খেয়ালিপনা মানব চরিত্রের স্বাভাবিক অংশ কিন্তু সেই খেয়ালিপনা যদি রাজা বাদশাহ সম্রাটের ক্ষেত্রে হয় তা ইতিহাসে স্মরনীয় হয়ে থাকে।মুঘল সম্রাটদের ও নানা রকম খেয়ালিপনা প্রচলিত ছিল।
সম্রাট বাবুরের জীবনের অধিকাংশ সময় যুদ্ধক্ষেত্রে এবং ভবঘুরের মতো কাটলেও তিনিও কিছু কিছু সময় বেশ ভয়ানক খাম খেয়ালিপনা করেছেন।যেমন তিনি তার পূর্বপুরুষ তৈমুরের মতো নরমুন্ড দিয়ে পিরামিড তৈরি করেছিলেন। বাবুরের পুত্র হুমায়ূন খামখেয়ালিপনার চরম সীমা অতিক্রম করেছিলেন।সিংহাসন থেকে বিতাড়িত হওয়ার অন্যতম প্রধান কারন ছিল সম্রাট হুমায়ুনের খামখেয়ালিপনা।তার ভাইয়েরা বারবার তার বিরোধিতা করার পরেও তিনি তাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন।শের শাহ দুয়ারে কড়া নাড়ছেন জেনেও তিনি অভিযান থামিয়ে মাঝে মাঝে আমোদ প্রমোদে কাটাতেন।এই আমোদ প্রমোদ মাসখানেক ধরে চলতো।এছাড়া রানী কর্নাবতী যখন তার কাছে সাহায্যের আবেদন জানান তখন তিনি ভাবতে ভাবতেই ১৫ দিন কাটিয়ে দেন।
পরে যখন বাহাদুর শাহ চিতোরের দরজায় কড়া নাড়ছেন তখন হুমায়ুন আলমোড়াও ছাড়াতে পারেননি। ফলাফল কর্নাবতীর আগুনে ঝাপ দিয়ে আত্মাহুতি।বাহাদুর শাহ যখন হুমায়ুনের কাছে হেরে পলায়ন করছেন তখন হুমায়ুনের প্রধান তোপচি তকি খাঁ নিরাপত্তার জন্য বাহাদুর শাহের সকল তোপচিদের হাত কেটে দেন।এটা জেনে হুমায়ুন চরম রাগান্বিত হন কারন তারা শুধু হুকুম তামিল করেছে মাত্র।পরে তিনিও তকি খাঁর হাত কেটে দেন সকলের বারবার বারণ করা সত্ত্বেও।অথচ তকি খাঁর মতো দক্ষ তোপচির অভাবে হুমায়ুনকে বারবার ভুগতে হয়েছে। খামখেয়ালিপনার জন্য হুমায়ুন সারাজীবন হোঁচট খেয়েছেন এবং তার মৃত্যুও হয়েছিল হোঁচট খেয়েই।
‘খামখেয়ালি’ বলে ইতিহাসে ‘মোঘল সম্রাট আকবরের’ কোন বদনাম পাওয়া যায় না। তাঁর নতুন ধর্ম প্রচারের আগ্রহ কিংবা ‘ফতেহপুর সিকরি’তে রাজধানী তুলে নিয়ে যাওয়ার খেয়ালকে ‘আলাউদ্দিন খিলজি’ বা ‘মহম্মদ বিন তুঘলকের’ হাস্যকর খেয়ালের সমগোত্রীয় কোনদিন ভাবা হয়নি, কেউ ভাবেননি। অথচ এই দুটি ক্ষেত্রেই ‘আকবর’ অসফল হয়েছিলেন। ‘ফতেহপুর সিকরি’তে নতুন শহর গড়ে তোলার সময়ে তিনি জলের কথা ভাবেননি। শেষে জলাভাবে শহরটি পরিত্যক্ত হয়েছিল। ‘দীন-ই-ইলাহী’ নামক ধর্ম নিয়ে তিনি অনেক চিন্তাভাবনা করেছিলেন। ভারতবর্ষের মতন দেশে ‘ধর্মসমন্বয়ের যুক্তিযুক্ততা’ তিনি অনুভব করেছিলেন। কিন্তু তিনি এটা ভুলে গিয়েছিলেন যে রাজার প্রবর্তিত ধর্ম কখনও সর্বসাধারণ গ্রহণ করেন না।
ধর্মপ্রচারককে সাধক হতেই হবে। যাক সে কথা। ‘খামখেয়ালি’ বলে ইতিহাসে ‘আকবরের’ বদনাম না থাকলেও, ‘খেয়ালি’ কিন্তু তিনি অবশ্যই ছিলেন। নানাভাবে তিনি তাঁর নিজের জীবনে অভিনবত্ব এনেছিলেন। তার মধ্যে একটা হল, নিজের জন্মদিনে দাঁড়িপাল্লায় ওজন হয়ে সেইসব জিনিসপত্র দানধ্যান করা। ‘আকবর’ এই জিনিসটি সম্ভবতঃ ‘রাজপুত রাজাদের’ কাছ থেকে শিখেছিলেন। হিন্দুদের পৌরাণিক গল্পে ‘তূলা ব্রতের’ কথা জানা যায়। ‘তূলাদণ্ডে’ বা ‘দাঁড়িপাল্লায়’ ‘শ্রীকৃষ্ণ’কে ওজন করে তাঁর অন্যতম স্ত্রী ‘সত্যভামা’ ‘তূলাব্রত’ উদযাপন করতেন। অর্থাৎ স্বামীর সম-ওজনের সোনারুপো তিনি ব্রাহ্মণদের দান করতেন।
