দিনটি ছিল গত বছরের মার্চ মাসের ১১ তারিখ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তরফে আসা এক ঘোষণায় এই পৃথিবী প্রবেশ করল মহামারির কালে। বইপত্র বা চলচ্চিত্রে মহামারি শব্দটির সঙ্গে পরিচিতি থাকলেও, মহামারির দিনগুলো কেমন হয়, সে সম্পর্কে বিশ্বের তরুণ সম্প্রদায়ের অনেকেরই কোনো বাস্তব অভিজ্ঞতা ছিল না।
করোনাভাইরাস গত এক বছরে শিখিয়ে দিল, মহামারি আসলে কেমন। সেই নিদারুণ সময় এখন কিছুটা ফিকে হয়েছে টিকার আগমনে। তাই বলে আতঙ্ক, ভয় আর শঙ্কার দিন ফুরোয়নি। কারণ, করোনাকে একেবারে বিদায় বলা যে সম্ভব হচ্ছে না।
মহামারি কী
গত বছরের সবচেয়ে আলোচিত শব্দের মধ্যে অন্যতম নিঃসন্দেহে ‘প্যানডেমিক’। মেরিয়াম–ওয়েবস্টারের অভিধান বলছে, প্যানডেমিক হলো কোনো রোগের এক বিশাল ভৌগোলিক এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এবং তাতে ওই এলাকার মোট অধিবাসীর উল্লেখযোগ্য অংশ আক্রান্ত হয়।
প্যানডেমিকের বাংলা রূপান্তর মহামারি। এর বাংলা অর্থ দাঁড়ায়, বহু প্রাণীর মৃত্যু হয় এমন সংক্রামক ব্যাধি।
গত কয়েক হাজার বছরে অসংখ্য মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পৃথিবী। যখন থেকে ঘটনা লিপিবদ্ধ করা বা ইতিহাস রচনার শুরু, সেই সময় থেকে মহামারির অস্তিত্ব জানা যায়। যেমন জাস্টিনিয়ান প্লেগ, ব্ল্যাক ডেথ, দ্য গ্রেট প্লেগ অব লন্ডন, গুটিবসন্ত, কলেরা প্রভৃতির কথা। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে করোনাভাইরাস, যে রোগটির পোশাকি নাম কোভিড–১৯।
বর্তমান পরিস্থিতি
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, মৃত্যু ও সুস্থ হওয়ার পরিসংখ্যানগত তথ্য জানায় বিশ্বখ্যাত জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি ও ওয়ার্ল্ডোমিটারস। এই দুই ওয়েবসাইটে দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, গতকাল (মার্চ ১২) শুক্রবার রাত আটটা পর্যন্ত করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী আক্রান্তের সংখ্যা ১১ কোটি ৮৫ লাখের বেশি। কোভিড–১৯–এ মৃত্যু ছাড়িয়েছে ২৬ লাখের ঘর। সুস্থ হয়েছে ৯ কোটির বেশি মানুষ।
করোনাভাইরাস মহামারি কতটা ভয়াবহ, সেটি বোঝাতে আগের কিছু মহামারির হিসাব বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমস–এর দেওয়া তথ্য বলছে, ১৮৮৯ সালের রাশিয়ান ফ্ল তে মারা গিয়েছিলেন ১০ লাখ মানুষ। ১৯৫৭ সালের এশিয়ান ফ্ল তে ১০ লাখ ও ১৯৬৮ সালের হংকং ফ্লুতে মৃত্যু হয়েছিল ১১ লাখ মানুষের। ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্ল তে ছিল সবচেয়ে হন্তারক, কেড়ে নিয়েছিল ৫ কোটির বেশি মানুষের প্রাণ। অর্থাৎ মৃত্যুর হার বিবেচনা করলে কোভিড–১৯–এর চেয়েও ভয়ংকর মহামারি মানুষ দেখেছে। কারণ, আগের তুলনায় বর্তমানে চিকিৎসাবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনেক দূর এগিয়েছে, যা মৃত্যু কমাতে ভূমিকা রেখেছে।
করোনার বেশ কয়েকটি টিকা এরই মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন দেশে এর প্রয়োগও শুরু হয়ে গেছে। এতে অন্তত কোভিড–১৯ রোগ থেকে বাঁচার একটি আশা তৈরি হয়েছে। তবে এর সঙ্গে সঙ্গে শঙ্কাও আছে। বিশেষজ্ঞরা গত বছরের মাঝামাঝি থেকেই মহামারি থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে কার্যকর টিকার কথা বলে আসছিলেন। সেই সঙ্গে এ–ও বলা হচ্ছিল যে টিকাদানের ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে অনুন্নত দেশগুলো পেরে উঠবে না। জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটি এখন বলছে, ঠিক সেই ঘটনাই ঘটছে। উন্নত দেশগুলো যে গতিতে টিকাদান কর্মসূচি চালাচ্ছে, কম উন্নত দেশগুলো সেই হারে এগোতে পারছে না।
