শাহজাহানের জীবনের শেষদিনগুলো।।
ভারতবর্ষে মুঘল শাসনের ইতিহাসে শাহজাহানের সময়কালকে সবচেয়ে ট্রাজিক সময় বলা চলে।ভ্রাতৃযুদ্ধ ও সব ভাইদের হত্যা, পুত্রের হাতে পিতার বন্দিত্ব, বড় বোনের স্বেচ্ছায় নির্বাসন সব মিলিয়ে সেসময়ে মুঘল সম্রাজ্যের ধারাবাহিক ঘটনাসমূহ যে কোন বইয়ের পাতার ট্রাজেডিকেও হার মানায়।
শাহজাহানের বন্দিদশা ও তার জীবনের শেষ দিনগুলো কেমন ছিল সেই সম্বন্ধে সবচেয়ে ভালো বর্ণনা পাওয়া যায় তখন ভারতে থাকা বা মুঘল দরবারের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের লেখনী থেকে। ফরাসি পর্যটক এবং লেখক বার্নিয়ের তৎকালীন সময়ে ভারতে অবস্থান করেছিলেন এবং নিজে মুঘল রাজবংশের গৃহ-চিকিৎসক রূপে নিযুক্ত ছিলেন। তিনি সেই সময়ের একটা বিস্তারিত বর্ণনা তাঁর লেখার মাধ্যমে সকলের সামনে তুলে দিয়ে গেছেন যা বর্তমানে সবচেয়ে অথেনটিক সোর্সগুলোর একটি বলে বিবেচিত হয়।
বার্নিয়েরের লেখা থেকে জানা যায় যে, যদিও আওরঙ্গজেব শাহজাহানকে আগ্রা দুর্গে বন্দি করে রেখেছিলেন, এবং তাঁকে অত্যন্ত কড়া পাহারার মধ্যে রাখতেন, তবুও তিনি তাঁর বৃদ্ধ পিতাকে যথেষ্ট উদারতা ও সম্ভ্রমের চোখে দেখতেন। শাহজাহান কে তিনি তাঁর খুশি অনুযায়ী থাকার অনুমতি দিয়েছিলেন এবং জাহানারা, অন্যান্য জেনানা ও নর্তকীদেরও তাঁর সঙ্গে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। ব্যক্তিগত বিলাস ও সুখস্বাচ্ছন্দের জন্য শাহজাহান যখন যেটা চাইতেন তখন তাই তাঁকে মঞ্জুর করা হত। তাছাড়া, নানা রকমের জীবজন্তু – ভালো ভালো ঘোড়া, বাজপাখী, হরিণ প্রভৃতি যখন যা তিনি তলব করতেন, সব তাঁকে পাঠানো হত। শাহজাহান জানোয়ার ও পাখির লড়াই দেখতে ভালোবাসতেন। বাস্তবিকই আওরঙ্গজেব বরাবরই তাঁর পিতার প্রতি উদার আচরণ করেছিলেন এবং তাঁর প্ৰতি রূঢ় ব্যবহার করেন নি ও অশ্ৰদ্ধা দেখান নি। তিনি প্রায়ই তাঁর বন্দি পিতাকে নানা রকমের উপহার পাঠাতেন, গুরুতর ব্যাপারে তাঁর সাথে পরামর্শ করতেন এবং অত্যন্ত ভদ্র ও নম্র ভাষায় চিঠিপত্রও লিখতেন। এমনকি আওরঙ্গজেবের প্ৰতি বিরূপ মনোভাবও তাঁর আর শেষ পর্যন্ত ছিল না। রাজনৈতিক ব্যাপারে তিনি আওরঙ্গজেব কে পত্র লিখতেন, দারার কন্যা কে তাঁর কাছে পাঠিয়েছিলেন এবং যে মূল্যবান রত্নভান্ডার একদিন তিনি চূর্ণ করে ফেলবেন বলেছিলেন, সেটাও তাঁকেও উপহার দিয়ে খুশি করেছিলেন।
