ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র এক ভাইরাসের কারণে বুদ্ধিমান মানুষ পালিয়ে যাচ্ছে। পালিয়ে বেড়াচ্ছে! পালিয়ে কত দিন বেঁচে থাকতে পারবে? অথচ প্রকৃতির সবকিছু কী সজীব! প্রকৃতির সব জীব আনন্দ করছে। গাছের সবুজ পাতার দিকে তাকাও। কী সুন্দর চিকচিক করছে! ওরাও মুচকি হাসছে। নদীর পানির দিকে তাকাও। ওখানেও পানি স্বচ্ছ হচ্ছে। সকালে কংক্রিটের দালানের কাছে পাখি ডাকছে। আনন্দে নাচছে ওরাও! অথচ তুমি কিংবা তোমার অন্তর স্বচ্ছ হচ্ছে না! হে মানুষ, তোমার শ্রেষ্ঠত্ব কোথায়? তোমার সঙ্গে পিঁপড়া কিংবা এমিবার কোনো পার্থক্য নেই। প্রকৃতির এই খেলা কি তুমি টের পাও!
করোনাকালে করোনা পরিস্থিতি বুঝতে তাই সকালে একটু হাঁটতে বেরোলাম! কেমন জানি শূন্য রাস্তা খাঁ খাঁ করছে। দু-একজন মানুষ যা দেখলাম রাস্তায়, তাদের চোখ উদ্বিগ্ন! অনির্বচনীয় ভয়ে ভাসা। কাঁচাবাজার খোলা। দু-একটা ওষুধের দোকান খোলা! কোনো রিকশা দেখলাম না! গলির দোকানগুলো বেশির ভাগ বন্ধ! জানি না এমন অনিশ্চিত পরিস্থিতি কবে কাটবে! খুবই বিমূর্ত সময়! এমন পরিস্থিতিতে মানুষের প্রতি এমনি এমনি ভালোবাসা জাগে। মায়া জাগে। দরদ জাগে। আসলে সবার মঙ্গল কামনা করা ছাড়া আমাদের আপাতত কোনো অপশন নেই!
মহামারিতে দুভাবে প্রাণ সংহার হয়। এক. অজানা অপ্রতিরোধ্য রোগে। দুই. অভাবনীয় খাদ্যাভাবে। চতুর্দশ শতাব্দীতে ব্ল্যাক ডেথে লোক মারা যায় আনুমানিক সাড়ে ৭ কোটি থেকে ১০ কোটি! শুধু ভেনিসেই মারা যায় ১ লাখ মানুষ। গোটা ইউরোপে ৪ বছর ছিল সেই মহামারির ভয়ানক দশা!
মানুষ নিঃসঙ্গ। মানুষের কাছে দুনিয়া এখন অবিশ্বস্ত কারাগার! এমন নিঃসঙ্গতা কাটিয়ে উঠতে মানুষের বহুদিন লাগবে। খোলা আকাশের নিচে নিরাপদে প্রাণখুলে কবে যে নিশ্বাস নেবে দুনিয়ার মানুষ। কবে সেই সুদিন আসবে!
করোনার শেষ কোথায় কেউ জানে না! মৃত্যু প্রত্যেকের দুয়ারে দাঁড়িয়ে আছে। তারপরও মানুষের কাণ্ডজ্ঞান হলো না। এত আত্মবিধ্বংসী কেন মানুষ?
আতঙ্ক ছড়ানোর কিছু নেই কিন্তু নিরাপদে থাকুন! পৃথিবীর সব জনপদ থেকেই ভয়–বিষাদের খবর আসছে। বিবিসি, সিএনএন, আল–জাজিরায় করোনাভাইরাস–সম্পর্কিত খবরে কারও মন ভালো থাকার খবর নেই। বাংলাদেশ পৃথিবীর বাইরের কোনো গ্রহ নয়।
কৃষি, বস্ত্রশিল্প, জনশক্তি—প্রধান তিন আর্থিক খাতই গভীর সংকটে। দেশের অবস্থা চিন্তা করে ঘুম হয় না রাতে। রাত বা ঘুম না থাকলে খুব অসুবিধা হতো কি? না রাত না ঘুম, কেবল সময় এবং আমি!
কৃষকের কান্নায় জমির মাটি ভেজে। ঋণের টাকায় চাষ করা ফলন মাঠেই পচে যাচ্ছে, ক্রেতার অভাবে লাখ টাকার ফসল মাটিতে মিশে যাচ্ছে। কৃষক না বাঁচলে দেশের মানুষ বাঁচবে না।
ঝুম বৃষ্টি শুরু হয় সন্ধ্যামালতী ফুল যখন ফোটে তার পরপর! মানুষ হতভম্ব হয়ে পড়ে, কেননা এই বৃষ্টিতে জল পড়ে না একফোঁটাও! সবাই নেমে গিয়ে দেখে বৃষ্টিধারার মতো আকাশ থেকে অবিরাম চাল পড়ছে! ক্ষুধার্ত মানুষ বিশ্বাস করতে পারে না এটা কী ঘটতে যাচ্ছে তাদের সঙ্গে, ফলে তারা জড়ো হয়ে দেখতে থাকে! এবং ক্রমে রাস্তাঘাট, নর্দমা, পুকুর, উঠোন, মাঠ চালে ভরে ওঠে! ক্ষুধার্ত মানুষ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে! ক্ষুধার্ত মানুষগুলোর চোখে ঘুম এসে যায়, চাল–ধোয়া আকাশে চাঁদ ওঠে! সেই আলোর মধ্যে এই নিরন্ন মানুষগুলোর কারও কারও মনে হয়, কত আর ক্ষুধা সহ্য করবে, কারও কারও মনে হয়, এসব দেখার চেয়ে আত্মহত্যা উত্তম! আবার কারও কারও মনে হয়, একজন মানুষের কতটুকু চাল প্রয়োজন এক জীবনে?
সামনের অনাগত দিনগুলোয় দুর্দশা হয়তো আরও বাড়বে। বাড়বেই! সেই দুর্দশার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি রাখা উচিত। এই অতিমারি শুধু মৃত্যু নিয়ে আসেনি, সঙ্গে এনেছে দারিদ্র্য, অনাহার, দুর্ভিক্ষ আর সর্বোপরি মহান ঐশ্বরিক সত্তার সীমাহীন ক্রোধ! এই ক্রোধ যৌক্তিক।
অনেক কিছুই নিঃশেষ হয়ে যাবে সুনিশ্চিত। যাঁরা থেকে যাবেন, হয়তো তাঁদের নতুনভাবে শুরু করতে হবে জীবন নামের এই অত্যাশ্চর্য ভ্রমণ। সেই যাত্রা কেমন হবে, তা জানি না। আগ্রহও নেই জানার। সময় নামক নিয়তি তা ঠিক করে দেবে নিশ্চয়ই!
সূত্র: সংগ্রহিত, প্রথম আলো থেকে।
তারিখঃ মে ০৩, ২০২০
রেটিং করুনঃ ,