Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে ইউক্রেন ইস্যুর ‘ব্যবহার’ ফল দেবে কি? (২০২২)

Share on Facebook

লেখক:মারুফ মল্লিক।

বাংলাদেশ কি দীর্ঘদিনের অনুসৃত পররাষ্ট্রনীতি থেকে সরে আসছে? বরাবরই জাতিসংঘের ভোটাভুটিতে দুর্বল দেশগুলোর পক্ষাবলম্বন করেছে। বিভিন্ন আগ্রাসন ও দখলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। যুদ্ধবিরোধী নীতি আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতে প্রতিফলিত হয়েছে। কিন্তু রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসন নিয়ে সাধারণ পরিষদের ভোটে বাংলাদেশ ভোটদানে বিরত ছিল। কার্যত, বাংলাদেশ রাশিয়ার হামলার বিরুদ্ধে নিন্দা জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

গত বছরও রোহিঙ্গা প্রশ্নে মিয়ানমারের বিপক্ষে ভোট দেয়নি বাংলাদেশ। ওই সময় চীন, রাশিয়া, ভারতসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশই মিয়ানমারের বিপক্ষে ভোট দেয়নি। বাংলাদেশ কেন যুদ্ধ বা সামরিক জান্তাদের বিরুদ্ধে ভোট দিচ্ছে না? কী কারণে দেশের পররাষ্ট্রনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এল।

ইয়েমেন যুদ্ধে বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ

এসব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে নানা ধরনের বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। আপাতত ইউক্রেন সংকট নিয়েই আলোচনা করা যাক। সরকারের তরফ থেকে বোঝানো হচ্ছে, রাশিয়া-ইউক্রেন বা রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের সংঘাতে বাংলাদেশ জড়াতে চাইছে না। নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে নিজের পররাষ্ট্রনীতিকে পরিচালিত করতে চাইছে। ইউক্রেন সংকটে অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দর-কষাকষি করছে। সম্ভবত বাংলাদেশও এই সুযোগ ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দর-কষাকষির একটি বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছে।

বার্তাটি হচ্ছে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যা নিয়ে র‍্যাব ও সাত সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা। গত বছর ডিসেম্বরে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর সরকার নানাভাবেই চেষ্টা করেছে। লবিস্ট প্রতিষ্ঠানও নিয়োগ করেছিল। সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন মিউনিখের নিরাপত্তা সম্মেলনে গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই তিনি প্যারিসের ইন্দো-প্যাসিফিক জোটের বৈঠকে উপস্থিতি থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। মাঝের এই সময়ে তিনি ইউরোপ থেকে নিউইয়র্ক চষে বেড়িয়েছেন। তবে এতে যে কোনো সুবিধা হয়নি, তা বোঝায় যাচ্ছে।

আলোচনার কূটনীতিতে সুবিধা করতে না পেরে সরকার এবার চাপ প্রয়োগের নীতি অবলম্বন করেছে। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ দিচ্ছে— বিষয়টি অনেকের কাছে অদ্ভুত মনে হতে পারে। বাংলাদেশের আদৌ যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ দেওয়ার কোনো ক্ষমতা আছে কি না, এ নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলতে পারেন। বাংলাদেশসহ অনেক রাষ্ট্রই রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোট দেয়নি। এটাই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য চাপ। কারণ, সাধারণ পরিষদে ভোটাভুটির আগে যুক্তরাষ্ট্র যথাসম্ভব অধিকাংশ সদস্যরাষ্ট্রকে ভয়ভীতি, ঋণের লোভ, সামরিক সহায়তার কথা বলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোটদানে উৎসাহিত করেছিল বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে বাংলাদেশকেও নিশ্চয়ই এ ধরনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। রাশিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের ভোট না দেওয়ার পেছনে এই দর-কষাকষি ভূমিকা রাখতে পারে।