গৃহযুদ্ধ শেষ হবার পরে আওরঙ্গজেব মোঘল শাসিত ভারতের সম্রাট হন। এরপরেই তিনি একটি কঠিন অসুখে পড়েন। এই অসুখের সাল-তারিখ নিয়ে ঐতিহাসিক ও গবেষকদের মধ্যে মতভেদ আছে। তবে অধিকাংশের মতে আওরঙ্গজেব ১৬৬২ সালের মে-আগষ্ট মাসে প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেই সময়ে প্রবল জ্বরের জন্য তিনি মাঝেমধ্যেই ভুল বকতেন বাকরোধ হয়ে যেত এবং মাঝে মাঝে অজ্ঞান ও হয়ে যেতেন। চিকিৎসারা সব ধরনের চেষ্টা করেও তাঁকে সুস্থ করে তুলতে ব্যর্থ হলেন, হতাশ হলেন এবং বাইরে রটে গেল যে আওরঙ্গজেবের মৃত্যু হয়েছে।সম্রাজ্যের নানা স্থানে বিভিন্ন গুজব রটে গিয়েছিল।জায়গা জায়গা থেকে শোনা যাচ্ছিল, রাজা যশবন্ত সিং নাকি সম্রাট শাহজাহান কে মুক্ত করার জন্য বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে দিল্লির দিকে আসছেন। এই গুজব কে ভিত্তি করে মহবৎ খাঁ, যিনি একদা নির্বিবাদে আওরঙ্গজেবের বশ্যতা স্বীকার করেছিলেন, তিনিও শেষ পর্যন্ত কাবুলের সুবেদারী থেকে পদত্যাগ করে লাহোরের মধ্যে দিয়ে আগ্রার দিকে অগ্রসর হন সম্রাট শাহজাহান কে মুক্ত করে পুনরায় সিংহাসনে বসানোর জন্য। বন্দি শাহজাহানের প্রহরী খোজা আতবর খাঁ’ও সম্রাটের কারাগারের দ্বার উন্মুক্ত করে দেবার জন্য প্রস্তুত হয়েছিলেন ।এর উপর আওরঙ্গজেবের জ্যেষ্ঠপুত্র সুলতান মুয়াজ্জম পূর্ণদ্যমে ওমরাহদের সাথে সিংহাসন দখলের পরামর্শ করতে লাগলেন। মুয়াজ্জম ছদ্মবেশ ধরে গভীর রাত্রিতে রাজা যশবন্ত সিংহের সাথে দেখা করে তাঁকে নিজের পক্ষে যোগ দিতে অনুরোধ জানালেন। অন্যদিকে রওশন আরা, কয়েকজন ওমরাহ ও ফিদাই খাঁ’র সঙ্গে হাত মিলিয়ে সুলতান আকবরকে সিংহাসনে বসানোর পক্ষে ষড়যন্ত্রে যোগ দিলেন। যদিও আওরঙ্গজেব মুঘল সাম্রাজ্যের ভবিষ্যৎ শাসক হিসেবে আকবরকেই চিহ্নিত করেছিলেন।
সিংহাসন নিয়ে দুটো বিবাদমান দলের সৃষ্টি হয়। দুই দলেরই উদ্দেশ্য ছিল পূর্বতন সম্রাট শাহজাহান কে তাঁর বন্দিদশা থেকে মুক্তি দেওয়া।
যদিও এ অভিপ্রায়ের সদুদ্দেশ্য নিয়ে বার্নিয়ের সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন।কারন ভ্রাতৃযুদ্ধের সময় আমির ওমরাহদের অনেকেই বিভিন্ন রাজপুত্রদের পক্ষ নিয়েছিলেন।ওমরাহরা খুব ভালো করেই জানতেন যে, বন্দি শাহজাহান কে মুক্তি দেবার অর্থ হল খাঁচায় বন্দি ক্রুদ্ধ সিংহ কে মুক্তি দেওয়া। সকলেই বৃদ্ধ সম্রাটের ক্ষিপ্ত প্রতিহিংসার ভয় করতেন, এমনকি খোজা আতবর খাঁ পর্যন্ত।