এর মধ্যে জটিল সমস্যা তৈরি করেছে মহামারির নতুন ঢেউ এবং করোনাভাইরাসের নতুন ধরন বি.১.১.৭। যুক্তরাজ্যে প্রথম পাওয়া এই ধরন নিয়ে সম্প্রতি ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। ওই গবেষণাপত্রের বরাত দিয়ে ভয়েস অব আমেরিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বি.১.১.৭ নামের এই ধরনে আক্রান্ত মানুষের মৃত্যুর হার, অন্য ধরনে আক্রান্তের চেয়ে ৩০ থেকে ১০০ শতাংশ বেশি। করোনার আগের ধরনটিতে মৃত্যুর গড় হার ৬৪ শতাংশ।
করোনার এই নতুন ধরন গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলে চিহ্নিত হয়। এরই মধ্যে ১০০টি দেশে এটি ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। গবেষকেরা বলছেন, এই ধরন করোনাভাইরাসের মূল ধরনের তুলনায় প্রায় দেড় থেকে আড়াই গুণ বেশি সংক্রামক।
কোন দেশ কেমন করল
কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতিতে একদিকে যেমন কোনো কোনো দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়তে দেখা গেছে, তেমনি কিছু কিছু দেশ দেখিয়েছে অভাবিত সাফল্য।
ওয়ার্ল্ডোমিটারসের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে মোট আক্রান্তের পরিমাণ প্রায় তিন কোটি মানুষ। এ দেশে করোনায় মৃত্যুও বিশ্বে সবচেয়ে বেশি। সংখ্যাটি সাড়ে পাঁচ লাখ ছুঁই ছুঁই। ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ভারত। সেখানে মোট আক্রান্ত কোটি ছাড়িয়েছে, মৃত্যু ছাড়িয়েছে দেড় লাখ। চলতি বছরের শুরু থেকে তালিকার তৃতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটিতেও করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটির বেশি, মৃত্যু ২ লাখ ৭০ হাজারের বেশি। চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে আছে রাশিয়া ও যুক্তরাজ্য। রাশিয়ায় করোনায় মৃত্যুর পরিমাণ লাখের নিচে, মোট আক্রান্ত ব্রাজিলের তুলনায় অর্ধেকের কম।
নিউ ইংল্যান্ড কমপ্লেক্স সিস্টেমস ইনস্টিটিউট বা এনইসিএসআই নামের একটি প্রতিষ্ঠান বিশ্লেষণ করে বলছে, মহামারি নিয়ন্ত্রণে রেখে ভালো অবস্থায় থাকা দেশগুলোর তালিকায় আছে নিউজিল্যান্ড, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, কম্বোডিয়া, মরিশাস, ব্রুনেই, ভুটান প্রভৃতি দেশ। সব মিলিয়ে ২০ থেকে ২৫টি দেশ বা অঞ্চল আছে এ তালিকায়। অন্যদিকে করোনা পরিস্থিতিতে ভালো অবস্থায় থাকা দেশের তালিকা তৈরি করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ। ২৫ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ হালনাগাদ র্যাঙ্কিংয়ে ৫৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৭তম। আর প্রথম পাঁচটি দেশ হলো নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, ফিনল্যান্ড ও নরওয়ে।
করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যায় শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র
বিশ্লেষকেরা বলছেন, যেসব দেশ মহামারির শুরু থেকেই রোগের বিস্তার ঠেকাতে তৎপর ছিল, সেসব দেশই করোনাকালে সফল হতে পেরেছে। এসব দেশে লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব বজায়, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা, পর্যাপ্ত করোনা শনাক্তের পরীক্ষা, মাস্ক পরাসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যবিধি মানাতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ওয়াশিংটন পোস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব পাবলিক হেলথের ডিন আশিস ঝা বলেছেন, কোভিড–১৯ মহামারিকে ঠেকানোর অন্যতম প্রধান উপায় হলো করোনাভাইরাসকে গুরুত্ব দেওয়া এবং সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া। কিছু দেশ বিষয়টি খুব ভালোভাবে সামলাতে পেরেছে। আবার যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া প্রভৃতি দেশ একেবারে লেজেগোবরে পরিস্থিতিতে পড়েছে।
