তথ্যসূত্র:ইন্ডিয়া টুডে।
টানা তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলেও এবার জোট সরকার গঠন করতে হয়েছে নরেন্দ্র মোদিকে। তাঁর ৭২ সদস্যের নতুন মন্ত্রিসভায় পূর্ণ মন্ত্রী ৩০ জন। প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন ৩৬ জন এবং স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী (ওই সব মন্ত্রণালয়ে কোনো মন্ত্রী থাকবেন না) পাঁচজন।
৩০ পূর্ণ মন্ত্রীর ২৫ জনকেই নিজ দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) থেকে বেছে নিয়েছেন মোদি। জোটের শরিকদের মধ্য থেকে নিয়েছেন পাঁচজন।
মোদির মন্ত্রিসভায় শপথ নেওয়া ৩০ পূর্ণ মন্ত্রী
রাজনাথ সিং: বিজেপির এই নেতা মোদির আগের মন্ত্রিসভায় কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।
অমিত শাহ: মোদির আগের মন্ত্রিসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নতুন সরকারেও আছেন।
নীতীন গড়করি: কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা নীতীন গড়করি এবারও ভারতের এনডিএ জোট সরকারের মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েছেন।
জেপি নাড্ডা: জাতীয় পর্যায়ে বিজেপির সভাপতি জেপি নাড্ডা মোদির মন্ত্রিসভায় এবার পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে জায়গা পেয়েছেন।
শিবরাজ সিং চৌহান: মধ্যপ্রদেশের সাবেক এই মুখ্যমন্ত্রী এবার মোদির মন্ত্রিসভার পূর্ণ মন্ত্রী।
নির্মলা সীতারমণ: রাজ্যসভার সদস্য নির্মলা সীতারমণ আগের সরকারে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে যে দুজন নারী জায়গা পেয়েছেন, তাঁদেরই একজন সীতারমণ। তিনি মন্ত্রিপরিষদে তৃতীয়বার ঠাঁই পেলেন।
এস জয়শঙ্কর: মোদির আগের সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবারও মন্ত্রিপরিষদে জায়গা পেয়েছেন।
মনোহর লাল খাত্তার: গত মার্চে হরিয়ানা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো মনোহর লাল খাত্তারকে নতুন মন্ত্রিসভায় রাখা হয়েছে।
পীযূষ গয়াল: কংগ্রেস প্রার্থীকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো লোকসভার সদস্য হিসেবে নির্বাচিত পীযূষ গোয়াল প্রথমবারেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় জায়গা করে নিয়েছেন।
ধর্মেন্দ্র প্রধান: আগের সরকারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবারও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন।
সর্বানন্দ সোনোয়াল: আসামের এই বিজেপি নেতা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছেন।
বীরেন্দ্র কুমার: তৃতীয়বারের মতো মোদির কেন্দ্রীয় মন্ত্রিপরিষদে জায়গা করে নিয়েছেন এই বিজেপি নেতা।
জুয়াল ওরাম: মোদি সরকারের মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন এই বিজেপি নেতা।
প্রহ্লাদ যোশি: কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন এই বিজেপি নেতা।
অশ্বিনী বিষ্ণু: এর আগে রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা এই বিজেপি নেতা এবারও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন।
গিরিরাজ সিং: বিজেপি নেতা গিরিরাজ সিং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন।
জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া: পঞ্চমবার লোকসভা নির্বাচনে জেতা বয়োজ্যেষ্ঠ এই বিজেপি নেতাও মোদির জোট সরকারে পূর্ণ মন্ত্রীর মর্যাদা পেয়েছেন।
ভূপেন্দ্র যাদব: মোদির গত মন্ত্রিপরিষদে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন ভূপেন্দ্র যাদব। এবারও তিনি মোদির নতুন মন্ত্রিপরিষদের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন।
গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত: বিজেপির এই নেতা লোকসভার যোধপুর আসন থেকে তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন।