ওমরাহদের মধ্যে একমাত্র যশবন্ত সিং ও মহবৎ খাঁ কোনও দিন প্রকাশ্যে বৃদ্ধ সম্রাটের কোনও বিরোধিতা করেন নি। এরা দু’জন ছাড়া অন্য কেউ বৃদ্ধ সম্রাটের প্রতি আওরঙ্গজেবের অন্যায় আচরণের সামান্য প্রতিবাদ করেন নি।আসলে ওমরাহদের মূল উদ্দেশ্য ছিল সিংহাসনে অবস্থানকৃত সম্রাটকে তোষামোদ করে নিজের গদি সামলানো।তাই যে যখন সিংহাসনে বসতেন, তখন তাঁকে তোষামোদ করে তাঁরা নিজেদের গদী বাঁচিয়ে রাখতেন।প্রকৃতপক্ষে সর্বদা একজনের প্রতিই আনুগত্য তাদের ভেতর কমই দেখা যেত।
অসুস্থতার মধ্যেও আওরঙ্গজেব স্থিরচিত্তে রাজকার্য পরিচালনা করতেন এবং বন্দি পিতার দিকে কড়া নজরও রাখতেন।ব্যক্তিগতভাবে চাইতেন তার যদি মৃত্যু হয় তাহলে শাহজাহানই পুনরায় সিংহাসনে বসুক এবং ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকার শাহজাহানই ঠিক করবেন। তিনি তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র মুয়াজ্জম কে এরকম নির্দেশ দিয়ে রেখেছিলেন। ওদিকে আবার খোজা আতবর খাঁ এর কাছে তিনি প্রায়ই পত্র দিতেন বৃদ্ধ শাহজাহানের ওপরে কড়া নজর রাখার জন্য। শেষে তাঁর মৃত্যুর গুজব তাঁর কানে এসেও পৌঁছায়। আওরঙ্গজেব গুজব বন্ধ করার জন্য অসুস্থ অবস্থায় একাধিকবার ওমরাহদের সামনে দর্শন দেন। একবার দরবারে থাকা অবস্থাতেই তিনি মুর্চ্ছা যান এবং মুর্চ্ছার ঘোর সম্পূর্ণ কাটার আগেই তিনি যশবন্ত সিং সহ আরও কয়েকজন হোমড়াচমরা ওমরাহ কে ডেকে পাঠান, তিনি বেঁচে আছেন না মরে গেছেন সেটা স্বচক্ষে দেখে যাবার জন্য। এই মুর্চ্ছা যাবার ঘটনার পরেই আওরঙ্গজেব ক্রমে সুস্থ হতে শুরু করেন এবং গুজবে বিশ্বাস করে সিংহাসন নিয়ে বিবাদমান দুই গোষ্ঠীই রণে ভঙ্গ দেয়। আরেকটা গৃহযুদ্ধ শুরুর আগেই শেষ হয়।
সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠার পরে আওরঙ্গজেব নিজের তৃতীয় পুত্র আকবরের সাথে দারাশুকোর কন্যার বিবাহ দেবার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাঁর এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। দারার হত্যাকাণ্ডের পরে জাহানারার ওপরেই দারার কন্যার দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল, তাঁরা কিছুতেই আওরঙ্গজেবের প্রস্তাবে রাজি হন নি। উপরন্তু রাজকুমারী নিজেও তাঁর পিতার হত্যাকারীর পুত্র কে কিছুতেই বিয়ে করতে রাজি ছিলেন না। বর্নিয়ের লেখ্য থেকে জানা যায় যে, দারার কন্যা রাজকুমারী এই ঘটনায় এতটাই আতঙ্কে ছিলেন যে তিনি স্থির করে ফেলেছিলেন যে, যদি আওরঙ্গজেব তাকে জোর করে তবে তিনি আত্মহত্যা করবেন। নিজের প্রাণ থাকতে তিনি এই বিবাহ করবেন না। যদিও সেটা হয় নি। বারবার প্রস্তাবিত করেও আওরঙ্গজেব ব্যর্থ হয়েও কোনও জোর করার পথ নেন নি। এমনকি কোনও প্রতিহিংসার পথও নেন নি যাতে রাজকুমারীর ক্ষতি হয়, যদিও ঐতিহাসিকদের মতে তাঁর এই প্রস্তাবের পিছনেও ছিল কূটনীতিক চাল, তিনি চেয়েছিলেন দারার দিক থেকে যেন ভবিষ্যতে বিদ্রোহের আশঙ্কা চিরতরে নষ্ট হয়ে যায়।
