তিন দশকে যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ
মার্চ মাসে যুক্তরাজ্যের ভোক্তামূল্যস্ফীতি বিগত তিন দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। শুধু যুক্তরাজ্যে নয়, মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতিও ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। বস্তুত গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাস থেকে সারা বিশ্বে মূল্যস্ফীতি বাড়তে শুরু করে। সম্প্রতি ইউক্রেনে রুশ হামলার পর মূল্যস্ফীতি আরও একদফা বেড়েছে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাজ্যের বার্ষিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ। মার্চে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ শতাংশ—১৯৯২ সালের পর সর্বোচ্চ। তবে অনেক অর্থনীতিবিদের মতে, মূল্যস্ফীতির হার আরও বাড়বে। খবর রয়টার্সের।
গাড়ির জ্বালানি থেকে শুরু করে খাদ্য ও আসবাবের মূল্যবৃদ্ধি এই মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির কারণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। যুক্তরাজ্যের সরকারি তথ্যানুসারে, মার্চ মাসে খাদ্য, জ্বালানি, অ্যালকোহল ও তামাকের মূল্য ৫ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, ফেব্রুয়ারি মাসে যে হার ছিল ৫ দশমিক ২ শতাংশ।
যুক্তরাজ্য সরকারের তথ্যানুসারে, এই বাস্তবতায় ১৯৫০ সালের পর ব্রিটিশ পরিবারগুলো জীবনযাত্রার ব্যয়ে সবচেয়ে বড় ধরনের সংকোচনের মুখোমুখি হচ্ছে। এই মূল্যস্ফীতি সরকারের জন্য বড় দুঃসংবাদ।
ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি জানি, দেশের মানুষ এখন কী অবস্থায় আছে, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটছে তাদের। সে জন্য মানুষকে অর্থসহায়তা দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’
তবে পরিস্থিতি ঋষি সুনাকের জন্য খুব একটা ভালো নয় বলেই মনে করেন অর্থনীতিবিদেরা। জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি, চীনসহ বিভিন্ন স্থানে নতুন করে সরবরাহ–সংকটের কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতি আবারও চাপের মুখে পড়েছে। গত মাসে যুক্তরাজ্যের বাজেট কার্যালয়ের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২২ সালের শেষের দিকে মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠবে, ৮ দশমিক ৭ শতাংশ পর্যন্ত। আর তা হলে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়াবে গত ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
যুক্তরাষ্ট্রে ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি
যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির হার কেবল বাড়ছেই। বলা যায়, মূল্যস্ফীতি যেন পাগলা ঘোড়ায় সওয়ার হয়েছে। প্রতি মাসেই নতুন নতুন রেকর্ড গড়ছে অর্থনীতির অতি গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক। গত মাসে জানা যায়, ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৩২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এবার জানা গেল, মার্চে মূল্যস্ফীতির হার ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
মূলত জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তা মূল্যস্ফীতির হার ৮ দশমিক ৫ শতাংশে উঠেছে—১৯৮১ সালের ডিসেম্বরের পর সর্বোচ্চ।
রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাশিয়া থেকে তেল, গ্যাসসহ সব ধরনের পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করে। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানির মূল্যের রেকর্ড বৃদ্ধি হয়।
গত ২৪ ফেব্রুয়রি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল রপ্তানিকারকের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার ঢেউ আসতে শুরু করে।
যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, এ বছরের মার্চ মাসে সেখানে জ্বালানির মূল্য ৩২ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে জ্বালানির সঙ্গে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। গম ও সূর্যমুখী তেলের মতো বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্যের বড় রপ্তানিকারক এই দুই দেশ—এর জেরে সারা বিশ্বেই খাদ্যমূল্য বাড়ছে।
উন্নত দেশে সাধারণত মূল্যস্ফীতির সহনীয় হার ধরা হয় ২ শতাংশ। অথচ এখন মূল্যস্ফীতির হার ৮ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সীমিত আয়ের মানুষ বিপাকে পড়েছে। নর্থ ক্যারোলাইনার ক্রিস্টেন হাভলিক বলেন, মূল্যস্ফীতির ধাক্কায় নিজেকে এখন তাঁর উন্মাদের মতো মনে হয়।
গত বছর করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমে আসতে শুরু করলে পশ্চিমা বিশ্বে মূল্যস্ফীতি বাড়তে শুরু করে। এরপর রাশিয়া–ইউক্রেন তাতে নতুন মাত্রা যোগ করে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির ধারায় লাগাম পরাতে গত মাসে তিন বছরের মধ্যে এই প্রথম দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদের হার বাড়ায়। আর এ বছরের মধ্যে নীতি সুদহার আরও কয়েক বার বাড়ানো হবে বলে ইঙ্গিত দেয় যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তবে নীতি সুদহার এত সামান্য পরিমাণে বৃদ্ধি করলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে না বলে মনে করেন ফেডের কর্মকর্তারা। ফেডের সেন্ট লুইস শাখার প্রেসিডেন্ট জেমস বুলার্ড ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, নীতি সুদহার এমন পর্যায়ে উন্নীত করতে হবে, যাতে প্রবৃদ্ধির ধারায় প্রকৃত অর্থেই প্রভাব পড়ে। তবে সে ক্ষেত্রে মন্দার শঙ্কা আছে বলেও মনে করেন বিশ্লেষকেরা। সে জন্য বুলার্ডের অভিমত, নীতি সুদহার ২ দশমিক ৪ শতাংশ হলে অর্থনীতির সংকোচন বা প্রসারণ কোনোটাই হবে না।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, পশ্চিমা দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি তাদের রাজনীতিবিদদের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। তবে তাতে পশ্চিমা নেতারা রাশিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেবেন, সেই সম্ভাবনা সুদূরপরাহত বলেই মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: এপ্রিল ১৫, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,