Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি ও তরুণের ‘ভাতের বিনিময়ে’ পড়ানোর বিজ্ঞাপন (২০২২)

Share on Facebook

লেখক:মনোজ দে।

সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, তসলিমা নাসরিনের লুঙ্গিবিষয়ক বক্তব্যের রেশ ধরে বিতর্ক, এফডিসির শিল্পী সমিতির নির্বাচনের মতো ইস্যু ছাপিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দেয়ালে এখন বগুড়ার এক যুবককে নিয়ে তোলপাড় চলছে। নাম তাঁর মোহাম্মদ আলমগীর কবির। বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন দুই বছর আগে। কিন্তু প্রত্যাশামাফিক চাকরি পাননি। তিনি বগুড়া শহরের দেয়ালে, বিদ্যুতের খুঁটিতে সাদা এ-ফোর সাইজের কাগজে একটি বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। বিজ্ঞাপনটির শিরোনাম হচ্ছে, ‘শুধুমাত্র দুবেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই’। আলমগীর কবির বিজ্ঞাপনে তাঁর পেশা হিসেবে লিখেছেন ‘বেকার’। প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের গণিত ছাড়া সব বিষয়ে পড়াতে চান। পড়ানোর বিনিময়ে তিনি অর্থ চান না। কেবল সকাল ও দুপুর—দুবেলা ভাত খাওয়ানোর কথা বলেছেন তিনি।

আলমগীরের এই বিজ্ঞাপন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। গণমাধ্যমগুলো তাঁর এ ধরনের বিজ্ঞাপন দেওয়ার কারণ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে। বিবিসি বাংলাকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘মূলত খাবারের কষ্ট থেকেই বিজ্ঞাপন দিয়েছি। এই মুহূর্তে আমার একটি টিউশনি আছে। সেখানে রাতে পড়াই। তারা আগে নাশতা দিত। পরে আমি তাদের বলেছি নাশতার বদলে ভাত খাওয়াতে। কিন্তু রাতে খাবারের সংস্থান হলেও সকাল আর দুপুরে খাবারের ব্যবস্থা ছিল না।’

যদিও আলমগীরের পরিচিতজনেরা ফেসবুকে তাঁর পারিবারিক অবস্থা এতোটা অস্বচ্ছল নয় বলে জানিয়েছেন। হতে পারে তাঁর বক্তব্য অতরঞ্জিত। কিন্তু তাঁর মতো এই হতাশা দেশের অসংখ্য তরুণের মাঝে গেঁড়ে বসেছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করা আলমগীরের দুবেলা ভাত খাওয়ার বিনিময়ে পড়ানোর বিজ্ঞাপন যখন ভাইরাল হয়েছে, সে সময়েই অর্থমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন, আগামী অর্থবছরে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় হবে ৩০৮৯ ডলার আর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে সাড়ে ৭ শতাংশ। ২০৩০ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছাতে নিঃসন্দেহে এই তথ্য আশাজাগানিয়া। কিন্তু মাথাপিছু আয় ও প্রবৃদ্ধিনির্ভর যে উন্নয়ন, সেখানে দুস্তর অসমতা ও বৈষম্যের যে চিত্র, সেখানে আমাদের তরুণদের প্রকৃত অবস্থাটা কী?

বাংলাদেশে সম্পদের অসমতা এতটাই প্রকট যে বিশ্বে অতিধনী বাড়ার যে সংখ্যা, তাতে প্রথম বাংলাদেশ। কিন্তু সম্পদের এই কেন্দ্রীভবনে তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কোনো কোনো ভূমিকাই রাখতে পারছে না। কেননা, সম্পদ পাচার এখন বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান একটি সমস্যা। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়নির্ভর যে উন্নয়ন তত্ত্ব, তাতে পরিসংখ্যানই আসল, মানুষ সেখানে গৌণ। সারা দেহকে অপুষ্ট রেখে শুধু মুখের স্বাস্থ্যরক্ষা এই উন্নয়নের সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছেন তরুণেরা। বিশেষ করে সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছেন যাঁরা। ২০১৭ সালে সর্বশেষ বিবিএস শ্রমশক্তি জরিপ করে। ওই জরিপে দেখা যায়, দেশে শিক্ষিত মানুষের মধ্যেই বেকারের হার বেশি। ৪৭ শতাংশ শিক্ষিতই বেকার। দেশে প্রতিবছর শ্রমশক্তিতে যোগ হচ্ছে ২০ লাখ মানুষ।