এই একই সময়ে আওরঙ্গজেব তাঁর পিতা শাহজাহানের কাছে কিছু মনিরত্নও চেয়েছিলেন। উদ্দেশ্য হিসাবে তিনি জানিয়েছিলেন যে বিখ্যাত ময়ূর সিংহাসনটি কে আরও বেশি ঐশ্বর্য্যমণ্ডিত করে তোলা। এখানে উল্লেখ্য যে তখনো রত্ন ভান্ডারের সিংহভাগই ছিল আগ্রা দুর্গে শাহজাহানের তত্বাবধানে। দিল্লিতে যেটা ছিল, সেটা হিমশৈলের চূড়ামাত্র। বন্দি শাহজাহান ভীষণ ক্রুদ্ধ হয়ে আওরঙ্গজেবের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। উপরন্ত তিনি আওরঙ্গজেব কে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন যে, আওরঙ্গজেব যেন তাঁর রাজকার্য নিয়েই থাকেন – সিংহাসনের ব্যাপারে মাথা না ঘামান। ধনদৌলত মনিরত্নের কোনও কথা তিনি আর শুনতে চান না কারণ ওসব নিয়ে তাঁর আর কোনও আগ্রহ নেই। ধনরত্ন নিয়ে যদি বেশি কাড়াকাড়ি চলতে থাকে তাহলে তিনি যে কোনও মুহূর্তে লোহার হাতুড়ির ঘায়ে ওই সব অমূল্য-দুর্লভ মনিরত্নের সমগ্র ভান্ডার কে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে আদেশ দেবেন।এরপরে আওরঙ্গজেব আর তাঁর পিতার কাছে এই বিষয়ে কোনও কথা তোলেন নি।
এরপর আওরঙ্গজেব শাহজাহানকে একটি পত্র লেখেন যা বার্নিয়ের তার গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। (এখানে বলতে হচ্ছে এই পত্রটির কারনে পোস্টটি অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে কিন্তু আওরঙ্গজেবকে ভালোভাবে বোঝার জন্য পত্রটির গুরত্ব অপরিসীম)।
পত্রটি হলো-
“আপনার ইচ্ছা যে আমি সনাতন প্রথা আঁকড়ে থাকি এবং আমার অধীন যে কোনও কর্মচারীর মৃত্যুর পরে তাঁর সম্পত্তি গ্রাস করে বসি। যখন কোনও আমীর বা কোনও ধনী ব্যবসায়ী মারা যান, এমনকি তাঁদের মৃত্যুর আগেই, আমরা তাঁর সকল সম্পত্তি গ্রাস করি, তাঁদের অধীন কর্মচারী ভৃত্যদের পদচ্যুত করে দি।সামান্য একটুকরো সোনাও আমরা ফেলে দিই না। এইভাবে অপরের সঞ্চিত ধনরত্ন আত্মসাৎ করার একটা অস্বাভাবিক আনন্দ হয়ত থাকতে পারে, কিন্তু এর থেকে অমানবিক কাজ দ্বিতীয়টি নেই। আমীর নায়েক খাঁ বা হিন্দু বেনিয়ানের সেই বিধবা পত্নী আপনার প্রতি যে ব্যবহার করেছিলেন এবং এই অন্যায় প্রথার যে সমুচিত জবাব দিয়েছিলেন, তা অবাঞ্চণীয় বা অপ্রীতিকর হলেও সম্পূর্ণ ন্যায়সঙ্গত নয় কি?