অন্নপূর্ণা দেবী: বিজেপি নেতা অন্নপূর্ণা দেবী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেব শপথ নিয়েছেন।
কিরেন রিজিজু: ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসা কিরেন রিজিজু এবারও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
মনসুখ মান্দাভিয়া: আগের সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এই বিজেপি নেতা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন।
হরদীপ সিং পুরি: ২০১৮ সাল থেকে ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার সদস্য হারদীপ সিং পুরি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন।
জিকে রেড্ডি: জিকে রেড্ডিও নতুন মন্ত্রিপরিষদে জায়গা পেয়েছেন।
সিআর পাতিল: রোববার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন।
শরিকদের মধ্য থেকে যাঁরা পূর্ণ মন্ত্রী
এইচ ডি কুমারাস্বামী: কর্ণাটকের আঞ্চলিক জনতা দলের (সেক্যুলার) প্রধান ও এনডিএ জোটের অংশীদার এইচ ডি কুমারাস্বামী মোদির মন্ত্রিসভার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন।
জিতন রাম মাঞ্জি: হিন্দুস্তানি আম মোর্চার (সেক্যুলার) এই প্রতিষ্ঠাতা এবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন।
রাজীব রঞ্জন (লালান) সিং: নীতীশ কুমারের দল জেডি-ইউর নেতা রাজীব কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন।
কিঞ্জারাপু রাম মোহন নাইডু: তেলেগু দেশম পার্টির (টিডিপি) এই নেতাও জোটের অংশীদার হিসেবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েছেন।
চিরাগ পাসওয়ান: এনডিএ জোটের শরিক লোক জনশক্তি পার্টি-রাম বিলাশ (এলজেপি-আরভি) নেতা চিরাগ নতুন মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েছেন।
পাঁচজন স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী
রাও ইন্দ্রজিৎ সিং (বিজেপি), জিতেন্দ্র সিং (বিজেপি), অর্জুন রাম মেঘওয়াল (বিজেপি), প্রতাপ যাদব (শিবসেনা), জয়ন্ত চৌধুরী (আরএলডি)।
৩৬ প্রতিমন্ত্রী
জিতিন প্রসাদ (বিজেপি), শ্রীপাদ নায়েক (বিজেপি), কিষান পাল গুলজার (বিজেপি), রামদাস আটওয়ালে (বিজেপি), পঞ্চজ চৌধুরী (বিজেপি), রামনাথ ঠাকুর (জেডি-ইউ), নিত্যানন্দ রায় (বিজেপি), অনুপ্রিয়া পাটেল (আপনা দল), ভি সোমান্না (বিজেপি), চন্দ্র শেখর প্রেমাসানি (টিডিপি), এসপি সিং বাঘেল (বিজেপি), শোভা করন্দলাজে (বিজেপি), কৃতি বর্ধন সিং (বিজেপি), বিএল ভার্মা (বিজেপি), শান্তনু ঠাকুর (বিজেপি), সুরেশ গোপি (বিজেপি), এল মুরুগান (বিজেপি), বান্দি সঞ্জয় কুমার (বিজেপি), অজয় টামটা (বিজেপি), ভাগীরথ চৌধুরী (বিজেপি), কমলেশ পাসওয়ান (বিজেপি), সতীশ চন্দ্র দুবে (বিজেপি), সঞ্জয় শেঠ (বিজেপি), রবনীত সিং বিট্টু (বিজেপি), দুর্গা দাস উইকে (বিজেপি), রক্ষা খাদসে (বিজেপি), সুকান্ত মজুমদার (বিজেপি), সাবিত্রী ঠাকুর (বিজেপি), টোখান সাহু (বিজেপি), রাজ ভূষণ চৌধুরী (বিজেপি), ভূপতি রাজু শ্রীনিবাস ভার্মা (বিজেপি), হর্ষ মালহোত্রা (বিজেপি), নিমুবেন বামভানিয়া (বিজেপি), মুরলিধর মোহল (বিজেপি), জর্জ কুরিয়ান (বিজেপি) ও পবিত্র মার্গারিটা (বিজেপি)।
মোদির মন্ত্রিসভায় এবার সাত নারী,
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন নতুন মন্ত্রিপরিষদে জায়গা পেয়েছেন সাত নারী। এর আগের মন্ত্রিপরিষদে ১০ জন নারী মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। অর্থাৎ এবার মোদির মন্ত্রিপরিষদে নারীর সংখ্যা কমেছে। সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি, প্রতিমন্ত্রী ভারতী পাওয়ার, সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতি, দর্শনা জারদোশ, মীনাক্ষী লেখি ও প্রতিমা ভৌমিক এবার মন্ত্রিসভায় জায়গা পাননি।
