Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

মানবসম্পদ উন্নত না হলে কোনো উন্নতিই টেকসই হয় না।

Share on Facebook

করোনা অতিমারির সময় সংক্রমণের গতি–প্রকৃতি বুঝে এলাকাভিত্তিক স্কুল খোলার কথা আগেও বলেছি। সম্প্রতি ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ও ইউনেসকোর মহাপরিচালক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, ছাত্র-শিক্ষক সবার টিকাপ্রাপ্তি বা সংক্রমণ শূন্যে নামার অপেক্ষায় না থেকে স্কুল খুলে দেওয়া প্রয়োজন। আমরা অবশ্য হয়তো এ রকম ঢালাওভাবে কথাটা বলিনি, হয়তো এখনো বলব না। তবে প্রথম বছরে দেশের বিভিন্ন জেলায় স্কুলসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মাঝেমধ্যে খুলে দেওয়ার সুযোগ আমরা হারিয়েছি, এ কথা নিশ্চয় বলব।

এ ক্ষেত্রে যে বিষয় বিশেষভাবে বিবেচনায় নেওয়া জরুরি বলে মনে করি, তা হলো স্কুল বন্ধের ক্ষতি ও খোলার ঝুঁকির মধ্যে তুলনা, তা হওয়া উচিত বিষয়ের সব দিক বিবেচনায় নিয়ে গভীর বিশ্লেষণের মাধ্যমে। কিন্তু তা হয়নি।

দেখা যাচ্ছে, বিশ্বের ২২২টি করোনায় আক্রান্ত দেশের মধ্যে মাত্র ১৯টি দেশে পুরো সময় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশ এর একটি। এখানে বস্তুত পুরো দেড় বছর ধরেই মাদ্রাসা ছাড়া সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই বন্ধ। খোলা থাকার কারণে মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে করোনার সংক্রমণ বা এতে জীবনহানির পৃথক তথ্য আমাদের হাতে নেই। তবে পত্রপত্রিকার খবর অনুসরণ করে করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে শিশু-কিশোর ও তরুণদের ব্যাপক মানসিক, শারীরিক ও শিক্ষাগত ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। একটি বেসরকারি সংস্থার জরিপে দেখা যাচ্ছে ১৫ জুন পর্যন্ত ১ বছরে ১৫১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৪৫ ভাগ বেশি। তারা অবশ্যই করোনা-বন্ধের মানসিক বলি। ফলে করোনাকালে বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের প্রাণহানি ঠেকানোর প্রয়াস যে সফল হয়নি, তা অস্পষ্ট থাকে না আর। এ ছাড়া নানা মাত্রার মানসিক বৈকল্যের কথা উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা নিরন্তর জানাচ্ছেন, যার ধকল অনেকের ক্ষেত্রেই জীবনব্যাপী চলতে পারে।

আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, কেবল সিলেবাসভিত্তিক পঠনপাঠন ও পরীক্ষার পাস দেওয়ার জায়গা নয় স্কুল; শিশুর বিকাশ—সামগ্রিক ও যথার্থ বিকাশ—কেবল পাঠক্রমের মাধ্যমে অর্জিতও হয় না। এ কাজকে কেন্দ্রে রেখে তার একজন যথার্থ সামাজিক মানবিক নাগরিক হয়ে ওঠার ভিত তৈরি হয় স্কুলে। শহরে তো স্কুলই শিশুর সামাজিকায়নের প্রধান ভরসাস্থল। এখানেই সামাজিক সম্পৃক্ততা রপ্ত হয়ে ওঠে, দল হিসেবে কাজ করা, প্রতিযোগিতা ও সহযোগিতার মনোভাবে সমন্বয় ঘটা, নানা দক্ষতা প্রকাশের ও তা বাড়ানোর সুযোগ মেলে, বন্ধুত্ব–সহানুভূতির মতো মানবিক আবেগগুলোর চর্চা হয়, অধিকাংশের জন্য শিল্প ও সংস্কৃতিচর্চার সুযোগ আসে স্কুলেই, খেলাধুলার ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। ফলে শিশুর বিকাশ-পর্বের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দেড়টি বছর হারিয়ে যাওয়ার খেসারত বিপুল, তা আমাদের ভাবনার বাইরে রয়েছে বলেই মনে হয়।