অতীতে ‘আকবরের সেনাপতি’ ‘রাজা মান সিংহের’ লেখা একটি পুঁথি আবিষ্কৃত হয়েছিল, সেটির নাম ‘তূলাপুরুষ দানপ্রমাণ’। ব্যাপারটি ‘আকবরের’ বেশ মনের মতন হওয়ায় তিনিও স্থির করেছিলেন যে, তিনিও বছরে একবার নয়, দু-দুবার ওজন হবেন এবং যে জিনিসের ওজন হবে সেগুলো সব দীন-দুঃখী ফকির-দরবেশ-সন্ন্যাসীদের দান করে দেবেন। বাদশাহর মর্জি বলে কথা। তিনি যা বলতেন সেটাই নিয়মে পরিণত হত। সম্রাট বছরে দুইবার নিজের ওজন করাতেন – একবার তাঁর ‘নিজের জন্মদিনে’ বা ‘কার্তিক মাসে’, আরেকবার ‘বৈশাখ মাসের প্রথমে’। তবে তাঁর জন্মদিনে ঘটাটা বেশি হত। ‘জন্মদিনে’ অর্থাৎ ‘কার্তিক মাসে’ সম্রাটের ওজন নেওয়া হত ‘বারোবার’, সেখানে ‘বৈশাখ মাসে’ তাঁর ওজন নেওয়া হত ‘আটবার’। তাঁর জন্মদিনে বারোবার ওজন নেওয়া হত বারো রকমের জিনিস দিয়ে।
প্রথমবারে ‘সোনা-রুপো-হীরে-জহরৎ-বস্ত্র’; দ্বিতীয়বারে ‘পারা’; তৃতীয়বারে ‘কাঁচা রেশম’; চতুর্থবারে ‘সুগন্ধিদ্রব্য’; পঞ্চমবারে ‘কস্তুরী’; ষষ্ঠবারে ‘চন্দনকাঠ’; সপ্তমবারে ‘মাদকদ্রব্য’; অষ্টমবারে ‘ঘি’; নবমবারে ‘লোহা’; দশমবারে ‘চাল ও দুধ’; একাদশবারে ‘ফল’ ও দ্বাদশবারে ‘নুন’ দিয়ে তাঁকে ওজন করা হত। সমস্ত জিনিসই দান করে দেওয়া হত। এছাড়াও নিজের জন্মদিনে ‘আকবর’ যত বছর বয়স পূর্ণ করতেন, ততগুলি ‘গরু দান’ করা হত হিন্দু ব্রাহ্মণদের।
‘আবুল ফজলের লেখা’ থেকে জানা যায় যে, পাছে ‘গোহত্যা’ হয়, এই ভয়ে, গরু কেবলমাত্র ব্রাহ্মণদেরই দান করা হত। আর অন্যান্য জাতির লোকেদের দান করা হত ‘বলদ’, ‘মহিষ’, ‘ভেড়া’, ‘ছাগল’ ও ‘মুরগী’। এই জীবগুলো বধ্য পশু নয়। এরপরে আবার ‘বৈশাখ মাসে’ ‘আকবরের’ ওজন করা হত – তবে আটবারের জন্য। এর উদ্দেশ্য কি ছিল, তা ঠিক জানা যায় না, তবে হিন্দুদের ‘তূলাব্রত’ ‘বৈশাখ মাসে’ই অনুষ্ঠিত হওয়ার নিয়ম ছিল। ‘বৈশাখ মাসে’ ‘আকবর’ প্রথমে ‘রুপো’, দ্বিতীয়বারে ‘টিন’, তৃতীয়বারে ‘কার্পাস বস্ত্র’, চতুর্থবারে ‘সীসা’, পঞ্চমবারে ‘মেওয়া বা শুকনো ফল’, ষষ্ঠবারে ‘সুগন্ধি তেল’, সপ্তমবারে ‘শাকসবজি’ ও অষ্টমবারে ‘পানীয়’ দিয়ে নিজেকে ওজন করতেন। এগুলোও সব দান করে দেওয়া হত। তবে ‘আকবর’ শুধুমাত্র নিজের জন্মদিনে নিজেকেই ওজন করাতেন না, অন্যান্য রাজকুমারদের জন্মদিনেও তিনি ওজন করার নিয়ম চালু করেছিলেন। ‘আকবর পুত্র জাহাঙ্গীর’ তাঁর পিতার এই দুটি নিয়মই মেনে নিয়েছিলেন, কেবলমাত্র নিজের জন্মদিনে তিনি ‘গোদান’ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তার বদলে নিজের ‘জন্ম-বছর অনুযায়ী’ তিনি একটা করে ‘ভেড়া’, ‘ছাগল’ ও ‘মুরগী’ দান করতেন। জন্মদিনে ওজন হতে ‘জাহাঙ্গীরের’ কেমন লাগল? তিনি কি শুধু তাঁর বাবার প্রচলিত নিয়মটিই পালন করতেন? না, নিজের আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছিলেন, ‘‘এইভাবে নিজেকে ওজন করার রীতি আমি সম্পূর্ণ সমর্থন করি।’’