আশিস ঝা মনে করেন, কোভিড–১৯ মহামারি সামলানোয় মানবসভ্যতা খুব ভালো করতে পারেনি। গ্রেডিং পদ্ধতিতে মূল্যায়নে তিনি এ ক্ষেত্রে মানবজাতিকে ‘সি প্লাস’ দিতে চান। আশিসের যুক্তি হলো, ‘আমরা সবাই জানতাম যে একদিন মহামারি আসবে। এই জানা বিপদও আমরা নিখুঁতভাবে সামাল দিতে পারিনি।’ তবে টিকা তৈরির বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন এই গবেষক। তাঁর মতে, এক বছরের কম সময়ের মধ্যে করোনার কয়েকটি টিকা তৈরি করে ফেলার বিষয়টি অভাবনীয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভূমিকা
করোনা মহামারির ঘোষণা দিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। মহামারিতে মানবসভ্যতাকে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্বে এই সংস্থা। কিন্তু শুরু থেকে পরস্পরবিরোধী কিছু বক্তব্যে বেকায়দায় পড়ে সংস্থাটি। এ নিয়ে তৈরি হয় বিভ্রান্তি ও সিদ্ধান্তহীনতা। প্রাথমিকভাবে সংস্থাটির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের কেন্দ্রে ছিল, করোনা সংক্রমণকে বৈশ্বিক স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা, বিশেষত মহামারি হিসেবে ঘোষণা দিতে এর অস্বীকৃতির বিষয়টি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বেশ কিছু আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিয়ে, পরে আবার তা থেকে সরে আসে। এর মধ্যে আছে, ‘নভেল করোনাভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না’, ‘করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে রোগপ্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি হয় না’ ও ‘উপসর্গহীন রোগীদের মাধ্যমে করোনা ছড়ানোর ঘটনা বেশ কম’। শেষের বক্তব্যটি দিয়েছিলেন সংস্থাটির শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা মারিয়া ভ্যান কেরখোভে। গত বছরের জুনের শেষ দিকে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ বক্তব্য দেওয়ার এক দিনের মাথায় তিনি বলেছিলেন, ‘এটা একটা “ভুল-বোঝাবুঝি” ছিল। আমি ডব্লিউএইচওর কোনো নীতি বা এ–জাতীয় কিছু নিয়ে কথা বলতে চাইনি। আমরা জানি যে উপসর্গহীন কিছু লোক অর্থাৎ যেসব লোকের কোনো উপসর্গ নেই, তাঁরাও করোনা ছড়াতে পারেন।’ অথচ এর আগেই নেচার সাময়িকীতে ছাপা হওয়া একটি গবেষণাপত্রে করোনা ছড়ানোর ক্ষেত্রে উপসর্গহীন রোগীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা বলা হয়েছিল।
তবে বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক বছরেই অবস্থা পাল্টে গেছে। এখন প্রশংসার জোয়ারে ভাসছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এত অল্প সময়ে সমালোচনার ঝড় সামলে এ বছর নোবেল পুরস্কার জয় করে নেওয়ার সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে জাতিসংঘের সংস্থাটির।
এএফপি বলছে, প্রাথমিকভাবে ধীরে চলো নীতি অনুসরণ করলেও ক্রমেই কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি ও তা জোরদার করতে থাকে ডব্লিউএইচও। বিশেষত, দরিদ্র দেশগুলোতে করোনা নিয়ন্ত্রণে নানা সহায়তা প্রদান, প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ, পরীক্ষা ইত্যাদি কার্যক্রম চালিয়ে অব্যাহতভাবে প্রশংসা কুড়িয়ে চলেছে সংস্থাটি। এ সংস্থার কোভ্যাক্স কর্মসূচির অধীন দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে চলতি বছর ২০০ কোটি মানুষের কাছে করোনার টিকা পৌঁছে দেবে সংস্থাটি। সেই ধারাবাহিকতাতেই এ বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত ব্যক্তি ও সংগঠনের তালিকায় ঠাঁই করে নিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
টিকার কী অবস্থা