প্রায়ই শুনি, শিশু বাড়িতে যখন-তখন মেজাজ করছে, কিশোর-কিশোরীরা প্রচণ্ড মানসিক অবসাদ ও হতাশায় ভুগছে। শিশুদের মনোজগতের ক্ষতির ফলে তাদের বিকাশের পথে অর্জন ও প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যে অন্যায্য ঘাটতি হবে, তারা নিজেরা সেটা পুষিয়ে নিতে পারবে না, যদি শিক্ষা বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের সহযোগিতায় সংবেদনশীলতার সঙ্গে তাদের এ মানসিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে সহায়তা না করেন। তবে আশার কথা, ইতিবাচক বিষয়ে শিশু-কিশোরেরা ত্বরিত সাড়া দিতে সক্ষম এবং তাদের আরোগ্যও দ্রুতই সম্পন্ন হতে পারে।

মুশকিল হলো আমাদের শিক্ষা বিভাগীয় কর্তাব্যক্তিদের কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে, তাঁরা বন্ধকালীন পড়াশোনার ঘাটতি পূরণ এবং শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন নিয়েই কেবল ভাবনাচিন্তা করছেন। ভাবা হচ্ছে সংকটকালের সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের মাধ্যমে সংক্ষেপে পরীক্ষা ও মূল্যায়ন শেষ করে অধ্যায়টির যতি টানা যাবে। সোজা ভাষায় আমরা ২০২০ ও ২০২১ সালের জন্য সংশ্লিষ্ট শিশু থেকে তরুণ শিক্ষার্থীদের ‘করোনা সংকটকালীন শিক্ষার্থীর’ ছাপ মেরে দিতে চাইছি। এ সময়ে যারা পাবলিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে, তারা পরবর্তী জীবনে এর জন্য ভুগবে না যে তার নিশ্চয়তা কে দেবে?

শিক্ষা বিভাগ কিছু করেনি, ভাবেনি এমন কথা বলব না। তারা করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পরপরই টিভির মাধ্যমে স্কুলপর্যায়ের পাঠদান চালু রেখেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে অনলাইন পাঠদানের বিষয়ে উৎসাহিত করেছে। এর সঙ্গে অ্যাসাইনমেন্টভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রমও চলছে। কিন্তু বৈদ্যুতিন মাধ্যমগুলোর সীমাবদ্ধতা এবং শিশুর শরীর-মনের জন্য নেতিবাচক দিকগুলো বিবেচনায় রাখা দরকার। এ বৈষম্য ও বিপুল দরিদ্রের দেশে সবার পক্ষে এ ডিভাইসগুলো ব্যবহার সুলভ নয়, তার ওপর এদের অনেকেই প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থী বলেও তাদের ঘরে সহায়তা দেওয়ার কেউ নেই। বিপুল শিক্ষার্থীর খাবার ও শিক্ষা, দুটির জন্যই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরতা ছিল। এমন পরিবারে ঝরে পড়া, বাল্যবিবাহ এবং পিছিয়ে পড়ার হার বেড়ে চলেছে।

এ পর্যায়ে শিশু এবং বিজ্ঞান-সংস্কৃতিসংক্রান্ত বিশ্ব সংস্থা দুটির প্রধানদের দুটি কথা পুনরাবৃত্তি করে করণীয় নিয়ে কয়েকটি কথা বলে শেষ করব। প্রথমত, তাঁরা বলেছেন, স্কুলগুলো আবার চালু করার ক্ষেত্রে সব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর টিকা পাওয়ার কিংবা সংক্রমণ শূন্যের কোঠায় নামার অপেক্ষায় থাকা যাবে না। তাঁদের দ্বিতীয় কথাটি হলো মহামারির জন্য বন্ধের ক্ষেত্রে সবার শেষে এবং আবার খোলার ক্ষেত্রে সবার আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের থাকা উচিত। অথচ দেখা যাচ্ছে, কোনো কোনো দেশ মহামারিজনিত পরিস্থিতি যখন এটা দাবি করে না, তখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে। তাদের শেষ কথাটি বোধ হয় বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও খাটে।

