নিয়োগকর্তা তথা কোম্পানির মালিকেরা যে ধরনের কর্মী খোঁজেন, সে রকম তাঁরা পান না। অন্যদিকে উচ্চশিক্ষিত হয়েও অনেককে চাকরির বাজারে গিয়ে হতাশ হতে হয়। কারণ, তাঁরা চাকরি পান না। এভাবে কর্মসংস্থানের বাজারের সঙ্গে তরুণ সমাজের একটি ব্যবধান তৈরি হয়ে গেছে। বিশেষ করে উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার বেশি, যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গতকাল শনিবার ঢাকায় ব্র্যাক সেন্টারে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও ফ্রেডরিক এভার্ট স্টিফটাং (এফইএস) আয়োজিত ‘বাংলাদেশে দক্ষতার ঘাটতি এবং যুব কর্মসংস্থান’ শীর্ষক সংলাপে ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ ও তরুণ সমাজের প্রতিনিধিরা এ কথা বলেন।
সংলাপে বক্তারা বলেন, এ দেশের তরুণেরা ইদানীং বেসরকারি চাকরির চেয়ে সরকারি চাকরিতেই বেশি আগ্রহী। বেতনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধায় এগিয়ে আছে সরকারি চাকরি। এ ছাড়া পারিবারিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটেও সরকারি চাকরিকে বেশি মর্যাদা দেওয়া হয়।
সিপিডির গবেষক সৈয়দ ইউসুফ সাদাত শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের বাজার নিয়ে একটি গবেষণার ফল উপস্থাপন করেন। গবেষণাটিতে বলা হয়, নিয়োগকর্তারা চাকরিপ্রার্থীদের দুর্বলতা হিসেবে যোগাযোগে পারদর্শিতার অভাব এবং ইংরেজিতে অপর্যাপ্ত জ্ঞানকে প্রধানতম দুর্বলতা বলে চিহ্নিত করেছেন। তাঁদের দৃষ্টিতে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দুর্বলতা হলো সময় ব্যবস্থাপনা এবং সমস্যা সমাধানে দক্ষতার অভাব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রিধারী মাহবুবুর রহমান জানান, তিনি সরকারি চাকরি পেতেই বেশি আগ্রহী জানিয়ে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে পড়াশোনা করে এই বিষয়–সংশ্লিষ্ট চাকরি পাই না। আবার সরকারি চাকরি করলে সামাজিকভাবে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়। পরিবারও চায় সরকারি চাকরি করি। বেসরকারি খাতের চাকরিতে তিন-চার বছরের অভিজ্ঞতা চায়। আমরা অভিজ্ঞতা পাব কোথায়?’
অনুষ্ঠানে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার বেশি, এটি বেশ উদ্বেগজনক। এখনকার তরুণেরা কারখানায় কাজ করতে চান না, সবাই অফিসে বসে কাজ করতে চান। তাই কারখানায় কাজ করার মতো দক্ষ লোক পাওয়া যায় না। শুধু কি ‘লোক দেখানো’র জন্য বিদেশি কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়? অবশ্যই না। একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা অর্থ খরচ করে প্রশিক্ষণ দিয়ে ২৫ জনকে অ্যাপেক্সের বিপণিবিতানের ব্যবস্থাপক তৈরি করেছিলাম। তাঁদের ১৫ জনই পরে চাকরি ছেড়ে দেন। কারণ হিসেবে তাঁরা বলেন, জুতার দোকানে চাকরি করলে বিয়ে হবে না।’
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি নিহাদ কবির মনে করেন, সরকারি চাকরি সব সময় আকর্ষণীয় ছিল। ২০১৫ সালে যখন বেতনভাতা বৃদ্ধি করা হয়, তখন সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বেতন ছিল মাত্র ৪০ হাজার টাকা। অন্যদিকে ২০-২৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন বেসরকারি চাকরিজীবী তখন আরও অনেক বেশি বেতন পেতেন।
চাকরি খোঁজার ওয়েবসাইট বিডিজবসডটকম লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম ফাহিম মাশরুর বলেন, ‘আইআইটি থেকে পাস করে ভারতের তরুণেরা গুগলের প্রধান নির্বাহী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। আর আমাদের তরুণেরা বুয়েট থেকে পাস করার পর তাঁদের লক্ষ্য হয় বিসিএস। কারণ, কয়েক বছর আগে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতনভাতা দ্বিগুণ করা হয়েছে। সরকারি চাকরি মানেই পাঁচ কাঠার প্লট। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা চাইলেই রাতারাতি বেতনভাতা দ্বিগুণ করতে পারবেন না।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, দেশে দেড় শর বেশি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। আরও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় দরকার। তবে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নিয়ে আরও কাজ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। বক্তব্য দেন সাংসদ শিরিন আখতার, এফইএসের কর্মকর্তা সাধন কুমার দাস, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাজ্জাদ হোসেন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সালমা বেগম, ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের (আইইউবি) শিক্ষক কাজী মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।
সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ ডিসেম্বর ০৫, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,