লেখক:এন এন তরুণ।
‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’—আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে আজকের আলোচনায় বিখ্যাত এই বাংলা প্রবাদটি ঋণ করতে হলো। শুধু ভ্লাদিমির পুতিন মাত্র নন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট যে-ই হোন না কেন, তিনি যদি রাশিয়াকে তার হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন, স্বাধীনভাবে, নিজের মতো করে চলার চেষ্টা করেন, পশ্চিমা বিশ্বের তা পছন্দ হওয়া কথা নয়। বস্তুত, খবরদারি করার সুযোগ না পেলেই মার্কিনরা যেকোনো দেশের বিরুদ্ধে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে যায়; প্রমাণ কিউবা ও ভেনেজুয়েলা। কিউবার কাস্ত্রো সরকারকে উৎখাত করার জন্য কিউবা থেকে পালিয়ে যাওয়া, দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা, সামরিক বাহিনীর লোক, আমলা ও বাতিস্তা সরকারে সুবিধাভোগী ধনিক শ্রেণি যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামিতে আশ্রয় নেয়। কিউবায় হামলা করার জন্য আলফা-৬৬, ওমেগা ৭, ব্রাদার্স টু রেস্কিউ, কিউবান আমেরিকান ন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ইত্যাদি বিভিন্ন নামে সংগঠন পরিচালিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আশ্রয়ে, অস্ত্রে, প্রশিক্ষণে ও অর্থ সাহায্যে। তারা শুধু কাস্ত্রো সরকারকে উৎখাতের চেষ্টা করেই ক্ষান্ত হয়নি, কিউবার জনগণের মধ্যেও তারা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল।
ভেনেজুয়েলা যদি একটি কমিউনিস্ট রাষ্ট্র হিসেবে থাকে, যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার বিপুল তেল সম্পদ কুক্ষিগত করার সুযোগ পায় না। এটাই যুক্তরাষ্ট্রের মাথাব্যথার কারণ। পুতিন ইউক্রেনের দুটি অঞ্চলকে স্বাধীন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন আর ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাদুরোকে উৎখাত করার চেষ্টা করেছেন। এই লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলীয় নেতা গুয়াইদোকে সাপোর্ট করার জন্য অর্থ দিয়ে একটি ভলান্টিয়ার বাহিনী গড়ে তুলেছে। জাতিসংঘের ৭২তম অধিবেশনে, লাতিন আমেরিকান নেতাদের সঙ্গে যৌথ মিটিংয়ে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলায় সামরিক হস্তক্ষেপের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু নেতারা সর্বসম্মতিক্রমে এ প্রস্তাব নাকচ করে দেন। নির্লজ্জভাবে পশ্চিমি রাষ্ট্রগুলোও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে একজন নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে বাদ দিয়ে গুয়াইদোকে অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছিল। ভেনেজুয়েলার তেল সম্পদ যাতে ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের হাতেই থাকে, সে জন্য সেদিন রাশিয়া, চীন ও কিউবাই এগিয়ে এসেছিল।
‘যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই’—এসব কথা মার্কিনদের মুখে মানায় না। মানায় না অন্য পশ্চিমি দেশগুলোর মুখেও। জর্জ ডব্লিউ বুশ যখন ইরাক আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যেই নিয়ে ফেলেছেন, তখন ইংল্যান্ড, জার্মানি ও ফ্রান্স প্রথম দিকে এই সিদ্ধান্তে সায় দেয়নি, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র যখন জানাল, যুদ্ধ-পরবর্তী ইরাকে তেল সম্পদ ও কন্সট্রাকশন কাজের ভাগ-বাঁটোয়ারায় তাহলে তাদের কোনো অংশ থাকবে না। সঙ্গে সঙ্গে ইংল্যান্ড, জার্মানি ও ফ্রান্স মৌন ব্রতে চলে যায়।
