একদিন যখন জন্মেছি আমরা তখন মৃত্যু আমাদের হবেই, বিদায় নিতে হবে আমাদের শান্তিময়, সুখের দুঃখের আনান্দের বেদনার সাথে বসবাসের আবাস স্থল এই প্রিয় পৃথিবী থেকে, এ নিয়মের এক চুল পরিমান হের-ফের হওয়ার কোন বিধান নেই।
সেই মৃত্যু ও মৃত্যের ঠিক আগে মৃত্যুর যে যন্ত্রনা তার অবস্থানগত একটি দিক নিয়ে বিবিসি একটি খরব পরিবেশন আর বাংলা খবরে তা প্রকাশ করেছে প্রথম আলো ” মৃত্যুর আগে কষ্ট বেশি বাংলাদেশে” শিরোনামে। খবরটি পড়ে মনটা বিষন্ন হয়ে পড়ল এই পৃথিবীর প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়ে রবি ঠাকুর এতই মুগ্ধ ছিলেন যে তা প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি লিখেছিলেন পরের বিখ্যাত লাইনগুলি।
মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে ,
মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই ।
এই সূর্যকরে এই পুষ্পিত কাননে
জীবন্ত হৃদয় – মাঝে যদি স্থান পাই
আর এক প্রকৃতি প্রেমিক কবি লিখেছেন ” এমন চাঁদের আলো, মরি যদি সেও ভালো
সে মরণ স্বর্গ সমান………………….”
বড় দূর্ভাগ্য যে খবরটিতে বলা হয়েছে মৃত্যুর আগে মৃত্যু যন্ত্রনা পাওয়ার বেলায় বাংলাদেশের অবস্থা খুব করুণ, হৃদয় বিদারক। মৃত্যু যন্ত্রনা পাওয়ার ক্ষেত্রে ৮০টি দেশের একটি তালিকায় বাংলাদেশ আছে ৭৯তম অবস্থানে, আর ৮০ তম দেশটি হচ্ছে যুদ্ধে প্রায় ধ্বংস প্রাপ্ত দেশ ইরাক।
খবরটিতে বলা হয়, ‘কোয়ালিটি অব ডেথ ইনডেক্স’ শিরোনামের তালিকাটি করেছে যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট-এর ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। এটি প্রকাশ করা হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার।
হাসপাতাল ও সেবাকেন্দ্রে প্রশমনসেবা পাওয়ার সুযোগ, সেবার মান, সেবাদানকারীদের দক্ষতা এবং সেবা গ্রহণের সক্ষমতা—এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে তালিকাটি করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে যথারীতি এগিয়ে আছে বিশ্বের সম্পদশালী দেশগুলো।
তালিকায় প্রথম অবস্থানে আছে যুক্তরাজ্য। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আছে যথাক্রমে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। ইকোনমিস্ট-এর ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকায় প্রশমনসেবার গুরুত্ব দিনে দিনে বাড়ছে। কারণ, এতে করে মৃত্যুর আগে ভোগান্তির সময়কাল বাড়ছে।
মৃত্যু যন্ত্রনা মূলত কঠিন রূপ ধারণ করে যখন কঠিন শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে দারিদ্রতার কষাঘাতে এবং নিশ্চিত মৃত্যুর সম্মুখীন হয়ে মানুষকে কষ্টের সাথে সাথে যুদ্ধ করতে হয় অনেক ক্ষেত্রে বহু দিন এবং কয়েক বছর ধরে – এর একটি বড় কারণ হচ্ছে প্রয়োজনীয় সাস্থ্য সেবা না পাওয়া ও চিকিৎসা খাতের ব্যয় বৃদ্ধি।
