করোনাকালে শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ বেড়েছে। ৬১ দশমিক ২ শতাংশ তরুণ-তরুণী বিষণ্ণতায় ভুগছেন। করোনাকালে তাদের ৩৪ দশমিক ৯ শতাংশের মানসিক চাপ অনেক বেড়েছে। ২৮ দশমিক ৬ শতাংশের চাপ অল্প হলেও বেড়েছে। করোনাকালে ২১ দশমিক ৩ শতাংশ তরুণের ভাবনায় আত্মহত্যার চিন্তা এসেছে।
মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশনের গবেষণা জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। শনিবার ‘করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের মানসিক বিপর্যয়: আত্মহননের পথে তরুণ সমাজ’ অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এ জরিপের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ১-১৫ জুন পর্যন্ত পরিচালিত এ জরিপে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী দুই হাজার ২৬ জন তরুণ-তরুণী অংশ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশ ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী। জরিপে তরুণীদের অংশগ্রহণ বেশি ছিল। ৭৩১ জন পুরুষের বিপরীতে এক হাজার ২৯৩ জন নারী অংশ নেন জরিপে। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৮৪ দশমিক ৭ শতাংশই শিক্ষার্থী।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশা ও সেশনজটে মানসিক অস্থিরতায় ভুগছেন এমন তরুণ-তরুণীদের ২৯ দশমিক ২ শতাংশ শারীরিক বা অন্যান্য নানা উপায়ে নিজেদের ক্ষতি করেছেন। যা আত্মহত্যার প্রথম ধাপ।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৪৪ দশমিক ৩ শতাংশ বলেছেন, বিষণ্ণতার কথা ভাগ করার জন্য কাউকে পান না। ৩৯ দশমিক ৫ শতাংশ বলেছেন, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে বিষণ্ণতার কথা বলেছেন। প্রায় ২৪ শতাংশ তরুণ-তরুণী বলেছেন, তাদের পর্যাপ্ত ঘুম হয় না। জরিপে অংশগ্রহণকারী ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, তারা দিনে ৬ ঘণ্টারও বেশি সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে থাকেন। চার থেকে ছয় ঘণ্টা ফেসবুক, ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ উত্তরদাতা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কম ঘুম এবং অধিক সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে থাকা বিষণ্ণতার লক্ষণ। উত্তরদাতাদের প্রায় ৯০ শতাংশই বলেছেন, বিষণ্ণতার কারণে তাদের দৈনন্দিন জীবনের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। ছয় দশমিক ৪ শতাংশ বলেছেন, সম্পূর্ণ বাধা হচ্ছে। ২০ শতাংশ বলেছেন, বিষণ্ণতার অনেক প্রভাব পড়ছে দৈনন্দিন জীবনে। ৭০ দশমিক ৮ উত্তরদাতা বলেছেন মানসিক অস্থিরতায় নিজের ক্ষতি হচ্ছে। উত্তরদাতাদের ৫০ দশমিক ১ শতাংশ জীবনে কখনো না কখনো আত্মহত্যার কথা ভেবেছিলেন। তিন দশমিক ৭ শতাংশ আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিলেন। ২১ দশমিক ৩ শতাংশ করোনাকালে আত্মহত্যার চিন্তা করেছিলেন।
উত্তরদাতাদের ৯১ দশমিক ৫ শতাংশই বলেছেন, সমস্যায় ভুগলেও মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেননি।
প্রতিবেদনে মানসকি চাপ বৃদ্ধির ১০টি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশা, পড়াশোনা ও কাজে মনোযোগ হারানো, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, একাকি হয়ে যাওয়া, অনাগ্রহ সত্ত্বেও পরিবার থেকে বিয়ের চাপ, আর্থিক সমস্যা, সেশনজট, অনশ্চিত ভবিষ্যত, মোবাইল ইন্টারনেটের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি তানসেন রোজ, মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মোশতাক আহমেদ ইমরান এবং আঁচল ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা। তানসেন রোজ বলেছেন, তরুণরা আত্মহত্যাপ্রবণ হলে তা দেশের জন্য অশনিসংকেত।
সূত্র: সমকাল।
তারিখ: জুলাই ১০, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,