তবে তৃতীয় মুঘল সম্রাট আকবরের জীবন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করলে আরও বেশ কিছু বিস্ময়কর তথ্য জানতে পারা যায়। সেগুলোকে তাঁর খেয়াল বলা যাবে কিনা, সেটা ঐতিহাসিক ও গবেষকদের বিতর্কের বিষয়। কিন্তু তিনি তাঁর বাপ-ঠাকুরদার মতন ফেলে আসা দেশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘনিঃস্বাস ছেড়ে দিন কাটান নি। ভারত তাঁর পছন্দের দেশ ছিল। ভারতীয়দের আদব-কায়দা নিয়ে তিনি নাক সিঁটকে থাকেননি আর সেগুলো নিয়ে তিনি ছিঃ ছিঃ করেননি। ‘পারসিক সংস্কৃতি’ আঁকড়ে না থেকে তিনি সেগুলোর সাথে ‘ভারতীয় সংস্কৃতির মেল বন্ধন’ ঘটাতে শুরু করেছিলেন। ‘বাপ-ঠাকুরদার পলিসি’ তিনি আমূল পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন।
তাঁর এডমিনিষ্ট্রেশনের উচ্চতম পদগুলিতে, তিনি তাঁর দুই পূর্বতন পুরুষের থেকে কয়েকশো গুণ বেশি হিন্দু নিয়োগ করেছিলেন। হিন্দু ঘরের রমণী তাঁর স্ত্রী হয়ে মুঘল অন্দরমহলে এসেছিলেন। ফলে মুঘল অন্দরমহলে হিন্দু পূজা ও উৎসবের ঢালাও অনুমতি পাওয়া গিয়েছিল। হিন্দু ধর্ম বিরোধী ‘জিজিয়া কর’ তিনি বাতিল করে দিয়েছিলেন। তিনি ‘বেনারস’ নতুন করে সাজিয়ে দিয়েছিলেন, এমনকি সেখানে ‘শিব ও বিষ্ণুর দুটি মন্দির’ গড়ে দিয়েছিলেন। তিনি নিজেও ‘জন্মাষ্টমী’ ও ‘দীপাবলি’র মতন উৎসবে অংশ নিতে শুরু করেছিলেন। তাঁর পিতামহ বাবরের ন্যায় তিনি খালি ‘পারসিক সংস্কৃতি’ আমদানি না করে সেগুলো যাতে ভারতীয় সংস্কৃতির সাথে মিশে যায়, সেদিকেও নজর দিতে শুরু করেছিলেন। আকবরের উদ্যোগে ও অনুপ্রেরণায় ‘ফার্সি ভাষায়’ ‘রামায়ণ’ ও ‘মহাভারত’ অনূদিত হয়েছিল। রাতের খাবারের পরে তাঁকে গান গেয়ে শুনাতেন ‘তানসেন’। ‘আবুস সামাদ’ নামক এক পারসিক চিত্রকরকে ‘হুমায়ুন’ ভারতে নিয়ে এসেছিলেন। ‘আকবরের নির্দেশে’ তিনি একশোর বেশি ভারতীয় চিত্রকরকে ‘পারসিক মিনিয়েচার পেন্টিং বা ক্ষুদ্রকায় চিত্রাঙ্কনের কায়দা’ শিখিয়ে দিয়েছিলেন।
আকবরের সময়কাল থেকেই মুঘল ইউরোপীয় চিত্রকলার সংমিশ্রণে খেয়ালি তাসবির নামে এক প্রকার চিত্রকলার উদ্ভব হয়।এগুলো মূলত বাস্তবতার সাথে কল্পনার মিশ্রণ ঘটিয়ে নতুন সৃষ্ট এক প্রকার চিত্র।এই খেয়ালি তাসবিরের সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটে জাহাঙ্গীরের আমলে।আকবরের ৪ টি,জাহাঙ্গীরের ২০ টি ও শাহজাহানের ৭ টি খেয়ালি তাসবির পাওয়া গিয়েছে।জাহাঙ্গীর যে মানুষ হিসেবে কতটা খেয়ালি ছিলেন তা তার খেয়ালি তাসবিরগুলো দেখলেই বোঝা যায়।কোনটাতে তিনি পায়ের নিচে পৃথিবীকে রেখেছেন,কোনটাতে হাতে আবার কোন চিত্রে তিনি নিজ হাতে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ গুরুর হাতে দিচ্ছেন আর উপরে দেবদূতেরা রয়েছে।জাহাঙ্গীরের খেয়ালি মনের পরিচয় জানতে গেলেতার এই তাসবিরগুলো জানতে হবে।
