Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

মুঘলদের ঢাকায় জলপ্রতিরক্ষা ব্যবস্থা

Share on Facebook

মুঘল আমলে ঢাকার জলপ্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।।

নদীমাতৃক এই বাংলায় জল সুরক্ষা ব্যবস্থার গুরুত্ব প্রাচীন কাল থেকেই ছিল অপরিসীম।মুঘলরা যখন বাংলার এই অঞ্চলে প্রথম আসে তখন তাদের বহুমুখী সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।একদিকে ছিল অদম্য বার ভূঁইয়ারা অপরদিকে ছিল প্রতিকূল প্রকৃতি ও বাংলার বিখ্যাত বর্ষা।সেই সাথে রোগবালাই তো রয়েছেই।আরো একটি উদ্বেগজনক ঘটনা হ’ল মগ (আরাকানিজ) এবং পর্তুগিজ জলদস্যুদের অবিচ্ছিন্ন অভিযান, যারা বঙ্গোপসাগর থেকে বড় নদী (মেঘনা এবং ব্রহ্মপুত্র) দিয়ে এসে আক্রমন চালাতো।মধ্য এশিয়ার ঘোড়ায় চড়া মুঘলরা বুঝতে পেরেছিল যে বাংলায় তাদের সাম্রাজ্য স্থাপনের জন্য প্রথমেই তাদের নৌপথ সুরক্ষিত করতে হবে।

১৬১০ সালে সুবেদার ইসলাম খান বাংলায় প্রথমে এসেই রাজমহল থেকে রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তর করেন এবং শক্তিশালী নৌবহর তৈরির দিকে নজর দেন।তিনি সেনাবাহিনীতে মীর বহর (নৌ সেনাপতি) ও নিযুক্ত করেন। কথিত আছে যে এক দশকের মধ্যে মুঘলরা রাজধানী সুরক্ষার লক্ষ্যে কৌশলগত স্থানে নগরীর চারপাশের নদীর তীরে তিনটি দুর্গ তৈরি করেছিল। যদিও ইসলাম খান আসলে কোন দুর্গ তৈরি করেছিলেন কিনা তা নিয়ে অবিরাম বিতর্ক আছে।হয়তোবা তিনি ছোট পরিসরে শুরু করেছিলেন এবং পরে তা আরো উন্নত হয়।বাংলার জলপ্রতিরক্ষার তিনটি প্রধান দুর্গকে Triangle of Waterforts” হিসাবে উল্লেখ করা হয় এবং এগুলো ইদ্রাকপুর, সোনাকান্দা এবং হাজীগঞ্জ দুর্গ নিয়ে গঠিত।

ইদ্রাকপুর দূর্গঃ

ইদ্রাকপুর দুর্গটি ছিল “Triangle of Waterforts”এর মধ্যে নির্মিত প্রথম দুর্গ। এটি ঢাকার প্রায় ২৫ কিমি দক্ষিণ-পূর্বে, ইছামতি নদীর পশ্চিম তীরে মুন্সীগঞ্জ শহরে অবস্থিত। এক সময় নদীটি দুর্গের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হত, তবে পরবর্তীকালে বিংশ শতাব্দীতে এটি শুকিয়ে যায় – বর্তমান মুন্সীগঞ্জ শহরের একটি অংশ আসলে সেই অঞ্চলকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল।

