আইএমএফ ব্লগ
মার্কিন ডলারের রাজত্ব কমছে
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, লেনদেন ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণে মার্কিন ডলারের নিরঙ্কুশ ব্যবহার কমে এখন বিভিন্ন অপ্রচলিত মুদ্রার উত্থান ঘটছে।
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই আন্তর্জাতিক লেনদেন ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তথা মজুত সংরক্ষণে মার্কিন ডলারের আধিপত্য চলছে। এমনকি দুই দশক ধরে মোট বৈশ্বিক উৎপাদনে যুক্তরাষ্ট্রের হিস্যা কমলেও তাদের মুদ্রা ডলারের প্রভাব-কর্তৃত্ব এখনো অব্যাহত রয়েছে।
তবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত সংরক্ষণ ও লেনদেনের ক্ষেত্রে ডলারের নিরঙ্কুশ ব্যবহার ও আধিপত্য দিন দিন কমছে। কারণ, বৈশ্বিক বাণিজ্যে বর্তমানে বিভিন্ন মুদ্রার উপস্থিতি জোরদার হচ্ছে। এখন আন্তর্জাতিক ঋণ, নন-ব্যাংক তথা ব্যাংকবহির্ভূত ঋণ, বন্ড ইস্যু, আন্তর্জাতিক ধার ও ঋণদানের ক্ষেত্রে মার্কিন ডলারের ব্যবহার দিন দিন কমছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণেও গ্রিনব্যাক তথা মার্কিন ডলারের চেয়ে অন্যান্য মুদ্রায় বেশি জোর দিচ্ছে। অথচ একসময় দেশগুলো গয়রহ মার্কিন ডলারেই বৈদেশিক মুদ্রার মজুত সংরক্ষণ করত।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কারেন্সি কম্পোজিশন অব অফিশিয়াল ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভের সর্বশেষ তথ্য-উপাত্তে দেখা যায়, গত বছরের মানে ২০২১ সালের শেষ ত্রৈমাসিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) বৈশ্বিক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে মার্কিন ডলারের শেয়ার বা হিস্যা কমে ৫৯ শতাংশের নিচে নেমে গেছে। অবশ্য দুই দশক ধরেই বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোতে মার্কিন ডলারে বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে কমছে।
বিভিন্ন বৈদেশিক মুদ্রায় রিজার্ভ সংরক্ষণের একটি মিশ্র প্রবণতা শুরুর উদাহরণ এখানে তুলে ধরা যেতে পারে। এটি ইসরায়েলের উদাহরণ। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক অব ইসরায়েল সম্প্রতি বিভিন্ন মুদ্রায় ২০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বেশি পরিমাণ রিজার্ভ সংরক্ষণের নতুন এক কৌশল উন্মোচন করেছে। সে অনুযায়ী তারা অস্ট্রেলিয়ান ডলার, কানাডিয়ান ডলার, জাপানি ইয়েন ও চীনের রিজার্ভ মুদ্রা রেনমিনবিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণ করবে।
আইএমএফের সাম্প্রতিক এক কার্যপত্রে বলা হয়েছে, মার্কিন ডলারের তুলনায় অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী রিজার্ভ মুদ্রায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রাখার হিস্যা বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে প্রধান মুদ্রাগুলো হচ্ছে ইউরোপের একক মুদ্রা ইউরো, জাপানি ইয়েন ও ব্রিটিশ পাউন্ড স্টার্লিং। এ ছাড়া রিজার্ভ সংরক্ষণে ব্যবহৃত চীনা মুদ্রা রেনমিনবির কথা বলা যায়। অবশ্য রেনমিনবিতে সারা বিশ্বে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রাখা হয়েছে, তার এক-তৃতীয়াংশই রয়েছে রাশিয়ায়।
এদিকে ছোট কিছু অর্থনীতির মুদ্রা ঐতিহ্যগতভাবে রিজার্ভ পোর্টফোলিওতে অতীতে তেমন একটা জায়গা করে নিতে পারেনি। যেমন অস্ট্রেলিয়ান ও কানাডিয়ান ডলার, সুইডিশ ক্রোনা এবং দক্ষিণ কোরিয়ান ওন। এখন অবশ্য ডলার থেকে অন্যান্য মুদ্রায় মোট যে পরিমাণ রিজার্ভ রাখা হয়, তার তিন ভাগের এক ভাগই চার মুদ্রায় সংরক্ষিত।
দেশে দেশে মার্কিন ডলারের পরিবর্তে তুলনামূলক অপ্রচলিত বিভিন্ন মুদ্রায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণের দুটি বড় কারণ রয়েছে। প্রথমত এসব মুদ্রার বিনিময় হারে অস্থিরতা কম। এই মুদ্রাগুলো রাখলে ভালো রিটার্ন, মানে ফল পাওয়া যায়। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপকেরা বৈদেশিক মুদ্রার মজুতে ক্রমবর্ধমান হারে এসব মুদ্রায় ঝুঁকছেন।
দ্বিতীয়ত, নতুন আর্থিক প্রযুক্তির আবির্ভাব তথ্য ব্যবহার। এতে বাজারব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয় হয়ে উঠেছে। ফলে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে তারল্য ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণে ছোট অর্থনীতির মুদ্রাগুলোকে তুলনামূলক জুতসই মনে করা হয়। কারণ, এগুলো মোটামুটি সস্তা এবং সহজে সংরক্ষণ করা যায়। এতে মার্কিন ডলারের পরিবর্তে অন্যান্য ছোট মুদ্রায় রিজার্ভ সংরক্ষণের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।
এ ছাড়া সুশাসন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থায়নের নিশ্চয়তার প্রশ্নে ওই সব ছোট অর্থনীতির দেশগুলোর ভালো সুনাম থাকায় তাদের মুদ্রায় রিজার্ভ সংরক্ষণ করে বিভিন্ন দেশ।
সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: জুন ০৫, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,