এক্ষুনি করণীয়র তালিকা করতে গেলে আমাদের কিছু ভ্রান্ত ধারণা কিংবা ঔদাসীন্য বা উপেক্ষার কথা না বললে নয়। শিক্ষা অর্থাৎ একালের (চিরকালের) উপযুক্ত মানবসম্পদ তৈরি যেকোনো জাতির জন্য অগ্রাধিকারভিত্তিক কাজ এবং এই খাতই যে বিনিয়োগের সবচেয়ে ভালো ও গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র, তা মানতে কারও কষ্ট হওয়ার কথা নয়। ফলে কথাটা দাঁড়ায় যে দেশে জনসংখ্যার একটি বড় অংশ শিক্ষার্থী (৫ কোটি, জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ), সে দেশে শিক্ষা কেন মেগা প্রকল্প হিসেবে গণ্য হবে না, তা বোধগম্য নয়। শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য এ খাতে বিপুল বিনিয়োগ ছাড়া কোনো পথ নেই। কেননা, বর্তমান বিপুল ছাত্রসংবলিত শ্রেণিকক্ষ, ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত, স্বল্প স্কুল সময়, মাঠ-ল্যাব-লাইব্রেরিহীন বা এর ব্যবহারবিহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দিয়ে মানোন্নয়ন সম্ভব নয়—কেবল মুখস্থনির্ভর পরীক্ষার ফলাফলভিত্তিক পশ্চাৎপদ সীমিত শিক্ষাই দেওয়া সম্ভব।

আমরা যে বিধিনিষেধ কার্যকর করতে পারি না, এ-সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি-নির্দেশনা গুছিয়ে স্পষ্টভাবে দিতে পারি না, এমনকি স্বাস্থ্য খাতের সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ দক্ষ ব্যবস্থাপনা করতে পারি না, এ সবকিছুরই মূলে রয়েছে শিক্ষার দায়, ব্যর্থতা। ফলে এখনই সময় সাময়িক জোড়াতালির কাজ বাদ দিয়ে শিক্ষার আমূল সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ। আর এ ক্ষেত্রে প্রথম কাজ হবে শিক্ষার মেগা প্রকল্প গ্রহণ এবং পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল বা কর্ণফুলী টানেলের মতোই উদারভাবে অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করা। মানবসম্পদ উন্নত না হলে কোনো উন্নতিই টেকসই হবে না। পদ্মা সেতুতে বিদেশি অর্থ নিইনি বটে, কিন্তু বিদেশি কারিগরি জ্ঞানবিদ্যা ও কারিগর ছাড়া কাজটা করতে পারিনি। অর্থাৎ উন্নয়নের উপযুক্ত মানবসম্পদ আমরা তৈরি করতে পারিনি।

সরকার সিদ্ধান্ত নিলে ২০১৪ সালের শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের ভিত্তিতেই এ মেগা প্রকল্প শুরু করা যায়। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এটা হবে জাতীয় মুক্তির পথে যথার্থ পদক্ষেপ। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার সোনার মানুষ তৈরির সূত্রপাত।

বর্তমানে ঠেকে থাকা পাবলিক পরীক্ষাগুলো এ বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বরে নেওয়ার জন্য সরকার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তা সঠিকভাবে নির্ধারিত সময়ে হবে, সে প্রত্যাশায় থাকব। আমরা বলব, করোনার বর্তমান ঊর্ধ্বগতি প্রশমিত হলেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে। তার আগে যা করণীয়, সে সম্পর্কে আগে কয়েকবার লিখেছি। এখন শুধু বলব, এ কাজে যেহেতু বিস্তারিত পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন কৌশল নির্ধারণ এবং নিয়মিত তদারকি ও পরামর্শের প্রয়োজন রয়েছে, তাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতোই বিশেষজ্ঞদের নিয়ে শিক্ষাবিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটি গঠন করাই ভালো হবে। তাঁরা প্রয়োজনে যে কারও কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারবেন। মনে হয় দেরি না করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার লক্ষ্যে এখনই কাজ শুরু করা উচিত।

লেখক: আবুল মোমেন কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক।
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: জুলাই ২০, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