‘আবুল ফজলের লেখা’ থেকে জানা যায় যে, যৌবনে ‘আকবরের মতন খাদ্যরসিক’ খুব কমই ছিলেন। কিন্তু পরে তিনি দ্রুত খাবার পরিমান কমিয়ে দিয়েছিলেন। ‘আবুল ফজল’ লিখে গিয়েছিলেন যে, আকবর দিনে একবেলা খেতেন এবং যতই তাঁর বয়স বৃদ্ধি পাচ্ছিল ততই তাঁর খাবারের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছিল। পরের দিকে মাংসের প্রতিও তাঁর বিতৃষ্ণা তৈরি হয়েছিল ও জীবনের শেষের দিকে তিনি এক প্রকার ‘নিরামিষ ভোজনকারী’ হয়ে গিয়েছিলেন। ‘ইসলামে’ ‘মদ্যপান’ নিষিদ্ধ হলেও, যুদ্ধ যাত্রার আগে ‘বাবর-হুমায়ুন’ ‘মদ-মাংস’ খেয়ে তাজা হয়ে নিতেন। ‘আকবরের’ ওসবের বালাই ছিল না। তিনি এক প্রকার ‘সন্ন্যাসব্রত’ই নিয়েছিলেন বলা চলে। সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার ‘আকবর’ নিজের সভাতে ‘ধর্মীয় জমায়েত’ করতেন ও বিভিন্ন ধর্মের নানান ধর্মীয় দিক নিয়ে আলোচনা করতেন। প্রথমদিকে সেখানে খালি ‘মুসলিম পণ্ডিতরা’ এলেও, কিছু দিন পরেই আকবর ‘ধর্মীয় সভা’ ‘ওপেন ফর অল’ করে দিয়েছিলেন। রাগে দাঁত কিড়মিড় করতে করতে ‘মুসলিম পণ্ডিতরা’ দেখেছিলেন যে ‘আকবরের রাজসভায়’ ‘হিন্দু’, ‘জৈন’, ‘বৌদ্ধ’, ‘পার্শী’ এমনকি ‘পর্তুগিজ পাদ্রীরা’ আসছেন। তাঁকে নিয়ে নানান রকম গুজব ছড়াতে শুরু করেছিল। তাঁকে নিয়ে এমন গুজবও ছড়িয়েছিল যে প্রতি রাতে এক বামুন ঠাকুর নাকি তাঁর ঘরের জানালা বেয়ে উঠে তাঁকে ‘রামায়ণ মহাভারতের গল্প’ শুনিয়ে ঘুম পাড়ায়! কিন্তু এত কিছুর পরেও ‘আকবরের’ কোনও পরিবর্তন ঘটে নি। তিনি ছিলেন নিজের মেজাজ মর্জিতে চলা ব্যক্তি।
‘আকবর’, বিশেষ ধর্মীয় দিনে তাঁর সাম্রাজ্যের মধ্যে ‘গরু জবাই’ আর অন্যান্য মাংস বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। কেউ আদেশ অমান্য করলে ফল হত ভয়াবহ। এমনকি তিনি তাঁর নিজের সভাসদ ও এডমিনিষ্ট্রেশনের পদাধিকারীদের পেঁয়াজ রসুন ত্যাগ করতে বলেছিলেন। জীবনের শেষে এসে আকবরের সব কিছুই আমূল পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল। মুসলিমদের ন্যায় ছোট চুল রাখার পরিবর্তে তিনিও হিন্দু রাজাদের ন্যায় লম্বা চুল রাখতে শুরু করেছিলেন। তিনি হিন্দু ব্রাহ্মণদের অনুমতি দিয়েছিলেন তাঁর কোমরে ‘মোতি বসানো বিছা’ লাগিয়ে দিতে। তাঁর দেখাদেখি অন্যান্য সভাসদরাও হাতে ‘রাখী’ পড়তে শুরু করেছিলেন। তাঁর পরে, তাঁর পুত্র ‘জাহাঙ্গীর’ ও নাতি ‘শাহজাহান’ও এই বিষয়গুলো চালু রেখেছিলেন। বিশেষতঃ বিশেষ বিশেষ ধর্মীয় দিনে সাম্রাজ্যে ‘গরু জবাই’ নিষিদ্ধ রাখার বিষয়টি। এছাড়া তাঁরাও সপ্তাহের বিশেষ দিন ছাড়া মাংস ছুঁতেন না এবং ‘গঙ্গার পবিত্র জল’ ছাড়া অন্য কোনও জল পান করতেন না।
