এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল
যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল রাশিয়া সীমান্তে ন্যাটোর সম্প্রসারণের মতো বিপজ্জনক: চীন
সময় বলবে রাশিয়া নিয়ে আমাদের অবস্থানই ঠিক ছিল: চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
রাশিয়া সীমান্তের কাছে পূর্ব ইউরোপে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সম্প্রসারণ ইউক্রেনের জন্য বিপদের কারণ হয়েছে। এ কারণে দেশটিতে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল ন্যাটোর ওই নীতির মতো বিপজ্জনক, এমনটাই মনে করছে চীন। দেশটির উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী লি ইউচেং গতকাল শনিবার এমন মন্তব্য করেছেন। খবর রয়টার্স ও এনডিটিভির।
বেইজিংয়ে একটি নিরাপত্তা ফোরামে অংশ নিয়ে লি ইউচেং বলেন, ন্যাটো ইউরোপকে নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলেছিল। শেষ পর্যন্ত ইউরোপের নিরাপত্তাহীনতার কারণ হয়েছে। সীমান্তে ন্যাটোর সম্প্রসারণের ভীতি থেকেই গত মাসে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছে।
পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর সম্প্রসারণ নিয়ে মস্কোর উদ্বেগের কথা জানিয়ে চীনের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাশিয়ার মতো একটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশকে কোণঠাসা করে পূর্ব ইউরোপে জোটের আরও সম্প্রসারণের প্রচেষ্টা থেকে ন্যাটোর সরে আসা উচিত।
ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ ‘আরও আপত্তিকর হয়ে উঠছে’ বলে মন্তব্য করেন লি ইউচেং। তিনি আরও বলেন, নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কোনো সমস্যার সমাধান হয় না। নিষেধাজ্ঞা সাধারণ মানুষের ক্ষতি করে। অর্থনীতিতে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভূরাজনীতি নিয়ে বলতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে লি ইউচেং বলেন, ‘এমন সম্প্রসারণের কৌশল এ অঞ্চলের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। আমরা যদি এমন লাগামহীন কৌশল বাস্তবায়নের সুযোগ দিই, তবে অকল্পনীয় পরিণতি দেখতে হতে পারে। এ কৌশল এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে অন্ধকার গহ্বরের দিকে ঠেলে দেবে।’
‘এশিয়ার দেশ হিসেবে আমাদের ভাগ্য নিজেদের হাতে রাখতে হবে। স্বাধীন, ভারসাম্যপূর্ণ ও দূরদর্শী পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করতে হবে। এর মধ্য দিয়ে এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ঐক্য ধরে রাখতে হবে’, এমনটাই মন্তব্য করেন লি ইউচেং।
চীনা উপপররাষ্ট্রমন্ত্রীর গতকালের বক্তব্য দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। বক্তব্যে লি ইউচেং আরও বলেন, ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ও কৌশল বেইজিংয়ের নজরে রয়েছে। বিশেষত ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়াকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোট কোয়াড গঠন ও এর হুমকি নজরে রাখছে চীন। এ জোটকে ‘এশিয়ান ন্যাটো’ বলে থাকে বেইজিং।
এর আগে চলতি মাসের শুরুর দিকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, চীনকে দমানোর জন্য একটি এশিয়ান ন্যাটো গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে ওয়াশিংটন। ওই সময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের জোট করার আসল উদ্দেশ্য ন্যাটোর ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় সংস্করণ গড়ে তোলা।
সময় বলবে রাশিয়া নিয়ে আমাদের অবস্থানই ঠিক ছিল: চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী
রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটে চীনের অবস্থান বাস্তবসম্মত ও ন্যায়সংগত বলে মন্তব্য করেছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, সংকটময় এ পরিস্থিতিতে চীন যে ইতিহাসের সঠিক পক্ষে আছে, তা সময়ই বলে দেবে। খবর সিনহুয়ার
ইউক্রেন ইস্যু নিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত শুক্রবার প্রায় দুই ঘণ্টা ভিডিও কলে বৈঠক করেন। ওই বৈঠক নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে গতকাল শনিবার এসব কথা বলেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ইউক্রেন নিয়ে চীন সরকার নিজেদের অবস্থান স্পষ্টভাবে ও বিস্তারিত আকারে তুলে ধরেছে উল্লেখ করে ওয়াং ই বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বিশ্বশান্তি রক্ষায় চীন সব সময় একটি শক্তি হিসেবে কাজ করেছে।
চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীন সব সময় শান্তির পক্ষে কাজ করেছে ও যুদ্ধের বিরোধিতা করেছে। দেশটির ইতিহাস ও সংস্কৃতির মূলেই শুধু এই ঐতিহ্যে নেই, বরং বেইজিংয়ের পররাষ্ট্রনীতিও একই।
চীন কখনোই বাইরের জোরজবরদস্তি ও চাপ মেনে নেবে না এবং বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে আনা সব ভিত্তিহীন অভিযোগ ও সন্দেহের বিরোধিতা করবে বলে উল্লেখ করেন এই চীনা কর্মকর্তা। তাঁর ভাষ্য, পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে বাস্তবসম্মত ও ন্যায়সংগত পথে থেকে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেবে চীন।
সি ও বাইডেনের বৈঠকের দিকে ইঙ্গিত করে ওয়াং ই বলেন, ইউক্রেন সমস্যা সামাল দিতে একটি চীনা সমাধান প্রস্তাব করা হয়েছে। এই সমাধানের মূলত দুটি দিক রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, যুদ্ধ থামাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংলাপ ও আলোচনায় বসতে সব পক্ষকে চাপ দিতে হবে, যত দ্রুত সম্ভব সংঘাত বন্ধ করতে হবে, বেসামরিক লোকজন হত্যা থামাতে হবে এবং মানবিক সংকট রোধে লাগাম টানতে হবে।
চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, স্নায়ুযুদ্ধের মানসিকতা পরিহারের মধ্যেই ইউক্রেন সংকটের স্থায়ী সমাধান রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের জোটগুলোর মুখোমুখি অবস্থান হওয়া এড়িয়ে চলতে হবে। একই সঙ্গে ইউরোপে দীর্ঘমেয়াদি শান্তির জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ, কার্যকর ও টেকসই আঞ্চলিক নিরাপত্তাকাঠামো গড়ে তুলতে হবে।
চীনের কাছে রাশিয়া অস্ত্র সহায়তা চেয়েছে বলে সম্প্রতি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর বের হয়। এরপর বৈঠকে বসেন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের দুই দেশের প্রেসিডেন্ট। হোয়াইট হাউসের দেওয়া তথ্য বলছে, রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করার পরিণতি নিয়ে ওই আলাপচারিতায় চীনের প্রেসিডেন্টকে হুঁশিয়ারি দেন বাইডেন। অন্যদিকে চীনা রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম সিসিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কোনো পক্ষের উপকারে আসবে না বলে ভিডিও কলে উল্লেখ করেন সি চিন পিং।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশির ভাগ দেশ কিয়েভের পক্ষে দাঁড়ায়। তবে এখন পর্যন্ত রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি চীন। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়ার অভিযান বন্ধের প্রস্তাবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল দেশটি। এমনকি ইউক্রেনে হামলার নিন্দাও জানায়নি বেইজিং।
সূত্র : প্রথম আলো।
তারিখ: মার্চ ২০, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,