যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে চীন, ভিয়েতনাম ও ভারতের চেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ
করোনার পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে যুক্তরাষ্ট্র। আর তাতেই দোকানপাট ও বিপণিবিতানের বিক্রি বেড়েছে। ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোও পণ্যের ফরমাশ বাড়িয়ে দিয়েছে। তৈরি পোশাকেও সেই হাওয়া লেগেছে।
চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন দেশ থেকে ২ হাজার ৯২১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক কিনেছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২২ দশমিক ১৯ শতাংশ বেশি। গতবার জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে ২ হাজার ৩৯১ কোটি ডলারের পোশাক কিনেছিল যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের সুবাতাস বাংলাদেশের গায়েও লেগেছে। তাতে দেশটিতে চলতি বছরের পাঁচ মাসে ২৫৮ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করতে পেরেছেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকেরা। এতে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি বেড়েছে ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ, যদিও বাংলাদেশের চেয়ে চীন, ভিয়েতনাম ও ভারত বেশি সুযোগ নিতে পেরেছে।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে চীন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৫৮২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। তাদের রপ্তানি বেড়েছে ২৬ শতাংশ। অবশ্য গত বছর করোনার কারণে চীনের পোশাক রপ্তানি ৩৯ শতাংশ কমে গিয়েছিল। রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫১৫ কোটি ডলার। খাদের কিনার থেকে দেশটি আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দ্বিতীয় শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ ভিয়েতনামও খারাপ করছে না। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে তাদের পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ৫৭৪ কোটি ডলার। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেশি। গত বছর দেশটির পোশাক রপ্তানি কমেছিল ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। তাদের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২৫৭ কোটি ডলার।
অটেক্সার তথ্যানুযায়ী, চলতি বছর করোনায় বিপর্যস্ত হওয়ার পরও ভারত বেশ ভালোভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২১ দশমিক ৯৫ শতাংশ। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে দেশটি পোশাক রপ্তানি করেছে ১৭৩ কোটি ডলারের, যদিও গত বছর করোনার কারণে তাদের রপ্তানি ২৫ শতাংশ কমেছিল।
যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বাংলাদেশি পোশাকের বড় বাজার। তবে ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে সেখানে বাংলাদেশের রপ্তানি কমে যায়। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে ২০১৯ সালে অবস্থার পরিবর্তন হতে শুরু করে। ইতিমধ্যে কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নেও ব্যাপক অগ্রগতি হয় বাংলাদেশের। শেষ পর্যন্ত ২০১৯ সালে ৫৯৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। গত বছরও শুরুটা দুর্দান্ত হয়েছিল। পরে অবশ্য করোনার থাবায় রপ্তানি নিম্নমুখী হতে থাকে। বছর শেষে ৫২২ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়।
পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিপুলসংখ্যক মানুষ টিকা নিয়েছেন। লকডাউনও তুলে নেওয়া হয়েছে। তাতে হঠাৎ করেই পণ্যের চাহিদা বেড়ে গেছে। অনেক ব্র্যান্ডের বিক্রয়কেন্দ্রে পণ্যের সংকট রয়েছে। ফলে ক্রেতারা প্রচুর ক্রয়াদেশ দিচ্ছেন। আবার চীন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও মিয়ানমার থেকে কিছু ক্রয়াদেশ স্থানান্তরিত হয়ে বাংলাদেশে এসেছে। অবশ্য চলমান কঠোর বিধিনিষেধে পোশাক কারখানা বন্ধ থাকায় রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হবে।
তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজেএমইএর পরিচালক মো. মহিউদ্দিন রুবেল গত রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। ফলে তাদের পণ্যের চাহিদা বাড়বে। সেই ব্যবসা আমরা পাব। তবে হঠাৎ করে বিধিনিষেধের কারণে পোশাক কারখানা লম্বা বন্ধের ফাঁদে পড়েছে। সে জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানিতে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অবশ্য ব্যবসায় বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলে আমি মনে করি না। কতটুকু প্রভাব পড়বে, তা বলার সময় এখনো আসেনি।’
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: জুলাই ২৮, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,