ভারতের লোকসভা নির্বাচনের সপ্তম দফা বা অন্তিমপর্বে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বললেন, নরেন্দ্র মোদির মতো এভাবে আর কেউ কখনো প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদা ও গরিমা ধুলায় লোটাননি। এমন জঘন্য ঘৃণা ভাষণও কেউ দেননি। দেশের বিরোধীদের অথবা কোনো বিশেষ অংশের মানুষের উদ্দেশে এত নিম্নমানের ভাষাও কেউ ব্যবহার করেননি।
লোকসভা ভোটের সপ্তম ও শেষ দফার ভোট আগামী ১ জুন। ওই দিন দেশের মোট ৫৭ আসনের মধ্যে ভোট হবে পাঞ্জাব রাজ্যের ১৩টিতেও। তার ঠিক দুই দিন আগে আজ বৃহস্পতিবার মনমোহন সিং পাঞ্জাবের মানুষের উদ্দেশে লেখা ওই খোলা চিঠি প্রকাশ করেন।
চিঠিতে ভোটারদের উদ্দেশে মনমোহন বলেন, ‘স্বৈরাচারী শাসকের হাত থেকে দেশের গণতন্ত্র ও সংবিধান রক্ষা করার এটাই শেষ সুযোগ।’
নির্বাচনী প্রচারে নরেন্দ্র মোদি তাঁর বিভিন্ন ভাষণে নানাভাবে ধর্মীয় বিভাজনের চেষ্টা করে গেছেন। কংগ্রেস ও মুসলমানদের সরাসরি আক্রমণ করেছেন। তা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে মনমোহন সিংয়ের দেওয়া এক ভাষণের খন্ডাংশের উল্লেখ করে বলেছেন, দেশের সম্পদের প্রথম দাবিদার মুসলমানেরা।
মোদির এসব বক্তব্যের উল্লেখ করে চিঠিতে মনমোহন লিখেছেন, ‘নির্বাচনী প্রচারের সময় রাজনৈতিক ভাষ্য ও বিতর্কগুলো আমি গভীর মনোযোগের সঙ্গে শুনছি। দেখছি, সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কী জঘন্য ধরনের ঘৃণা ভাষণ দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রিত্বের পদমর্যাদা, এই পদের গরিমা তাঁর মতো এভাবে আর কেউ কখনো ধুলায় লুটাননি। সমাজের কোনো বিশেষ অংশ অথবা বিরোধীদের লক্ষ্য করে আর কোনো প্রধানমন্ত্রী এত জঘন্য অসংসদীয় ও নিম্ন মানের ভাষাও ব্যবহার করেননি।’
মনমোহন সিং খোলাচিঠিতে আরও লিখেছেন, ‘তারা আমার নামে ভুল বিবৃতিও দিয়েছে। অথচ আমি জীবনে কখনো কোনো সম্প্রদায়কে অন্যের থেকে আলাদা চোখে দেখিনি। সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন করিনি। তেমন করার অধিকার ও অভ্যাস একমাত্র বিজেপিরই আছে।’
দেশের অর্থনৈতিক উথাল–পাতালের কথা উল্লেখ করে মনমোহন সিং লিখেছেন, গত ১০ বছরে দেশের অর্থনীতি মারাত্মক অস্থিরতা দেখেছে। নোট বাতিল ও ত্রুটিযুক্ত জিএসটি রূপায়ণের আঘাত সহ্য করেছে। কোভিড–‘১৯–এর মোকাবিলায় অব্যবস্থা মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি করেছে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৬–৭ শতাংশের গড়ের নিচে নেমে গেছে। সেটাই হয়ে গেছে প্রবৃদ্ধির নতুন স্বাভাবিক হার।
ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, বিজেপি সরকারের আমলে গড় প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের নিচে নেমে গেছে। অথচ কংগ্রেস–ইউপিএ আমলে তা ছিল ৮ শতাংশের মতো। বেকারত্বের অসহনীয় জ্বালা ও আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি বৈষম্য দৃষ্টিকটু করে তুলেছে। গত ১০০ বছরে এমন দেখা যায়নি।
মনমোহন লিখেছেন, ‘কংগ্রেস–ইউপিএর সময় দেশের অর্থনীতির সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু তা কাটিয়ে আমরা মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়িয়ে গিয়েছিলাম। অথচ আজ বিজেপির অপশাসন ও অব্যবস্থায় পারিবারিক সঞ্চয়ের হার এত কমে গেছে, যা গত ৪৭ বছরে দেখা যায়নি।’
কৃষক বিক্ষোভের উল্লেখ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘লাঠি ও রাবার বুলেটই যথেষ্ট ছিল না, প্রধানমন্ত্রী কৃষকদের বাক্যবাণেও বিধ্বস্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, তাঁরা পরজীবী, আন্দোলনজীবী। মোদি বলেছিলেন ২০২২ সালের মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করবেন। অথচ আজ কৃষকদের গড় দৈনিক আয় মাত্র ২৭ রুপি, যেখানে তাদের মাথাপিছু গড় ঋণের পরিমাণ ২৭ হাজার রুপি।’
চিঠিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ভোটের সময় শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষার আহ্বান জানিয়ে লিখেছেন, তাঁরা যেন উন্নয়ন ও সুসংহত প্রগতির স্বার্থে ভোট দেন। যুবসম্প্রদায়কে খুব ভেবেচিন্তে ভোট দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, ভোট দিন ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে।
তিন পৃষ্ঠার খোলাচিঠিতে মনমোহন আরও বলেন, ‘একমাত্র কংগ্রেসই পারে উন্নত ও প্রগতিশীল ভবিষ্যতের গ্যারান্টি দিতে, যেখানে গণতন্ত্র পদদলিত হবে না, সংবিধান রক্ষিত হবে। স্বৈরাচারের হাত থেকে দেশকে রক্ষার এটাই শেষ সুযোগ।’
সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: মে ৩০, ২০২৪
রেটিং করুনঃ ,