মিথ্যা অভিযোগে ইরাক ও লিবিয়া আক্রমণ এবং তারপর যুদ্ধ ও ধ্বংস কেবল জর্জ ডব্লিউ বুশের নীতিই নয়, এটা আমেরিকান পররাষ্ট্রনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিউবায় যে সর্বাত্মক অবরোধ ও আগ্রাসনের কথা ওপরে উল্লেখ করা হয়েছে, তখন আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট ছিলেন, ‘সর্বকালের সেরা প্রেসিডেন্টদের একজন’ ও ‘গণতন্ত্রের মানসপুত্র’ জন এফ কেনেডি। চিলির জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট সালভাদর আয়েন্দেকে হত্যা করেছে সিআইএ। তাঁর অপরাধ তিনি কমিউনিস্ট। কমিউনিজম ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে আল-কায়েদার মতো জঙ্গি সংগঠন সৃষ্টি করেছে, ইসলামিক স্টেট তথা আইএসকে অস্ত্র সরবরাহ করেছে ওবামা-হিলারির মতো ‘প্রগতিশীল’ মার্কিন প্রশাসন। আর আইএসকে ধ্বংস করার প্রধান কারিগর ভ্লাদিমির পুতিন। এ কথা পশ্চিমারা চাইলেও অস্বীকার করতে পারবে না।
আমেরিকা চায় ইয়েলৎসিনের মতো একজন বশংবদ রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট, যিনি ক্ষমতায় এসেই বিপুল পরিমাণ ইউরেনিয়াম তাঁর ‘বেষ্ট ফ্রেন্ড’ যুক্তরাষ্ট্রকে দান করে দিয়েছেন। রাতারাতি কমিউনিস্ট ব্যবস্থা ভেঙে পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় উত্তরণ করানোয় রাশিয়ার যে অপরিসীম ক্ষতি হয়েছে, তা কোনো দিন পূরণ হওয়ার নয়। জনগণ না চাইলে কমিউনিস্ট ব্যবস্থা থাকবে না এবং তাঁরা নিশ্চয়ই পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় চলে যাবেন। কিন্তু রাশিয়া যদি এই উত্তরণের কাজটা ধাপে ধাপে করত, এত বড় ক্ষতির শিকার দেশটি হতো না। পুতিন এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে সোভিয়েত ব্যবস্থা ভাঙার ঘটনাকে ‘গ্রেটেস্ট ক্যাটাসট্রফি ইন হিউম্যান হিস্ট্রি’ অর্থাৎ মানবজাতির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। তার মানে হলো, পুতিন জানেন, রাশিয়ার কী ক্ষতি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সাবেক কেজিবি অফিসার পুতিন এ-ও জানেন, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্ত করে, সেখানে ঘাঁটি করে রাশিয়ার অভ্যন্তরে টালমাটাল অবস্থা সৃষ্টি করে ইয়েলৎসিনের মতো একজনকে তাঁরা প্রেসিডেন্ট পদে বসাতে চান, যাতে ইউরেনিয়ামের মতো অন্য সব খনিজ সম্পদও তাঁরা কুক্ষিগত করতে পারেন। ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখে জার্মান চ্যান্সেলর মস্কোতে যখন প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে দেখা করেন, তিনি ঠিকই ইউক্রেনের ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্তি যে রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য হুমকি, তা স্বীকার করেছেন এবং প্রস্তাব করেছেন, ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগদান স্থগিত করবে আর রাশিয়াও ইউক্রেনের বর্ডার থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করবে।
অন্য রাষ্ট্রকে সাহায্য করার সোভিয়েত সংস্কৃতি পুঁজিবাদী রাশিয়াও অনুসরণ করে চলেছে। ইউক্রেনসহ সোভিয়েতভুক্ত সাবেক প্রজাতন্ত্রগুলোকে নিরন্তর সাহায্য করে চলেছে রাশিয়া। আমার বন্ধু ভ্লাদিস্লাভ মন্তব্য করেছিল, ‘উই হ্যাভ আ লট অব প্যারাসাইটস হু উই হ্যাভ টু ফিড’ অর্থাৎ ‘আমাদের অনেক পরজীবী আছে, যাঁদের আমাদের খাওয়াতে হয়’। ২০১৪ সালে যখন রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করে, তখন বাথ ইউনিভার্সিটির ডিবেটিং ক্লাব এ বিষয়ে একটি ডিবেট আয়োজন করে। আমিও সেখানে একজন বক্তা ছিলাম। ডিবেটিং ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ছিল ক্রিমিয়ার একটি মেয়ে। আমি যখন রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের বিরুদ্ধে জোরালো বক্তব্য রাখছিলাম, তখন বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করলাম, ক্রিমিয়ার সেই মেয়েটি রাশিয়ার পক্ষে বক্তব্য রাখছে। আমি পরে মেয়েটির সঙ্গে একান্তে কথা বলি। সে জানাল, ‘ইউক্রেন সরকার রাশিয়ান অধিবাসীদের সঙ্গে সব অর্থেই বিমাতাসুলভ আচরণ করে। তাই আমি রাশিয়ার হস্তক্ষেপের পক্ষে।’ বাথ ইউনিভার্সিটির এই ছাত্রী আরও যোগ করেন, ক্রিমিয়া যে ১৭৪৩ থেকে ১৯৫৪ পর্যন্ত রাশিয়ার অংশ ছিল, অধিবাসীদের প্রায় ৬৪ শতাংশ রুশ আর মাত্র ১৫ শতাংশ ইউক্রেনীয় এবং নিকিতা ক্রুশ্চেভ যে এই উপদ্বীপটি শুভেচ্ছার নিদর্শনস্বরূপ ইউক্রেনকে উপহার দিয়েছিল, তা পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম কখনো প্রচার করে না।
আমার ব্রিটিশ বন্ধু জেমস বিল পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির আগে বেশ কয়েক বছর রাশিয়ায় একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে কাজ করেছে। সে আমাকে জানিয়েছিল, পুতিন রাশিয়ায় খুবই অজনপ্রিয়। আমি ইউনিভার্সিটিতে চাকরি নিয়ে রাশিয়ায় যাই ২০১৬ সালে। সেখানে গিয়ে দেখি সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র অর্থাৎ ভীষণ রকম জনপ্রিয় ভ্লাদিমির পুতিন। পুতিন রাশিয়ায় কেন এত জনপ্রিয়, সে বিষয়ে আলাদা একটি নিবন্ধ লেখার আশা রাখি। এই মুহূর্তে যে বিষয়ের প্রতি আলোকপাত করতে চাই, তা হলো পশ্চিমা মিডিয়ার মতো সে দেশের নাগরিকেরাও পুঁজিবাদের পক্ষে, সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের কুৎসা রটনায় সিদ্ধহস্ত। সত্য হলো, জার্মানির ডেটাবেইস কোম্পানি, স্ট্যাটিস্টা জানাচ্ছে অ্যাপ্রুভ্যাল রেইট ২০২২-এর জানুয়ারিতে ছিল ৬৯ শতাংশ, যা আগের মাসের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। স্ট্যাটিস্টার সার্ভে অনুযায়ী, পুতিনের অ্যাপ্রুভ্যাল রেট যথাক্রমে ছিল: জানুয়ারি ২০০০-এ ৮৪ শতাংশ, ডিসেম্বর ২০০৩-এ ৮৬ শতাংশ, নভেম্বর ২০১৩-এ ৬১ শতাংশ। ক্রিমিয়া অন্তর্ভুক্তির পর পুতিনের অ্যাপ্রুভ্যাল রেট বেড়ে ২০১৪-এর অক্টোবরের হয় ৮৮ শতাংশ। কারণ, রাশিয়ার জনগণ এটাকে দেখেছে জাতিগত পুনর্মিলন হিসেবে অথচ পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম প্রচার করেছে, পুতিন ক্রিমিয়া দখল করে জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। ২০২২-এ ইউক্রেন বর্ডারে রাশিয়ান সৈন্য মোতায়েনের ঘটনায়ও তারা একই কথা বলছে, যা পুরোপুরি অসত্য।
যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে চায়। এ লক্ষ্যে তারা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে যাচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ও ন্যাটোর সদস্য হওয়ার জন্য তারা উসকে দিচ্ছে। ন্যাটো সদস্য হলে, যুক্তরাষ্ট্র সেখানে ঘাঁটি গাড়ে, যাতে পুতিনের মতো জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেমিক নেতাকে তারা ক্ষমতাচ্যুত করে রাশিয়াকে ধ্বংস করার দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু করতে পারে। জার্মানি ও ফ্রান্সের আপত্তির মুখে যুক্তরাষ্ট্র এত দিন ইউক্রেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে ঢোকাতে সক্ষম হয়নি। জার্মানি ও ফ্রান্স মনে করে, ইউক্রেন মোটেই ইউরোপীয় সংস্কৃতির দেশ নয়। ইউক্রেনের রুশ অধিবাসীরা যে ইউরোপীয় ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্তির ঘোর বিরোধী, জার্মানি ও ফ্রান্সের ‘না’, তাকে ন্যায্যতা দিয়েছে। রুশ অধিবাসীরা জানে, ইউরোপীয় ইউনিয়নে ঢোকা মানে জাতি হিসেবে তাদের স্বকীয়তা বিপন্ন হওয়া।
