জার্মানিতে চলছে নির্বাচন। নতুন চ্যান্সেলর পাওয়ার অপেক্ষায় দেশটি। গত ১৬ বছর আঙ্গেলা ম্যার্কেল দেশটির নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২০০৮ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট থেকে ব্রেক্সিট, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধে উদ্যোগ থেকে শুরু করে করোনা অতিমারী পর্যন্ত নানা অনিশ্চয়তায় পথ দেখিয়েছেন জার্মানিকে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে ম্যার্কেলের নেতৃত্বকে আশ্বাস এবং নিশ্চয়তার হাতের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
ম্যার্কেলের চ্যান্সেলর থাকার সময়টাতে অস্ট্রেলিয়া সাতজন প্রধানমন্ত্রীর দেখা পেয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র দেখেছে চার প্রেসিডেন্ট। তাঁর এই দীর্ঘ সফল নেতৃত্বের ঠিকঠাক কারণ ব্যাখ্যা করা মুশকিল। তবে বিজ্ঞানী হিসেবে তাঁর ক্যারিয়ার এবং প্রশিক্ষণে নজর দিলে হয়তো খানিকটা জবাব মিলতে পারে।
আঙ্গেলা ম্যার্কেল পঞ্চমবারের মতো চ্যান্সেলর হতে চাননি। এ মাসেই দায়িত্ব ছাড়বেন। আর সে সঙ্গে বিশ্বরাজনীতি হারাবে একজন বিজ্ঞানীকে। বিজ্ঞানীরা রাজনীতিতে এসে সফল হয়েছেন এমন অনেক জ্বলজ্বলে উদাহরণ মিলবে। তবে বিজ্ঞানীদের কোন গুণটা তাঁদের কার্যকরী নেতা করে তোলে, চলুন আমরা সে প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি।
দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে ম্যার্কেল এমন অনেক গুণের পরিচয় দিয়েছেন যা বেশিরভাগ বিজ্ঞানীদের মধ্যে দেখা যায়। তিনি বিচক্ষণ এবং কৌশলী। তাঁর ধৈর্য এবং দূরদৃষ্টি আছে। সহযোগিতা এবং সমন্বয়ে গুরুত্ব দেন। দীর্ঘমেয়াদে পরিকল্পনার মূল্য বোঝেন তিনি। সবশেষে, জানা এবং অজানার মধ্যে পরিষ্কার সীমারেখা টানায় ওস্তাদ তিনি। সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো তথ্য হাতে না থাকলে অনিশ্চয়তা লুকানোর চেষ্টাও করেননি।
কোয়ান্টাম রসায়নে ডক্টরেট করেছেন ম্যার্কেল। বিষয়টি কোয়ান্টাম মেকানিকসের অংশ। পরমাণু এবং উপ-পারমাণবিক কণার আবিষ্কার এবং বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনে বিজ্ঞানীরা দিকনির্দেশনা পান কোয়ান্টাম মেকানিকস থেকে। আবার, তাৎক্ষণিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না এমন ব্যাপারগুলো কোয়ান্টাম মেকানিকসে অনুমান করার সুযোগ আছে। এর মাধ্যমে মানুষের আবেগতাড়িত পক্ষপাত এড়িয়ে বৃহত্তর সত্য খোঁজার চেষ্টা করা যায়।
বিজ্ঞান আর রাজনীতির হাতে হাত মিলিয়ে চলা কোনো কাকতালীয় ব্যাপার নয়। দুটোই ভয়াবহ জটিল এই বিশ্বে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনে। আঙ্গেলা ম্যার্কেল একবার বলেছিলেন, তাঁর কৌশল হলো ছোট ছোট অনেক পদক্ষেপে এগোনো। হুট করে বড় পরিবর্তন চান না তিনি।
প্রথমবার যখন চ্যান্সেলর হলেন ম্যার্কেল, ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানির দেশ ছিল জার্মানি। গত ১৬ বছরে তিনি জার্মানিকে বিশ্বের প্রথম দেশে পরিণত করেছেন যেখানে জ্বালানির প্রধান উৎসই এখন নবায়নযোগ্য। ২০৪৫ সাল নাগাদ জার্মানির কার্বন নিঃসরণ নিট শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন তিনি। সে সময়ে জার্মানিকে বিশ্বের চতুর্থ বৃহৎ অর্থনীতিতে পরিণত করতে চান। আর এগুলো তাঁর অনেক উদ্যোগগুলোর কয়েকটি।
অন্ধকার যুগ থেকে আলোর প্রয়োজনেই বিজ্ঞানের সৃষ্টি। বিজ্ঞান আমাদের আলোকিত বিশ্ব দিয়েছে। আবার বিশ্ব যখন নতুন অন্ধকারের দিকে এগিয়ে যাবে, তখন বিজ্ঞানই আলোর মশাল জ্বালিয়ে রাখবে।
সূত্র: দ্য কনভারসেশন
সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ সেপ্টম্বর ২৬, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,