Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

মুরাদ হাসানের বাংলাদেশ সফর (২০২১)

Share on Facebook

লেখক:শওকত হোসেন।

কোভিড-১৯-এর এ সময়ে আলাদা মুখোশ লাগে না। মাস্কটাই মুখোশের কাজ করে। আর সঙ্গে একটি টুপি পরে নিলে কে আর চিনবে? বিমানবন্দরে সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের ছবি দেখে মুখোশের কথাই সবার আগে মনে হলো। তবে মাথা নিচু করে মুখ লুকিয়ে যেভাবে হাঁটছিলেন, তাতে পালিয়ে যাওয়ার ভঙ্গিটাই চোখে পড়ে।

তবে মুখ লুকানোর ছবি দেখে যাঁরা ভেবেছিলেন মুরাদ হাসান হয়তো অনুতপ্ত, তাঁদের সে বিভ্রান্তি কাটবে পরের ছবিটা দেখেই। ছবিতে দেখা গেছে, উড়োজাহাজের ভেতরে আসনে বসে বিজয় বা ‘ভি’ চিহ্ন দেখাচ্ছেন মুরাদ হাসান।

এই ছবি দেখে সাংবাদিক গোলাম মোর্তজা ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘অপরাধ করেছেন’ বা ‘করতে পারেন’ বলে মনে হলেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। কয়েক দিন ‘নিখোঁজ’ থাকতে হয়। মাস, বছর জেলে কাটাতে হয়। কারও কান ফাটে, কারও ইলেকট্রিক শকে জেলে মৃত্যু হয়। কাউকে সীমান্তের এপারে, কাউকে ওপারে পাওয়া যায়। তাদের নামেও মামলা হয়। আর এত বড় অপরাধ করেও কারও শুধু পদ যায়। বিজয়ীর বেশে দেশ ছাড়তে পারে। আইন, মামলা তাদের জন্য নয়।

মুরাদ হাসানের কানাডা বিমানবন্দর সফর

সবার কাছে খবর ছিল যে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান কানাডা যাচ্ছেন। পদত্যাগে বাধ্য হওয়ার এক দিনের মধ্যেই দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া নিয়েও কত কত আলোচনা। কারও কারও জন্য কানাডা যাওয়া যে এত সহজ, জানা ছিল না। হঠাৎ মনে হলো কানাডা যাব, আর চলে গেলাম—মুরাদ হাসানের জন্য বিষয়টি যেন এ রকমই। মনে হতে পারে যে দেশের রাজনীতিক, ব্যবসায়ী বা আমলাদের একটি বড় অংশ সম্ভবত বিকল্প একটি ব্যবস্থা, বিকল্প আরেকটি দেশ ঠিক করেই রেখেছেন। বিপদে পড়লেই সোজা বিমানবন্দরে।

তবে মুরাদ–কাহিনি এখানেই শেষ হয়ে যায়নি। কারণ, কানাডায় ঢুকতে পারেননি তিনি। কানাডার বর্ডার সার্ভিস এজেন্সি তাঁকে সেখানে ঢুকতে দেয়নি। কানাডা যাচ্ছেন—এই সংবাদে সেখানকার নাগরিকেরা কানাডায় তাঁর প্রবেশের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছিলেন। তাঁরা মূলত বাংলাদেশি।

এরপর খবর এসেছিল যে তিনি কানাডায় ঢুকতে না পেরে দুবাই চলে গেছেন। তবে কানাডায় ঢুকতে না দেওয়া একটু বিস্ময়করই বটে। কেননা, মুদ্রা পাচার করে, সেই অর্থে বাড়ি কিনে বা বিনিয়োগ করলে স্থায়ী নাগরিকত্ব দেওয়ার বিধান কানাডার আছে। বিত্তবানদের একটি অংশ কানাডায় এক পা দিয়েই রাখেন। রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও আমলাদের স্ত্রী বা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আছে অনেক মুখরোচক আলোচনা। এই আলোচনার সূত্র ধরে ‘বেগমপাড়া’ এখন একটি পরিচিত নাম। বিশ্বের অনুসন্ধানী সাংবাদিকেরা একজোট হয়ে ২০১৭ সালে যখন ‘পানামা পেপারস লিক’ নামে কর ফাঁকি ও টাকা পাচারের গোপন তথ্য বের করলেন, তখন কানাডার টরন্টো স্টারের মূল নিউজের শিরোনাম ছিল, ‘কানাডা ইজ দ্য ওয়ার্ল্ডস নিউয়েস্ট ট্যাক্স হ্যাভেন’। তাহলে সেই কানাডা মুরাদ হাসানকে ফিরিয়ে দিল কেন?

এমন নয় যে বাংলাদেশি যাঁরা কানাডায় চলে গেছেন, তাঁরা সবাই টাকা পাচার করে নিয়ে গেছেন। যাঁরা দেশটিতে আছেন, তাঁদের বড় অংশই সৎপথে, পরিশ্রম করে কানাডায় টিকে থাকেন। একই সঙ্গে মন্দ লোকদেরও আস্তানা এই কানাডা। অর্থ পাচার করে সম্পদ কেনা যায়, আর্থিক অপরাধ করেও পার পাওয়া যায় ও জীবনযাপনেও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে শীর্ষ দেশগুলোর একটি। সুতরাং, কানাডা যে মুরাদ হাসানেরও পছন্দের গন্তব্য হবে, তা নিয়ে সন্দেহ ছিল না।

