Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

মাষ্টারদা সূর্যসেনের এবং ফাঁসীর কয়েক ঘন্টা আগে

Share on Facebook

ফাঁসীর কয়েক ঘন্টা আগে, মাষ্টারদার গান শোনার ভীষণ ইচ্ছে হয়েছিল।
ইন্ডিয়ান পেনাল কোড ১২১/১২১এ ধারা অনুযায়ী সূর্যসেনের বিরুদ্ধে স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের মামলায়
মাষ্টারদা সূর্যসেনকে ফাঁসিতে ঝোলানোর আগে ব্রিটিশ পুলিশ তাঁকে নির্মমভাবে পিটিয়েছিল
মাষ্টারদা সূর্য সেনকে কনডেম্ড সেলে কড়া পাহারায় রাখতে রাখা হয়েছিল নির্জন কুঠুরীতে
মাষ্টারদা একটা গান শুনতে চেয়েছেন, সেটাও কি পূরণ করা যায়নি।

ছেলেটির জন্ম নয়াপাড়া গ্রামে। কর্ণফুলী নদীর ধারে সেই গ্রাম। ইস্কুলে পড়ার সময় ছেলেটি দেখেছিল মাস্টারমশাইয়ের ঘরের দেওয়ালে টাঙানো বিদ্যাসাগরের ছবি। মাষ্টারমশায় গলা ছেড়ে আবৃত্তি করছেন নবীনচন্দ্র সেনের কবিতা। সেইসব কবিতা ছেলেটির ভাল লাগত। এরপর ছেলেটি পড়তে আসে চট্টগ্রাম শহরে। তখন তাঁর হাতে আসে সখারাম গণেশ দেউস্করের ‘দেশের কথা’, বঙ্কিমের ‘আনন্দমঠ’। ছেলেটি মন দিয়ে পড়ে। স্কুল শেষ হলে ভাগীরথীর তীরে কৃষ্ণনাথ কলেজে। সেখানে পড়ানো হত উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ, গিবন-এর ‘দি ডিক্লাইন অ্যান্ড ফল অব দ্য রোমান এম্পায়ার’। ছেলেটি পড়ত ড্যানিয়েল ব্রিন-এর ‘মাই ফাইট ফর আইরিশ ফ্রিডম’। আয়ারল্যান্ডে বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাস, বিপ্লবী জন মিচেলের আত্মত্যাগের কাহিনি ছেলেটির ভাল লাগত। ছেলেটি বন্ধুদের সঙ্গে ছুটে যেত বন্যাবিধ্বস্ত এলাকায়। ঝাঁপিয়ে পড়েত বন্যাত্রাণে।

এরপর শিক্ষক হিসাবে যোগ দিলেন উমাতারা উচ্চ বিদ্যালয়ে, ছাত্রদের মুখে মুখে হয়ে উঠলেন, ‘মাস্টারদা’। দেশব্যাপী তখন ইংরেজ বিরোধী উত্তাপ। কেমন চলছে গোটা ভারতে বিপ্লবী আন্দোলন নিজের চখে দেখবেন বলে বেরিয়ে পড়লেন। বেশ কয়েক মাস অসম তারপর উত্তরপ্রদেশ। কিন্তু সেখানে পরিস্থিতি অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছে। এলেন কলকাতার ওয়েলিংটন স্কোয়ারের গোপন আস্তানায়। সেই সময় ‘ভারতী’তে ধারাবাহিকভাবে বেরচ্ছে শরৎচন্দ্রের ‘পথের দাবী’। গুপ্ত আস্তানায় হ্যারিকেনের আলোয় রাত জেগে পড়তেন সেই লেখা। একদিন গ্রেফতার হয়ে চালান হয়ে গেলেন রত্নগিরি জেল। রত্নগিরি জেলে বসে কলকাতায় পড়া শরৎচন্দ্র ‘পথের দাবী’ উপন্যাসের কথা খুব বলতেন মাস্টারদা। আর বলতেন, মহৎ সাহিত্য মনকে সজীব রাখে।এ সব বই ভালর প্রতি লোভ জন্ম দেয়।

ইন্ডিয়ান পেনাল কোড ১২১/১২১এ ধারা অনুযায়ী সূর্যসেনের বিরুদ্ধে স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের মামলায় ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারিতে তাঁকে ফাঁসিতে ঝোলায়। মাষ্টারদা সূর্যসেনকে ফাঁসিতে ঝোলানোর আগে ব্রিটিশ পুলিশ তাঁকে নির্মমভাবে পিটিয়েছিল। আঘাতে আঘাতে মাষ্টারদা’র সব দাঁত উপড়ে নেওয়া হয়েছিল। আসলে ব্রিটিশ্রা যে ফাঁসি দিয়েছিল সেটা মাষ্টারদা’কে নয়, তাঁর রক্তাক্ত ক্ষত-বিক্ষত অচৈতন্য দেহটাকে।