এই জলদুর্গটি সম্ভবত মীর জুমলা ১৬৬০ সালে জলদস্যুদের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা হিসাবে তৈরি করেছিলেন। দুর্গের মূল কাঠামোটি আগুনে পুড়ে গিয়েছে।দুর্গটি তৈরি করতে স্থানীয় উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে। এই স্থানীয় উপাদানের ব্যবহার দুর্গের সর্বত্রই লক্ষ্য করা যায়৷একই ব্যাপার সোনাকান্দা ও হাজীগঞ্জ দুর্গের ক্ষেত্রেও লক্ষনীয়।দুর্গটি আকারে আয়তক্ষেত্র আকৃতির এবং দু ভাগে বিভক্ত।তবে অন্যান্য দুর্গের তুলনায় এই দুর্গের দেওয়াল অনেক নিচু।দুর্গের দেয়ালে ছোট ছোট ছিদ্র আছে যা দিয়ে শত্রুকে লক্ষ্য করে গুলি করার ব্যবস্থা ছিল।ইট দিয়ে তৈরি চার কোনার এই দুর্গটির দৈর্ঘ্য ৮৬.৮৭ মিটার, প্রস্থ ৫৯.৬০ মিটার। দুর্গের প্রধান ফটক উত্তর দিকে।দুর্গের পূর্ব দিকে আছে ৩২.৫ মিটার ব্যাসের একটি গোলাকার বেদি। ৯.১৪ মিটার উঁচু এই বেদিতে ওঠার জন্য সিঁড়িও আছে। লোকমুখে শোনা যায়, এ সিঁড়িটি গোপন সুড়ঙ্গপথের অংশবিশেষ, জরুরি অবস্থায় এর মধ্য দিয়ে ভূগর্ভস্থ কক্ষে প্রবেশ করা যায়।দুর্গে একটি জলাধার রয়েছে যা ভিতরে বাসিন্দাদের জন্য নতুন করে জল সরবরাহ করে।ইছামতি নদী দক্ষিনে সরে আসায় দুর্গটির একাংশ এক সময় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।পরবর্তীতে অবশিষ্টাংশ কারাগার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। দুর্গটি যদিও আসল অবস্থায় সংরক্ষণ করা যায় নি, তবুও এটির অনেকটাই পুনরায় ব্যবহারের কারণে অবহেলা ও ধ্বংস থেকে বেঁচে গেছে।

মোগল স্থাপত্যের একটি অনন্য কীর্তি হিসেবে ইদ্রাকপুর দুর্গকে ১৯০৯ সালে ‘সংরক্ষিত পুরাকীর্তি’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

সোনাকান্দা দূর্গঃ

সোনাকান্দা দুর্গটি নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব দিকে অবস্থিত।এই দুর্গ নির্মাণের তারিখ সম্বলিত কোন শিলালিপি পাওয়া যায় নি তবে ঐতিহাসিকদের মতে এটি ১৬৬০ থেকে ১৬৬৩ খৃষ্টাব্দের মধ্যে নির্মিত হয়েছিল।ইদ্রাকপুর দুর্গের মতো এটিও বহিঃশত্রুর হাত থেকে ঢাকাকে রক্ষা করতে তৈরি হয়েছিল।শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরী ও ব্রহ্মপুত্র বাংলার অতি গুরুত্বপূর্ণ তিনটি নদী এই দুর্গের কাছে মিলিত হওয়াতে এর কৌশলগত গুরুত্ব ছিল অনেক।তবে আজকের দিনে তিনটি নদী যথাক্রমে পশ্চিম, দক্ষিণ এবং পূর্ব দিকে চলে গেছে। এছাড়াও ব্রহ্মপুত্র বেশিরভাগ শুকিয়ে গেছে, এবং ধলেশ্বরীর প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।এই দুর্গটি ঠিক কে তৈরি করেছিলেন তা সঠিকভাবে জানা যায় না।অনেকে বলে থাকেন যে দুর্গটি একসময় পর্তুগিজ দুর্গ ছিল যা পরে মুঘলরা এসে দখল করে।যদিও এখানে সেরকম কোন নিদর্শন পাওয়া যায়নি।এই জলদুর্গটির আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে ভারী গোলাবর্ষণের জন্য দূরপাল্লার কামান রাখা যেত।এ দুর্গে উল্লেখযোগ্য ধরনের বড় কোন স্থাপনার সন্ধান পাওয়া যায়নি।এছাড়াও এখানে মুঘল সেনাবাহিনীর পক্ষে দুর্গের মধ্যে যখন প্রয়োজন হয় তখন মূলত কাঠের কাঠামো সহ তাঁবু এবং অস্থায়ী বসতি স্থাপন করে সেনা শিবির স্থাপন করা প্রচলন ছিল।