সেই মোঘল শাসনকালে, ভারতে মুদ্রা তৈরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অভিনবত্ব এনেছিলেন চতুর্থ মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর। তিনি আবার সব কাজই করতেন ‘জ্যোতিষশাস্ত্র’ অনুযায়ী, একেবারে ঘড়ি ধরে। জ্যোতিষে তাঁর অগাধ বিশ্বাস ছিল বলে, তিনি শিকারে বা অভিযানে – যেখানেই যান না কেন, সবসময় ‘পঞ্জিকা’ দেখে যাত্রার শুভসময় মিলিয়ে তবেই যাত্রা করতেন। এমনকি তাঁর আমলে মোঘল টাঁকশালে মুদ্রা তৈরির সময়েও শুভ মুহূর্তের প্রতীক্ষা করা হত। তাতে একবার বেশ মজার ঘটনা ঘটেছিল।
‘খসরু’ বিদ্রোহ ঘোষণা করলে তাঁকে কড়া হাতে দমন করার জন্য যুদ্ধে যেতে হয়েছিল জাহাঙ্গীরকে। তখন আর পাঁজি-পুঁথি দেখার সময় ছিল না। যুদ্ধ কিংবা বিদ্রোহ দমনের সময় শুভ মুহূর্তের অপেক্ষা করলে চলে না। তাই জাহাঙ্গীর যুদ্ধে চলে গিয়েছিলেন। যুদ্ধে বিপুল জয়ের পরে, খসরুর বিদ্রোহ ও উত্থানের সমস্ত সম্ভাবনাকে নিশ্চিহ্ন করে আবার ফিরেও এসেছিলেন। কিন্তু তাঁর যাত্রার সময়টা কেমন ছিল, তাতো তাঁর জানা হয়নি! অতএব, তাঁর কাছে ডাক পড়েছিল শ্রেষ্ঠ জ্যোতিষী ‘হাকিম আলী’র। জ্যোতিষ ছাড়া তিনি অঙ্কেও সুপণ্ডিত ছিলেন। জাহাঙ্গীর তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘‘আমি যে সময়টায় যাত্রা করেছিলাম সেটা শুভ ছিল নাকি অশুভ ছিল?’’ সেদিন ‘হাকিম আলী’র উত্তর শুনে জাহাঙ্গীর বিস্মিত না হয়ে পারেননি।
নিজের আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছিলেন, ‘‘তিনি উত্তরে বলেন যে, আমার উদ্দেশ্য সফল করার জন্য আমি যদি শুভ সময় বেছে নিতে চাইতাম, তাহলে যে সময়ে যাত্রা করেছি, তার চেয়ে শুভ সময় কয়েক বছরের মধ্যে পাওয়া যেত না।’’ সুপণ্ডিত ‘হাকিম আলী’ বিচক্ষণ ও সুরসিক ব্যক্তি ছিলেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে এরপরেও জাহাঙ্গীরের মন থেকে ‘জ্যোতিষের নেশা’ কাটেনি। এমনকি তাঁর মুদ্রাতেও এর পরিচয় পাওয়া যায়। যেমন, একটি শুভ নক্ষত্রের নাম অনুযায়ী তিনি ‘একশো তোলার রৌপ্যমুদ্রা’র নাম রেখেছিলেন ‘কেকিব-ই-তালি’ বা ‘অদৃষ্ট নক্ষত্র’; ‘পঞ্চাশ তোলার রৌপ্যমুদ্রা’র নাম রেখেছিলেন ‘কেকিব-ই-মুরাদ’ বা ‘কামনা নক্ষত্র’; ‘দশ তোলার রৌপ্যমুদ্রা’র নাম রেখেছিলেন ‘কেকিব-ই-বসত’ বা ‘সৌভাগ্য নক্ষত্র’; এবং ‘পাঁচ তোলার রৌপ্যমুদ্রা’র নাম তিনি দিয়েছিলেন ‘কেকিব-ই-সাদ’ বা ‘শুভ নক্ষত্র’। এছাড়া তাঁর ‘জাহাঙ্গীরি রৌপ্যমুদ্রা’ ও ‘নুরজাহানি স্বর্ণমুদ্রা’ তো ছিলই। বস্তুতঃ, জাহাঙ্গীরের সময়ে এত ধরনের মুদ্রা ছিল যে তা চিন্তায় আনা যায় না। তাঁর আমলে সোনার মোহরের নাম হত ‘নূর’ দিয়ে – ‘নূরশাহী’, ‘নূরসুলতানি’, ‘নূরদৌলত’, ‘নূররকরম’, ‘নূরমিহির’, ‘নূরজাহানি’, ‘নূরানি’ – এগুলো সবই ছিল স্বর্ণমুদ্রার নাম।