মাষ্টারদা সূর্য সেনকে কনডেম্ড সেলে কড়া পাহারায় রাখতে রাখা হয়েছিল নির্জন কুঠুরীতে। তার মধ্যে থেকেই মাষ্টারদা একজন কয়েদি মেথর মারফত চিঠি লিখে জেলের বিভিন্ন ওয়ার্ডে বন্দী বিপ্লবীদের কাছে পৌঁছে দিতেন। জেলে থাকার শেষ দিনগুলোতে মাষ্টারদার একদিন গান শোনার খুব ইচ্ছা হয়। তাঁর সঙ্গে ওই জেলের অন্য এক সেলে ছিলেন বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী, আর মেয়েদের সেলে ছিলেন কল্পনা দত্ত। একদিন রাত ১১টা/১২টা নাগাদ কল্পনা দত্ত বিনোদবিহারীর উদ্দেশে চিৎকার করে বলে ওঠেন, ‘এই বিনোদ শুনতে পাচ্ছিস, দরজার কাছে আয়। ওরে মাষ্টারদা যে গান শুনতে চেয়েছেন রে’। বিনোদবিহারী গান জানতেন না। তাহলে কি করা যায়। মাষ্টারদা একটা গান শুনতে চেয়েছেন, সেটাও কি পূরণ করা যাবে না। শেষ পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথের ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে” গানটা গেয়ে শোনালেন বিনোদবিহারী।

মৃত্যুর আগে তাঁরই সঙ্গে জেলে থাকা বিপ্লবী কালীকিঙ্কর দে’র কাছে মাষ্টারদা পেন্সিল দিয়ে একটি চিঠি লিখে পাঠান। সেখানে তিনি লেখেন, ‘আমার শেষ বাণী-আদর্শ ও একতা’। তিনি স্মরণ করেন তাঁর স্বপ্নের কথা–স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন, যার জন্য জীবনভর তিনি অদম্য উৎসাহে; অক্লান্তভাবে পাগলের মতো ছুটেছেন। তাঁর নিজের ভাষায অনুযায়ী ‘ভারতের স্বাধীনতার বেদীমূলে যে সব দেশপ্রেমিক জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের নাম রক্তাক্ষরে অন্তরের অন্তরতম প্রদেশে লিখে রেখো’। তিনি সংগঠনে বিভেদ না আসার জন্য একান্তভাবে আবেদন করেন। মাষ্টারদার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে তাঁর সহযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যেই এই চিঠিটি পাঠিয়েছিলেন।

ওই চিঠিতে মাষ্টারদা আরও লিখেছিলেন- আমার মাথার ওপর ফাঁসির দড়ি ঝুলছে। মৃত্যু আমার দরজায় করাঘাত করছে। মন আমার অসীম শূন্যার দিকে ছুটে চলেছে। এই তো আমার সাধনার সময়। এই তো আমার মৃত্যুকে পরম বন্ধু হিসেবে আলিঙ্গন করার সময়, হারানো দিনগুলিকে নতুন করে স্মরণ করার এই তো আসল সময়।

কত মধুর তোমাদের সকলের সঙ্গে দিনরাত কাটানোর স্মৃতি। তোমরা আমার এই জীবনের একঘেয়েমিকে তোমাদের মধুর সঙ্গ দিয়ে ভুলিয়ে দিয়েছ। আমাকে উৎসাহ দিয়েছ। আমাকে অক্লান্ত রেখেছ। এই সুন্দর পরম মুহূর্তে আমি তোমাদের জন্য দিয়ে গেলাম স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন। আমার জীবনের এক শুভ মুহূর্তে এই স্বপ্ন আমাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। জীবনভর উৎসাহভরে ও অক্লান্তভাবে পাগলের মতো সেই স্বপ্নের পেছনে আমি ছুটেছি। জানি না কোথায় আজ আমাকে থেমে যেতে হচ্ছে। লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগে মৃত্যুর হিমশীতল হাত আমার মতো তোমাদের স্পর্শ করলে তোমরাও তোমাদের অনুগামীদের হাতে এই ভার তুলে দেবে, আজ যেমন আমি তোমাদের হাতে তুলে দিয়ে যাচ্ছি।

আমরা বন্ধুরা এগিয়ে চল, কখনো পিছিয়ে যেও না। পরাধীনতার অন্ধকার কিন্তু ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে। স্বাধীনতার নবারুণ দেখা যাচ্ছে। তাই হতাশ হয়ো না। সাফল্য আমাদের হবেই। মৃত্যু নিশ্চিত জেনে হয়ত তিনি কষ্ট পাচ্ছিলেন, জীবনের মায়া তাকে হয়ত আরও জড়িয়ে ধরছিল, কিন্তু সেই মুহুর্তেও তিনি তাঁর দেশের স্বাধীনতার স্বপ্ন থেকে এক বিন্দু সরে যান নি, সঙ্গীদের সেই স্বপ্নে বিভোর থাকতে অনুরোধ করেন। (তপন মল্লিক। )

সূত্র:সংগৃহিত।
তারিখ: মার্চ ২৫, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