কিন্তু সেই অনুপাতে কর্মসংস্থান হচ্ছে না। ফলে বড় একটি অংশ বেকার থেকে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাম্প্রতিক এক জরিপে উঠে এসেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলো থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের ৬৬ শতাংশ অর্থাৎ দুই-তৃতীয়াংশই বেকার থাকছেন। ২১ শতাংশ শিক্ষার্থী স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর শেষ করে চাকরি পান। ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী এখনো অন্য কোনো বিষয়ে স্নাতকোত্তর বা কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করছেন কিংবা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। ৩ শতাংশ স্ব-উদ্যোগে কিছু করছেন। বিবিএস ও বিআইডিএসের জরিপ থেকেই বুঝতে অসুবিধা হয় না সংখ্যাগরিষ্ঠ তরুণদের সামনে ভবিষ্যৎটা পুরোপুরি অনিশ্চিত । আবার সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগ মিলিয়ে যে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে, সেটা কতটুকু তরুণদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে? কাজের পরিবেশ, বেতন-ভাতা, কাজের নিশ্চয়তা কজনের থাকছে? স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর শেষ করে ১০-১৫ হাজার টাকায় চাকরি করতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে। হাতে গোনা সরকারি চাকরি, ব্যাংক কিংবা কিছু সেবা খাতের চাকরি ছাড়া অন্যগুলোর সুযোগ-সুবিধার অবস্থা নাজুক।

এ পরিস্থিতিতে তরুণদের প্রত্যাশা আর প্রাপ্তি মিলছে না। ফলে শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছেই। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ১০১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। পুরুষ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। তার আগের বছর আত্মহত্যা করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৯ জন শিক্ষার্থী। এতগুলো শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার তথ্য ভয়ানক বিষয়। অথচ আমরা কেউই ভাবছি না, কী কারণে সম্ভাবনাময় তরুণেরা আত্মহত্যা করছেন?

মরিয়া হয়ে তরুণদের একটা অংশ এখন নিজেদের ভাগ্য বদলের জন্য অবৈধভাবে ইউরোপ পাড়ি দেওয়ার ভয়ংকর পথ বেছে নিচ্ছে। গত সপ্তাহে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ঠান্ডায় জমে মারা যান বাংলাদেশের সাত তরুণ। এমন ভয়ানক মৃত্যুর খবর কয়েক দিন পরপর গণমাধ্যমের শিরোনাম হচ্ছে। এসব সংবাদ পড়ে আমরা শিউরেও উঠছি। কিন্তু এই মৃত্যুর মিছিল কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের গত বছরের জুলাই মাসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশের তালিকায় শীর্ষে আছে বাংলাদেশ। ২১ জুলাই পর্যন্ত সমুদ্র পাড়ি দিয়েছে বিভিন্ন দেশের ৪১ হাজার ৭৭৭ জন। তাদের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার আছে বাংলাদেশি। এভাবে মরিয়া হয়ে ইউরোপ যাত্রায় বাংলাদেশের সঙ্গী হলো যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান, সিরিয়ার মতো দেশগুলো।

তরুণেরা কেন ভূমধ্যসাগরে এভাবে নিজেদের জীবন বাজি ধরছেন, তা কি ভাবছেন আমাদের দেশের নীতিনির্ধারকেরা। অথচ তরুণ প্রজন্ম ও তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কুমিরের অশ্রু বিসর্জন করার শেষ নেই। উন্নয়নের সুফল থেকে তারাই বড় বঞ্চিত। প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়ের বৃদ্ধি তরুণদের ‘ভাতের ক্ষুধা’ মেটাতে কি পারছে?

****মনোজ দে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক

সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ ফেব্রুয়ারী ০২, ২০২২

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

,

নভেম্বর ২২, ২০২৪,শুক্রবার

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