এই ব্যাপারে অবশ্য একটা গল্পও শোনা যায়। সেটাও সম্রাটের খেয়াল। একবার জাহাঙ্গীর নেশার ঘোরে তুরীয় হয়ে বসেছিলেন। তাঁর সেই অবস্থার সুযোগ নিয়ে নূরজাহান তাঁর কাছে একদিনের জন্য মুঘল সাম্রাজ্যের সম্রাজ্ঞী হওয়ার বাসনা জানিয়েছিলেন। জাহাঙ্গীর সম্মত হয়েছিলেন। এখানেই শেষ নয়, চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে কুড়িলক্ষ মুদ্রা নিজের নামে বাজারে ছাড়বার অনুমতি চেয়েছিলেন নূরজাহান। বস্তুতঃ, জাহাঙ্গীর তাতেও তাঁর সম্মতি জানিয়েছিলেন। এরপরেই ‘নূরজাহানি মুদ্রা’গুলি বাজারে এসেছিল। যদিও শাহজাহান মোঘল তখতে বসেই নূরজাহানের নামে প্রচলিত মুদ্রাগুলো বাজার থেকে তুলে নিয়েছিলেন এবং ফতোয়া জারি করেছিলেন যে সেই মুদ্রাগুলোর উল্লেখ কোথাও করা চলবে না। কিন্তু মুদ্রা তুলে নিলেও, নূরজাহানি মুদ্রার স্মৃতি মানুষের মন থেকে একেবারে মুছে দেওয়ার তাঁর যে প্রচেষ্টা, সেটা পুরোপুরি সফল হয়নি। কারণ, জাহাঙ্গীরের আমলের অনেক নথিপত্রে নূরজাহানি মুদ্রার উল্লেখ পাওয়া যায়। যদিও অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন যে, এমন কোনও ঘটনা সত্যিই ঘটলে জাহাঙ্গীরের আত্মজীবনীতে তার উল্লেখ থাকত, কিন্তু ‘জাহাঙ্গীরনামা’য় এই রকমের কোন ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায় না। বরং ‘জাহাঙ্গীরি সিক্কা’ নামে যে ‘রৌপ্যমুদ্রা’ তৈরি হয়েছিল, সেটার ওজনও ছিল ‘নূরজাহানি মুদ্রা’র মতন, যা সাধারণ সিক্কার চেয়ে শতকরা কুড়িভাগ ওজনে ভারী ছিল। তফাৎ ছিল একটাই, ‘নূরজাহানি’ ছিল সোনার আর ‘জাহাঙ্গীরি’ ছিল রূপার মুদ্রা।
মোঘল মসনদে বসার কিছুদিন পরে জাহাঙ্গীরের খেয়াল হয়েছিল যে, মুদ্রা তৈরির যে নিয়ম এতকাল ধরে চলে আসছে, অর্থাৎ যে জায়গা থেকে মুদ্রা চালু হচ্ছে, সেই জায়গার নাম, মাস ও রাজত্বের বছরটিকে উল্লেখ করা, যেমন – কোন মুদ্রার একদিকে লেখা থাকত ‘‘জাহাঙ্গীর শাহী ১০২৭’’ আর অপর দিকে লেখা থাকত ‘‘দ্বাদশবর্ষ রাজত্বকালে ক্যামবেতে নির্মিত’’ কিংবা একদিকে লেখা থাকত ‘‘বিজয়ী জ্যোতিষ্মান সম্রাট জাহাঙ্গীর কতৃক প্রচলিত’’, অপরদিকে ‘‘দক্ষিণাত্য বিজয়ের পরে মানডু থেকে গুজরাট আগমনকালে’’। জাহাঙ্গীর স্থির করেছিলেন যে সেই নিয়মের বদল দরকার। বেশ খামখেয়ালি সম্রাট ছিলেন তিনি, তার উপরে মুদ্রা নিয়ে তাঁর বিচিত্র চিন্তাভাবনা ছিল, তাঁর নিজের ভাষায় – ‘‘সোনা ও রূপার তংকার চলন আমারই আবিষ্কার।’’ তাঁর আগে নাকি তামার তংকা ছাড়া অন্য কোন ধাতুর মুদ্রা ছিল না! জ্যোতিষবিলাসী সম্রাট সেবার স্থির করেছিলেন যে তিনি রাশি মুদ্রা প্রচলন করবেন। অর্থাৎ যে জায়গা থেকে মুদ্রা চালু হচ্ছে, সেই জায়গার নাম, মাস ও রাজত্বের বছরটি উল্লেখ করার বদলে সেই মাসের রাশি-নক্ষত্রের নাম ও ছবি খোদাই করা হবে। তিনিই নিজেই এই বিষয়ে লিখেছিলেন, ‘‘হঠাৎ আমার খেয়াল হল মাসের নাম বদলে সেই মাসের রাশি নক্ষত্রের এক ছবি খোদাই করা যাক মুদ্রায়। যেমন, ফরওয়ার্দীন মাসে মেষের ছবি, উর্দিবিহিসত মাসে বৃষ। এইভাবে যে মাসে যে মুদ্রাটি চালু করা হবে সেই মাসের রাশির রূপটি মুদ্রার একপিঠে খোদিত হবে এমনভাবে যেন সূর্য উঠে আসছে সেই মাসের ওই রাশিতে এ ব্যাপারটি বোঝা যায়। এই মুদ্রা পরিকল্পনাটি একান্তভাবে আমারই। এর আগে কেউ এমনভাবে ভাবেননি।’’