এ ছাড়া এই মুহূর্তে দেশে রাশিয়ার বড় ধরনের বিনিয়োগ আছে। রাশিয়ার অর্থায়নে রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হচ্ছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের পক্ষে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যাওয়া সহজ না। তবে বাংলাদেশ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের নিশ্চয়তা পেলে রাশিয়ার বিপক্ষে ভোট প্রয়োগ করত। কারণ, রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রাশিয়ার সঙ্গে ভিন্নভাবে সমঝোতা করত। কিন্তু আগামী নির্বাচনের আগে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা সরকারের জন্য খুবই জরুরি। অন্যথায় নতুন নতুন নিষেধাজ্ঞার ভয়ে সরকার সেনাবাহিনী, র‍্যাব, পুলিশ ও আমলাদের আগের মতো যথেচ্ছ ব্যবহার করতে পারবে না। এদের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণও কমে আসবে। সরকার এ ব্যাপারে মরিয়া হয়ে কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক। রাশিয়ার ইউক্রেন দখলের বিরুদ্ধে ভোট না দেওয়া সম্ভবত তেমন আচরণেরই বহিঃপ্রকাশ।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ডের বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সংলাপে অংশ নিতে শনিবার ঢাকায় আসেন। সংলাপে বাংলাদেশ নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কথা বলবে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন আগেই জানিয়েছিলেন। সংবাদমাধ্যম থেকে জানা গেছে, মানবাধিকার পরিস্থিতি, গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যা, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটে বাংলাদেশের যোগ দেওয়া নিয়েই সংলাপে আলোচনা হয়েছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র কেনার বিষয়েও কথা বার্তা হয়েছে। সংলাপ শেষে নুল্যান্ড সরাসরি বলেছেন, ইউক্রেন সংকটে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে পাশে চায়। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র চায় বাংলাদেশ ইন্দোপ্যাসিফিক জোটে যোগ দিক। নুল্যান্ড এও জানিয়েছেন, র‍্যাবসহ সাত কর্মকর্তার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা কঠিন বিষয়। এর বাইরে আর যেসব বিষয়ে সংলাপে আলাপ হয়েছে বিভিন্ন সূত্র জানাচ্ছে তা কেবল আলোচ্যসূচির তালিকা দীর্ঘ করছে। বাংলাদেশ ছাড়াও নুল্যান্ড শ্রীলঙ্কা ও ভারত সফর করবেন। বোঝাই যাচ্ছে নতুন জোট গঠন, রাশিয়া ও চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ঠেকানো তাঁর দক্ষিণ এশিয়া সফরের অংশ।

ফলে দেখা যাচ্ছে, নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে আপাতত ছাড়ের কোনো লক্ষণ নেই। বাংলাদেশ যদি ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে বা কোনো জোটে যোগ দিতে সম্মত হয়, তবে নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল হতে পারে। কারণ, ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলা ও ইরানকে তেল বিক্রির শর্তে নিষেধাজ্ঞা শিথিলের প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে। বাংলাদেশকেও হয়তো ইতিমধ্যেই এ ধরনের প্রস্তাব দিয়ে থাকতে পারে। তবে বাংলাদেশকেও এর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ও ভূরাজনীতির বিভিন্ন বিষয়ে একমত পোষণ করতে হবে।

বাংলাদেশ এ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কতটা একমত হতে পারবে, তা প্রশ্নসাপেক্ষ। কারণ, আমাদের এখানে দিন দিন রাশিয়া ও চীনের বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ছে। সামরিক বাণিজ্যও বেড়েছে। তাই রাশিয়া বিশেষ করে চীনকে এড়িয়ে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধা সহজ হবে না।

সাম্প্রতিক এক হিসাবে দেখা গেছে, শীর্ষ পাঁচ সহায়তাকারী দেশের মধ্যে রাশিয়া ও চীন চার ও পাঁচ নম্বরে আছে। অবকাঠামো, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে এই দুটি দেশের বিনিয়োগ দিন দিন বাড়ছে। এ ছাড়া রাশিয়া ও চীন থেকে সামরিক সরঞ্জাম কিনছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন করে স্থানীয় ভূরাজনীতির সম্পর্কে গড়ার ক্ষেত্রে বাধা হচ্ছে রাশিয়া ও চীনের ঋণ বিনিয়োগ। চীন ও রাশিয়ার সম্মিলিত ঋণ বিনিয়োগ এডিবির থেকে বেশি এবং বিশ্বব্যাংকের প্রায় কাছাকাছি।

এ অবস্থায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কূটনীতিতে ইউক্রেন সংকট ব্যবহার করে বাংলাদেশ আদৌ কোনো ফল পাবে কিনা সেটা এক বড় প্রশ্ন। বরং এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। কারণ, রাশিয়ার বিপক্ষে ভোটদানে বিরত থাকার পরপরই জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে। ওই বিবৃতি বলা হয়েছে, গুম হওয়ার ব্যক্তিদের পরিবার-পরিজনকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। জাতিসংঘ অবিলম্বে হয়রানি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। বিষয়টি এমন না যে রাশিয়ার পক্ষে চলে যাব বলে ভয় দেখালেই যুক্তরাষ্ট্র সুড়সুড় করে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে।

বাংলাদেশ সম্ভবত এ ক্ষেত্রে সৌদি আরবকে অনুসরণ করতে চাইছে। সৌদি আরব খাসোগি হত্যার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে দর-কষাকষি করতে চাইছে। কিন্তু সৌদি আরব ও বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও গুরুত্ব এক নয়। সৌদি আরবকে ছাড় দিলেও বাংলাদেশকে নাও দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ, সৌদি আরব ইসরায়েল, ইরানসহ বিভিন্ন ইস্যুতে দিন শেষে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিরই অনুগামী।

মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র সৌদি আরব। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। রাশিয়া ও ইউক্রেন ইস্যুতে বাংলাদেশ বেশি কৌশলী আচরণ করলে বরং নতুন চাপ আসতে পারে। এ ক্ষেত্রে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার কারণে দেওয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি শর্ত হিসেবে হাজির করলে ফল নাও মিলতে পারে। দক্ষিণ এশিয়া ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভূরাজনীতিতে বাংলাদেশ ক্রমেই কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে পারে।

****ড. মারুফ মল্লিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: মার্চ ২২, ২০২২

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