ভালো ও মন্দ সবার গন্তব্যই কানাডা কেন, এই প্রশ্নটাই করেছিলাম কানাডাপ্রবাসী সাংবাদিক শওগাত আলী সাগরের কাছে। তিনি বললেন, মন্দ লোকেরা কিন্তু কানাডায় এসে তাঁদের মন্দচর্চাটা করেন না। এখানে এসে তাঁরা সুবোধ বালকের মতো জীবন যাপন করেন। শিক্ষিত মধ্যবিত্তরা কানাডায় এসে কঠোর পরিশ্রম করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। বিত্তশালীদের সেটা করতে হয় না। মন্দ লোকগুলো যেমন বাংলাদেশকে তাঁদের মন্দচর্চার চারণভূমি হিসেবে ব্যবহার করেন, কানাডায় শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করতে চান, বিত্তশালীরাও বাংলাদেশকে তাঁদের অর্থ উপার্জনের উৎসভূমি হিসেবে ব্যবহার করে কানাডায় স্বস্তিতে বসবাস করতে চান। মুদ্রা পাচার রোধে কানাডার অবস্থান নিয়ে শিল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে অসন্তোষ আছে। আর্থিক অপরাধ ও মুদ্রা পাচারের ক্ষেত্রে ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্টের তালিকায় কানাডা হচ্ছে কান্ট্রি অব প্রাইমারি কনসার্ন। জি-৭ দেশগুলোর সমন্বয়ে গঠিত ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্স (এফএটিটি)-এ কানাডার অবস্থান হচ্ছে নিয়মিত ফলোআপে থাকা একটি দেশ। ফলে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা সরিয়ে ফেলার চিন্তা যাঁদের মাথায় থাকে, তাঁরা কানাডাকেই প্রথম পছন্দ হিসেবে বিবেচনা করেন।

মুরাদ হাসানের দুবাই বিমানবন্দর সফর

এবার আসা যাক দুবাই থেকে মুরাদ হাসানকে ফিরিয়ে দেওয়া প্রসঙ্গ। দুবাইকে এখন বলা হয় বিশ্বের অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্র বা ‘বিজনেস হাব’। আবার একই সঙ্গে দুবাই হচ্ছে অর্থ পাচারকারীদের নতুন স্বর্গ। ২০১৯ সালে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) এক প্রতিবেদন দিয়ে বলেছিল, ‘দুবাই এখন অর্থ পাচারের জন্য একটি সক্রিয় ও নিরাপদ গ্লোবাল হাব বা কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে, যেখানে দুর্নীতিগ্রস্ত ও অন্য অপরাধীরা যেকোনো বিলাসবহুল সম্পত্তি কোনো বাধা ছাড়াই কিনতে পারে।’

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক প্রতিষ্ঠান কারনেগি এনডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস নামের একটি প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি দুবাই নিয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ‘দুবাইজ রোল ইন ফ্যাসিলিটেটিং করাপশন অ্যান্ড গ্লোবাল ইললিসিট ফাইন্যান্সিয়াল ফ্লোজ’ নামের সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুবাইয়ের উত্থানের পেছনে দুর্নীতি ও অপরাধের একটি বড় ভূমিকা আছে।

সুতরাং, মুরাদ হাসানের পক্ষে দুবাইয়ে থাকা কঠিন কিছু ছিল না। এমনিতেই দেশের একাধিক ঋণখেলাপি বেশ ভালোভাবেই ব্যবসা-বাণিজ্য করে সেখানে রাজার হালে আছেন। কিন্তু সেখানেও ঠাঁই হলো না সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রীর।
অবশেষে মুরাদ হাসানের বাংলাদেশ সফর

ডা. মুরাদ হাসান সরকারি দলের একজন সাংসদ। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথা অনুযায়ী, রাষ্ট্র সংক্ষুব্ধ নয়। সুতরাং আবার দেশে ফিরে এলেও খুব একটা সমস্যা হবে বলে মনে হয় না। ডিজিটাল আইনের বিরোধিতাকারী বিএনপি ডিজিটাল আইনে মামলা করার চেষ্টা করছে ঠিকই, তবে রাষ্ট্র সহায় থাকলে কোনো সমস্যা নেই। তবে মন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন। সাংসদ থাকতে পারবেন কি না সেটি তাঁর দলই সিদ্ধান্ত নেবে। সিনেমায় যেমনটা দেখা যায়, ঘরের ছেলে কোনো অপরাধ করলে যাদের সংগতি আছে তারা সন্তানকে বিদেশ পাঠিয়ে দিত, আর সংগতি না থাকলে সীমান্ত পার হয়ে অন্য দেশে। মুরাদ হাসানের ক্ষেত্রেও হয়তো এ রকমই কোনো নির্দেশনা ছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। তবে দেশের মানুষের কাছে ডা. মুরাদ হাসান মানেই মাথা নত করে পালিয়ে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে লুকিয়ে দেশে ফেরা এক ব্যক্তির নাম।

তাহলে এ থেকে কী শিক্ষা নিলাম? করোনা অতিমারির সময় বিপুল অর্থ নিয়েও অনেকেই উন্নত দেশে চিকিৎসার জন্য কিন্তু যেতে পারেননি। কে জানে আবার কখন কী হয়। সুতরাং আপনারা যাঁরা পালিয়ে থাকার জন্য বিকল্প একটি ব্যবস্থা রেখেছেন, আরেকটি দেশ ঠিক করে রেখেছেন, টাকা পাচার করেছেন, অন্য কোথাও ‘সেকেন্ড হোম’ গড়েছেন, শেষ পর্যন্ত সেখানে কিন্তু ঢুকতে না–ও পারেন। সুতরাং পালিয়ে গেলেও মুরাদ হাসানের মতো লুকিয়ে দেশেই ফিরতে হবে।

সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ ডিসেম্বর ১২, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