ব্রিটিশ পত্রিকা গার্ডিয়ানের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠরা যুক্তরাজ্যে সম্পত্তি ক্রয় করতে বিপুল অর্থ ব্যয় করেছেন। রিপোর্টে এই ঘনিষ্ঠদের মধ্যে সালমান এফ রহমান ও বেক্সিমকো গ্রুপ, নজরুল ইসলাম মজুমদার ও তার নাসা গ্রুপ এবং সাবেক ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নাম এসেছে।
শেখ হাসিনা প্রবল গণআন্দোলনের মুখে গত অগাস্ট মাসে যখন দেশ থেকে ভারতে পালিয়ে যান তখন তার বাসভবন তছনছ করছিলো আন্দোলনকারীরা। তিনি এখন ভারতেই রয়েছেন।
এর আগে এই আন্দোলনের সময় বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে প্রায় এক হাজার বাংলাদেশি মারা গেছে এবং অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছে।
বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগসূত্র আছে এমন প্রভাবশালী কিছু পরিবার ও ব্যবসায়ী অবৈধ উপায়ে বিলিয়ন পাউন্ড অর্জন করেছেন। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করার মতো অভিযোগও আছে।
তদন্তকারীরা মনে করেন এসব অর্থ হুন্ডি করে পাচার হয়ে থাকতে পারে। হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর দক্ষিণ এশিয়ায় বেশ জনপ্রিয়। এখন বাংলাদেশের নতুন সরকার ও তদন্তকারীদের মতে এসব অবৈধ অর্থের কিছুটা যুক্তরাজ্যে গেছে।
গার্ডিয়ানের রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, দ্যা অবজারভার ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের এক অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ব্রিটিশ আবাসন খাতে বিনিয়োগ করেছে ৪০ কোটি পাউন্ড কিংবা তারও বেশি। এর মধ্যে সাড়ে তিনশর মতো প্রোপার্টি আছে, যার মধ্যে ফ্ল্যাট থেকে শুরু করে বিলাসবহুল বাড়িও রয়েছে।
যুক্তরাজ্যের এবং কিছু অফশোর কোম্পানির নামে এসব সম্পদ যেসব প্রভাবশালী ব্যক্তি ও ব্যবসায়ী কিনেছেন তার মধ্যে শেখ হাসিনা সরকারের দুই মন্ত্রীও আছেন। যদিও এসব সম্পদের মালিকরা বলছেন, অভিযোগগুলো বাংলাদেশের নতুন সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আক্রমণ।
বেক্সিমকো গ্রুপ বিবিসি বাংলার প্রশ্নের জবাবে বলেছে, গার্ডিয়ানের সংবাদ তাদের নজরে এসেছে এবং তাদের বিশ্বাস নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সত্য উন্মোচিত হবে এবং প্রকৃত ঘটনাগুলো সবার সামনে স্পষ্ট হবে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের সিআইডি আগেই জানিয়েছে যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি, শূল্ক ফাঁকি, ভ্যাট ফাঁকি, আন্ডার ইনভয়েসিং/ওভার ইনভয়েসিং করে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার সংক্রান্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে মানিলন্ডারিং অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত শ্বেতপত্র প্রনয়ণ কমিটি রোববার উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে যে প্রতিবেদন দিয়েছে, সেখানে উল্লেখ করেছে যে, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বছরে গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার অর্থ পাচার হয়েছে।
বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে তদন্তের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গোয়েন্দা ইউনিট এসব ব্যক্তি ও পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিতসহ নানা ব্যবস্থা নিয়েছে।
যদিও টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ডঃ ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া জটিল ও দীর্ঘসময়সাপেক্ষ বিষয়।
“তাছাড়া টাকাটা যে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে সেটাও আদালতে প্রমাণ হতে হবে। তবে আশার কথা সরকার গুরুত্ব দিয়ে উদ্যোগ নিয়েছে,” তিনি বলেছেন।
মন্ত্রীর ভূমি ও ভূমি মন্ত্রী
