বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ফেরদৌসী কাদরী এশিয়ার নোবেল হিসেবে খ্যাত ম্যাগসেসে পুরস্কার পেয়েছেন। আজ বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টার দিকে ফিলিপাইন থেকে র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
বিজ্ঞানী ফেরদৌসী কাদরী আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী। কলেরার টিকা নিয়ে গবেষণা ও সাশ্রয়ী দামে টিকা সহজলভ্য করে লাখো প্রাণ রক্ষায় কাজ করেছেন তিনি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টিকাবিষয়ক বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ছিলেন তিনি। আজ র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার ঘোষণার সময় কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘লাখো মানুষের উপকারে টিকার উন্নয়নে তাঁর নিবেদিত ভূমিকার জন্য’ এই পুরস্কার দেওয়া হলো।
বিজ্ঞানী ফেরদৌসী কাদরী ম্যাগসেসে কমিটির কাছে একটি ভিডিও বার্তা পাঠান। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমি আনন্দিত ও সম্মানিত বোধ করছি। র্যামন ম্যাসসেসেকে এ জন্য ধন্যবাদ জানাই। এই পুরস্কার আমি বাংলাদেশ, আমার জন্মভূমির প্রতি উৎসর্গ করলাম। সেই সঙ্গে আমার প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআরবিকে উৎসর্গ করছি। এই প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে আমার কাজ এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করেছে।’
ফেরদৌসী কাদরী বলেন, ‘আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ বাংলাদেশ এবং পুরো বিশ্বের কাছে। আমি ঋণী আমার পরিবারের কাছে। আমার স্বামী ও তিন সন্তানের কাছে। তাঁরা আমাকে সহযোগিতা করেছেন বিগত দিনগুলোতে।’
ফেরদৌসী কাদরী তাঁর বার্তায় বাকি জীবন জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে উৎসর্গ করার প্রতিশ্রুতি দেন। এই খ্যাতনামা বিজ্ঞানী বলেন, ‘জনস্বাস্থ্য, উদ্ভাবনের মাধ্যমে বিশ্বের মানুষের মঙ্গলে আমি আমার বাকি জীবন উৎসর্গ করব।’
ফেরদৌসী কাদরী সম্পর্কে ম্যাগসেসে কমিটি যা বলল
ফেরদৌসী কাদরী বায়োকেমিস্ট্রিতে স্নাতকোত্তর করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন ১৯৮০–এর দশকে। তিনি যুক্তরাজ্যের লিভারপুল ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টরেট করেন। এরপর দেশে ফিরে আসেন। ১৯৮৮ সালে তিনি আইসিডিডিআরবিতে যোগ দেন। এখানে সংক্রামক রোগ, রোগতত্ত্ব, টিকা এবং এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল নিয়ে কাজ করেন।
বাংলাদেশ তথা এশিয়া ও আফ্রিকার বেশির ভাগ দরিদ্র দেশের মানুষের একটি বড় সমস্যা কলেরা ও টাইফয়েডের মতো রোগের সঙ্গে লড়াই। এর পাশাপাশি আছে নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন, শিক্ষা ও চিকিৎসা পরিষেবার সুযোগ, যেগুলো সব সময় বড় চ্যালেঞ্জ। এসব কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ফেরদৌসী কাদরী মুখে খাওয়ার টিকার (ওসিভি) উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখেন। এর পাশাপাশি নবজাতক, শিশু ও বয়স্কদের টাইফয়েডের টিকার উন্নয়নে তাঁর অবদান ছিল। ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তিনি কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের লাখ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিকের ওসিভি টিকাদানে বিশেষজ্ঞদের একটি দলকে নেতৃত্ব দেন। এই কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আশ্রয়শিবিরকে কলেরার প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা করা সম্ভব হয়। করোনা মহামারির এ সময়ে ড. কাদরী টিকাসংক্রান্ত গবেষণা ও পরীক্ষার কাজে যুক্ত আছেন।
র্যামন ম্যাগসেসে কমিটি ফেরদৌসী কাদরীকে এই পুরস্কার দেওয়ার বিষয়ে বলেছে, ‘বিজ্ঞান পেশায় তাঁর জীবনভর আত্মনিয়োগ ও আন্তরিক আগ্রহকে স্বীকার করছে বোর্ড অব ট্রাস্টি।’ মানব ও ভৌত অবকাঠামো তৈরির ক্ষেত্রে তাঁর অবিচল লক্ষ্য বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বিজ্ঞানীদের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে, সুনির্দিষ্টভাবে নারী বিজ্ঞানীদের। টিকার উদ্ভাবন, উন্নততর জৈবপ্রাযুক্তিক প্রতিষেধক এবং জটিল গবেষণায় তাঁর আন্তরিক অবদান লাখ লাখ প্রাণ রক্ষায় সহায়ক হয়েছে।
রেটিং করুনঃ ,