২০১৫ সালে বেলারুশের রাজধানীতে মিনস্ক-এ রাশিয়া, ইউক্রেন, দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের বিদ্রোহীদের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল, ইউক্রেনের বর্তমান সরকার, তা মানতে চাইছে না যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ মদদেই। ক্রেমলিন ইউক্রেনের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। ক্রেমলিন ইউক্রেনে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করেছে, ভর্তুকি মূল্যে তেল-গ্যাস সরবরাহ করে তাদের শিল্পকারখানা সচল রেখেছে। রাশিয়া, বেলারুশ ও কাজাখস্তান মিলে যে অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন করেছে, তার মধ্যে তারা ইউক্রেনকেও রাখতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু ইউক্রেনের ঝোঁক হলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি। তার মানে হলো, সাহায্য-সহযোগিতা করবে রাশিয়া আর ইউক্রেন হানিমুনে যাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। এই সত্য হজম করা ক্রেমলিনের জন্য কঠিন বটে।
ওয়ারশ চুক্তির অনুপস্থিতিতে বর্তমান বিশ্বে ন্যাটো জোটের প্রয়োজনটা কী? ন্যাটো কি বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় কোনো ভূমিকা রেখেছে? যুক্তরাষ্ট্র যখন ইরাক, লিবিয়া আক্রমণ করেছে, কিউবায় সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়েছে, আফগানিস্তানে আল-কায়েদা গঠন করেছে, আইএসকে অস্ত্র সরবরাহ করেছে, তখন সে কি সদস্যদেশগুলোর অনুমতি নিয়েছে বা ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো কি যুক্তরাষ্ট্রের এসব কার্যকলাপ ঠেকাতে পেরেছে? রাশিয়াকে ঠেকানো ছাড়া ইউক্রেনকে ন্যাটো জোটে টানার আর কী কারণ থাকতে পারে?
যুদ্ধ ও শান্তি উপন্যাসের অমর স্রষ্টা টলস্টয় জাতিতে রুশ। তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে রুশ চরিত্রগুলো সব ইর্যাশোনাল (অযৌক্তিক) কাজে প্রবৃত্তি দ্বারা তাড়িত, যা আদতে মানব চরিত্রেরই বৈশিষ্ট্য। উপন্যাসের অন্যতম প্রধান চরিত্র জেনারেল ক্যুতুযভ একজন নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন, কিন্তু কোনো যৌক্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে অক্ষম, তারপরও তিনি চান তাঁর নীতি অন্য সবাই অনুসরণ করুক। কী জানি, ভ্লাদিমির পুতিন হয়তো তাঁরই উত্তরসূরি, যিনি ইচ্ছা করলে হয়তো যুদ্ধ এড়াতে পারতেন। কূটনৈতিক সমাধানের পথে যেতে পারতেন। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজের প্রস্তাবটা তাঁর গ্রহণ করা উচিত ছিল।
আমরা জানি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্য দেশের ওপর হামলা, আক্রমণ বা আগ্রাসনের তালিকা অনেক লম্বা। এর অর্থ এই নয় যে, অন্য একটা দেশও একই কাজ করবে। একটি স্বাধীন দেশের ওপর যে কোনো ধরনের আক্রমণ শুধু অন্যায়ই নয়, গর্হিত অপরাধও বটে। তা ছাড়া, রাশিয়ার অর্থনীতি এতে বিরাট ক্ষতি সম্মুখীন হবে অর্থাৎ এই আক্রমণ থেকে ‘নেট গেইন’ হবে ঋণাত্মক একটা বড় সংখ্যা। পুতিন জানেন না যে, যুদ্ধে কোনো পক্ষই জয়ী হয় না। বরং কখনো কখনো বিজিতের চেয়েও বিজয়ীর ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশিও হতে পারে।
*** ড. এন এন তরুণ রাশিয়ার সাইবেরিয়ান ফেডারেল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির ভিজিটিং প্রফেসর ও সাউথ এশিয়া জার্নালের এডিটর অ্যাট লার্জ।
সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ ফেব্রুয়ারী ২৭, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,