শেখ হাসিনার পলায়নের কয়েকদিন পর গ্রেফতার হন তার বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। বলা হয় নৌকায় করে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাদের আটক করা হয়। ওই সরকারের সময় তিনিই সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন বলে অনেকে মনে করেন।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ এনেছে ঢাকার সিআইডি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গোয়েন্দা ইউনিট তার ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে।
মি. রহমান বেক্সিমকো গ্রুপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ব্যবসা গোষ্ঠী এটি। গার্মেন্টস থেকে শুরু করে ঔষধ শিল্প পর্যন্ত সবকিছুতেই তাদের আগ্রহ ছিলো। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বেক্সিমকো ব্যাংকগুলো থেকে বিপুল অর্থ ঋণ পেয়ে আসছিলো।
এমনকি কোভিড টিকা দেয়ার ক্ষেত্রেও বিতরণের একক দায়িত্বে ছিলো বেক্সিমকো। এখন এর আর্থিক বিষয়াদি রাজস্ব বোর্ড ও কর কর্তৃপক্ষের তদন্তাধীন আছে। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোম্পানিটির জন্য একজন রিসিভার নিয়োগ করেছে।
বেক্সিমকো কোম্পানির প্রকাশনাগুলোতে দেয়া তথ্য অনুযায়ী সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান ও ভাতিজা আহমেদ শাহরিয়ার সিইও বা গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলোর প্রধান পদগুলোতে আছেন।
তাদের বিষয়েও তদন্ত করছে সিআইডি। দেশে মি.শায়ানের সম্পত্তি স্থগিত করা হয়েছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ও অবজারভারের তদন্তে উঠে এসেছে, অনুসন্ধান কর্তৃপক্ষ লন্ডনের মেফেয়ার এলাকার গ্রোসভেনর স্কয়ারের সম্পত্তির সাথে জড়িত অর্থের বিষয়ে অনুসন্ধান করছে। এলাকাটি লন্ডনের খুবই মর্যাদাপূর্ণ ও ঐতিহাসিক বলে বিবেচিত।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রহমান পরিবারের সদস্যদের সেখানে সাতটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট পাওয়া গেছে। এগুলো অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে কেনা হয়েছে। এর মধ্যে ২০২২ সালে একটি আড়াই কোটি পাউন্ডের বেশি অর্থ দিয়ে ক্রয় করা হয়েছে। আহমেদ শায়ান রহমান ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড কোম্পানির মাধ্যমে এটি কিনেছেন।
তিনি গ্রোসভেনর স্কয়ারে আরেকটি ফ্লাটের মালিক, যার মূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি পাউন্ড।
অফশোর কোম্পানিগুলোর বিষয়টি দেখভাল করেন তার চাচাতো ভাই আহমেদ শাহরিয়ার। ওই একই স্কয়ারে এবং কাছাকাছি এলাকায় তারও চারটি প্রোপার্টি আছে। এগুলোর দাম প্রায় দুই কোটি ত্রিশ লাখ পাউন্ড।
আহমেদ শায়ান রহমান ও আহমেদ শাহরিয়ার রহমান- এর আইনজীবীরা দ্যা অবজারভারকে বলেছেন, অর্থ পাচারের নিয়ম কানুনসহ আর্থিক বিধি বিধান যথাযথ মেনেই এসব সম্পদ কেনা হয়েছে। তারা একই সঙ্গে বলেছেন যে ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্য হলো ‘রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের দুর্নীতি তদন্ত করা’।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর দ্যা অবজারভারকে বলেছেন , “যারা বাংলাদেশ থেকে সম্পদ সরিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে এটি বৈধ আইনি প্রক্রিয়া। আমরা এগুলো ফেরত পেতে চাই।”
এছাড়া আওয়ামী লীগের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীও এখন তদন্তের আওতায়। তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টও জব্দ করা হয়েছে। তার ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদ স্থানান্তরে স্থগিতাদেশ দিয়েছে আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বলে উল্লেখ করেছে অবজারভার।
তদন্তকারীরা জানতে চাইছেন যে মি. চৌধুরী ও তার পরিবার কীভাবে যুক্তরাজ্যে তিনশর বেশী প্রোপার্টির মালিক হলেন। যুক্তরাজ্য ভূমি কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে এসব সম্পদের মূল্য অন্তত ১৬ কোটি পাউন্ড।
তিনি অবজারভারকে কোন মন্তব্য করেননি। তবে ইমেইলে বলেছেন বাংলাদেশের বাইরে বৈধ ব্যবসা থেকেই তিনি বিদেশে সম্পদ কিনেছেন।
শহর, দেশ ও দুবাই
আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রীরাই শুধু ব্রিটেনে প্রোপার্টি কিনেন নি, বরং কিছু প্রভাবশালী ব্যবসায়ীও একই কাজ করেছেন বলে দেখতে পেয়েছে অবজারভার ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের তদন্ত দল।
একেবারেই নিজস্ব ব্যবহারের জন্য সড়ক ও পেশাদার নিরাপত্তাকর্মীসহ একই নামে গলফ কোর্স—মাল্টিমিলিওনিয়ারদের নিরাপদে লুকিয়ে থাকার মতো জায়গা। সারে এলাকায় এমন মূল্যবান একটি এস্টেট হলো আহমেদ আকবর সোবহান পরিবারের বিভিন্ন সদস্যদের বাড়ি। মি. সোবহান শাহ আলম নামে পরিচিত।
ওই এলাকায় দুটি বড় সম্পদের মালিক তারা। এর মূল্য তের মিলিয়ন পাউন্ড। ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস এর নিবন্ধিত কোম্পানির মাধ্যমে এগুলো কেনা হয়েছে।
ফ্রেঞ্চ স্টাইলের আরেকটি ম্যানশন এখন নির্মাণাধীন রয়েছে। অবজারভার ওই এলাকাটি ঘুরে এসেছে।
সোবহান পরিবারের সম্পদ আসে বসুন্ধরা গ্রুপ থেকে। এটি বাংলাদেশে বড় একটি কোম্পানি। আবাসন, শিপিং, মিডিয়া ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে তাদের ব্যবসা আছে। ২০০৮ সালে এই পরিবারের বিরুদ্ধে তদন্ত হলেও তারা পরে অভিযোগ থেকে রেহাই পান।
এখন শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তাদের বিরুদ্ধে আবার তদন্ত হচ্ছে। সরকারি ঋণ পরিশোধ না করার বিষয়টিও তদন্তাধীন আছে। গত একুশে অক্টোবর ঢাকার একটি আদালত শাহ আলম সহ তার পরিবারের ছয় সদস্যের বিদেশ যাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
তদন্তকারীরা মনে করেন বহু অর্থ সিঙ্গাপুর ও দুবাই হয়ে অন্য দেশে গেছে। সিঙ্গাপুরের ঠিকানা ব্যবহার করে অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে সাড়ে পাঁচ মিলিয়ন পাউন্ডের চেলসি ওয়াটারফ্রন্ট প্রোপার্টি কিনে সাফওয়ানের ভাই।
সাফওয়ান সোবহান তার নিজের ও পরিবারের পক্ষ থেকে বলেছেন ‘যে কোন অনিয়মের অভিযোগ তারা শক্তভাবে প্রত্যাখ্যান করছে এবং এসব অভিযোগের বিরুদ্ধে তারা দৃঢ়ভাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করবে’।
“আমরা মনে করি এই তদন্ত আইনি দিক থেকে দুর্বল বলে প্রতীয়মান হবে এবং এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত,” বলেছেন তিনি। তবে তিনি দুবাই ও সিঙ্গাপুরকে ব্যবহার করে যুক্তরাজ্যে সম্পদ ক্রয়ের বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি।
আরেকটি বড় গোষ্ঠী নাসা গ্রুপের মালিক নজরুল ইসলাম মজুমদার। তাদের বিষয়েও অনুসন্ধান করছে সিআইডি যে তারা কীভাবে কেনসিংটনে ৩৮ মিলিয়ন পাউন্ডের সম্পত্তির মালিক হলেন।
মি. মজুমদারের ঘনিষ্ঠ সূত্র এসব অবৈধ অর্থে এগুলো কেনার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন যে তারা এসব অভিযোগ আইনগতভাবেই মোকাবেলা করবেন।
ব্রিটেনের যোগসূত্র
অবজারভার যেসব প্রোপার্টি চিহ্নিত করেছে প্রকৃত অর্থে তার চেয়ে আর বেশি সম্পদ যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকদের থাকতে পারে।
যুক্তরাজ্যে বিদেশিদের সম্পদের তথ্য প্রকাশ করা হলেও এগুলো গোপন রাখারও নানা পদ্ধতি আছে।
দেশটির দুর্নীতি বিষয়ক সর্বদলীয় এমপিদের গ্রুপ চাইছে যে সম্পদ কেনার ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাকগ্রাউন্ড ঠিকমতো কর্তৃপক্ষ যাচাই করুক।
“আমাদের অর্থ পাচার বিষয়ে শক্তিশালী যাচাই পদ্ধতি থাকা উচিত। লন্ডনের মাধ্যমে আসা অর্থের উৎস পর্যালোচনা করা দরকার,” বলছিলেন ওই গ্রুপের প্রধান জো পাওয়েল এমপি। “অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ চিহ্নিত করার যে উদ্যোগ বাংলাদেশ সরকার নিয়েছে তা আমি সমর্থন করি,” বলছিলেন তিনি।
যুক্তরাজ্যের আর্থিক খাতের সুশাসন বিষয়ক নিয়ম নীতির মানোন্নয়ন ও পরীক্ষা নিরীক্ষার দায়িত্বে আছেন সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে।
২০০২ সালে খবর বেরোয় যে টিউলিপ সিদ্দিকের মা শেখ রেহানা লন্ডনে আহমেদ শায়ান রহমানের একটি বাড়িতে বিনা ভাড়ায় থাকতেন।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল যুক্তরাজ্য কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে বলেছে “সন্দেহভাজন অর্থ বিনিয়োগের অন্যতম প্রধান গন্তব্য হিসেবে এখনো অনেকে যুক্তরাজ্যকে বিবেচনা করছে”।