সুতরাং আপনার অভিযোগ ও আদেশ আমি মান্য করতে পারলাম না এবং আপনি আমার ব্যক্তিগত চরিত্রের প্রতি যে কটাক্ষ করেছেন, সেটাও আমি মেনে নিতে অক্ষম। আমি আজ রাজতখতে বসেছি বলে আপনি ভুলেও মনে করবেন না যে আমি অহংকারে অন্ধ হয়ে গেছি। প্রায় চল্লিশ বছরের সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে আপনি নিশ্চয়ই ভালোভাবে জানেন যে রাজমুকুট মাথায় ধারণ করার দায়িত্ব, অশান্তি ও ঝঞ্ঝাট কতখানি।
আপনার ইচ্ছা রাজ্যের শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা ও সুখসমৃদ্ধির জন্য আমি বিশেষ মনোযোগ না দিই এবং তার পরিবর্তে রাজ্যের সীমানা বৃদ্ধির জন্য যুদ্ধের পরিকল্পনা বেশি করে করি। অবশ্য একথা আমি নিজেও স্বীকার করি যে প্ৰত্যেক শক্তিশালী সম্রাটের উচিত যুদ্ধবিগ্রহে জয়লাভ করে রাজ্যের সীমানা বাড়ানো। আমার যদি সে ইচ্ছা না থাকে তাহলে বুঝতে হবে যে আমি তৈমুরের বংশধর নই। সব স্বীকার করলেও আপনি আমায় নিষ্ক্রিয় বলতে পারবেন না। আমার সেনাবাহিনী যে কোনও যুদ্ধই করে নি এবং রাজ্য জয় করে নি এমন অভিযোগও করা যায় না। দক্ষিণাত্যে ও বাংলাদেশে এদিক দিয়ে আমার সৈন্যরা যথেষ্ঠ কৃতিত্ব দেখিয়েছে। কিন্তু এই প্রসঙ্গে এই কথাও আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, শুধু রাজ্য জয় করাই রাজাদের সর্বশ্রেষ্ঠ কর্তব্য নয়। পৃথিবীর বহু দেশ ও বহু জাতি অসভ্য বর্বরদের পদানত হয়েছে, এবং অনেক দ্বিগবিজয়ী দোর্দণ্ডপ্রতাপ সম্রাটের সুবিস্তৃত সাম্রাজ্য পথের ধুলায় গুঁড়িয়ে গিয়েছে। সুতরাং সাম্রাজ্য জয় করাই সম্রাটের অন্যতম কর্তব্য নয়। প্রজাদের মঙ্গলের জন্য, রাজ্যের সমৃদ্ধির জন্য, ন্যায় সঙ্গত ভাবে রাজ্য পরিচালনা করাই প্রত্যেক সম্রাটের অন্যতম কর্তব্য। …”
যাই হোক পরিশেষে আমরা বলতে পারি সাধারণত এটাই জানা যায় যে শাহজাহান জীবনের শেষ দিনগুলোতে শুধু অশ্রুসজল চোখে তাজমহলের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মরেছেন এবং পুত্রকে অভিশাপ দিয়েছেন।আসলে কিন্তু সে রকম কিছুই নয়।
শাহজাহান বন্দিদশায় থেকেও জীবনের শেষদিনগুলো বেশ ভালোভাবেই কাটিয়েছেন এবং খুশি হয়ে তার রত্নভান্ডার ও আওরঙ্গজেবকে দিয়ে গেছেন।জীবনের শেষ লগ্নে এসে যখন শাহজাহানের ধর্ম-কর্ম করার ঝোঁক হয়, তখন আওরঙ্গজেব মৌলভীদের তাঁর বন্দি পিতার কাছে স্বাধীনভাবে যাবার অনুমতিও দিয়েছিলেন।সম্ভবত আওরঙ্গজেবের এই আচরণের জন্যই শেষ পর্যন্ত শাহজাহানের ক্রুদ্ধ ও উদ্ধত ভাব শেষে শান্ত ও নম্র হয়েছিল।শাহজাহান মারা যান ১৬৬৬ সালের ২২ জানুয়ারী। মারা যাওয়ার আগে তিনি জাহানারাকে জানিয়ে যান তিনি সকলকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। সর্বান্তকরণে ক্ষমা করে দিয়ে গেছেন বিদ্রোহী ও তাঁকে বন্দি করে রাখা তৃতীয় পুত্রটিকেও।
সূত্র: সংগৃহিত।
তথ্যসূত্র:
১/বাদশাহী আমল, বিনয় ঘোষ, প্রকাশ ভবন,কোলকাতা,(পৃষ্ঠাঃ৩৫-৪০, ৭১-৭৮)।
২/Travels In The Mogul Empire: A. D. 1656-1668, Francois Bernier,Oxford University Press,Oxfordshire,England,1916,(page:158-160).
তারিখ: ফেব্রুয়ারী ০৭, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,