শ্রেষ্ঠ স্থাপত্যের অন্যতম স্রষ্টা শাহজাহান।পঞ্চাশ লাখ টাকা খরচ করে তাজমহল তৈরি করিয়েছিলেন।কিন্তু তাজমহলের প্রধান শিল্পী ইদ্রিস খাঁ তার মেয়ে মারা যাবার পর অনেক কাকুতি মিনতি করেও ছুটি পাননি। “কালের কপোলতলে” অশ্রুবিন্দুর মতো টলটলে তাজমহল শুধু প্রেমিকের আর্তি নয়, কন্যাহারা পিতার বেদনাকেও বহন করছে।
মুঘল বাদশাহদের সকলের ই ধনরত্ন সংগ্রহের সখ ছিল। জাহাঙ্গীর ও শাহজাহান তা নিয়ে গিয়েছিলেন অনন্য পর্যায়ে৷ জাহাঙ্গীর শুধু গলায় কয়েকগাছি মুক্তোর মালাই নয় সেই সাথে কোমরেও বাঁধতেন মুক্তোর কাজ করা কোমরবন্ধনী।জাহাঙ্গীরনামায় তিনি লিখেছেন -“আমি আমার দুই কান বিদ্ধ করে প্রত্যেকটিতে উজ্জ্বল মুক্তো পরি।আমার প্রাসাদের ভৃত্যরা ও বন্ধুবান্ধবরা আমাকে অনুকরণ করে দুই কানে মুক্তো পরে এবং আন্তরিকতার উজ্জ্বল সৌন্দররযে নিজেদের ভূষিত করে।”সেবছর জন্মদিনে জাহাঙ্গীর ছত্রিশ হাজার টাকার মুক্তো উপহার দিয়েছিলেন।শাহজাহান ও পিতার মতো কানে মুক্তো পরতেন।এছাড়াও তার হাতের তসবি বা জপমালায় ছিল দুলাখ টাকার হীরে। সেসময় ৮৬ লাখ টাকার রত্ন দিয়ে নীরেট সোনা দিয়ে ময়ূর সিংহাসন বা তখত ই তাউস তৈরি করিয়েছিলেন।এছাড়াও শাহাজাহানের আরো সাতটি সিংহাসন ছিল।নিঃসন্দেহে ময়ূর সিংহাসন পৃথিবীর সবচেয়ে দামী সিংহাসনগুলোর মধ্যে অন্যতম।
তবে আকবরের উত্তরসূরিদের মধ্যে ‘বাদশাহ আলমগীর’ বা ‘আওরঙ্গজেব’ ছিলেন সবার চেয়ে আলাদা।ইতিহাসে তাঁকে যেভাবে পাওয়া যায়, তার বিপরীতভাবে পাওয়া যায় তাঁর নিজের ব্যক্তিগত জীবনে।নিজের ধর্মের প্রতি তিনি ছিলেন অত্যন্ত ‘ধর্মপ্রবন’, এতটাই যে সেটা অন্যদের পক্ষে তো বটেই, মুঘল সাম্রাজ্যের পক্ষেও ভয়ানক ক্ষতির কারণ হয়েছিল।দারা সবসময় ই বলতেন তার নামাজি ভাইটিকে নিয়ে সবচেয়ে বড় ভয়।শাহজাহান তার সবচেয়ে ধার্মিক ছেলেটিকে সবচেয়ে সন্দেহের চোখে দেখতেন। আওরঙ্গজেবের জীবন যাপনের সাথে দেখা যায় তার মনমানসিকতার কোন মিলই পাওয়া যায় না৷তিনি সবসময় বলতেন তার সিংহাসনে বসার কোন ইচ্ছাই নেই সারা জীবন ইবাদত বন্দেগী করেই কাটিয়ে দিতে চান।অথচ দেখা যায় তিনি সর্বদাই চতুরতা,ধূর্ততা নিয়ে মেতে থাকতেন৷ নিজের ভাইয়ের রক্তে হাত রাঙিয়ে, নিজের পিতাকে বন্দি করে করে, তিনি ‘মুঘল তখত-এ-তাউসে’ আসীন হয়েছিলেন। কিন্তু সিংহাসনে বসেই তিনি বর্জন করেছিলেন ‘গমের রুটি’, ‘মাছ-মাংস’ প্রভৃতি সুস্বাদু খাবার ও সব রকমের ‘মাদক পানীয়’। অথচ তাঁর পূর্বপুরুষরা রীতিমতো ‘খাদ্যরসিক’ বলে বিখ্যাত ছিলেন। কিন্তু নিজের বাকি জীবন তিনি কি খেয়ে কাটিয়েছিলেন? শুধু ‘যবের রুটি’, ‘শাকসবজি’ ও ‘মিঠাই’।
