুপ্ত করে আবার নির্বাচনের দাবি জানান ফখরুল।
দুপুর সোয়া ১২টার দিকে রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামুর সভাপতিত্বে বিএনপির এই বিভাগীয় গণসমাবেশ শুরু হয়। শুরুতে দুই ঘণ্টাব্যাপী রংপুর বিভাগের আট জেলার বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন। বেলা দুইটায় সমাবেশে যোগ দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, রংপুরের বিভাগীয় গণসমাবেশের প্রধান সমন্বয়কারী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবীবসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা।
রংপুরের এই সমাবেশ ঘিরে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনার মতো হামলা, মারধর, পথে পথে বাধাবিপত্তির ঘটনা খুব একটা নেই। তবে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় রংপুর শহরের সঙ্গে সাত জেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই নেতা-কর্মীরা দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে রংপুরে এসে সমাবেশে যোগ দেন।
সকাল থেকে মিছিল-স্লোগান নিয়ে কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে আসেন আট জেলার বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা। দুপুর ১২টার দিকে নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে সমাবেশস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়। মাঠ ছাপিয়ে নেতা-কর্মীরা রংপুর সরকারি কলেজ সড়ক, স্টেডিয়াম সড়ক, রাধাবল্লব থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক মোড় সড়ক এবং সুরভী উদ্যান থেকে রংপুর জিলা স্কুল মোড় পর্যন্ত অবস্থান নেন।
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, রংপুরে এক দিনের গণসমাবেশ ডাকা হলেও দু-তিন দিন ধরে সমাবেশ চলছে। হাজার হাজার মানুষ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। সরকার বাসের হরতাল দিয়েছে, কিন্তু নেতা-কর্মীরা অটোতে, ভ্যানে, মোটরসাইকেলে ও হেঁটে এসে প্রমাণ করেছেন, এটা শুধু আন্দোলন নয়, বিপ্লব ঘটে গেছে।
রংপুরে কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে বিএনপির গণসমাবেশে উপস্থিত নেতা-কর্মীরা। আজ শনিবার বিকেলে রংপুর নগরের কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে
রংপুরে কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে বিএনপির গণসমাবেশে উপস্থিত নেতা-কর্মীরা। আজ শনিবার বিকেলে রংপুর নগরের কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠেছবি: মঈনুল ইসলাম
‘ভোট চুরিকে’ সব সমস্যার মূল উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, ‘এই ভোট চোর সরকারকে আর ক্ষমতায় রাখা যাবে না।’ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমানও এই সরকারকে ‘অবৈধ’ উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এই সরকারের সময় শেষ হয়ে গেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ বলেন, রংপুরে বিএনপির জনসাধারণ তিন দিন ধরে চিড়া-মুড়ি নিয়ে অবস্থান করছেন। এই অবদান বৃথা যেতে পারে না। শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটাতে হবে।
সরকার উন্নয়নের নামে এত দিন ‘ঘুম পাড়ানির গল্প’ করেছিল বলে মন্তব্য করেন ইকবাল হাসান মাহমুদ। তিনি বলেন, সরকারের উন্নয়নের নামে বিদেশ থেকে আনা ঋণ এখন জনগণের ‘গলার ফাঁস’ হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে, তখনই দুর্ভিক্ষ আসে বলে মন্তব্য করেন এই বিএনপি নেতা।
রংপুরের বিভাগীয় গণসমাবেশের প্রধান সমন্বয়কারী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ভোট চোরের বিরুদ্ধে গগণবিদারী স্লোগান উঠেছে। আগামীতেও এই লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হারুনুর রশিদ বলেন, মানুষ এক মুহূর্তও এই সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে চাচ্ছে না। দেশের মানুষ গণতন্ত্র রক্ষায় আন্দোলনে নেমেছেন। সাধারণ মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখে আওয়ামী লীগ নেতাদের কম্পন শুরু হয়েছে।
বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবীব (দুলু) বলেন, এই সমাবেশ ঘিরে, রংপুর বিভাগের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে যে উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে, তাতে তাঁরা বহুমাত্রিক আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত আছেন বলে মনে হয়েছে।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক নওশাদ জমির, নির্বাহী কমিটির সদস্য সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্যসচিব আনিসুর রহমান, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি আবদুল মোয়েম সরকারসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন জেলা কমিটির নেতারা বক্তব্য দেন।
সমাবেশে বক্তব্য দেন গত ৮ সেপ্টেম্বর পুলিশের গুলিতে আহত রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক তুষার আহমেদ। তিনি বলেন, ‘চোখ গেছে কষ্ট নেই, এই জীবন দিতেও প্রস্তুত আছি। যাঁরা আমাদের চোখ নিয়েছেন, তাঁদের ছাড় নেই।’
সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ: অক্টোবর ২৯, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,