করোনার বেশ কয়েকটি টিকার প্রয়োগ এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এর মধ্যে সামনের সারিতে আছে অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকা, মডার্না ও ফাইজার–বায়োএনটেক। এর মধ্যে অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও ফাইজারের তৈরি টিকার জরুরি ব্যবহারে অনুমোদনও দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এর বাইরে আছে রাশিয়ার তৈরি স্পুতনিক–ভি এবং চীনের তৈরি সিনোভ্যাক ও সিনোফার্ম। এ ছাড়া নোভাভ্যাক্স ও জনসন অ্যান্ড জনসন কোম্পানির তৈরি টিকা জ্যানসেন আছে চূড়ান্ত অনুমোদনের পর্যায়ে। এ দুটি টিকা নিয়েও গবেষকদের মধ্যে উচ্চাশা আছে।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে। ভারত, বাংলাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও শুরু হয়েছে টিকাদান কর্মসূচি। একইভাবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে টিকাদান কর্মসূচি শুরুর কথা শোনা যাচ্ছে। তবে ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি নাগাদ ধনী দেশগুলোর বাইরে প্রায় ৮৫ শতাংশ দেশেই টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়নি। বলা হচ্ছে, এসব অঞ্চলের পর্যাপ্ত মানুষকে টিকা দিতে আরও দুই বছর সময় লাগতে পারে।
করোনার প্রভাব
করোনা মহামারির প্রভাব সর্বগ্রাসী। অর্থনীতি, রাজনীতি থেকে শুরু করে সমাজ, রাষ্ট্র—সবকিছুতেই প্রবল প্রভাব রেখেছে করোনা মহামারি। এর প্রথম ধাক্কা আসে অর্থনীতিতে। অথচ মহামারির প্রথম ৯ মাসেই সেই ক্ষতি সামলে লাভের মুখ দেখতে থাকেন বিশ্বের শীর্ষ এক হাজার ধনী। অন্যদিকে শ্রমিকশ্রেণির মানুষেরা, বিশেষ করে তরুণ, নারী ও কম শিক্ষিত মানুষকে পড়তে হয়েছে কর্মহীন নিদারুণ পরিস্থিতিতে। দেখা গেছে, বাসায় বসে কর্মস্থলে কাজ করার নতুন ধারা। আবার ফ্রিডম হাউসের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, এ করোনাকালে বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র ক্রমে ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ছে, শক্তিশালী হচ্ছে একনায়কতন্ত্র। বিশ্লেষকদের মতে, করোনাকালকে এভাবে নিজেদের ক্ষমতা সুসংহত করার কাজে লাগাচ্ছেন অনেক রাষ্ট্রনায়ক।
মহামারির শেষ কীভাবে
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের প্রায় ৭০০ কোটি মানুষকে টিকাদান কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা একটি অত্যন্ত কঠিন কাজ। আবার টিকা দিয়েও পুরোপুরি করোনা নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে কি না, তা–ও বলা যাচ্ছে না। কারণ, করোনাভাইরাসের নতুন ধরন পাওয়া যাচ্ছে, যা আগের চেয়ে বেশি সংক্রামক রূপে দেখা দিচ্ছে।
বাংলাদেশেও নতুন করে সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী দেখা যাচ্ছে। মাঝে রোগী শনাক্তের হার কমে এলেও আবার তা বাড়ছে। সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার ১২ মার্চ নমুনা সংগ্রহের তুলনায় শনাক্তের হার ছিল ৬ দশমিক ৬২ শতাংশ। সংক্রমণ পরিস্থিতি বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৬ মার্চ পর্যন্ত ছয় সপ্তাহ ধরে করোনা শনাক্তের হার ৪ শতাংশের নিচে ছিল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য আবু জামিল ফয়সাল প্রথম আলোকে বলেন, দেশে করোনার সংক্রমণ চলছিলই। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
করোনা মোকাবিলায় টিকার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা, মাস্ক পরা ইত্যাদির ওপরই জোর দেওয়া হচ্ছে বেশি। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, করোনা হয়তো কোনো দিনই পৃথিবী থেকে পুরোপুরি উবে যাবে না। ভোগাবে দীর্ঘদিন, থেকে যেতে পারে মৌসুমি রোগের রূপেও। তাই এর সঙ্গে নিরাপদ সহাবস্থানেই খুঁজতে হবে কার্যকর নিদান।
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: মার্চ ১৩, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,