হাজীগঞ্জ কেল্লাঃ

এই দুর্গটি ঢাকার খুব কাছাকাছি (মাত্র ২০ কিমি) দূরে অবস্থিত।পুরানো মানচিত্র এবং রেকর্ডগুলি থেকে এটি স্পষ্ট যে দুর্গটি নদীর পাশ দিয়েই নির্মিত হয়েছিল,যদিও সময়ের সাথে চ্যানেলটি ভরাট হয়ে গেছে।পঞ্চভুজাকার আকৃতির এই দুর্গটি তিনটির মধ্যে সর্বাধিক উন্নত। দুর্গটি পূর্ব পশ্চিমে ২৫০ ফুট প্রসারিত। দেয়ালগুলি প্রায় বিশ-চওড়া প্রশস্ত এবং দুর্গের পাঁচটি অংশ সমান নয়। দেয়ালগুলির কোণটি বাঁকানো এবং সেখানে তোপের জন্য জায়গা ছিল। অভ্যন্তরীণ স্থানটি সম্ভবত যুদ্ধের সময় সৈন্যদের থাকার, পশ্চাদপসরণ এবং এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রাঙ্গণ হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। জানা যায় যে বিখ্যাত সুবেদার মীর জুমলা এখানে প্রায়শই থাকতেন এবং এখান থেকে তাঁর কয়েকটি বিজয় অভিযান এখান থেকেই পরিচালনা করেছিলেন। ব্রিটিশ আমলের পরে দুর্গটি পরিত্যক্ত হয়ে যায় এবং এটি ভেঙে পড়তে শুরু করে। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এটিকে তাদের এখতিয়ারে নিয়েছে এবং এটি মেরামত করেছে। তিনটি দুর্গের মধ্যে এই দুর্গটির ই মোটামুটি আসল অবস্থায় দেখা যায়।

উল্লিখিত তিনটি নদী দুর্গের পাশাপাশি মুঘল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় আরও কয়েকটি দুর্গ ছিল। বুড়িগঙ্গা নদীর দুপাশে ফতুল্লায় দুটি দুর্গ ছিল।এগুলো রেনেলের মানচিত্রে দেখা যায় এবং সম্ভবত সোনাকান্দা দুর্গের সাথে কাঠামোগত মিল ছিল। এদের মধ্যে একটিকে ধপা দুর্গও বলা হতো।পুরান ঢাকার বর্তমান মিল ব্যারাক এলাকার নিকটবর্তী ধোলাই খাল এবং বুড়িগঙ্গা নদীর সংযোগস্থলে মুরাদ বেগের তৈরি আরো একটি দূর্গ ছিল।

এছাড়া এখানে নাকি একটি পাঠান দুর্গ ছিল, তবে সেটিকে একবারের জন্যই ব্যবহাট করা হয়েছিল। বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারে কেরানীগঞ্জে জিনজিরা প্রাসাদও দুর্গ হিসাবে ব্যবহৃত হত।

মুঘলদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হ’ল বর্তমান সোওয়ারিঘাটের বিপরীতে বুড়িগঙ্গার মাঝখানে মোগলানীর চরে কামানগুলির (রেনেলের মানচিত্রে অক্টগান হিসাবে চিহ্নিত) মঞ্চের প্ল্যাটফর্ম ছিল।কালে খান বা কালে জামজাম নামে কিংবদন্তি কামানটি সেখানে রাখা হয়েছিল। বিবি মরিয়ম নামে আরেকটি ছোট আকারের কামান ছিল যা এখন গুলিস্তান এলাকার রাখা আছে। তবে অনেকে বলে থাকেন কালে যমযম নামের কামানটি বুড়িগঙ্গার অতি প্রবাহের কারণে যখন মোগলানীর চর যখন ডুবে যায় তখন এই কামানটিও নদীতে ডুবে যায়।

মুঘলদের তৈরি করা এসব দূর্গসমূহের কৌশলগত গুরুত্ব ছিল অনেক।যদিও এর বেশিরভাগ ধ্বংস হয়ে গেছে বা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।তথাপি আজকের দিনে দাঁড়িয়েও দুর্গসমূহের তৎকালীন অবস্থানগত এবং কৌশলগত উভয় গুরত্বই উপলব্ধি করা যায়৷

তথ্যসূত্রঃ

১/ জাহাঙ্গীরনগর থেকে ঢাকা,আলী ইমাম,সৃজনী প্রকাশনী,ঢাকা,২০০৯,(পৃষ্ঠাঃ২০-২২,৩৪,৩৫)।

২/ ঢাকা স্মৃতি বিস্তৃতির নগরী,মুনতাসির মামুন,অনন্যা প্রকাশনী,ঢাকা,১৯৯৩, (পৃষ্ঠাঃ১৪,৮৮-৯০)।

৩/ কিংবদন্তীর ঢাকা,নাজির হোসাইন,থ্রি স্টার মাল্টিপারপাস সোসাইটি লিমিটেড,ঢাকা,১৯৯৫,(পৃষ্ঠাঃ৫৩)।

সূত্র: সংগৃহিত।
তারিখঃ ফেব্রুয়ারী ২১, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