লন্ডনের সোয়াস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুশতাক খান বলছেন তার মতে অর্থ পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশকে সহায়তা করার বিষয়টি যুক্তরাজ্য সরকারের বিবেচনা করা উচিত।
তিনি বলেন অর্থ পুনরুদ্ধারের এই চেষ্টার ফোকাস হওয়া উচিত বিপ্লবে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো। “বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাই বড় গণহত্যা। আমরা মানুষকে আশাহত হতে দিতে পারি না”।
বেক্সিমকো গ্রুপ যা বলছে
বেক্সিমকো গ্রুপের পক্ষ থেকে বিবিসি বাংলায় পাঠানো এক লিখিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “যুক্তরাজ্যের দি গার্ডিয়ানে প্রকাশিত সংবাদটি আমাদের নজরে এসেছে। বাংলাদেশের আর্থিক খাতের সংশ্লিষ্ট নীতিমালা ও মানি লন্ডারিং বিধি-বিধান মেনেই সম্পত্তিগুলো কেনা হয়েছে। সরকারের শুরু করা তদন্ত দুর্নীতির অভিযোগে নয়, বরং রপ্তানি বাণিজ্যের বিরোধকে কেন্দ্র করে। আমাদের বিশ্বাস, নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সত্য উন্মোচিত হবে এবং প্রকৃত ঘটনাগুলো সবার সামনে স্পষ্ট হবে।”
বিদেশে থাকা সম্পদের কী হবে
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে এসব বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট ইউনিট কাজ করছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংকের কেন্দ্রীয় ইন্টিলিজেন্স ইউনিটের নেয়া পদক্ষেপগুলো গার্ডিয়ানের রিপোর্টেও উল্লেখ করা হয়েছে।
ওদিকে ঢাকায় রাজস্ব বোর্ডের একজন কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে বলেছেন বেক্মিমকো ও বসুন্ধরা গ্রুপসহ কয়েকটি শিল্প গোষ্ঠীর বিষয়ে তারাও কাজ করছেন। একই সাথে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। তবে এর বিস্তারিত আর কিছু বলেননি ওই কর্মকর্তা।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে যে ধারণা পাওয়া গেছে তা হলো সিআইডির একটি টাস্কফোর্স কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গোয়েন্দা ইউনিটের সাথে সমন্বয় করে এসব শিল্প গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের যেসব অভিযোগ এসেছে সেগুলো তদন্ত করে দেখছে। ওই টাস্কফোর্সই মূলত দেখবে বিদেশে পাচার করা হলে সেই অর্থ কীভাবে ফিরিয়ে আনা যেতে পারে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ডঃ ইফতেখারুজ্জামান বলছেন যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন উন্নত দেশে পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ আরও অনেক গুণ বেশি।
“গার্ডিয়ান রিপোটে ৪০ কোটি পাউন্ডের কথা বলা হলেও এটি আরও অনেক বেশি হবে। পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনা সম্ভব, তবে এটি অনেক জটিল ও দীর্ঘমেয়াদী বিষয়। বাংলাদেশ ও যে দেশে টাকা পাচার হয়েছে সেখানকার পারস্পারিক আইনি প্রক্রিয়ায় এটি সম্ভব,” বিবিসি বাংলাকে বলছেন তিনি।
তার মতে অল্প সময়ের মধ্যে এই টাকা ফিরিয়ে আনা সম্ভব কঠিন। তবে যেসব দেশে এসব শিল্প গোষ্ঠী সম্পদ গড়েছে তাদের সরকারগুলো বাংলাদেশের প্রতি এখন সহানুভূতিশীল।
“কিন্তু তারপরেও প্রথমত বড় চ্যালেঞ্জ হলো টাকাটা যে পাচার হয়ে গেছে সেটা আদালতে প্রমাণ হতে হবে। বাংলাদেশে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো কাজ শুরু করেছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে উন্নত দেশে যেসব দেশ থেকে অর্থ পাচার হয়েছে তার এক শতাংশেরও বেশি ফেরত আসার দৃষ্টান্ত কম,” বলছিলেন মি. ইফতেখারুজ্জামান।
তার মতে যেসব দেশে পাচার হওয়া অর্থ গেছে তারাও এর দায় এড়াতে পারে না। “সে দেশে টাকা নেয়া, বিনিয়োগ করাসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় অর্গানাইজড গোষ্ঠী সহায়তা করেছে। না হলে এটা হতে পারতো না,” বলছিলেন তিনি।
সূত্র: বিবিসি বাংলা।
তারিখ: ডিসেম্বর ০১, ২০২৪
রেটিং করুনঃ ,