মুঘল সম্রাট শাহ-জাহান – মমতাজ মহল দম্পত্তির শাহজাদীগন – পর্ব – তিন ও শেষ ( শাহজাদী জাহানারা বেগম )
মুঘল সম্রাজ্যের সবচেয়ে ক্ষমতাধর, ঐশ্বর্য্যময়ী, সুশিক্ষিতা ও প্রজ্ঞাময়ী শাহাজাদীদের মধ্যে জাহানারা বেগম ছিলন ইতিহাসে সব চেয়ে জনপ্রিয়। তাঁকে বলা হতো মুঘল রাজকুমারীদের রাজকুমারী, ১৬১৪ সালের ২রা এপ্রিলে পবিত্র স্থান আজমীরে জন্মগ্রহনকারী সম্রাট শাহ-জাহান – মমতাজ দম্পত্তির প্রথম সন্তান ও মুঘল সম্রাজ্যের সবচেয়ে বেশি রাজ্য বা অঞ্চল বিজয়কারী ৬ষ্ট সম্রাট আবু মোজাফ্ফর উদ্দিন মোহাম্মদ অরঙ্গজেবের এর বড় ভগ্নি।
ইতিহাসবিদ গন এই প্রজ্ঞাময়ী শাহাজাদী জাহানারা বেগমকে ইতিহাসের পাতায় পাতায় এমন ভাবে উজ্বল করে রেখেছেন সেখানে এই শাহাজাদীকে নিয়ে নতুন করে কিছু বলার বা নতুন তথ্য যোগ করার মত আমার কাছে তেমন কিছু নেই তবে বর্তমানে সহজ যোগাযোগ ও ইন্টানেটের বদৌলতে ইতিহাসের ঢাকা পড়ে থাকা কিছু কথা পাঠকের কাছে তুলে ধরা যায়।
১৬৩১ সালে সবচেয়ে জনপ্রিয় মুঘল সম্রাজ্ঞী মমতাজ মহলের অকাল মৃত্যুর সময় শাহজাদীর বয়স ছিল ১৭ বছর এবং তখন রাজ-মহলের বা অন্দর মহলের বড় দায়িত্ব এসে পেড়ে এই শাহাজাদীর উপর বিশেষ করে মমতাজ মহলের রেখে যাওয়া সন্তানদের লালন পালনের ভার।
মমতাজ মহলের অকাল মৃত্যুর পরে সম্রাট শাহ-জাহান শাহজাদীর উপর বিশ্বস্ত হয়ে পড়েন এবং বিভিন্ন রাজকীয় নির্দেশ ও সিল মোহরে স্বাক্ষরের ক্ষমতা অর্জন করেন। মমতাজ মহলের রেখে যাওয়া প্রায় এক কোটি স্বর্ণ মুদ্রা সম্রাট শাহজাহান তাঁদের সন্তানদের মধ্যে ভাগ করে দিলেও শাহাজাদী জাহানার একাই প্রায় অর্ধেক স্বর্ণ মুদ্রা অর্জন করেন।
শাহ-জাহানের বিরুদ্ধে যখন নানান পারিবারিক চক্রান্ত তখন শাহজাদী সকল সহযোগিতা করতে থাকেন পিতা শাহজাহানের ময়ুর সিংহাসন রক্ষায় অবশেষে সম্রাট শাহ-জাহান – মমতাজ দম্পত্তির পুত্র আরংগোজেবের হাতে বন্দী হলে শাহজাদী জাহানারাও আগ্রা কেল্লায় বন্দী থেকে শাহ জানকে মানসিক শক্তি যোগান।
আরংগোজেবেকে সমর্থনকারী ২য় বোন শাহজাদী রওশনারা মৃত্যুর পরে আরংগোজেবে বড় বোন জাহানারা বেগমের কাছে দেখা করতে যান এবং সু-সম্পর্ক রক্ষা করেন এবং দাবী করেন যে তিনি যেন একজন বড় বোন হয়ে আরংগোজেবেকে ছোট ভাইয়ের মত স্নেহ দান করেন। আরংগোজেবের অভিষেক বর্ষ পূর্তি উপলক্ষ্যে তাঁকে ১৭ লাখ রুপী উপঢৌকন ও পাদশাহ বেগম উপধিতে ভূষিত করেন। এর পরবর্তিকালে সম্রাট আরংগোজেব বড় বোনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিযে নির্দেশ প্রদান করেন যে ঐতিহাসিক দলিলে তাঁকে যেন সাহিবত-উজ-জামানি নামে উল্ল্যেখ করা হয়।
শাহজাদী জাহানারা বেগমের পূর্ব পুরুষ সম্রাট আকবরের একটি জারিকৃত ফরমান অনুশারে মুঘল শাহজাদীদের বিবাহের প্রতি নিষেধাজ্ঞা বলবদ থাকায় তাঁর জীবন কেটেছে অবিবাহিত অবস্থায়, পরবর্তিকালে সম্ভবত সম্রাট আরংগোজেব সময়ে জারিকৃত ফরমানটি তুলে নেওয়া হয়।
শাহজাদী জাহানারা এর পূর্ব পুরুষ গন সম্রাট জহির-উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর, সম্রাট হুমায়ুন, জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ আকবর , সম্রাট জাহাংগীর ও পিতা-মাতা শাহ-জাহান-মমতাজের সমাধী সৌধগুলি দামি পাথরে গড়া হলেও তিনি চেয়েছিলে খুব সাদা-মাটা একটি কবর যার উপর থাকবে মাটি সবুজ ঘাস ও আলো বাতাশের ছোঁয়া , তার শেষ উচ্ছা অনুযায়ি দিল্লির মুসলিম মহা সাধক নিজামুদ্দিন আউলিয়ার দরগাহ শরিফে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
শাহজাদী নানা গুণের অধিকারিণী ছিলেন একাধারে লেখিকা, চিত্র শিল্পী ও কবি, তিনি নিজেই লিখেছিন যা লেখা আছে পার্সী ভাষায় মার্বেল পাথরে তাঁর সমাধিস্তস্তে যা ইতিহাসবিদগন ইংরেজী ভাষায় অনুবাদ করে লিখেছেন
“Allah is the Living, the Sustaining.
Let no one cover my grave except with greenery,
For this very grass suffices as a tomb cover for the poor.
The mortal simplistic Princess Jahanara,
Disciple of the Khwaja Moin-ud-Din Chishti,
Daughter of Shah Jahan the Conqueror
May Allah illuminate his proof.”
—————-1092 [1681 AD]
একজন নাম না জানা কবি বাংলায় অনুবাদ করে লিখেছেন =
” সবুজ ঘাসই কেবল আড়াল করুক আমার কবর
সাধারণের মাঝে যেন বেঁচে রই সাধারণ হয়ে
নম্রশীলার কবর ঢাকতে ঘাসই হচ্ছে জবর।”
তাঁর সমাধীর কিছু ছবি তুলে ধরা হলো যা ইন্টার নেট থেকে সংগ্রহিত। উল্ল্যেখ্য যে তাঁর সমাধী স্থলটি ছাদ শূণ্য তবে এখন তাঁর কবরের উপরের ভাগ পাথরে মোড়ানো নেই আর মাটি থাকলেও সেখানে সবুজ ঘাসের সন্ধান মিলে নি।
রেটিং করুনঃ ,