একা একটি মেয়ে পুলিশের গাড়ি রুখে দিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। ভাই, সহপাঠী, বন্ধুদের গ্রেপ্তার ঠেকাতে বাঘিনীর মতো ভূমিকা পালন করেন তিনি। মৃত্যুর ভয়কে তুচ্ছ করে অসীম সাহসিকতায় পুলিশি ক্ষমতার বিরুদ্ধে লড়াই করেন। তার এ অসম্ভব মনোবল আর সাহসিকতার বিষয়টি প্রশংসিত হচ্ছে লোকমুখে। অনেকে মেয়েটিকে এ যুগের প্রীতিলতা হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। বিপ্লবী এই নারীর সাহসিকতার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
অনেকে দৃশ্যটির চিত্রপট তুলে ধরেছেন শিল্পকর্মের মাধ্যমে। কেউ কেউ এআই দিয়ে ছবি তৈরি করেছেন, কেউ আবার গ্রাফিক্স মোশন তৈরি করেছেন। অনেকে এঁকেছেন ছবি।
” বিপ্লবী এই মেয়েটির সাহসিকতার দৃশ্যটি এঁকেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘ইউটিউবে ভিডিওটা দেখে আবেগাপ্লুত না হয়ে পারা যায় না। সহপাঠী বন্ধুর জন্য কি সহমর্মিতা, অতটুকু শরীরে কি অসম্ভব মনোবল। যেন একাই থামিয়ে দেবে দানবীয় যানটা। এই হৃদয়স্পর্শী তারুণ্যের শক্তির দৃশ্যটাকে স্কেচ এঁকে ধরে রাখতে চাইলাম। যদিও আমি নিতান্তই অর্থনীতি নিয়ে গবেষণা করি, আঁকিয়ে নই।’ ”
ফেসবুকে দৃশ্যটির ছবি পোস্ট করে আব্দুল হাকিম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘মেয়েটি এ যুগের প্রীতিলতা। এমন বিপ্লবী মেয়ে কেবল বাংলাদেশেই জন্মগ্রহণ করে। ভাইকে গ্রেপ্তারের হাত থেকে বাঁচাতে প্রীতিলতার মতো করে পুলিশের গাড়ির সামনে যেন আত্মাহুতি দিতেই দাঁড়িয়েছিলেন। এমন সাহসী বোন ঘরে ঘরে দরকার
বলা হচ্ছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচির সবচেয়ে চুম্বক অংশ এটি। এর আগে একটি ছেলেকে পুলিশের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিতে শেষপর্যন্ত জড়িয়ে ধরেছিলেন মেয়েটি।
বুধবার রাজধানীর মৎস্যভবন এলাকায় ঘটে যাওয়া এ ঘটনা নিয়ে আলোচনা ছিল সাধারণের মধ্যে। পুলিশের কাছ থেকে গ্রেপ্তার হওয়া ছেলেটিকে বাঁচাতে মেয়েটির সাহসী কার্যক্রম সাধারণ মানুষের মুখে ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পুলিশের গাড়ির সামনে একা দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি নুসরাত নুর। আর পুলিশ যে ছেলেটিকে গ্রেপ্তার করেছিল, তিনি নুসরাতের ভাই নুর হাসান। গ্রেপ্তারের আগে থেকেই ভাইকে যাতে পুলিশ নিয়ে যেতে না পারে, এজন্য সব ধরনের চেষ্টা করেছিলেন নুসরাত।
তবে গ্রেপ্তার হওয়া নুর হাসান নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে পোস্ট দিয়ে জানিয়েছেন, পুলিশ তাকে ছেড়ে দিয়েছে। আপাতত তিনি মুক্ত।
নুর তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আমি ছাড়া পেয়েছি এবং নিরাপদে বাসায় এসে পৌঁছেছি! ধন্যবাদ জানাই আমার শিক্ষকদের যারা মায়ের মতো শাসন এবং বাবার মতো ঢাল হতে জানেন! ধন্যবাদ জানাই আমার সিনিয়র আপু এবং ভাইদের এবং আমার বন্ধুদের যারা এক মুহূর্তের জন্যও আমাকে ছাড়েননি।
বোন নুসরাতের সাহসিকতার প্রশংসা করে নুর পোস্টে বলেন, ‘সবশেষ ধন্যবাদ জানাই আমার সেই বাঘিনী বোন নুসরাত নুরকে। যার সাহস অসীম, হয়তো সবার সামনে আমি এসেছি কিন্তু তার ক্রোধ, সাহস আমার মতো হাজার জনের চেয়েও বেশি। ঘরে ঘরে এমন মেয়ে থাকলে ভাইদের আর চিন্তা থাকবে না।’
উল্লেখ্য, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নারী স্বাধীনতা সংগ্রামী। প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেন বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্য সেনের সঙ্গে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে। ১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের দায়িত্বে ছিলেন প্রীতিলতা। তার দলবল নিয়ে ক্লাবটি আক্রমণ করেন এবং তার নেতৃত্বে সফলভাবে অভিযানটি পরিচালিত হয়। এ সময় পুলিশের আটক এড়াতে বীরকন্যা প্রীতিলতা পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মাহুতি দেন।
সূত্র:সমকাল।
তারিখ: আগষ্ট ০১, ২০২৪
রেটিং করুনঃ ,