গুহায় বসবাস, বন্য প্রাণী শিকার—আদিম মানুষের কথা বিবেচনা করলে এই চিত্রগুলো ভেসে ওঠে। সেই সময় পুরুষেরা এই কাজগুলো করতেন। এর পাশাপাশি হিংস্র বন্য প্রাণীর আক্রমণ থেকে পরিবারের সদস্যদের পাহারা দেওয়ার কাজটিও করতেন পুরুষেরা। কিন্তু সময় বদলেছে, বদলেছে পুরুষের দায়িত্ব।
এই দায়িত্বে কতটা বদল এসেছে কিংবা বর্তমান সময়ে একজন পুরুষে কোন দায়িত্বের প্রতি মনোযোগী হওয়া উচিত, তার একটি বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে ভারতের লাইফস্টাইল ম্যাগাজিন ম্যানস ওয়ার্ল্ড ইন্ডিয়ার ওয়েবসাইটে। এতে বলা হচ্ছে, সভ্য সমাজে পুরুষের কাজের ধরন বদলেছে। যুদ্ধে যাওয়া থেকে শুরু করে বাড়ির আঙিনার ঘাস কাটা, শিশুর ডায়াপার পরিবর্তনেও পারদর্শী হয়ে উঠছেন তাঁরা। পুরুষ দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত ওই নিবন্ধে পাঁচটি গুণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
শ্রদ্ধাবোধ
‘না’ মানে ‘না’। কোনো কাজের ক্ষেত্রে কেউ যদি ‘না’ বলেন তবে বুঝে নিতে হবে তাঁর ওই কাজে সম্মতি নেই। কোনো ছেলেশিশু যদি স্কুলজীবনে এ শিক্ষাটা পেয়ে থাকে, তাহলে তা খুবই প্রশংসার দাবিদার। কোনো ব্যাপারে কারও সম্মতি আছে কি না, তা জানাটা জরুরি। অন্যদের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন, সমালোচনাকে সহ্য করার ক্ষমতা অর্জনের মধ্য দিয়ে সত্যিকারের পুরুষত্বের যাত্রা শুরু হতে পারে। সাহসী মানুষেরা কখনো লড়াই করে জিততে চান না। বরং তারাঁ জানেন, কীভাবে অন্যের কাছে বিনয়ের সঙ্গে নিজের মতামত প্রকাশ করতে হয় ও কোন বিষয় এড়িয়ে যেতে হয়।
সাজসজ্জা
পুরুষেরা রূপচর্চা করবে, এটা একটা সময় ভাবাই যেত না। তবে এখন আর সেসব দিন নেই। বর্তমান সময়ে ব্যক্তিগত সাজসজ্জার দিকে মনোযোগী না হলে তাঁকে আলাদা করে দেখার ফুরসত মিলবে না কারও। আধুনিক বিজ্ঞান মনে করে, শরীর থেকে প্রাকৃতিকভাবে নিঃসৃত ফেরোমনের গন্ধ দিয়ে বিপরীত লিঙ্গের মানুষকে আকর্ষণের তত্ত্ব এখন আর কাজে দেয় না। এর চেয়ে এখন বরং কৃত্রিম সুগন্ধী ব্যবহার করাটাই শ্রেয়।
সমাজ সচেতন
শুধু ঘষে-মেজে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তোলা কিংবা বিনয়ী হওয়াটাই যথেষ্ট নয়। বিশ্ব সম্পর্কে তাঁদের জ্ঞান-বুদ্ধিও থাকতে হবে। আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন নিজের মতামত প্রদানের বিষয়টি জরুরি হয়ে পড়েছে। তবে হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুক গ্রুপে ঘুরে–ফিরে বেড়ানো বিভিন্ন মতামতের আলোকে নিজের মত প্রতিষ্ঠা করলে চলবে না। বরং বাস্তব পরিস্থিতিকে বস্তুনিষ্ঠভাবে যাচাই-বাছাই করে তবেই মতামত দিতে হবে। নিজেকে তথ্যসমৃদ্ধ রাখতে হবে। কারণ, এখন পর্যন্ত জ্ঞানই শক্তি।
আবেগ নিয়ন্ত্রণ
একজন পুরুষকে আবেগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রাখতে হবে। বেশি টাকা উপার্জন করতে না পারলে কিংবা উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্যের পেছনে না ছুটতে পারলে অনেকে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। মনে রাখতে হবে, অল্পবিস্তর শূন্যতা না থাকলে যাপিতজীবন বিরক্তির হয়ে উঠতে পারে। এ ছাড়া ভেতর থেকে আত্মমুগ্ধতার ঝাঁপিটাও টেনে বের করে ছুড়ে ফেলতে হবে।
বলায় ও লেখায় সাবলীল
ইমোজি দিয়ে কিংবা নেচে নেচে সবকিছু প্রকাশের একটা যুগ চলছে। শব্দ বা কথার ব্যবহার যেন এক হারিয়ে যাওয়া শিল্প হয়ে উঠছে। কিন্তু শব্দ-কথার শক্তি দিয়ে যত দ্রুত মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়, তা অসংখ্যবার নেচে কিংবা শিশুসুলভ স্মাইলি ইমোজি ব্যবহার করেও পূরণ করা যাবে না। ঠিক সে কারণেই এখনো শেক্সপিয়ারের বই বিক্রি হয়। একই কারণে কুইন ও বিগিজের কাভার ভার্সনের জনপ্রিয়তাকে পপ ও বয় ব্যান্ডকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। শুধু কারও মুখ থেকে বের হওয়া কথাই নয়, অব্যক্ত কথাও মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষমতা শব্দের রয়েছে। সুতরাং, ভালো ভালো বই পড়তে হবে এবং বিচক্ষণ হতে হবে।
সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ নভেম্বর ১৯, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,