লেখা: এএফপি কাঞ্চনাবুড়ি, থাইল্যান্ড।
মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের পর থেকে জান্তা সরকারের সঙ্গে বিরোধীদের লাগাতার সংঘর্ষ চলছে। সেই সঙ্গে চলছে জান্তার চরম দমন–পীড়ন, গণগ্রেপ্তার। এর প্রভাব পড়েছে দেশটির মানুষের জীবন-জীবিকায়। গ্রেপ্তারের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে অনেককে জঙ্গলে রাত কাটাতে হচ্ছে। কমতে শুরু করেছে আয়। বাড়ছে অভাব। এই পরিস্থিতিতে দেশটির হাজার হাজার মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিবেশী থাইল্যান্ডে আশ্রয় খুঁজছে।
স্ত্রী ও ছয় বছরের সন্তান নিয়ে দেশ ছেড়ে থাইল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছেন মায়ো চিট। তাঁর বাড়ি মিয়ানমারের উপকূলীয় তানিনথারি অঞ্চলে। সেখান থেকে জঙ্গল পেরিয়ে দুই দিনের যাত্রা শেষে পাচারকারীদের সহায়তায় তাঁরা থাইল্যান্ডের কাঞ্চনাবুড়ি প্রদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। নিজ দেশে সবই ছিল। কিন্তু সেনা অভ্যুত্থান ও করোনা মহামারি এখন তাঁদের উদ্বাস্তু বানিয়েছে।
তবে দেশ ছাড়লেও স্বস্তিতে নেই মায়ো চিট দম্পতি। থাই পুলিশের হাতে আটক ও জোরপূর্বক দেশে ফিরতে বাধ্য হওয়ার আতঙ্ক প্রতি মুহূর্তে তাঁদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। কাজ খুঁজতে সম্প্রতি তাঁরা থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের পাশে সাখোন প্রদেশে এসেছেন। মিয়ানমারের উদ্বাস্তুরা মূলত এখানে কাজ করে। সেখানে কাপড়ে রং করার একটি কারখানায় চাকরি পেয়েছেন। দৈনিক আয় ১০ ডলার। তবে অনিবন্ধিত হওয়ায় প্রতিনিয়ত থাই সরকারের নজরদারিতে থাকতে হচ্ছে তাঁদের।
৪৫ বছর বয়সী মায়ো চিট বলেন, ‘মিয়ানমারে আয়ের সুযোগ ক্রমে সংকুচিত হয়ে এসেছে। দেশ ছেড়ে আসাটা কঠিন ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত আমাদের তাই করতে হয়েছে। এখন সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। তাই মিয়ানমারে ফেরার সুযোগ নেই। এখানেও জীবন স্বস্তির নয়। আয়ও কম। সারাক্ষণ নজরদারিতে থাকতে হচ্ছে।’
মিয়ানমারের শ্রমিকেরা আগে থেকেই থাইল্যান্ডে এসে কাজ করেন। থাইল্যান্ডে প্রায় ২০ লাখ মিয়ানমার নাগরিক বসবাস করে এবং কাজ করেন। তবে করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালের মার্চ থেকে সীমান্ত বন্ধ। এর মধ্যেই মিয়ানমারে গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থান হয়। এর পর থেকে দেশটি অশান্ত অবস্থায় রয়েছে। তাই এখন অবৈধ উপায়ে সীমান্ত পেরিয়ে থাইল্যান্ডে আসা ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় নেই।
জান্তার আমলে মিয়ানমার থেকে থাইল্যান্ডে কত মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে এসেছে, তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে বিগত মাসগুলোয় কয়েক হাজার উদ্বাস্তুকে গ্রেপ্তার করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে থাই সরকার। গত বছরের নভেম্বরে গ্রেপ্তারের এই সংখ্যা ছয় হাজার ছাড়িয়ে যায়, যা গত জানুয়ারির চেয়ে ১০ গুণের বেশি। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে এমন ৫৬০ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল থাইল্যান্ড।
অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা থাই অধিকারকর্মী রোইসাই ওংসুবান বলেন, জান্তার আমলে মিয়ানমারবাসীর কাজের সুযোগ ও আয় কমেছে। অর্থনৈতিক সংকটে বেড়েছে জ্বালানির দাম। খাবারের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। মহামারিতে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে গেছে। এ কারণে দেশটির মানুষ কাজ খুঁজতে দলে দলে থাইল্যান্ডে আসছে।
দীর্ঘদিন সীমান্ত বন্ধ থাকায় এখন মিয়ানমার থেকে থাইল্যান্ডে প্রবেশে কিংবা থাইল্যান্ড থেকে মিয়ানমারে ফেরার জন্য বৈধ পথ খোলা নেই। ফলে মিয়ানমারের অনেক মৌসুমি শ্রমিক থাইল্যান্ডে আটকা পড়েছেন। তাঁদের অনেকেই জান্তার আমলে আর দেশে ফিরতে চান না। সস্তায় মিলে বলে থাইল্যান্ডে মিয়ানমারের শ্রমিকদের চাহিদাও রয়েছে বেশ। তবে অবৈধ উদ্বাস্তুদের বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি মেনে চলা হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে থাই সরকার। দেশটির সরকার জানিয়েছে, আটক হলে মিয়ানমারের উদ্বাস্তুদের অবশ্যই নিজ দেশে ফিরতে হবে।
সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ জানুয়ারী ০৬, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,