মৃত্যু পূর্ব সময়ে মৃত্যু যন্ত্রনা কেন এতো প্রকট ! এ জন্য মনটি যেমন বিষন্ন তেমনি ভাবিয়েও তুলেছে ! শুধুই কি এর একটি বড় কারণ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা না পাওয়া ও চিকিৎসা খাতের ব্যয় বৃদ্ধি ! এর সাথে আরও নানান কারণ থাকার কথা, যেমন নিঃসঙ্গতা, রোগীদের প্রতি পারিবারিক ভাবে অবহেলা, সরকারী নির্যাতন রিমান্ডের নামে, বন্দুক যুদ্ধের নামে, ক্রস-ফায়ারের নামে, নানান হয়রানিতে এমন কি ধনিক শ্রেনীর দ্বারা বা অশিক্ষিত সমাজ দ্বারা যেমন শিশু নির্যাতন নারী নির্যিতন, ধনি -দরিদ্রের অনেকে যৌতুকের নামে যে যন্ত্রনা এ সবই মৃত্যু পূর্ব সময়ে মৃত্যু যন্ত্রনা যা হয়ে উঠে নরকীয়।
দেশের চিকিৎসা খাত মৃত্যু পূর্ব সময়ে মৃত্যু যন্ত্রনা আরও প্রকট করার জন্য অনেক খানি দায়ি ইদানিং এই খাতে দূর্নীতি, নানান প্রতরণা, প্রতারকের পেশী শক্তি ও অর্থ শক্তির কাছে মৃত্যু যন্ত্রনা দিনে দিনে আরও প্রকট হতে চলেছে, সেই সাথে যুক্ত হয়েছে ভুল চিকিৎসা আর ভুল চিকিৎসাকে আরও শক্তাশালি করতে ও দেশে মৃত্যু পূর্ব সময়ে মৃত্যু যন্ত্রনা প্রকট রূপ ধারণ করার সাথে যুক্ত হয়ছে ম্যেডিক্যালের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন পত্র ফাঁস ! যদিও এই ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন পত্র ফাঁস নিয়ে নানান রটনা তবে শিক্ষার মান যে এতে করে কমেছে তা বেশ বলা যায়।
আমাদের প্রার্থনা মৃত্যু পূর্ব সময়ে মৃত্যু যন্ত্রনা থেকে আমরা যেন সকলই রেহাই পাই। মৃত্যু পূর্ব সময়ে আমরা যেন চিকিৎসার একটি সুস্থ্য পরিবেশ চাই, পূর্ণিমার রাতে মুগ্ধ যেন বলতে পারি ” মরি যদি সেও ভালো” রবি ঠাকুরের মত আমরাও যেন বলতে পারি ” মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে” কিন্তু ভুল চিকিৎসায় হোক আর দারিদ্রতার কারণে হোন বা কোন নির্যাতনের মুখে মৃত্যু যন্ত্রনা সহ্য না করতে পেরে যেন বলতে না হয় ” হে মৃত্যু আমাকে বরণ করে মৃত্যু যন্ত্রনা থেকে মুক্ত দাও। ”
নোট : লেখাটির কিছু তথ্য সুত্র প্রথম আলো পত্রিকা থেকে নেওয়া যা আজ অন লাইন প্রকাশিত হয়েছে।
(এমন এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ যেখানে মরণও কষ্টকর!! ‘বুড়ো বয়সে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও অন্যান্য মানবিক সহায়তা পাওয়ার’ ভিত্তিতে পরিচালিত ‘মৃত্যুর ধরন সূচক ২০১৫’ এ বাংলাদেশকে মৃত্যুবরণের জন্য নিকৃষ্ট দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। জরিপে বলা হয়েছে, বয়স্করা বাংলাদেশে যে ধরনের স্বাস্থ্যসেবা ও মানবিক সহায়তা পেয়ে থাকেন, তাতে তাঁরা সুখে নেই। বরং খুব কষ্টে মৃত্যুবরণ করতে বাধ্য হন। যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনোমিস্টের একটি জরিপে এমনটিই দেখানো হয়েছে।
মৃত্যু যন্ত্রণা প্রশমনসেবা (প্যালিয়েটিভ কেয়ার) দেয়ার দিক থেকে বিশ্বের ৮০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৭৯তম। ৮০তম দেশ ইরাক। তবে ‘মরেও সুখ আছে’ এমন দেশের তালিকায় প্রথমেই আছে যুক্তরাজ্যের নাম। এরপরের স্থানগুলো পর্যায়ক্রমে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, বেলজিয়াম, তাইওয়ান, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের দখলে।)
তারিখঃ ৭ অক্টোবর ২০১৫
রেটিং করুনঃ ,