এনডিএ জোটের নেতৃত্বাধীন সরকারের এবার যেসব নারী স্থান পেয়েছেন, তাঁদের সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
নির্মলা সীতারমণ
রাজ্যসভার সদস্য নির্মলা সীতারমণ আগের সরকারে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে যে দুজন নারী জায়গা পেয়েছেন, তাঁদেরই একজন সীতারমণ। তিনি মন্ত্রিপরিষদে তৃতীয়বার ঠাঁই পেলেন।
অন্নপূর্ণা দেবী (বিজেপি)
ঝাড়খন্ডের নেত্রী অন্নপূর্ণা দেবী এবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে স্থান পাওয়া দ্বিতীয় নারী। ঝাড়খন্ড রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির পক্ষে সমর্থন আদায়ে তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ নেত্রী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। অন্নপূর্ণা আগে আরজিডির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। ঝাড়খন্ড ও অবিভক্ত বিহারে রাজ্যপর্যায়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
সাবিত্রী ঠাকুর (বিজেপি)
প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন ৪৬ বছর বয়সী সাবিত্রী ঠাকুর। মধ্যপ্রদেশের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর এই নেত্রী ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ধার আসন থেকে জয়ী হয়েছেন। এর আগে ২০১৯ সালের নির্বাচনেও তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন। তবে তখন তিনি মনোনয়ন পাননি।
নিমুবেন বামভানিয়া (বিজেপি)
গুজরাটে বিজেপির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হওয়া তিন নারীর একজন নিমুবেন বামভানিয়া। গতকাল তাঁকে প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে। ভাবনগর আসনে আম আদমি পার্টির প্রতিদ্বন্দ্বী উমেশ মাকওয়ানাকে ৪ লাখ ৫৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছেন ৫৭ বছর বয়সী এই নারী।
সাবেক এই শিক্ষক ২০০৯-১০ ও ২০১৫-১৮—এ দুই মেয়াদে ভাবনগরের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৩ থেকে ২০২১ সালের মধ্যবর্তী সময়ে বিজেপির নারী মোর্চা রাজ্যের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন।
রক্ষা খারসে (বিজেপি)
সাবেক বিজেপি নেতা এবং মহারাষ্ট্রের তিনবারের এমপি একনাথ খারসের পুত্রবধূ রক্ষা খারসে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। ২০১৩ সালে স্বামী নিখিল মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচনে এনসিপি নেতা মনীশ জৈনর কাছে সামান্য ব্যবধানে হারার পর আত্মহত্যা করেন। এরপর ২০১৪ সালে রাভিরে মনীশ জৈনর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হন রক্ষা খারসে। ২০১৯ সালে তিনি আবারও নির্বাচিত হন।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে এনসিপি প্রার্থী শ্রীরাম পাতিলের বিরুদ্ধে ২ লাখ ৭২ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন।
শোভা কারান্দলাজে (বিজেপি)
ধর্মীয় চরমপন্থার কঠোর সমালোচক শোভা কারান্দলাজে এবারও মোদির মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েছেন। আগের সরকারে কেন্দ্রীয় কৃষিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা এই নেত্রী তিনবারের লোকসভা সদস্য। শোভা এবার লোকসভা নির্বাচনে বেঙ্গালুরু নর্থ আসনে কংগ্রেস নেতা রাজিব গৌদাকে পরাজিত করেছেন। শোভা বেঙ্গালুরুর প্রথম নারী এমপি।
অনুপ্রিয়া প্যাটেল (আপনা দল)
অনুপ্রিয়া প্যাটেল আবারও কেন্দ্রীয় মন্ত্রিপরিষদে ফিরেছেন। কুর্মি সম্প্রদায়ের এই নেত্রী প্রয়াত নেতা ও আপনা দলের প্রতিষ্ঠাতা সোনিলাল প্যাটেলের মেয়ে। অনুপ্রিয়া আগের সরকারে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সমাজবাদী পার্টির নেতা রমেশ চাঁদ বিন্দকে উত্তর প্রদেশের মির্জাপুর আসনে পরাজিত করেছেন।
সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: জুন ১০, ২০২৪
রেটিং করুনঃ ,