একেবারে দরিদ্র প্রজার খাদ্য। যতদূর জানা যায়, নিজের ব্যক্তিগত খরচ তিনি চালাতেন নিজের যৎসামান্য উপার্জন থেকে। কিভাবে উপার্জন করতেন? রাজকার্যের অবসরে আলমগীর ‘টুপি সেলাই’ করতেন এবং ‘কোরান নকল’ করতেন। সেগুলো বিক্রি করে যা আয় হত, তা দিয়েই তিনি নিজের ব্যক্তিগত খরচ চালাতেন। তাঁর ‘শেষ ইচ্ছাপত্রে’ দেখা যায় যে, তাঁর নিজস্ব টাকা বলতে ছিল, ‘টুপি সেলাই করে পাওয়া চার টাকা দুই আনা’, আর ‘কোরান নকল করা বাবদ পাওয়া তিনশো পাঁচ টাকা’। শেষ শক্তিশালী মুঘল সম্রাট ‘ইচ্ছাপত্র’ করে তাঁর ‘কোরান নকল করার টাকা’টা ফকিরদের দান করার নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন, আর ‘টুপি সেলাইয়ের টাকা’ দিয়ে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে বলেছিলেন। অথচ সাম্রাজ্য আঁকড়ে ধরে থাকবার এবং মুঘল সিংহাসনের প্রতি তাঁর তীব্র আকর্ষণ, তাঁর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ছিল, যা ‘একজন ফকিরের চরিত্রে’ নিতান্তই বেমানান।তিনি অনেক আগেই বুঝতে পেরেছিলেন যে তার দক্ষিণাত্য নীতি ভুল এবং ব্যর্থ তথাপি তিনি প্রভূত লোকবল,অর্থ ক্ষয় করে দিনের পর দিন অভিযান চালিয়েছেন এবং ফলাফল মুঘল সম্রাজ্যের ভেতর থেকে ঘুন ধরে এবং এই ঘুনই এক সময় বিশাল মুঘল সম্রাজ্যকে ধসিয়ে দেয়। সেইজন্য একেও ‘বাদশাহর খেয়াল’ ছাড়া আর কী-ই বা বলা যেতে পারে!
আওরঙ্গজেবের পরে অন্যান্য মুঘল সম্রাটদের মধ্যে সবচেয়ে খেয়ালি ছিলেন সম্রাট মুহম্মদ শাহ।তাকে মুহম্মদ শাহ রংগিলা নামে ও ডাকা হতো।বিশাল মুঘল সম্রাজ্যের সম্রাট হয়েও তিনি যা করতেন তা অকল্পনীয়।তিনি দিনের পর দিন হারেমে কাটিয়ে দিতেন এবং হারেমের মহিলাদের মতো পায়ে নুপুর পরে নৃত্যও করতেন।নাদির শাহ যখন দুয়ারে কড়া নাড়ছে তখন তিনি হারেমের মহিলাদের সহ সাথে করে নিয়ে যান।অনেকে তখন হাসাহাসি করে বলে সম্রাট সেনা নেয়ার বদলে হারেমের মহিলাদের নিয়ে যুদ্ধে যাচ্ছেন। এছাড়াও সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম দেওয়ান ই আমের সামনে দাবার কোট বসিয়েছিলেন যেখানে মহিলাদের দাবার ঘুটি হিসেবে ব্যবহার করা হতো। যদিও সেসময় দেওয়ান ই আমের আর কোন গুরুত্বই ছিল না।এছাড়া দ্বিতীয় আলমগীর,বাহাদুর শাহ জাফর সবাই দরবারে বসে হোলি খেলতেন যদিও মুঘল দরবার সেসময় কালের সাক্ষী হয়েই ছিল শুধু।
আজ সবই অতীত।মুঘল সম্রাটরা ও নেই,তাদের সম্রাজ্যও নেই,তাদের ময়ূর সিংহাসন ও নেই। কিন্তু তাদের এই খামখেয়ালিপনা লেখা আছে ইতিহাসের পাতায় অক্ষয় অমলিন হয়ে।
তথ্যসূত্রঃ
১/ আপন খেয়ালে চলেন রাজা,চিত্রা দেব,আনন্দ পাবলিসার্চ,কোলকাতা,১৯৯২,(পৃষ্ঠাঃ১২,১৩,৪২,৪৩)।
২/বাদশাহ নামদার,হুমায়ুন আহমেদ,অন্যপ্রকাশ প্রকাশনী,ঢাকা,২০১১,(পৃষ্ঠাঃ১৯,২০)।
সূত্র: সংগৃহিত।
তারিখ: এপ্রিল ০৫, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,